অয়ন চৌধুরীর কবিতা
আজ ০৩ অক্টোবর কবি,প্রকাশক অয়ন চৌধুরী’র জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।
ডায়ালেকটিক্স
শিউলির গন্ধে ঘুম ভাঙে ভোরের
ফিনিক্স পাখির ডানায় আগুনের রোদ উড়ে যায় দূরে
তোমার চোখ আজ সেজেছে উৎসবে
আবাহনে মজেছে দিন চন্দনের বনে
কাশফুলের শরীরে ঢেউ লেগেছে আজ মন্ত্রপাঠের মোহে
চন্দনের বনে ওই ঝিলের পাশে তোমার পোশাকে মেঘ করেছে খুব
আমাকে ভেজাও আজ অকালবর্ষণে
এমন মাতনে দেখো তোমার নাভির ভেতর থেকে কত কাঁসর-ঘন্টার আওয়াজ!
বাতাসে বাজছে ডমরু
তোমার দুই স্তনের মাঝে তীব্র গিরিখাত
আমি পড়ে যাচ্ছি
হাজার হাজার ফিট নীচে
আমি ঘুমিয়ে পড়ছি অগ্নিকুন্ডের পাশে
আর দেখতে পাচ্ছি কত পদ্মপালক উড়ছে বাতাসে
আকাশে গমগম করছে বাদ্য যেন পুজো হচ্ছে কোনো
বাতাসে কান পাতলে শোনা যায়
“এসো সচন্দনও গন্ধপুষ্পে বেল্লোপত্রাঞ্জলি…”
ধূপ আর কর্পূরের গন্ধ ভেঙে ভেঙে আতবের কাছে
রাখা আছে সমস্ত কোরকের স্মৃতি
বাতাসে গমগম করছে কাঁসর, ঘণ্টা, মন্ত্রপাঠ…
বর্ষামঙ্গল
১.
তখন জন্মের গা বেয়ে নেমে আসছে প্রলাপজ্যামিতি
ঈশ্বরের দু’চোখ ভাঙা সমূহ বিষাদ
প্রতিটি কার্নিভালের আগে যেভাবে আকাশ মোড়া থাকে রোশনায়
তোমাকে পেয়েছিলাম মজে ওঠা নিভৃতে তেমনি কোনো দিন গোনায়…
তখন শহরের কাছে জমা হচ্ছে ছেঁড়া সন্তাপ
যাদের বুক আজ ভারি করেছে আমার স্নানধোয়া মায়াপ্রপাত…
২.
তখন তুমি ভিজেছ যে আশ্চর্য সর্বস্বতায় তার ভিতরেই ছিল একটা লুকনো অসুখ
ঝরাপাতার রক্ত মাখছে যে বিকেল তুমি তার হাত ধরে কতদূর চলে যাবে?
সমস্ত রাস্তার শেষে যখন লুসিফার অন্ধকার দিয়ে বানানো একটা উপহার নিয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে
তখন এত আগুন কোথায় রাখবে তুমি!
জন্মান্ধ এক অনুশোচনার কাছে বৃথা অশ্রুহীন থেকো না আর
দু’দন্ড হালকা হও। মোচন করো এ পৃথিবীর স্মৃতিভষ্ম মাখা আজন্ম গূঢ় শোকপ্রস্তাব…
৩.
ভালবাসা ভিজে গেলে পুরনো ছাদের কথা মনে পড়ে
যেখানে বন্দরের মতো কোনো অজানার গর্ভ চিরে বেরিয়ে আসে এক পুড়ে যাওয়া
তার অন্তঃস্থল গলে গেলে সারা পৃথিবীর গা বেয়ে অজস্র সেলাইচিহ্ন বৃষ্টির দাগের মতো দাহ হয়
প্রশ্বাসের কাছে মহাকালের উষ্ণ নিশ্বাস ভেঙে পড়ে
যেন আমার ঘাড়ের কাছে ঝুলে আছে মেঘ
এইমাত্র সমস্ত ব্যাকুলতা টুপটাপ ঝরে যাবে শীতল ও বায়বীয়…
৪.
জানলার বাইরেই যেন কুন্ডুলী পাকিয়ে যাচ্ছে সমস্ত সম্পর্ককথা
বিষাদ লেপ্টে স্মৃতির গায়ে আগুন ছড়াল শুধু
ঘোর ভাঙছে মৃদু স্পর্শ। পেলব কোনো দিনের আদল
যখন শান্তিনিকেতনের ধুলোয় পলাশ রঙের হাহাকার গড়িয়ে
অশোকবনের সামান্য কাছে বৃষ্টি নেমেছিল খুব
দগ্ধ বুকের দ্রাঘিমারেখায় নিশ্চুপ নামিয়ে এসেছি দু’এক ফোটা অশ্রুসুখ!
৫.
এমন বিকারগ্রস্ত বর্ষণ ভেঙে নিরুত্তর জারজ সন্তাপ ভারি স্নানাভিমুখী
তখন ফ্রিজ ভর্তি বাসি মৌননীল সন্দর্ভ হিংসামন্ত্র
একটা বন ভাঙছে অনুশোচনায়। অশ্রুধারে ফালা ফালা
আগুনের রেণু জমে পাতার শিরায়। জালিকারেখায়
বারুদচিহ্ন লুকিয়ে কাছেই। হয়তো বা আঙুলের
নরম স্থিতিস্থাপকতায়…
ইনসমনিয়া
প্রতিটি রিংটোন জানে অপেক্ষার জাদুবাস্তবতা,
প্রতিটি বালিশ কান্নামাখা নুনের সমঝোতা
রাত্রির কার্ণিশে ঝুলে আছে মনখারাপের অর্কিড
আঁধারের গর্ভ ভেঙে বেরিয়ে পড়ে গোলাপি প্যান্টির চৌম্বকক্ষেত্রগুলি
গুলিবিদ্ধ কতগুলি স্মৃতির কাছে ফিরে যেতে যেতে
এসব চৌম্বকক্ষেত্রের দেওয়ালে রেখে আসি শুভ্র পদ্মপালক
সিঁড়ির কাছে ঋণ ছিল যত
ভ্রমণের দ্বারগুলি ভিজেছে আশ্চর্য প্রপাতে তত
রাত্রির বুকে দুধ এলে
জ্যোৎস্নার কাছে ফিরে গেছে পথভোলা পথিক
ভাঙা কাচের মতো স্বপ্নের গুঁড়োগুলি কোথায়
গড়িয়ে গেল খুঁজতে খুঁজতে
ঘুমের খুব কাছে চলে এলে
রাত্রির নলি কেটে বেজে ওঠে গলগল শব্দ-
শেষ sms-এর!

ayan choudhury says:
আপনাদের এই ভালবাসা বুকে তুলে নিলাম। ইরাবতির জন্য একরাশ শুভকামনা। আপনাদের যে এই লেখাগুলি ভাল লেগেছে এবং আপনারা সেগুলি সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছেন ভালবেসে একজন লেখকের জীবনে এর চেয়ে বেশি কী চায়!!