Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

ইরাবতী সাহিত্য: একগুচ্ছ কবিতা—সুহিতা সুলতানা

Reading Time: 2 minutes
 
অসমাপ্ত পথের ওপর
আমার মন খারাপ হলে তোমাদের আকাশে নাকি সবুজ বৃষ্টি নামে!
কতোটা এগোলে হৃদয় ছোঁয়া যায়?
জানালায় মৃদু শীতের স্তব্ধতা, সারাদিন দীর্ঘ অপেক্ষা—
শেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে অমুদ্রিত সরোবরে জলের
রেখা হেলে পড়ে হৃদয় বরাবর।
কেউ কেউ ডুবরী হয়ে জল খেতে খেতে—
স্মৃতি ও প্রজ্ঞায় নগ্ন নদী হয়ে যায়।
চিত্রা নদীর জলও শিখে গ্যাছে নদী ও নারীর নাব্যতা!
এসময় এক তুখোড় বাজিকর খেলতে থাকে—
গৃহস্থালি আনাজ নিয়ে কতটা এগুলে মানুষ তার দাঁত—নখ চোখ খুঁজে পাবে?
কতোটা এগোলে প্রেমিক তার প্রেমিকার হৃদয় খুঁজে পায়?
জীবন্ত শহরে অগ্রহায়ণের—
অসমাপ্ত পথের ওপর ঝরা পাতার শূন্যতা স্বপ্নগ্রস্ত প্রেতের মতো হরণ করে বুকের মঞ্জরি।
চৌ-দিকে চতুর্মুখী চন্দ্রের দুলুনি তরঙ্গের ওপরে আছড়ে পড়ছে কাচপোকা।
দীর্ঘ ঘুম ডানাহীন আড়ষ্ঠ করে তোলে দেহ
ঘড়ির কাঁটার ওপর বসেছে যমদূত, যেন গিলে খাবে মন ও চিন্তার জগৎ।
 
ছদ্মবেশ
বৃষ্টির কোনো ছদ্মবেশ নেই, থাকে না
এই যে সে কবে অমানুষের খোলস পরে নিলো বুঝতেই পারিনি!
বৃষ্টির কোনো রং থাকে না, সব ঋতুরই একই রং!
এভাবে ছদ্মবেশ ধারণ করলে বোঝার উপায় থাকে না শত্রুর—
হাসির ঝিলিকের মধ্যে কী তারতম্য থাকে।
যেদিন মূর্খ লোকটি গা এলিয়ে
দিয়েছিল বকধার্মিকের মতো
সেদিনও ছিল এমনই বরষা পীড়িত দিন!
আমরা বুঝতেই পারিনি আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেল!
 
 
ওহ্ হেমন্ত
জাদুবাস্তবতার ভেতরে গড়িয়ে যাচেছ সময়
শীতের তীব্রতা নেই অথচ, ভাবনার ভেতরে জেঁকে বসেছে শীত।
হেমন্তের এমন দিনে—
মানুষের স্বপ্নগুলো আজ সূচনাহীন রুগ্নতার খড়কুটা।
আজকাল মেরুদণ্ডহীন মানুষের অদৃশ্যতায় ঢেকে যাচেছ স্মৃতির শহর—
না দেখা অরণ্য।
দীর্ঘতার কারণে মনও খণ্ডিত চাঁদের মতো বিপরীতমুখী হয়ে বসে।
চোখের ওপর রংধনু রঙ।
যথারীতি দূরত্বের কারণে সন্দেহ গোধূলির রঙে রঞ্জিত হতে থাকে,
সিঁড়ি ভেঙে যারা দ্রুত ওপরে উঠতে চায় উঠুক।
পানশালায় গিয়ে কণ্ঠ ভেজাতে চায় ভেজাক।
 
এত নগ্ন—কাতরতা ভালো নয় জেনো।
উদ্দেশ্যহীনভাবে যারা চলে তারা ষড়যন্ত্রের মধ্যে নেই,
গোধূলি লগ্নে যেটুকু দেখা যায় শূন্য নক্ষত্রের মতো।
এখন চৌ-দিকে ডেটল, হেক্সিসল, হ্যাণ্ড-স্যানিটাইজার আর মাস্কের আধিক্য!
কেঁপে ওঠে হৃদপিণ্ড!
এক অদৃশ্য শক্তি ক্রমশ খেয়ে ফেলছে হাওয়াকল!
ওহ্ হেমন্ত দাও স্বপ্নময় দিগন্ত স্থিমিত হয়ে আসুক সকল রূঢ়তা ও ম্লান—
আলোর কম্পন!
 
 
 
মগডালে ঝুলে আছে চতুর ঘু ঘু
ভূত দেখার মতন চমকে উঠার মতো ঘটনা বটে
শুভ সন্ধ্যায় অশুভ ভূত দৌড়,
হেমন্তের মগডালে ঝুলে আছে ঘুঘুপাখি, সে কী চতুর ঘু ঘু?
নাগরিক ঘু ঘু আর ভূত না কি মননশীল প্রেক্ষাপটে দুরন্ত কামুক!
 
হাওয়া উড়ছে, ধুলো উড়ছে রাত্রির বাগানে বসেছে পানশালা,
একান্নবর্তী পরিবারে ভূত ও মহোৎসব
কাউকে গৃহত্যাগী করে না!
সে এক মহা আনন্দযজ্ঞ মহাকাল মেতেছে আগুনোৎসবে—
সত্যক্রিয়া মৃত্যুর মতো হাই তোলে! জগৎ সংসারে আজ চিলের উড়াউড়ি,
ডোবা পুকরে উছলে ওঠে পরকীয়া,
হাভাতেকে বাসী অন্নদান আর নপুংসককে মাল্যদানে মেতেছে বহু ভাড়;
একদা সূঁচ হয়ে ঢুকেছিল যারা, ফাল হয়ে বেরিয়ে গ্যাছে তারা।
 
বাতাসের ফিসফাস কখনোই আর অলেখককে প্রশ্রয় দিও না;
এরা আদতেই ভূত, মনুষ্য রূপে উড়ে গিয়ে বসে অন্যের লেখার টেবিলে
এখন পথজুড়ে অবিশ্বাস মনের ভেতরে বিষাদ-প্রতিমা।
কে বোঝে জলের ভাষা?
এখানে তো আগুনের ধারাপাত পৃষ্ঠা পুড়ছে, পৃষ্ঠা উড়ছে।
 
 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>