| 29 নভেম্বর 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

তিনটি অণুগল্প । অমিতা মজুমদার

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

দৃষ্টিপাত

সামনের বাড়ির বারান্দায় সে রোজ দাঁড়িয়ে থাকে।

নতুন এসেছে ও বাড়িতে।

তাকে দেখা অবধি মেঘের সবকিছু যেন একজায়গায় থেমে আছে।

দিন সাতেক পরে থাকতে না পেরে ও বাড়ির দরজার কড়া নাড়ে মেঘ।

দরজা খুলে সে দাঁড়ায়।

মেঘ কেমন ঘামতে থাকে এই মাঘ মাসেও।

বসুন বাবাকে ডেকে দিচ্ছি,মেঘের চোখে চোখ রেখে  এ কথা বলে সে চলে যায়।

এই বয়সের কোনো মেয়ে অপরিচিত কাউকে এমন সহজ করে বলতে পারে ভেবে মেঘ একটু অবাকই হয়।

বসার ঘরে ঢুকে কেমন আচ্ছন্নের মতো বসে পড়ে মেঘ। মেয়েটির বাবা এসে বলেন বসো ইয়ংম্যান, জল খাবে?

তুমি তো সামনের বাড়িতে থাকো।ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ো,শেষ বর্ষ।

মেঘ অবাক হয় ইনি তার সম্পর্কে এত কিছু জানেন!

জল মিষ্টি নিয়ে সে দরজায় দাঁড়ায়।

বাবা হাত থেকে প্লেট গ্লাস নিয়ে মেঘকে দেয়।

দিতে দিতে বলে–তুমি কেন এসেছ আমি জানি।

শিশির আমার মেয়ে। তোমার অস্বস্তির কোনো কারণ নেই।ও জন্মান্ধ।

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,bangla anu golpo amita mazumder

সহযাত্রী

 গলায় আঁচল জড়িয়ে  উঠোনের তুলসীতলায় প্রণাম করে। শহরে থাকা ছেলে, বউমা,নাতনির মঙ্গল কামনায় একবার বেশি মাথা ঠেকায়।

সত্তরোর্ধ মন্দিরাদেবীর এটা  অভ্যাস বলা যায়।

ঠিক যেমন, আকবরের মা ফজরের নামাজ শেষে জায়নামাজে বসে একইভাবে আকবর আর তার পরিবারের জন্য দোয়া-দরুদ পড়ে। 

এই দুই প্রতিবেশী বিধবা আপন অঙ্গন ঠিক নয়, স্বামীর ভিটা ছেড়ে ছেলের কাছে যেতে চায়নি দু’টো কারণে।

এক জন্ম-জন্মান্তরের সংস্কার আবার স্বকীয়তার অহংকার। চিরায়ত নারীসত্তা বাধা হয়ে রয়ে গেছে।

কিন্তু মাতৃসত্তা উভয়কে পীড়িত করে।

হঠাৎ খবর আসে কী এক মরণব্যাধি দুজনের ছেলেকেই কেড়ে নিয়েছে।

খবর পেয়ে দুজনেই ছোটে সব সংস্কার ঝেড়ে ফেলে ছেলের বউদের পাশে দাঁড়াবে বলে।

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,bangla anu golpo amita mazumder

কাছে থাকা সাথে থাকা

ছেঁড়া কাগজের টুকরোগুলো ঘরময় ছড়িয়ে আছে। ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে অনুভার। অখিলেশ টেরও পায়না অনুভার আসা। কি এমন লিখতে চাইছে অখিলেশ ! যা তাকে এতটা আত্মস্থ করে রেখেছে ? অনুভা কাগজগুলো তুলে নিয়ে বাইরে আসে। এভাবে দেখা ঠিক নয় জেনেও, অখিলেশের অস্থিরতা দেখে কাগজের টুকরোগুলো মেলে ধরে চোখের সামনে । কিন্তু কাগজগুলো সাদা। তাহলে কি কিছু বলতে চায় অখিলেশ? অনুভা ঘরে ঢুকে অখিলেশের কাঁধে হাত রাখে। অখিলেশ যেন এই হাতটাই খুঁজছিল,যার ছোঁয়া পেতেই নিজেকে সমর্পন করে। অনুভাকে জড়িয়ে ধরে শিশুর মতো কেঁদে ফেলে।

আমি আর পারছি না। আমাকে ক্ষমা করো । আমি প্রিয়ার সাথে থাকতে চাই।

অনুভা খুব শান্ত গলায় বলে তুমি চলে যেতে পারো।

তুমি কাছে থেকেও অনেকদিন ধরেই আমার সাথে ছিলে না।একা থাকা অভ্যাস হয়ে গেছে  আমার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত