Reading Time: 3 minutes
দরকারে উষ্ণতা, অদরকারে সঙ্গ,
চিরকাল বাতি জ্বলে পাড়ায় পাড়ায়।
ভাতের থালার সুখ, গৃহী চেহারায়
আয়ু ফুরানোর গল্প ম্লান করে দেয়।
অথবা আঙ্গিনা যদি ঠিক শিখে নেয়,
আমার শব্দমালা নিশ্চিত তোমায় ছোঁবে।
দলবেঁধে তারা নির্বিঘ্নে পৌঁছে যাবে
বিছিয়ে দেবে শান্তির মাদুর।
যত্ন করে মুছে দেবে পোড় খাওয়া
ক্লান্তির রেখে যাওয়া দাগ।
লীন হতে হতে, তুমি টিকে যাবে…
আমার সকল খেদ, ক্ষোভ, ক্ষুধা
তোমার চিবুকে এসে ম্লান হয়ে যায়।
না বোঝার মতো করে না বললেও,
যতবার ডেকে গেছি নাম ধরে, সুরঞ্জনা…
প্রতিবার না তাকিয়ে হেটে চলে গেছো।
বারবার ফিরে এসে কেন তবে দিয়ে যাও
যত্নের অভাব হতো না এই ঘরে।
আজন্ম মায়ার চাল, মাথার উপরে।
সমুদ্র নেই আমার, হবেও না,
তুমি আমার তুমুলতম প্রেম হতে যদি।
একদিন বাক্স-পেটরা গুছিয়ে চলে যাবো,
সাথে করে নিয়ে যাবো অভিমানী সমস্ত স্মৃতি,
বাতায়নে বসে, অবসরে খুলে দেখবো সেগুলো,
আবার ঢেকে রেখে, ভুলে যাবো দিন যাপনের তাড়নায়…
আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো, এভাবেই।
শক্ত চোয়াল আর সুতীক্ষ্ণ চিবুক জুড়ে অসমর্থন নিয়ে।
গোয়াড়ের মতো চোখে চোখ রেখে, এভাবেই…
আমাকে বোঝার যার প্রয়োজন সে জানবে অতলের তল।
যার শুধু সংজ্ঞার সংশয়, বিন্যাসে বিভ্রম, বিশেষণের তাড়া,
সে জানুক, আমি তাই, যা সে ভাবে, যেভাবে সে দেখে।
এ বিশ্বচরাচরের বোঝা না বোঝার দায় নিচ্ছি না।
একদিন সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে, সব মায়া ভুলে,
নিজের অস্তিত্ব ফেলে, অচেনা মানুষ হয়ে চলে যাবো।
পৃথিবীর সব দাবী নিজ গুণে ছেড়ে যাবো, সহাস্যে।
মরার আগেই আরো বহুবার, বহুভাবে মরে যাবো।
তোমাদের অহেতুক জীবনচর্চায়
আজকাল কেন জানি, উৎসাহ জাগে –
আবিল আনন্দ বা কপট সোহাগে,
নির্বোধের মতো খুব ভাসতে সাধ হয়।
অথবা জলাঞ্জলি দিয়ে সব জটিল সংশয়,
সহজেই হতে চাই জীবনবিলাসী।
সুলভ বাজার দরে, অমূল্য কষ্টগুলো
পরম যত্ন ভরে, তুলে রাখি হৃদয়-সিন্দুকে।
ভুলে থাকি মেঘদল, জলরাশি, অশ্রু-বিন্দুকে।
ভুলে থাকি হিসেবের খেরোখাতা, সাদা পাতা,
কতটুকু বিনিময়, কতটুকু ফেরত পেয়েছি,
সুপ্রিয় মিথ্যের মত, সহজ সত্য এসে বলে দিয়ে যায়।
বাতিঘর হতে চেয়ে, শেষমেশ প্রদীপ হয়েছি।
সমূহ নিষ্ঠুরতা সহসাই ম্লান করে যাপিত জীবন।
বালিশের নোনা দাগে লেপ্টে থাকা কষ্ট কমে এলে,
টিকে যাওয়ার গল্প লিখে, যূথচারী অসম সময়।
তারপর, বহুদিন পর, বাক্সবন্দী দৈনন্দিনে অবসর মেলে,
রুপোলি ঝরনা থেকে ঝরে পড়ে হিমহিম মিহিদানা জল,
স্নানঘরে ভিজে চলে, মানব শরীর আর বিহঙ্গ হৃদয়।
জন্ম ১ ডিসেম্বর ১৯৮০।
বর্তমানে প্রবাসে অবস্থান করলেও, পেশাগত জীবন কেটেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায়। দীর্ঘদিন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ।
পারিসা ইসলাম খানের জন্ম, লেখাপড়া ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। এই শহরটাকে তাই মনে প্রাণে ধারণ করেন তিনি। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে কেটেছে রঙ্গিন শৈশব আর কৈশোর। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি। বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকা ও সংকলনে প্রকাশিত কবিতা, গল্প, ফিচারগুলো একসময় আরো লিখে চলার ইন্ধন জুগিয়েছে। তারপর দীর্ঘ বিরতি। বন্ধুদের উৎসাহে আবারো লেখালেখিতে ফেরা। সাহিত্যের নানান মাধ্যমে বিচরণ থাকলেও কবিতাতেই সাবলীল। ২০২২ এর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে পারিসা ইসলাম খানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “উপসংহার নেই”।
প্রকৃতি ও মানবজীবন বরাবরই ভাবায় এই কবিকে। এই শহরের আনাচে কানাচে ভেসে বেড়ানো দীর্ঘশ্বাস আর প্রবলভাবে টিকে থাকার গল্পগুলোকে ছন্দে-অছন্দে বেঁধে রাখার চেষ্টাতেই মগ্ন যেন এই কবিতাগুলো।
ই-মেইল: [email protected]
Related
মানিক বৈরাগী says:
বাহ বাহ অসাধারণ কবি
পারিসা ইসলাম খান says:
অসংখ্য ধন্যবাদ…