
নবারুণ ভট্টাচার্য
আগাগোড়া বিপ্লবী কবি। যার কবিতায় উঠে এসেছে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর সমালোচনা। তিনি লিখেছেন রাষ্ট্রের আসল সত্তা মানে, সশস্ত্র সৈন্যবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, কারাগার এবং বলপূর্বক অন্যের ইচ্ছেকে আয়ত্তে আনার অন্যান্য উপায়। ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’ কবিতার একশো উনিশ লাইনে এঁকেছেন রাষ্ট্রের স্তম্ভ ও তাদের ব্যবহার সম্পর্কে বাস্তবিক চিত্র।
তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন প্রথাবিরোধী কবি ও কথাসাহিত্যিক। ১৯৪৮ সালের আজ (২৩ জুন) পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। নবারুণ ছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার-অভিনেতা বিজন ভট্টাচার্য এবং সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর একমাত্র সন্তান।
কলকাতার বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে শুরু হয় নবারুণের স্কুল জীবন। পড়েছেন আশুতোষ কলেজে প্রথমে ভূতত্ত্ব নিয়ে এবং পরে সিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে। কবি, গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক, এই তিনটি পরিচয়ের মিশেলে নবারুণ গড়ে তুলছিলেন স্বকীয় একটি ধারা। নাটক করেছেন কলকাতার মঞ্চে। বামপন্থী রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী নবারুণ দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ‘সোভিয়েত দেশ’ পত্রিকায়। ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না’র মতো কবিতার পঙক্তি কিংবা ‘হার্টবার্ট’, ‘কাঙাল মালসাট’রে মতো তির্যক উপন্যাস গড়ে তুলেছে নবারুণের প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভাবমূর্তি। ব্যক্তি জীবনেও তিনি ছিলেন অনাড়ম্বর।
‘হারবার্ট’ উপন্যাসটি ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হওয়ার পরে ভীষণ আলোড়ন তুলতে পেরেছিলেন নবারুণ। সাহিত্য অঙ্গণ থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিষ্ঠিত অঙ্গনেও। এই উপন্যাসের জন্য এই বছরই সাহিত্য অকাদেমি সম্মানও পান তিনি। তাছাড়া পেয়েছেন নরসিংহ দাস, বঙ্কিম পুরস্কারও। পরবর্তী সময়ে এই উপন্যাস নিয়ে একই নামে সিনেমাও বানিয়েছেন পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়।
নবারুণ ভট্টাচার্যের রচনার মধ্যে ‘লুব্ধক, হালালঝান্ডা ও অন্যান্য, মহাজনের আয়না, ফ্যাতাড়ু, রাতের সার্কার্স এবং আনাড়ির নারীজ্ঞান উল্লেখযোগ্য। তিনি ২০১৪ সালের ৩১ জুলাই আন্ত্রিক ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় কলকাতায় ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
