| 28 মার্চ 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

অস্তিত্ব

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
এ রকম এত বড় একটা ধাক্কা পরিবারের মধ্যে আর  কোনদিন খায়নি সজল। ১০০% বার্ণ মলি  সাদা কাপড়ে মোড়া শরীর নিয়ে, উঠোনে শুয়ে আছে ফুলের পাহাড়ে!  আর শরীর ই বা কি তাকানো যাচ্ছে না বিজনের দিকে একদম। খুড়তুতো ভাই টা বোবার মত ফ্যালফেলিয়ে বসে আছে বাকশক্তি হীন হয়ে।আর হবেই তো! বিজনের বউ মলি শেষ মানে, বিজন ও ফিনিশ তা কে না জানে। সেই বিজন যাকে সব ম্যাদা মারা বেজোবলে , ডাকতো, যার মুখ থেকে কথা বেরোতো না , এই  ইংলিশ বাজারে এখন রমরমে বিরাট ষ্টেশনারী দোকানের মালিক। জেরক্স  আর সাইবার কাফে সদ্য দিয়েছে, ভালো চলছে সেটাও। আর এই সব কিছু একমাত্র মলির জন্যে! মলি সেই মেয়ে যাদের পি আর রের রেটিং সর্বদা উর্ধ্বগামী। কথা বার্তা দেখা শোনা মানুষের সাথে কায়দার কানুন মেলামেশা, কাজ বের করে নিয়ে আসা সব জানতো। মলি মানেই বিজন, বিজন মানেই  মলি।  মলির ক্ষুরধার বুদ্ধির জন্যেই বিজনের বিয়ের পর এত উন্নতি, আজ এখানে। বিজনের কথা ভেবেই সজল বোধ শূন্য হয়ে যাচ্ছে।  মলি ছাড়া ঘর সংসার আত্মীয় স্বজন  ছেলে মানুষ, রান্না বান্না, সব আর কে দেখতো! ব্যবসার আসল মাথা তো মলিই ছিল!  এটা ঠিক মলি বিজনের মাকে তাদের সাথে এক বাড়ীতে আল্যাঊ করতো না। কিন্তু দায় দায়িত্ব আসা যাওয়া দেওয়া থোয়ায় কিচ্ছু কম তো নয় ই বরং বেশি ই করত। শুধু বিজনকে শিখিয়েছিল কেমন করে আজকের দিনে পা ফেলতে হয়, না বলতে হয়, গুছোতে শিখতে হয়! পরিবার মানে বউ আর বাচ্ছা! বাকিদের  ফিল গুডে রাখতে হয়।
অমন একটা  চড়কো মেয়ের কিনা সামান্য ভুলের জন্যে জীবন টাই গেলো। দিব্যি খাইয়ে দাইয়ে বিজনকে দোকানে পাঠিয়ে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে মলি বাড়ি এসে প্রেশারকুকারে ডাল বসিয়েছিল বোধহয় ব্যস, দেখেনি খেয়াল করে, সিটি আটকে পুরো প্রেশার কুকার বারস্ট করে মুহূর্তে মলি ঝলসে পুড়ে শেষ।  বিরাট আওয়াজ হয় একটা!। হসপিটালে নিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা আর হলোনা। পুড়ে গেল বিজনের কপাল, সাজানো সংসার টাও।
মলিকে দাহ করে এসে বিজন ফাঁকা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। কলি এসে চা দিলো হাতে।  ডুকরে কেঁদে উঠল সে জামাইবাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে। কলি মলির পুরো উলটো মানুষ । বড় নরম, ধীর স্থির।  বিজন ও কেঁদে উঠে কলির নরম পিঠে মাথা দিল।  কি করবে সে আর! কিই বা করতো! মলির সর্বগ্রাসী  কর্তৃত্বের ক্ষুধার হাত বাঁচার জন্যে, নিজের অস্তিত্ব,  নিজের প্রিয়জনদের সঙ্গ, টুকরো টুকরো ভালোলাগা ভালোবাসা নরম দিন গুলিকে বাঁচানোর জন্যে এ ছাড়া আর উপায় ছিল কি কিছু!
চোখ গেল বিজনের কোণের,  বড় টব টার দিকে। সেখানে  পাঁচ লিটারের কুকারটার লিডের আসল  ওয়েট টা লুকিয়ে রাখা আছে।
.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত