নাড়িযোগ
ফিরে যেতে চাই না আর ফেরারি হয়ে
দাঁড়িয়ে সমুদ্রে বালুকণার শব্দ আমাকে ডেকে উঠলেও
বারবার একই আমি হয়ে এসেছিলাম ভিন্ন মগজ নিয়ে
তবে একই যন্ত্রণা হাহাকার, একই সুখ বিলাস
পরবাস্তবে যাবার আগ পর্যন্ত বাস্তবিক আকালুতা দিয়ে
ব্যাকুল হতে চেয়েছিলাম, মুক্ত হয়েও হইনি আমি
প্রতিবার আমি একটা গোত্র হয়ে জন্ম নিচ্ছি কেন?
সম্প্রদায়হীন কোন মায়ের গর্ভে আমি আসতে পারিনা!
বেমালুম রহস্যঘন জাইগোট আমি খুঁজি ফিরি
প্রতিবার জন্ম নিয়ে প্রতিবার এই জীবনে
ফিরে যেতে চাই না আর কোন ফেরারি হয়ে
তোমার আমার ফের আমার তোমার হয়ে ;
বারবার একই পৃথিবীতে একই মৃত শরীরে।
আমি একটা ভিন্ন দেহ চাই
আমাকে একটা দেহ এনে দাও
আমার প্রতিটা যান্ত্রিক অঙ্গকে নিষ্ক্রিয় করে দেব,
আমার অস্তিত্ব হয়তো আর কারো কাছে থাকবে না
কারন আমি আর কখনো ফিরতে চাইনি…
ধুলিমাখা স্বপ্নের গান
কাদা লেপ্টানো, কাদার দলা ছুড়ে শরীরে গাদা
নাহ ঠিক কাদামাখা না কাদার মতো সোঁদা সোঁদা
ছেলেবেলায় বালিখেলায় অদ্ভুত রকম লাগতো
সৈকতে তারা মাছ আর শামুক কুড়িয়ে মন ভুলতো
বালির ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে গোল পাকানো
সেই রাতে দুজনে নগ্ন হয়ে বালিতে শুয়ে কাটানো,
যখন জোৎস্না রাঙায় গায়ের উপর কাকড়া হাঁটে
ওকুল হতে ডানা মেলিয়ে ঈগল উড়িয়া বাগে
রেইন্ট্রি গাছের ছায়ায় বসে মন খারাপের বাল্যপনা
ঠাকুরমার আদর ডাকে দিনভর যত ইচ্ছের দস্যিপনা
ভাঙা ঘাটের পাথরে ঘষে পায়ে পাথরে যে বিনিময়
শত শত ক্ষত-বিক্ষত আত্মার গহনে আত্মীয়ের বলয়।
আমাদের কাদামাখা শরীরে যত মনের হেয়ালিপনা
ফেলে আসা দুপুর বেলার শস্যক্ষেতে শুয়ে গন্ধ শুঁকা,
আঁকরে ধরা মাটির মনে এঁকে কলকল ধ্বনিমাখা পথ
কাদার দলা পাকিয়ে ঘর ফেরা পায়ের শব্দে কটকট
হারাতে হারাতে ফিরে পেলাম তবে পুনরায় ধুলিমাখা যত স্বপ্ন
কান্না এসে জড়িয়ে রেখে বালিখেলায় গড়ে তোলে স্বাদের রত্ন।
সিঁথিরেখা ঢেকে দিলো শূন্যতা
কপালে আলতো ঠোঁট রাখতেই ঠোঁটের পিঠে
তোমার কাছে তোমার গোপন কাকলি জানালো
আমার আকুলতা তোমার চিবুক জুড়ে সমস্ত ঘ্রাণ
আমি দেখেছি বৈচিত্র্য, যখনি তোমার ভেতর খুঁজেছি আমার উদাসমাখা শূন্যতা,তুমি আরো করেছো উন্মোনা–
ঘাসফুলের বুকে শুয়ে আমি দেখিনি কখনও এত ব্যঞ্জন, সেদিন দেখিছি তোমায় নিয়ে সিঁথিতে ঠোঁট রেখে শুয়ে।
নদীর কলতানে রুপান্তর রেখা আমি অবলোকন করেছি এর ভেতর বহুধারা, সেদিন আমার হাতের রেখায় তোমার হাত।
লাল সোঁদামাটির কৌটায় সিঁদুর, তোমার সিঁথিতে পরিয়ে আমি দেখলাম আকাশঘরে সাদা মেঘজল,আমি কখনো সমুদ্রে এতটা ঢেউগোনা সরস নিঃশ্বাস বেদন পাইনি, সেদিন তোমার সিঁথিরেখা কেঁপে প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমি সেই বেদন পেলাম।
প্রেম-অপ্রেম
ধরেছি হাত
রেখেছি তালুতে
হেঁটেছি বহুপথ
মনের গতিতে
পেরিয়ে কোলাহল
সেখানে জঙ্গল,
গাছের বুকে
গেঁথেছি সুখে
আমাদের ট্যাটু
যুগল পায়ের হাঁটু
লিখা হলো প্রেম
বাকি সব অপ্রেম
কালা কান্না
রোদ,আকাশে নীল রোদ
তাল গাছের মাথায় বসেছে।
কালা চাষীর ফাটা গেঞ্জির ভেতর চিকচিক,
হাতের আদর দিয়ে মাটি খুঁড়ে
কোথায় শস্যক্ষেত? – কার জমির উপর?
বেদখল মাটির উপর মুনিয়ারা দল পাকায়
মাটির গালে ঠোকর মারে!
আহা! রোদের জলে মাটি কাঁদে
সেদিন ওই চাষীর কালা বুকে বান উঠে
ভাসায় শস্য, ভাসে ঘামমাখা লুঙ্গি,
কালা কান্না মিশে….গেল রে বেলা
তাল গাছের ছায়ায় ঘুম ধরে সবি খেলা
অভিমানের প্রকারান্তর জমি মানুষের জমি
জমির উপর কি কেবল তাদের অধিকার!
সমস্ত ফড়িং এসে জমিকে অধিকার করে
চাষীর সোনা হাতে জমি হয় অধিকারী
রোদের জলে মাটি কাঁদে আমার মুনিয়া কাঁদে
আকাশে নীলচে বুকে তাকাও না!
সবার অধিকার আছে।