Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, bangla anugolpo amita mazumder

দুটি অণুগল্প । অমিতা মজুমদার

Reading Time: 2 minutes
 সুখপাখির খোঁজে
তার নাম এখলাস মিয়া।
ছোটখাটো গড়নের মানুষটা ঢাকা শহরে রিক্সা চালায় বিশ বছর ধরে।
তাও গায়ের রঙ যাকে বলে কাঁচা সোনার মতো।
চোখে মোটা লেন্সের চশমা।
ধবধবে সাদা দাড়ি বেশ লম্বা।
রিক্সা তার নিজের।
বয়স বোঝা যায় আবার যায় না।
দেখলে মনে হয় পঞ্চাশ পেরিয়েছে,কিন্তু রিক্সার প্যাডেলে যখন পা চালায় তখন মনে হয়  বছর পঁচিশ হবে হয়তো।
যতক্ষণ তার রিক্সায়   থাকা যায়,গল্প শোনা যায় বাড়তি পাওনা হিসেবে।
নিজের রিক্সা বলে একবেলা চালায় বেশিরভাগ সময়।
ছেলে মেয়ে বিয়ে দিয়ে আলাদা করে দিয়েছে।
স্ত্রী সুফিয়া খাতুন আর সে থাকে ভাড়া বাসায়।
ছেলের ঘরের নাতিকে  কাছে রেখেছে,তার সব খরচ বহন করে এখলাস মিয়া।
নাতির লেখাপড়া,কোচিং সব নিজের কাঁধে নিয়েছে যাতে ছেলের উপরে চাপ না পড়ে।
একেবারে পরিষ্কার হিসাব।
এহেন এখলাস মিয়াকে বড়ো বড়ো পাশ দেওয়া,বড়ো অফিসে স্যুট টাই পরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে একাকী বসে বসে একটি সই দেওয়ার জন্য কী কী শর্ত রাখা যায়,কত বাড়তি উপঢৌকন পাওয়া যায়,এবারের সিংগাপুর ট্রিপটা ম্যানেজ করা যায় কি-না এ সব গোলমেলে হিসেবের মধ্যে দর দর করে ঘামতে থাকা মানুষটার চেয়ে  সুখী মানুষ বলেই ভাবতে ভালো লাগে।
নিরবের নীরব প্রস্থান
আজ নিরব বাড়ি যাচ্ছে। দূরপাল্লার লঞ্চে চড়ে। তারা সবাই মিলে বাড়িতে যায় বছরে দুইবার। একবার শীতকালে বার্ষিক পরীক্ষার পর। দাদাবাড়ি নানাবাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় দুইবাড়িতেই মজা করে কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেয়। শীতকালে বেশি মজা হয় । শীতের পিঠা,খেজুরের রস, যাত্রাপালা, পুকুরে মাছ ধরা সব মিলিয়ে চাচাতো,মামাতো ভাইবোনদের সাথে হৈ হৈ করে দিন পার করা সে এক অন্যজীবন। সে সময় পড়ালেখা নিয়েও কেউ কিছু বলে না। আর গরমের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া মানেই আম-জাম-লিচু,কলা কাঁঠালের সাথেই যেন ঘরবসতি হয়ে যায়। এছাড়াও ঢাকায় যেসব ফল পাওয়া যায় না সেরকম কত ফল যে বাড়ি গেলে ভাই-বোনদের সাথে খায়। যখন ফিরে আসে দাদী,নানী কত কী দিয়ে দেয়।  চাচী,মামীরা বারবার বলে আবার যেন যাই।
আর যাওয়ার সময় লঞ্চে যেতে যেতে কত আনন্দ করে সে আর ছোটবোন মিলে। বাবা মাও এসময় কোনো কিছু কিনতে চাইলে না করে না। 
কিন্তু এবারে যেন সবকিছু অন্যরকম হয়ে গেছে। তারা বাড়ি যাচ্ছে কিন্তু কারও মনে কোনো আনন্দ নাই। ঢাকা থেকে একেবারে  চলে যাচ্ছে। বাবার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। ঘর ভাড়া দিতে পারছে না বলে বাড়িওয়ালা খুব খারাপ ভাবে তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে বলেছে। স্কুলও বন্ধ,কবে খুলবে কেউ জানে না।
তাই বাবা সবকিছু নিয়ে দেশের বাড়ি চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লঞ্চ চলছে মেঘনার বুকে জল কেটে কেটে  ঠিক দাদার পুকুরের মাছগুলোর মতো।সেদিকে চেয়ে নিরবের কিশোর মনে আসে নানা ভাবনা, এইযে বাড়ি যাচ্ছে তার কি আর স্কুলে যাওয়া হবে ? এখানে সে যে বন্ধুদের রেখে যাচ্ছে তাদের সাথে কি আর দেখা হবে? তার ক্রিকেটার হবার ইচ্ছা কি পূরণ হবে ? ছোটবোন টুসি যে ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখে তার কি হবে? এরকম হাজারো প্রশ্নের ভিড়ে নিরবের চোখ থেকে দু’ফোঁটা জল কখন গড়িয়ে পরে তা নিরবও টের পায় না। 
(চলমান বৈশ্বিক দুর্যোগে এরকম অনেক নিরব,টুসির স্বপ্নগুলো যেন হারিয়ে না যায় ) করোনা’র কারণে ২০২০ সালের এই দিনে এক কিশোর আর তার পরিবারের লঞ্চে বাড়ি যাওয়ার দৃশ্য দেখেছিলাম টিভিতে।
তখন লিখেছিলাম।
১১/০৬/২০২০
এবছরেও তাদের আর ফেরা হলো না।

One thought on “দুটি অণুগল্প । অমিতা মজুমদার

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>