ইটটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় টুপুর।স্থির চোখে একবার দিগন্তের দিকে তাকায়।তারপর চোখ চলে যায় পায়ের নীচের দিকেমাটিতে।রঞ্জনকাকু উপুড় হয়ে পড়ে আছে।মুখের একটা অংশ দেখা যাচ্ছে।সেখানে অসংখ্য শাখা -প্রশাখা এঁকেছে রক্তের লাল নদী।মাথার পিছনটা দলামচা।আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে বলক মেরে লাভা বেরিয়ে আসে।কতদূর পর্যন্ত গড়িয়ে গড়িয়ে যায় সেই উত্তপ্ত তরল পাঁকমাটি।
হাতের আধলা ইটটা রক্ত মাংস ঘিলুতে মাখামাখি।একটু আগে সে দুবার চুমু খেয়েছিল পরপর।প্রথমবার চুমুটা হৃদয়াবেগের প্রকাশহয় যদি, দ্বিতীয়বারেরটা ছিল আশ্লেষের আস্বাদন। রঞ্জনকাকুকে নয়, সে একজন পুরুষকে চুমু খেয়েছিল।কিন্তু তাই বলেতার যে একটা গোটা জন্মের ঘুম দরকার সে কথাও ভোলেনি।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছিল মাঠের এ দিকটায়।খানিকটা নির্জন এ জায়গা।গ্রাম থেকে বেরিয়ে বাস ধরতে অনেকে শর্টকাট করার জন্য রাস্তাটা ব্যবহার করে।ফলসাগোড়ের পাড় দিয়ে বড় বড় শ্যামা আর মুথা ঘাসের বন হয়ে আছে। পুকুরের পর উঁচু একটা চওড়া আল।চোর কাঁটা আর ওই ঘাসে ভরা। মাঝে পায়ে চলাচলের সরু দাগ।পুকুর পাড় থেকে হাত কতক ডানদিকে নেমে এলে পরিত্যক্ত ইটের পাঁজা।সৎপথীরা কবে যেন এখানে দালান বানাবার জন্য ইট বানিয়েছিল, কোনো গুপ্ত কারণে তার ব্যবহার হয়নি।কাছাকাছি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কিছু কিছু ইট।কেউ কখনও খুলে নিয়ে গিয়েছে।ও এসে একটা স্তুপের গায়ে ঠেসান দিয়ে বসেছিল।ফাল্গুন মাসে রোদের কামড় এখনও তত প্রখর নয় বলে সে বসে ছিল তো বসেই ছিল।কতক্ষণ কে জানে! একটু আগে রঞ্জনকাকু এলো।
এমন সে বেরিয়ে পড়ে।তাতে কারই বা কী যায় আসে? বরং বাড়ি ফেরার পর ওরা যে যার মতো হাতের সুখ করে নিতে পারে।অন্য সময় খেয়াল থাকে না কিছুই।আদৌ সে মানুষ কিনা, এটাও হয়তো ভাবে না।নিজের অপরাধ ও বুঝতে পারে না।সেই না-বোঝা অপরাধের কারণে মা মারে, দাদারা মারে।লাঠি দিয়েও পেটায়;থাপ্পড়, কিল চড় তো স্বাভাবিক ব্যাপার।চুলের ঝুঁটি ধরে টানা-হেঁচড়ায় তার মাথার চুল উঠে আসে।ও বোবা কান্নায়, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যায় শুধু।
রাগে দুঃখে চিৎকার করে কাঁদে, বুবানদা – !
বুবানদাতার থেকে পাঁচ বছরের বড়ো। মেজোমামার ছেলে।একমাত্র তার কাছেই সহানুভূতি, ভালোবাসা –।নরম করে বোঝাত কষ্ট না পেতে। লম্বা ছুটিগুলোয় , পরীক্ষা হয়ে গেলে ও ঝরিয়া যেত মায়ের সঙ্গে।দাদাদের সঙ্গেও কখনও কখনও।বুবানদাও আসত।
“তুই পড়াটা শেষ কর।আমি রঞ্জনের সঙ্গে দরকারী কথাটা বলেই আসছি।” মায়ের ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
টুপুর জলভর্তি জগটা ছুঁড়ে দিল উঠোনে।সশব্দে সেটা পড়ে ফেটে গেল।জলটা গড়িয়ে গিয়ে উঠোনে রোদে মেলা ডাল বড়ি ছত্রখান।তারপর উঠোনে নামছে এবার।সেইসব বাসন উপরে তুলে শূন্যে ছেড়ে দিল।একটু পর বেরিয়ে এলো মা।চোখের দৃষ্টি দেখে শিরদাঁরা দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল ভয়ে।আর তাকিয়ে থাকতে পারল না টুপুর। কুঁকড়ে গেল।মনে মনে তার মৃত ঠাকুমাকে খুঁজল।ভয় থেকে বাঁচতে যেমন করে তার বুকে মুখ গুঁজে দিত।
নীল স্কার্ট , সাদা মোজা, দু-বেনী করে পরের দিন স্কুল যাচ্ছে।– “মা, আসছি।”
টেলিফোন বুথ থেকে ফোন করল একটা।বুবানদা দুর্গাপুর স্টেশনে এসে সোজা নিয়ে গেল ঝরিয়া।মাথায় সিঁদুর পরে মন্দির থেকে রিক্সা চড়ে মামা বাড়িতে।“রাক্ষসী, এটা কী করলি তুই? বুবান -!” মামীমা দরজার সামনেই থাপ্পড় কসাল টুপুরকে।
“ওকে বিয়ে করেছি, মা।” অনেক নাটক পেরিয়ে তবু থেকে গেল ও বাড়িতে। বুবানদা আর সে জানত এরকমটাই হবে।মা আর দাদারা গিয়ে জোর করে ফিরিয়ে আনল।অবশ্যই চড়-থাপ্পড় সহযোগে।মামাতো দাদা, যে কিনা তখন তার স্বামী, বুবানদা হাত ধরে টেনে রেখেছিল, তার পিসিকে বাধা দিয়েছিল প্রাণপণ।
বুবানদা এখানে এসেছে।মা আর দাদারা ঢুকতে দিচ্ছে না।বন্ধঘর থেকে সে চিৎকার করছে, কাঁদছেকাকুতিমিনতিকরে।–“আমায় যেতে দাও, আমি থাকব না এখানে।মা , মাগো, আমি চলে যাব ,আর কক্ষণো আসব না, একবার ঘর খুলে দাও।একটিবার!”
বুবানদাওকাঁদতে কাঁদতে ডাকছে।দাদার গলা শোনা গেল তখন, “চেঁচাস না।বাড়ি ফিরে যা।আর আমাদের সম্মান নষ্ট করিস না।বেশি বাড়াবাড়ি করলে খুন করে ফেলব।”
সুযোগ পেয়ে একদিন পালিয়ে সোজাঝরিয়া। তার অপ্রকৃতিস্থ চেহারা তখন।ছেঁড়া শাড়ি, মাথার চুল পাখির বাসা, খালি পায়ে একযুগের ধুলো।মামী -মামাখুশি না হলেও থাকতে দিল।কিছুদিনে সে প্রেগন্যান্ট।মাস কয়েক পর মা বাড়ি আনলখুব মিষ্টি করে।ওই সময়টুকু কেউ আর অত্যাচার করেনি।মেয়ে হতে যখন বুবানদা এলো তাকে ঘরে ঢুকতে দিল না।মেয়েকে দেখতেওনা!মা আর দাদারা খবর পেয়েছিল বুবানদা নাকি রেলের ওয়াগন ভাঙতে গিয়ে পুলিশের খাতায় নাম তুলে ফেলেছে।
“আমাকে একবার দেখা করতে দাও ওদের সঙ্গে! ও পিসি, আমার মেয়েকে দেখব না?”বুবানদা মাকে কাতর হয়ে বলল।
“এখানে তো এসেছিস শেল্টার নিতে।বৌ- মেয়েকে দেখতে আসা আসলে তোর একটা অজুহাত।আমরা তো মেনে নিচ্ছিলাম, কিন্তু তুই কী করলি? চুরিডাকাতি করবি, আর আমরা তোকে জামাই আদর করব?”দাদা এই মারে তো সেই মারে।
মেয়েকেওরা মানুষ করছিল, তবে তাকে মায়ের ভূমিকা পালন করতে দেওয়া হয় নি। প্রতিবাদ করতে শুরু করায় ততদিনে সে আবার গৃহবন্দী, তার ঘরের বাইরে তালা ঝুলিয়ে দিল।চিৎকার করছে টুপুর,“দরজা খোলো-! খুলে দাও।মেয়েকে দাও আমার কাছে!” ঘরের জিনিসপত্র ছুঁড়ছে, ভাঙছে।
“খ্যাপামি হচ্ছে, না? দাঁড়া খ্যাপামি ছুটিয়ে দিচ্ছি তোর- ” দাদারা যে যখন বাড়িতেথাকে তালা খুলে ঘরে ঢুকে মারধোর শুরু করে দেয়।কিছুদিন পর তারা দু-ভাইই শাসনের অছিলায় শরীর খাবলাতে শুরু করল।মা শোনে না কোনো কথা।আসেই না কাছে!বিশ্বাসও করবে না তার কথা। ঠিক যেমন রঞ্জনকাকু আর মায়ের কথা দাদারা কখনও বিশ্বাস করবে না।বাবা ন-মাসে, ছ- মাসে বাড়ি আসে।একবার উঁকি মারল হয়ত তার ঘরে।জিগ্যেস করল, “কেমন আছিস রে, মা?”তারপরই সরে গেল।বাবা দু-দিনের অতিথি।কলকাতায় কীসের চাকরি আজ পর্যন্ত টুপুর জানে না।তবে টাকাপয়সা বাবা ঠিকঠাক পাঠায়।লোক দিয়ে জমি চাষ করায় মা।দাদারাও খেয়াল রাখে।
মেয়ে এখন স্কুলে পড়ে।তার সঙ্গে অল্পস্বল্প কথাও বলে।তাকে মা বলতেই শিখিয়েছিল ওরা।ওকে কোলে নিতে পরের দিকে বাধা দিত না।তবে যতক্ষণ ওরা চাইবে ততক্ষণ।
বর্ধমান স্টেশন থেকে বড়দা ধরে আনল। দুপুরে ঘরে খাবার থালা দিতে গিয়ে মা বলল, “কেন যাস? সেই জানোয়ার তো জেল খাটছে এখন।তোরও কি সে শখ হয়েছে? হয়তো – বল,ব্যবস্থা করি!” জেল খাটারকথাটা ও বিশ্বাস করলনা। পালানোর শাস্তিস্বরূপমাথার চুল কাটা গেল।
মা তার বাতিল শাড়ি পরতে দেয়। রোগা হয়ে ঢলঢলে ব্লাউজ।তার দুর্ভাগ্য মেনে নিয়ে সে শান্ত থাকে যখন তখন তাকে ঘরের বাইরে ছাড়ে।তখন সে বাড়ির বাইরে গিয়ে বসতে দাঁড়াতে পারে।মায়ের গলা চড়ে না হাজার রাগের কারণ ঘটলেও।মাকে দেখলে আজকাল কেমন যেন মনে হয়, মা তার সুন্দর সাজানো দাঁত মেলে হাসতে হাসতে তাকে কোনোদিন খুনও করে ফেলতে পারে।
“বৌদি !” বলে ডেকে গতকাল রঞ্জন কাকু যখন এলোতখন দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে।দাদারা যথারীতি বাড়িতে নেই। বড়দা অফিসে।মেজদা ইউনিভারসিটিতে ক্লাস করতে।মেয়ে অলি স্কুলে গেছে।সে এখন ক্লাস ফাইভে পড়ে।সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়। বাড়িতে অন্য কেউ থাকলে রঞ্জনকাকু এভাবে আসে না।
মায়ের ঘরের দরজা বন্ধ হতে সে ঘরের দেয়ালে কান পাতল। পাশের ঘরটাই মায়ের ঘর, মাঝে একই দেয়াল।তার শরীর জেগে উঠল।ভালোবাসা পাবার জন্য, শরীরের আনন্দের জন্য ছটফট করতে লাগল বন্ধ ঘরে। কতদিন বুবানদার কোনো খবর নেই।বেঁচে নেই নাকি।ওরা বলাবলি করে। বুবানদার জন্য কাঁদে সে।একমাত্র সেই তো তাকে ভালোবাসত।মনে হয়, সেও যদি মরে যেত তবে মুক্তি পেত।প্রচন্ড রাগে দেয়ালে মাথা ঠোকে, মাথায় খুন চড়ে যায় তার।
অসময়ে স্কুল থেকে ফিরে মায়ের ঘরের দরজা বন্ধ দেখেছিল।“– মা!”দরজার কাছে গিয়ে ডাকতে গিয়ে মায়ের হিসহিসে গলা পেয়েছিল।আর একজনের গলা।বাবা বাড়ি এসেছে? ধাক্কা দেবার আগেই দরজা খুলে গেল।তাকে দেখে রঞ্জনকাকু থতমত, “ও! তুই?”বলতে বলতে কেমন যেন পালাল মনে হলো।মা আঁচল কুড়িয়ে নিয়ে বলল, “কখন এলি?”রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে স্বাভাবিক গলা, “রঞ্জনকে একটা কথা বলার ছিল, বুঝলি –”
ও বুঝেছিল।সবটাই স্বাভাবিক নয়।
মায়ের কান ঢেকে পাতা কেটে আঁচড়ানো লম্বা ঘন মখমলি চুল কখনও এদিক ওদিক হয় না।এত পরিপাটি থাকেমা।কখনও মায়ের গায়ে ঘামের গন্ধ পায় নি সে। মায়ের গন্ধই কি পেয়েছে কোনোদিন? মায়ের লম্বা সুঠাম চেহারায় বয়স তার আজ পর্যন্ত কোনো চিহ্ণ ফোটাতে পারেনি। মা চিরকাল সিঁদুরের টিপ পরে, কখনও ধেবড়ে যেতে দ্যাখেনি।সেদিন মায়ের কপালের বিরাট সিঁদুরের টিপটা ঘেঁটে গিয়েছিল।আচমকাই সে মায়ের কাছে অসহ্য হয়ে উঠল।
বিকেলে ছাড়া পেয়ে রাস্তার ওপাশে তাদের যে বাড়তি ঘরটা আছে, তার বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে সে। অলি তার কাছে কিছুক্ষণ ছিল, তারপর পাড়ার বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে চলে গেছে।দেখল রঞ্জনকাকু রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।হাতে একটা বালতি।খুব সম্ভব গরুর খাবার নিয়ে ওদের গোয়ালের দিকে যাচ্ছে।হয়তো মুনিষরা কেউ নেই, তাদের পরিবর্তে সে।ওদের উঠোনের দিকে একবার তাকাল।মা এই সময় পুজো আহ্ণিকে বসে।ধ্যান করে।
উঠে দাঁড়িয়ে আচমকা ডাকল, “রঞ্জন কাকু!” ।
লোকটা খুবই অবাক হলো।টুপুর তো ইদানীং কথা বলে না!আজ কী হলো? জিজ্ঞাসু চোখে ওর দিকে তাকাতে ও হাতছানি দিয়ে ডাকল।তারপর ঘরের ভেতর ঢুকে গেল।রাস্তায় কেউ এসে যেতে পারে, বাইরে কথা বললে তারা আকৃষ্ট ও কৌতুহলী হবে।যতই হোক, মানুষের ভেতর কুকুর, খচ্চর, বাঘ-টাগ সবই আছে।রঞ্জনকাকু ভয়ানক অবাক হলেও ঘরে চট করে ঢুকে পড়েছে।আর ও একেবারে তার বুক ছুঁয়ে দাঁড়াল।কান্নায় যেন তার ঠোঁট কাঁপছে, চোখ উপচে জল পড়ি পড়ি।এসব ন্যাকামি করতে তাকে খুব কসরত করতে হয়নি।সে সতত ক্রন্দনশীল।মুখ উঁচু করে বলল, কাকু! আমাকে তো জানো কেউ ভালো বাসে না।তুমিও কি তাই? খুব কষ্ট হয় ,কাকু।”
লোকটা তার বাহুদুটো ধরলদুহাতে।কষে টেনে নিল বুকের সঙ্গে।কিছুটা সময় চুপচাপ।তারপর ফিসফিস করে বলল, “কী আর করবি বল! সবই কপাল রে! আমি তোকে ভালোইবাসি।সেই ছোট থেকে এত বড়ো হয়ে গেলি।সবই তো জানি।”
“ভালোবাসা পেতে খুব ইচ্ছে করে, জানো তো? কাল তুমি একবার ফলসাগোড়েতে আসবে? একটু কথা ছিল।বাড়িতে তো বলা যায় না!”
রঞ্জনকাকুকে পুরো একটা চোর চোর বেড়াল হয়ে চলে যেতে দেখলটুপুর। দুপুরে মার ঘরের দরজা খুলে যেতে হয়তো এভাবেই চলে গিয়েছিল।মৃদু হাসল সে।কথা বলে না বটে, তাই বলে কথা কি সব ফুরিয়ে যায়? নাকি কথা বলতে কেউ ভুলে যায়?
হাতের ইটটা ফেলে দিল।আর একবারও তাকাল না দেহটার দিকে।মরে আছে, না বেঁচে আছে তাও পরখ করার দরকার মনে করল না।অনেক দূরে বাস রাস্তার দিক থেকে কেউ সাইকেল চালিয়ে আসছে।দূর মাঠে কেউ একজন গরু ছেড়ে দিয়ে বসে আছে লাঠিতে ভর দিয়ে।সব কিছুই খুব স্বাভাবিক। সবই সাধারণ। কিছুই বিশেষ নয়।
পুকুরের পাড়ে উঠে এলো সে।নামতে লাগল কালো গভীর জলে।কাদায় পা ডুবে যাচ্ছে।নামতে নামতে হাঁটুজল ছাড়ল , ক্রমে কোমড় ছুঁল।শীতল হচ্ছে তার শরীর।আঃ বড়ো আরাম! বড়োশান্তি!এমনটা অনেকদিন পায়নি।
বুক জল এবার।আস্তে আস্তে জল চিবুক স্পর্শ করল।কে যেনমাকে বলছিল,বাবা কি? –টুপুরের চিবুক তোমার মতো ডোল পায় নি।সেই চিবুকও জলের নীচে।
শান্ত হয়ে জন্মের ডুবচান দিচ্ছে যেন।এবার জল তার কপাল স্পর্শ করল।অমনি সূর্যোদয়ের মতো ধীরে ধীরে জেগে উঠল লাল টকটকে একটা বিরাট সিঁদুরের টিপ।টিপটা দেখতে দেখতে হাসল সে।হাসতে হাসতে জলে নিজেকে সমর্পন করল টুপুর।
জল তাকে গ্রহণ করল আশরীর।জল খলবল করছে, বুড়বুড়ি কাটছে।এক সময় লাল টিপটা ধেবড়ে গেল।
শান্ত হয়ে এলো পুকুরের জল।
পূর্ব বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলের অজ পাড়াগাঁয়ের ধুলোবালিতে জীবনের অনেকটা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। শিক্ষকতার বৃত্তি। কবিতা প্রথম প্রেম। প্রকাশিত কবিতার বই এখনও পাঁচটি। গদ্যের বই তিনটি গদ্যগ্রন্থের মধ্যে ‘দক্ষিণ দামোদর জনপদ’ উপন্যাস, যেটি সাম্প্রতিক কালে ‘সাজি’ পত্রিকা কর্তৃক অজিত রায় স্মৃতি সম্মাননা লাভ করেছে।
বাহ! চমৎকার লেখা।