Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

অসময়ে চলে গেলেন যারা

Reading Time: 6 minutes

শঙ্করলাল ভট্টাচার্য

ঋতুপর্ণ ঘোষের এত সাত-তাড়াতাড়ি জীবন থেকে প্রস্থান একটা বড় ভাবনা তৈরি করে দিয়েছে। ওঁকে কি মৃত্যু হরণ করল? নাকি উনিই মৃত্যুকে বরণ করে আনলেন? ক্রিকেটের বাগবুলি ধার করে বললে, সেঞ্চুরির হাতছানির মধ্যে এসে একটা সফ্ট আউট।
ঋতুপর্ণর এমনিতেই প্যাশনপাঠ ছিল রবীন্দ্রনাথ ও মহাভারত। কিছু দিন যাবৎ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর সঙ্গে বসে তলিয়ে পড়তে শুরু করেছিলেন মহাভারত। উদ্দেশ্য, মহাভারত ভিত্তি করে একটা ছবি করা। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিলেন লিঙ্গান্তরিত হওয়ার জন্য নিজের শরীরের ওপর নানা পরীক্ষানিরীক্ষা। যার কিছুটা মানুষ আঁচ করতে পারছিলেন ওঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘চিত্রাঙ্গদা’ দেখে।
ঋতুপর্ণর গুণগ্রাহীদের মনে বড় প্রশ্নটা এখন এই: মহাভারতের কাজে নিজেকে নিয়োগ করার আগে নিজের শরীরের প্রতি আরও নজর দেওয়া উচিত ছিল না কি? মহাভারত ও আর এক বাঙালির কথা এখানে আসে মহা মহোপাধ্যায় হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে তেতাল্লিশ খণ্ড ‘মহাভারতম্’ বঙ্গানুবাদ, টীকা ও ব্যাখ্যায় হাত দিয়ে এবং তিরিশ বছর পর সে কাজ শেষ করে তিনি আবিষ্কার করলেন যে তাঁর সমুদয় কেশ শুভ্র হয়ে গিয়েছে। তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন। বাঙালির এমন একাগ্রতার বিশেষ তুলনা নেই।

আসে আর এক বাঙালির কথাও, যিনি পদ্যে ‘গীতা’ অনুবাদ করতে চেয়েছিলেন এবং কিছু অংশের অতুলনীয় অনুবাদ করেও ফেলেছিলেনশক্তি চট্টোপাধ্যায়। এই অনুবাদ কর্মের পাশাপাশি কবিকে পেয়ে বসেছিল এক নাছোড় মৃত্যুভাবনা। যার থেকে বাংলা সাহিত্যের সর্বোত্তম কিছু এলিজি হালহামেশা এসে পড়েছিল ওঁর কলমে। ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাব’ বা ‘ও চিরপ্রণম্য অগ্নি আমাকে পোড়াও’ যখন লেখা হয়ে পড়ছে তখন শক্তিদার সঙ্গে এক গভীর সখ্যের পর্ব আমার। মাঝেমাঝেই নজর করছি পূর্বের সন্ধ্যার অফুরান হইহল্লা, অট্টহাস্য ও মদ্যপানের পরদিন সকালে আত্মা তোলপাড় করা এক বিষাদপদ্য এনে আমায় বলেছেন,‘শোনো। আজ প্রেসে দিচ্ছি এটা।”
আমি শুনছি, শিহরিত হচ্ছি, আর ভাবছি: কোনটা সত্যি? কালকের ওই লোকটা, না এই শক্তি? কালকের ওঁর ওই স্খলিতকণ্ঠ কিন্তু প্রাণস্ফূর্তিময় গান ‘আহা, তোমার সঙ্গে প্রাণের খেলা’, নাকি আজ সকালের এই উচ্চারণ, ‘এখন খাদের পাশে দাঁড়ালে/চাঁদ ডাকে আয় আয়…’?
পরে বুঝেছিলাম এই দুইয়ে মিলেই শক্তি। নানা ভাবে। নানা আকারে ও প্রকারে জীবনের দশ-পনেরোটা বছর শক্তি জোর কদমে নিজেকে তৈরি করেছিলেন মৃত্যুর জন্য। ওঁর প্রিয় কমলকুমার মজুমদারের একটা কথা মনে আসছে এই প্রসঙ্গে, যদিও নিজের শরীর, বা জীবন নিয়ে ছেলেখেলার লোক ছিলেন না কমলবাবু। বয়সের কারণেই হয়তো স্বাস্থ্যটা ভেঙেছিল। তা নিয়ে অনুরাগী লেখক শ্রীপান্থ প্রশ্ন করায় হেসে বলেছিলেন,‘‘আরে মশাই, প্রস্থানেরও তো একটা প্রস্তুতি লাগে!’’
প্রয়াত সত্যজিত্‌ রায়কে গুরু মেনে প্রায় একলব্যের মতো সিনেমার পাঠ নিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। কী চিত্রনাট্য রচনায়, কী সংলাপ লেখায়, কী দৃশ্য নির্মাণে, কী বিষয় গবেষণায় কিংবা ডিটেল আয়োজনায়। একেক সময় ভাবি সত্যজিত্‌ করব-করব করেও শেষ অবধি মহাভারতের সভা পর্ব নিয়ে ছবি করলেন না বলেই কি মহাভারত প্রসঙ্গকে রুপোলি পর্দায় আনতে এত উদগ্রীব হয়েছিলেন তিনি? তা হলে বারবার হৃদরোগে আক্রান্ত সত্যজিতের বাঁচার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও জীবনযাত্রার শৃঙ্খলা থেকে শিক্ষা নিলেন না কেন? সত্যজিতের এক অনুরাগিণী, শান্তিনিকেতন নিবাসী নীলাঞ্জনা সেনের কাছে এক মর্মবিদারী বৃত্তান্ত শুনেছিলাম পরিচালকের সম্ভবত দ্বিতীয় হৃদাঘাতের সময়কার। স্ট্রেচারে সত্যজিৎকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে যখন, তখন সেই শায়িত অবস্থায় কেবল অস্ফুটে বলে যাচ্ছেন, অনেক কাজ পড়ে রইল। অনেক কাজ পড়ে রইল।”
বেচারি সত্যজিৎ! সারাটা জীবন নিজেই নিজেকে গড়েছেন নিজের পরিকল্পনার কাজগুলোকে রূপ দেবেন বলে। কাজ এবং জীবনের একটা বৃত্ত প্রায় সম্পূর্ণ করে এনেছিলেন একাত্তর বছরের জীবনে। আমাকে সাক্ষাত্‌কারে বলেওছিলেন, যদি নব্বই অব্দি বাঁচি তো আশি অব্দি ছবি করতে চাই। সেই বাঁচা ও কাজে ইতি টেনে দিয়েছিল নিয়তি। তাঁর শেষ বারের মতো হাসপাতাল যাওয়ার দু’দিন আগে যখন ওঁর শেষ সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছি তখনও মৃত্যু নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারণ করছেন না। ফিরে এসেই রবিশঙ্করের ‘রাগ-অনুরাগ’য়ের ধারায় বাংলায় ওঁর জীবনস্মৃতি শোনাবার আশ্বাস দিচ্ছেন আমাকে। আমি শুধু ভেতরে ভেতরে ভাবছি, এই এক বাঙালি!
মৃত্যুর কথা বলতেন না ঋত্বিক ঘটকও। অথচ জীবনকে কী করুণ অবহেলা! দশ-পনেরো বছর ধরে জীবনকে নিয়ে প্রায় ছিনিমিনিই খেলেছেন বলতে গেলে। ওঁর অনুরাগীদের মধ্যে তখন স্বয়ং ইন্দিরা গাঁধী। ভারতের অধিকাংশ প্রতিভাধর নবীন চলচ্চিত্রকারের কাছে তিনি দ্রোণাচার্য। বেহিসেবি জীবন ও চরম মদ্যপানের মধ্যেও অদ্ভুত অদ্ভুত সব স্ক্রিপ্ট লিখে করে ফেলেছেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ আর ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’। আবার বড় বাসনা থাকা সত্ত্বেও শেষ করতে পারছেন না শিল্পী রামকিঙ্করকে নিয়ে ওঁর তথ্যচিত্র। রোজ সকালে যন্ত্রপাতি সাজিয়ে বসেন দুই শিল্পী। কথোপকথন হয়, কিছু ছবিও ওঠে। তার পর যথারীতি কখন যে সব হারিয়ে, গুলিয়ে যায়। কিঙ্করদা একদিন আফশোসের সুরে বললেন, “চেষ্টা তো হচ্ছে, কী হবে বুঝতে পারছি না।”
তিপ্পান্ন না চুয়ান্ন বছর বয়সে ঋত্বিক যখন চলে গেলেন তখন মধ্যাহ্নে আঁধার নামার শামিল সিনেমা জগতে। যদিও তিনি যে, যে-কোনও দিনই চলে যাবেন এই আশঙ্কা আমরা সারা ক্ষণই করছিলাম। বন্ধুদের মধ্যে তর্ক বাঁধত তিনি ফুরিয়ে যাচ্ছেন, না নতুন করে ফিরে আসবেন? আমরা আকাঙ্ক্ষা করতাম দ্বিতীয়টা সত্য হোক, একটা অপরূপ পুনরাগমন হোক। কিন্তু ভয়ে থাকতাম প্রথম সম্ভাবনাটার যা বাস্তবে ঘটল। পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের জন্য ওঁর কান্নার শুধু দু’ফোঁটাও যদি ওঁর নিজের শরীরটার জন্য ঝরত, ঈশ্বর জানেন বাঙালি কী পেতে পারত।
মোটামুটি কুড়ি বছরের সিনেমা জীবনে ঋত্বিক অবশ্য আশ্চর্যজনক ভাবে ওঁর সিনেমার পূর্ণাবয়ব রচনা করতে পেরেছিলেন। ‘অযান্ত্রিক’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’ থেকে ‘সুবর্ণরেখা’ হয়ে ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ একটা গোটা ঘরানার গল্প বলে, ঋত্বিক ঘরানা। এর পর ছবি করলে তিনি কী মর্মে কী ছবি করতেন আমরা ভেবে উঠতেও পারি না। আত্মজীবনীমূলক ‘যুক্তি তক্কো’কে আমরা ওঁর শেষ স্বাক্ষর বলে মেনে নিতেও পারি। কিন্তু ঋতুপর্ণ? ‘চিত্রাঙ্গদা’কে ওঁর জীবনখাতার শেষ পাতা হিসেবে পড়া কি খুব সহজ কাজ? যখন ওঁর হাতে মহাভারত পুনর্পাঠের অপেক্ষায় আমরা?
ঋতুপর্ণ ওঁর মৃত্যুর ওপরও এক জিজ্ঞাসাচিহ্ন ঝুলিয়ে চলে গিয়েছেন। মৃত্যুর একদিন আগে কাকে নিয়ে ট্যুইট করলেন? না আরেক আশ্চর্য অকালপ্রয়াণ প্রতিভা গুরু দত্তকে নিয়ে। গুরু হিন্দিতে ‘সাহেব বিবি অউর গুলাম’ তৈরি করার সময় যে সেটে বানানো প্রাসাদেই রাত কাটাতেন তার উল্লেখ করে নিজের বিস্ময়বোধের কথা বলেছেন ঋতুপর্ণ। বিস্ময়, কারণ প্রাসাদের ওই পরিবেশটাকে চিন্তা ও ধারণায় আনতে কী ব্যাকুলই না ছিলেন গুরু। কিন্তু ট্যুইটটা সম্পর্কে আমাদের বিস্ময় অন্যখানে। নিজের মৃত্যুর একদিন আগে ঘুমের ওষুধ খেয়ে মাত্র ঊনচল্লিশ বছর বয়সে আত্মহত্যা করা গুরু দত্তকে ঋতুর স্মরণ করা কি নেহাতই আকস্মিক, নিতান্তই সমাপতন? এতে কি আর কোনও গুঢ় বার্তা নেই? কিটসের কবিতার সেই মধুর মৃত্যুঘুমের আশ্লেষ আসে না?
সোজাসাপটায় বললে, ঋতুপর্ণর লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য সার্জারি, হাই সুগার বা প্যানক্রিয়াটাইটিস অবহেলার মধ্যে কি কোথাও নিজেকে নিকেশ করার একটু বাসনা লুকিয়ে আছে? ‘বাঙালি মেলোড্রামা পছন্দ করে’ এ তো ওঁর নিজেরই বিশ্বাস। যে মেলোড্রামা ফোটানোর চেষ্টা কি নেই ‘চিত্রাঙ্গদা’য়? জানি না, মহাভারত করলে উনি বেছে নিতেন কিনা চক্রব্যূহে অভিমন্যু প্রসঙ্গ, নাকি বস্ত্রহরণকালে কৌরবসভাস্থ নতনেত্র সব ক্লীব গুরুজনদের প্রতি দ্রৌপদীর আবেদন-নিবেদন। এ দু’টি প্রসঙ্গ মনে এল কারণ বাঙালিকে কাঁদানোর পক্ষে এরা মোক্ষম মহাভারতীয় উপাখ্যান। কিন্তু অতখানি তর সয়নি ঋতুপর্ণর, তার আগে আরও সহজ একটা পথ পেয়ে গেলেন তিনি।
যে পথ ধরেছিলেন, অনেকটাই পরিস্থিতির চাপে, আরেক মহান বাঙালি-কাঁদানো প্রতিভা উত্তমকুমার। কী আর বয়স তখন? মোটে চুয়ান্ন, ঋতুপর্ণর চেয়ে প্রায় দু’ বছরের বড়। কিন্তু জীবনের শেষ পাঁচ-সাতটা বছর ধরে তারও এক যাই-যাই ভাব। যখন অভিনয় ক্ষমতার তুঙ্গে, অথচ বয়সের কারণে নায়ক থেকে ক্যারেক্টর রোলে সরে আসতে হচ্ছে একটু একটু করে। মহানায়কের মনে সেটা ক্ষতের কারণ হচ্ছে। সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে পারিবারিক অশান্তি। তিনি আশ্রয় নিচ্ছেন জনি ওয়াকার-ব্ল্যাক লেবেলে।
এই সময়ের কিছু করুণ স্মৃতির খোঁজ পাচ্ছি আমরা। একেবারে শেষ দিকে স্বয়ং সত্যজিত্‌ রায়ের শরণ নিয়েছিলেন উত্তম। জীবনটাকে ফের বশে আনার ব্যাপারে পরামর্শ চেয়েছিলেন। নিঃসঙ্গে ভেঙে পড়া নায়ককে সন্ধেবেলায় সঙ্গ দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন সত্যজিত্‌ তাঁর নিজের আবিষ্কার ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়কে। আমার বন্ধু শিল্পী ব্রতীন দে-র কাছে সুন্দর বর্ণনা শুনেছি ধৃতিমানের বাড়ির সেই সব সন্ধের। উত্তম আসছেন একটা ওয়াইন কেসে এক বোতল ব্ল্যাক লেবেল, দু’টো গেলাস আর দু’টো সোডা নিয়ে। তার পর দুই অভিনেতা বসে বার্গম্যানের ছবি দেখতে দেখতে পানে ও আলাপে রাত বাড়িয়ে ফেলছেন।
কিন্তু ও সুখও বেশি দিন সয়নি উত্তমের। মনের ও পরিবারের অশান্তি চরমে উঠতে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাও রদ হতে চলেছিল ওঁর। ষাটের দশকের মাঝামাঝি যে হৃদরোগ ধরেছিল ওঁর। তারই কিস্তি পড়ল ১৯৮০-র বর্ষাকালে। এক রাতের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন নার্সিং হোমে, সকালে আর নিজের পায়ে হেঁটে ফিরতে পারেননি। সত্যজিত্‌ রায় খবর শুনে বলেছিলেন, ও রকমটি আর হবে না। আর স্ত্রী বিজয়া রায়ের কাছে খেদ করেছিলেন, ওকে আর নতুন করে কাজে লাগানো হল না।
তুলনায় ধ্বংস আর নির্মাণের মধ্যেই দিব্যি পাঁকাল মাছটির মতো জীবনটা কাটিয়ে গেলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। দিনের আর রাতের যেন দুই সুনীল। রাত অব্দি আকণ্ঠ পান করা সুনীল পরদিন সকালে কী করে পাতার পর পাতা নামাতেন, পুজো সংখ্যার উপন্যাসের কী ‘দেশ’য়ের ধারাবাহিকের, এ আমার কাছে আজও এক রহস্য। এক সন্ধ্যায় অটোমোবাইল ক্লাবে দীর্ঘ ক্ষণ কথা হচ্ছিল ওঁর সঙ্গে। রবার্ট গ্রেভসের ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘আই ক্লডিয়াস’ নিয়ে। উপন্যাসটা তখন উনি পড়ছিলেন। সন্ধের শেষে ইউরিনালে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দেখি ক্লান্তিতে ওঁর চোখ বুজে আসছে। বললাম তা হলে রাতে ফিরে ‘আই ক্লডিয়াস’ ধরছেন? হতাশার সুরে বললেন, কী করে হবে বলো? কাল সকালে ফের ‘সেই সময়’য়ের কিস্তি নামাতে হবে যে!

শক্তিদা ঠাট্টা করে বলতেন, ভাগ্যিস সুনীল দু’বেলা লেখে না! না হলে যে কী ভল্যুম দাঁড়াত ওর লেখাপত্তরের। তখন আমি ঠাট্টা করতাম, তা আপনি তো দু’বেলা লিখলে পারতেন। কবির উত্তর আসত, ‘পাগল! সারাদিন পদ্য বা গদ্য লেখার চেয়ে পটল তোলা ভাল। ছোঃ!’
সুনীলদা বস্তুত এক তৃতীয় বাঙালি। ধর্মেও আছেন, জিরাফেও আছেন। গদ্য পদ্য মদ্য সবেতেই হাজির। সামান্য ক’মাসের জন্য রবীন্দ্রনাথকে বয়সে ছুঁতে পারেননি, যদিও লেখার পরিমাণে দিব্যি ছাপিয়ে গিয়েছেন।
দ্বিতীয় বাঙালি তা হলে কে? ধরা যাক, নীরদ চন্দ্র চৌধুরী। সেঞ্চুরি করলেন বয়সে, আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড ‘দাই হ্যান্ড, গ্রেট অ্যানার্ক’ লিখলেন নব্বুইয়ের কোঠার বয়সে। আর ওই বয়সেই ওঁর অক্সফোর্ডের ডেরায় প্রায়ান্ধ চোখের সামনে আতস কাচ দিয়ে প্রাচীন পুঁথি ও মানচিত্র পড়ছেনযে দৃশ্য দেখে হতবাক তাঁর অতিথি, বাঙালি প্রাবন্ধিক সুকুমারী ভট্টাচার্য।
আর প্রথম বাঙালি? বলা বাহুল্য, সেই সব হঠকারী জীবন নিয়ে জুয়ো খেলা, প্রতিভাধর আত্মঘাতী বাঙালি, যার ক’টি মাত্র সেরা মুখ শক্তি, ঋত্বিক, উত্তম। এঁদের সঙ্গে জুড়তে পারি গুরু দত্ত পত্নী গীতা দত্তকে। স্বামীপ্রেমে দিশেহারা যে রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী মাত্র একচল্লিশ বছরে শেষ করে দিলেন নিজের জীবনটাকে শুধু চোখের জল, মনের ব্যথা আর মদিরায়। আর মৃত্যুর আগে গেয়ে গেলেন সর্বকালের এক সেরা হিন্দি গান ‘মুঝে জান কহো মেরি জান’।
সেই প্রথম ও প্রিয় বাঙালির তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ঋতুপর্ণ ঘোষ।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>