| 23 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

ইরাবতীর ছোটগল্প: নৌকা বিলাস । স্বপন বিশ্বাস

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট
নদীর ঘাটে কি এক বস্তু ভেসে এসেছে। শেষ রাতের অন্ধকার ছিঁড়েফুঁড়ে সে খবর ভুবন ডাঙার মানুষদের মাঝে চাউর হয়ে গেল। সবাই হৈ হৈ রৈ রৈ করে ছুটল নদীর ঘাটে। মেয়েরা ঘুম জড়ানো চোখে গায়ের কাপড় টানতে টানতে দৌড়াল। কোন কোন পূরুষেরা রাতের খুলে ফেলা পোষাক নিতে ভুলে গেল। তাই নিয়ে ভুবন ডাঙায় নতুন নতুন গল্পের জন্ম হল। তবে সব গল্পকে হার মানিয়ে দিল হাবুলের বউ। সে সারা রাত প্রসব বেদনায় ছটফট করছিল। দাইমা তেল পড়া, গরম জল আর বাচ্চার নাড়ী কাটার বাঁশের চটা নিয়ে অপেক্ষা করছিল। নদীর ঘাটের খবর শুনে সে প্রসব বেদনা ভুলে গেল। দাইমার হাত ধরে হাজির হল নদীর ঘাটে। সেখানেই হাবুলের বউয়ের বাচ্চা হল।
আশেপাশের গ্রাম থেকে লোকজন ছুটে আসল। যারা হাটে বাজারে বা মেলার মাঠে দোকান বসায় তারা ছুটে এল তাদের দোকান নিয়ে। নদীর ঘাটে মেলা বসে গেল। এলাকার গন্যমান্য নেতৃস্থানীয় লোকজন এসে হাজির হল। মেলার মাঠে বক্তৃতা দেয়ার জন্য মাইক লাগানো হল। ব্যাটারী চালিত মাইক। ভুবন ডাঙায় এখনও বিদ্যুতের আলো পৌঁছেনি। শুধু বিদ্যুতের আলোই নয়- পৃথিবীর উন্নয়নের তেমন কোন ছোঁয়াই লাগেনি এই জনপদে। ভুবনডাঙার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রবল স্রোতস্বিনী এক নদী, যাকে মহাসাগর বললেও হয়তো কম বলা হবে। নদীর এপারের মানুষরা কখনই অন্য পারের চেহারা দেখেনি। যারা গেছে তারা আর কোনদিন ফিরে আসেনি। যদিও ফিরে আসার জন্য কেউ এই নদী পাড়ি দেয় না। যারা এই খরস্রোতা নদীর হাঙর কুমির ঝড়-ঝঞ্জা পার হয়ে অন্য পাড়ে পৌঁছে তারা নাকি অমর হয়ে যায়। ওপারের যে দেশ সেখানে কোন রোগ নাই, শোক নাই। গাছে গাছে নানা রকম সুস্বাদু ফল। সোনার পাহাড় থেকে যে ঝর্ণাধারা নেমে আসে তাতে সুমিষ্ট দুধের নহর বয়ে যায়। সোনায় মোড়া গাছে গাছে পাখিরা বসে গান গায়, মানুষের মত কথা বলে। মানুষেরাও পাখির মত উড়তে পারে। উড়তে উড়তে পরীদের সাথে প্রেমালাপে মত্ত হয়। মেঘের মাঝে তারা লুকোচুরি খেলে। এপারের মেয়েরা ওপারে গিয়ে পরীর মত সুন্দরী হয়ে যায়। তারপর পাখা মেলে প্রজাপতিদের সাথে ফুলে ফুলে ঘুরে বেরায়। সেখানে সব সময় বসন্তকাল আর প্রতিরাতই আলো ঝলমলে পূর্নিমার রাত।
এইসব ঘটনা এপারের মানুষেরা কিভাবে জেনেছে তা কেউ বলতে পারে না। সবাই তাদের পূর্ব পূরুষের কাছ থেকে ওপারের গল্প শুনেছে। তারা শুনেছে তাদের পূর্বপূরুষদের কাছ থেকে। একদিন নদী পাড়ি দিয়ে ওপারে গিয়ে সবাই অমর হবে, এমন বিশ্বাস নিয়েই এই জনপদের মানুষদের জীবন যাপন। তাদের মূল কাজ সারা জীবন ধরে একটা নৌকা তৈরী করা। তারপর সেই নৌকায় কয়েক বছর চলার মত খাদ্য সামগ্রী আর বিপদ আপদ মোকাবিলা করার সরন্জামাদি বোঝাই করে একদিন নদীতে নেমে পড়া। কেউ কাউকে সাথে নেয় না। সেটাই নিয়ম। হতে পারে যাত্রী সংখ্যা বেশি হলে পথে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তাই যার যার জমানো রসদ নিয়ে সে সে রওনা হয়।
পথের খাবার আর বিপদ আপদের কথা চিন্তা করে নৌকাটাকে মজবুত আর বড় করে বানাতে হয়। তবে তার জন্য কেউ কোন নির্দিষ্ট মাপ মেনে চলে না। যার যেমন খুশি বানায়। এখানকার মানুষেরা দিনে মাছ ধরে, ক্ষেতে ফসল ফলায় আর রাতে মশাল জ্বেলে নৌকা তৈরী করে। অনেকের মতে, ক্রিস্টোফার কলম্বাস নাকি তার ভারত অভিযানে এই অঞ্চলটি দেখেছিলেন। তার ভ্রমণ কাহিনীতে নানা রকম অদ্ভুত অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে। এমন এক অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে কলম্বাস লিখেছেন, তাঁর জাহাজের নাবিকেরা একটি অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি এবং আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন। এ ছাড়া তিনি কম্পাসের উল্টাপাল্টা দিক নির্দেশের কথাও বর্ণনা করেছেন। তারপর তিনি গতিপথ পরিবর্তন করে নতুন আরেক দেশে গিয়ে হাজির হলেন। পরে যার নাম দেয়া হয়েছে আমেরিকা। ঘটনা সত্য হলেও হতে পারে। হয়তো কলম্বাসের জাহাজের নাবিকেরা নৌকা তৈরীর মশালের আলোই দেখেছিলেন। তবে কলম্বাসের ভ্রমণ কাহিনীতেও নদীর ওপারে যে দেশ তার কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলে ভাল হত। একটা প্রমাণপত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেত। যুগযুগ ধরে মানুষ যা বিশ্বাস করে আসছে তা তো আর মিথ্যা হতে পারে না। তবু মানুষ প্রমাণ চায়। অজানা সেই দেশ সম্পর্কে জানতে চায়। জানতে চাইলেই তো আর সব কিছু জানা যায় না। কেউ তো সেখান থেকে ফিরে এসে গল্প বলে যাবে না।
ভুবন ডাঙার পরাণ মাঝি সেই জানানোর দায়িত্ব নিয়ে নিলেন। তিনি ভাবুক কিছিমের মানুষ। পদ রচনা করেন। মানুষ তার কিছু বোঝে, কিছু বোঝে না। তবে তারা পদ শুনে সবাই আনন্দ পায়। পরাণ মাঝি ঠিক করলেন, তিনি ওপার থেকে ফিরে আসবেন না কিন্তু লিখিত ভাবে সব কিছু জানাবেন। তার জন্য একটা কাঠের বাক্স বানান হল। গাবের কষ দিয়ে পানেট করা হল। আলকাতরা লাগান হল যাতে সেই বাক্সে জল না ঢোকে। সাথে খাতা কলম নেয়া হল। ওপারে পৌঁছানোর পরে সবকিছু বিস্তারিত ভাবে লিখে বাক্সে ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেবে।
নৌকা ভাসানোর কিছুদিন পূর্বে পরাণ মাঝি একটি ভোজ সভার আয়োজন করলেন। সেখানে সেই বাক্সটি সবইকে দেখানো হল। বাক্সের গুরুত্ব বর্ণনা করা হল। এই বাক্স যখন ফিরে আসবে তখন তার ভেতরে ওপারের সব কিছু বর্ণনা করা থাকবে।
ভুবন ডাঙার মানুষেরা একদিন ঢাক-ঢোল বাদ্য-বাজনা সহযোগে পরাণ মাঝিকে বিদায় জানাল এবং অপেক্ষায় থাকল বাক্সটি কবে ফেরত আসবে। অনেকদিন যাবৎ সবার চোখ খুঁজে ফিরল সেই বাক্স। মাস গেল। বছর গেল। তারপর একদিন ভুবন ডাঙার মানুষেরা ভুলে গেল পরাণ মাঝির বাক্সের কথা।
সেই বাক্স আজ এতোকাল পরে ভুবন ডাঙার ঘাটে এসে হাজির হয়েছে। ছোটরা না চিনলেও বড়রা সবাই নিশ্চিত হল যে, এই বাক্সই পরাণ মাঝির সেই বাক্স। পরাণ মাঝির নাম পর্যন্ত খোদাই করে বাক্সের উপরে লেখা আছে। পিতা-জীবন মাঝি। সাং- ভুবন ডাঙা।
ভুবনডাঙার রাজা বাহাদুর পর্যন্ত এসে হাজির হলেন ঘাটে। সাথে তার পাইক পেয়াদা, সভাসদগণ। রাজা বাহাদুরের নির্দেশে বাক্সটি তুলে আনা হল নদীর ঘাট থেকে। সবাই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। টান টান উত্তেজনা। সবাই জানতে চায় কি লেখা আছে সেই বাক্সের মাঝে। যারা পড়তে পারে তারা নিজে পড়ে দেখতে চায়। যারা পড়তে পারে না তারা শুনতে চায়। প্রাণ ভরে শুনতে চায় সেই অজানা জগতের বিবরণ। শেষ পর্যন্ত রাজা বাহাদুর নিজ হাতে বাক্সটি খুললেন। ভেতর থেকে একটি খাতা বের করলেন। সবাই নিশ্চিত হল একটি খাতা ফেরত এসেছে। রাজা পাতা উল্টালেন। একে একে সবগুলো পাতা উল্টালেন। তারপর একটি পাতায় এসে থামলেন। মানুষের উত্তেজনা তখন চরমে। সবাই বাকরুদ্ধ, দৃষ্টি স্থির হয়ে আছে রাজার দিকে। রাজ পড়ছেন। মনে মনে। তাকে খুব বিমর্ষ আর চিন্তিত মনে হল। তিনি মাইকের সামনে থেকে সরে গিয়ে সভাসদদের সাথে নিচু স্বরে কথা বলেন। জনগণের ভেতর থেকে তখন একটি মৃদু গুন্জন উঠল। তবে কি সব মিথ্যা? এতোদিন যা কিছু শুনে এসেছে সব মিথ্যা! এমন সময় রাজা উঠে এলেন মাইকের সামনে। তিনি ধীর স্থির ভাবে, গম্ভীর কন্ঠে ঘোষনা দিলেন। পরাণ মাঝি নতুন কিছু লিখে পাঠায়নি। আপনারা এতোদিন ধরে যে কথা শুনে এসেছেন সেটাই সত্য। চরম সত্য। যাদের মনে দ্বিধা, দ্বন্দ্ব বা কোন রকমের সংশয় তৈরী হয়েছিল তাদেরকে সবকিছু ভুলে আবার নৌকা তৈরিতে মন দিতে হবে। আমাদের সবাইকে একদিন নদীর ওপারে গিয়ে পৌঁছাতে হবে। মানুষের মাঝে তখন চাপা উত্তেজনা। তাদের ধারণা সত্য জেনে কিছুটা আশ্বস্থ হয়েছে। তবে সবাই শুনতে চায় পরাণ মাঝি আসলে কি লিখেছে। শেষ পর্যন্ত রাজা পড়লেন পরাণ মাঝির লেখা ছোট্ট একটি পদ।
সাপের পাঁচ পা, ঘোড়ার ডিম,
আশার বাতিঘর জ্বলে টিম টিম।
অকাল কুষ্মান্ড দেখে অমাবশ্যার চাঁদ
ভুবন জুড়িয়া পাতা নানারঙের ফাঁদ।
এই পদ শুনে কেউ কিছু বুঝল না কিন্তু আগ্রহটা চরমে পৌঁছাল। সবাই আরও শুনতে চায়। বিস্তারিত বিবরণ শুনতে চায়।রাজা আরও দুবার পদটি পড়ে শুনালেন। তারপর বললেন, আমিও আপনাদের মতো বিস্তারিত কিছু আশা করে ছিলাম। কিন্তু পরাণ এইটুকুই লিখেছে। তবে এই অল্প কথার ভেতরেই সে সব কথা বলে দিয়েছে। আমাদেরকে বুঝে নিতে হবে। তারপর তিনি তার সভার একজন পন্ডিতকে ইঙ্গিত করে বললেন, তিনি আপনাদের সব কিছু বুঝিয়ে বলবেন। পন্ডিত উঠে এসে বললেন, আমাদের মহামান্য রাজা বাহাদুর অতি সুন্দর ভাবে আপনাদেরকে বুঝিয়ে বলেছেন। তার অতিরিক্ত কিছু বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। তবে পরাণ অতি ক্ষুদ্র পরিসরে যা লিখেছে তা বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শন।
এতক্ষণ যারা রাজা ও পন্ডিতের কথা বোঝার জন্য হা করে অপেক্ষা করতে ছিল তাদের হা আরও একটু বড় হল। তবে কিছুই বুঝতে পারল না।
পন্ডিত বললেন, সাপের পাঁচ পা আর ঘোড়ার ডিম আমাদের ভুবন ডাঙায় অসম্ভব। এই ধরণের সব অসম্ভব ঘটনাই ওপারে সম্ভব। পরাণ সেসব দেখেই এ কথা লিখেছে। তারপর সুন্দর ভাবে লিখেছে বাতিঘরের কথা। নৌকা নিয়ে নদী পাড়ি দেয়ার সময় সেই টিম টিম বাতি দেখে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যেন কেউ ভুল পথে না চলি। ভুল পথে গেলে ভুল দেশে পৌঁছে যাব। তারপর পরাণ আরও লিখেছে অকাল কুষ্মান্ডের মতো একজন অপদার্থ, নগন্য ব্যক্তিও আঁধার রাতে চাঁদের আলো দেখতে পারবে। অর্থাৎ সেখানে ছোট-বড় কোন ভেদাভেদ নেই। সবাই সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবে। পরাণের লেখার শেষ লাইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ভুবন ডাঙায় আমরা নান রকম লোভ লালসা আর মায়ার জালে আবদ্ধ হয়ে থাকি। নানা কাজে ব্যস্ত থাকি। নৌকা তৈরিতে গাফিলতি করি। আমাদের এইসব লোভ লালসার জাল ছিন্ন করে ওপারের বাতিঘরের টিম টিম আলোর দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আজ থেকে সেটাই হবে আমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
পন্ডিতের কথা শুনে অনেকেই তাদের কৃতকর্মের জন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। নানা রকম দ্বিধা দ্বন্দ্বের কারণে যাদের নৌকা তৈরীর কাজ পিছিয়ে পড়েছে তারা কেউ কেউ মনের দুঃখে কেঁদে ফেলল। কেউ কেউ একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। এই মুচকি হাসির মানুষদের কেউ কেউ কিছুটা শিক্ষিত। তারা বুঝেছে, পরাণ মাঝি যা লিখে পাঠিয়েছে তার অর্থ ওপারের যে গল্প এতোদিন শুনে এসেছে তা মিথ্যা। তা অসম্ভব আর অবান্তর। ভুবন ডাঙার মানুষেরা কল্প কথার মিথ্যা গল্পের ফাঁদে আঁটকে আছে। সত্যি কথা সরাসরি লিখলে রাজা বাহাদুর তা মানবে না। তাই পরাণ মাঝি একটু কায়দা করে লিখেছে। এই অবিশ্বাসী মানুষদের কেউ কেউ মনে করে এই বাক্সের ঘটনাটাই রাজা বাহাদুরের সাজানো নাটক। তা না হলে, এই স্রোতের নদীতে ওপার থেকে বাক্স ভাসিয়ে দিলে এপারের ভুবনডাঙার ঘাটেইবা উঠবে কেন? কয়েক ক্রোশ আগে পিছেও তো যেতে পারত। স্রোতের নিয়ম অনুযায়ী তেমনটাই তো হওয়ার কথা। তারা মনে করে, রাজা চায় মানুষ সব সময় ওপারের স্বপ্নে বিভোর হয়ে নৌকা তৈরীর কাজে ব্যস্ত থাকে। যাতে রাজা বাহাদুরের কাজের কোন প্রতিবাদ বা সমালোচনা কেউ না করে।
ভুবনডাঙার মানুষেরা পরাণ মাঝির পদ নিয়ে বেশ কিছুদিন ব্যস্ত থাকল। কেউ পক্ষে বলে, কেউ বিপক্ষে। একই কথার দু’ রকমের অর্থ পাওয়া গেল। যার যার বিশ্বাসে সবাই অটল থাকল। পরাণ মাঝির বার্তা কারও মনেই তেমন কোন পরিবর্তন আনতে পারল না। বরং দু’ পক্ষের বিশ্বাসের ভিতই কিছুটা শক্ত হল। এক বাউল গায়ক নতুন গান বাঁধল-
ওই পারেতে যাব বলে মনে ছিল আশা
মাঝ দরিয়ায় নাও ডুবিয়া হইলাম সর্বনাশা।
সারা জীবন নাও না-বাইন্ধা মনরে আগে বান্ধ
ওপারেতে সুখের আশায় এপারে কেন কান্দ।
এপারেতে নগদ যা পাও তাই নিয়ে সব বাঁচ
কল্প কথার গল্প ভুলে দুহাত তুলে নাচ।
ধন্য আশা কুহকিনী ওরে অবুঝ চাষা
মাঝ দরিয়ায় নাও ডুবিয়া হইলাম সর্বনাশা।
বাউল তার এই গান গ্রামে গ্রামে গেয়ে বেড়ায়। গানের সুরে মুগ্ধ হয়ে গ্রামের লোকেরা তা তাদের নিজেদের গলায় তুলে নেয়। এভাবে গানের খবর পৌঁছে যায় রাজা বাহাদুরে কানে। বাউলকে ডেকে পাঠায় রাজা। তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে আদর আপ্যায়ন করে।রাজার দরবারে চাকরি দিতে চায়। বাউলের ভবঘুরে জীবন। সে রাজার খাঁচায় বন্দি হতে চায় না। সে স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেরায়। নদীতে তার নৌকা ভাসানোর কোন পরিকল্পনা নেই। তবে একদিন বাউল নিজেই নৌকার মতো ভেসে উঠল ভুবনডাঙার ঘাটে। কেন হল, কি ভাবে হল, কেউ কিছু জানে না। ভুবনডাঙার মানুষেরা কিছুদিন হাহাকার করল বাউলের জন্য। তারপর সবাই তার কথা ভুলে গেল। তবে বাউলের গান থেকে গেল মানুষের কন্ঠে কন্ঠে। ভুবনডাঙার বিশ্বাসী মানুষেরা এখনও নদীতে মাছ ধরে, ক্ষেতে ফসল ফলায়। রাতে মশাল জ্বালিয়ে বাউলের গান গাইতে গাইতে নৌকা তৈরী করে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত