আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
শ্রমণ
জল-স্থল-অন্তরীক্ষ মুখরিত মহাজাগতিক প্রতিধ্বনিতে।
আমি ততক্ষনে সারনাথের সীমানা পেরিয়ে এসেছি।
মাইলের পর মাইল হাঁটছি একমুঠো সর্ষের আশায়
মহাত্মাকে ভুল প্রমানের জন্য আমার এই অভিযান।
ফিরে পেতেই হবে যা সব হারিয়েছি জীবনে।
পৃথিবীর সমস্ত মানুষ আমার চেয়ে বেশি ভাগ্যবান
তা আমি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবো
অযুত বছর হেঁটে ফেলেছি এরপর।
তন্নতন্ন করে খুঁজে ফেলেছি একের পর এক মহাদেশ।
ভিখিরি, অভুক্ত, পঙ্গু, সন্তানহীনা আর অনাথ ও বৃদ্ধাশ্রমের
ভিড়ে হারিয়েছি নিজের পরিচয়
বুঝতে পারছি সব মানুষই সমান। সবার দুঃখ যন্ত্রনা অভিন্ন।
আমার কিছু প্রমান করার নেই
ক্লান্ত দেহে গোধূলির সূর্যকে মনে হচ্ছে বিশাল পঙ্কজ।
তার মধ্যে থেকে বুদ্ধ বেরিয়ে এলেন। স্নিগ্ধ স্বরে বললেন,
‘যাও! এবার এক মুঠো ভালোবাসা নিয়ে এসো’
পাণ্ডুলিপি
তোমার জন্যে দু’মুঠো কবিতা ছাড়া কিইবা
রেখে যেতে পারি আর
দেখো, বালিশের নীচে রাখা আছে কয়েকটি শব্দ,
পরিযায়ী পঙক্তি, কিছু না বলা কথা…
এই নিয়ে আমার কাজ-কারবার
উত্তরের খোলা জানালা দিয়ে ঘরে আসছে
পুকুরের হিমেল হাওয়া। রক্তগোলাপের সুবাস।
অদ্ভুত আবেশে সিক্ত ঘাটের সিঁড়ি
তোমায় নিয়ে লেখা মহাকাব্যের পাণ্ডুলিপি জমা রেখেছি
ভবিষ্যতের কাছে। সেই ফাঁকে এসো, অতীত ভুলে
বর্তমানকে আলিঙ্গন করি
বেয়াব্রু
কঠিন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে আমাদের চিরকালীন ভয়।
ভয়ার্ত হরিণের মতো মাথা গুঁজে রাখি ফ্যান্টাসির ঝোপে
অথচ বাস্তবের আলোয় বেয়াব্রু হয়ে পড়ে লুকোনো পাপ
নিজের কবর খুঁড়তে গেলে বেরিয়ে আসে ব্যর্থতার দাবানল,
ছাই আর পোড়া সালফারের গন্ধ, যন্ত্রণার উষ্ণ প্রস্রবণ
সত্যের সামনে দাঁড়ানোর চেয়ে এতসব ঝক্কি পোহানো
সহজ মনে হয় কারণ আমরা সত্যির চেয়ে গুজব ভালোবাসি,
নিজেরাই গুজব হয়ে উঠি
গঙ্গার ঘাটে এক বিকেলে
ধাপে ধাপে সিঁড়ি নেমে গেছে। বয়সের সুস্পষ্ট ছাপ নিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকা রেলিঙগুলোতে দুটো শালিক এসে বসেছে।
ঠোঁটে ঠোঁট ঘষছে নিজেদের
সুরকি রঙের স্ল্যাবে বসে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকার চোখেও
তেমনি ঘোর। বুকে জলের গভীরতা অথচ ঠোঁট চুপ।
এই বুঝি বৃন্তচ্যুত হল কাঁচা হলুদ রঙের চাঁপাফুল
বুড়ো বটগাছের পাতায় ঠাণ্ডা হাওয়ার ফিসফিসানি।
কান পাতলে শোনা যায় অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের
আশ্চর্য সব গল্প। সময়কে ফাঁকি দেবার গোপন রহস্য
শিরিষ কাঠের নৌকায় ষড়ঋতু ও সময়ের ছাপ। দাঁড় বাইলে
প্রতিধ্বনিত হয় প্রাচীন ইতিহাস। অজানা ঠিকানা থেকে বহু
যাত্রী আসেন ঠিক যেভাবে একদিন এসেছিলেন জোব চার্নক
জোয়ারের দাগকে সাক্ষী রেখে ঘাট চুপচাপ বসে থাকে।
সিঁড়ি, চাঁপাফুল, সুরকি রঙের স্ল্যাব, বুড়ো বটগাছ আর
জলের ঢেউয়ে দুলতে থাকা নৌকাগুলো জানে তার মনের খবর
একটি সত্যি কবিতা
সত্যের কোন বন্ধু নেই। বেড়াতে যাওয়া নেই। শখ-আহ্লাদ নেই।
ধূলার আস্তরণ চাপিয়ে সে ঘরের এককোণে পড়ে থাকে
নির্বিকার ভাবে
চোখে আঙুল দেখিয়ে সত্যি বলা ছাড়া আজ অবধি কিছুই করেনি
সত্যের কোন সংস্করণ নেই। তাহলে তা আর সত্য থাকে না
নিবাস আলিপুরদুয়ার। ফিজিওলজিতে স্নাতক। বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও ছোটবেলা থেকেই বাংলা সাহিত্যের অনুরাগী। সেই থেকেই লেখালেখিরও শুরু। তন্ময় নিজেকে লেখক অথবা কবি নন, বাংলা সাহিত্যের একজন অনুগত পাঠক বলায় বিশ্বাসী।
২০১৫ থেকে নিয়মিত লেখালেখি চলছে বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং ওয়েব ও প্রিন্ট ম্যাগাজিনে। ইউটিউবেও তার বেশ কয়েকটি গল্প অডিও স্টোরি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
তন্ময়ের কথায়, যতদিন তিনি পৃথিবীর বুকে হেঁটে বেড়াবেন ততদিন তাঁর কলমও সমানতালে চলবে বাংলা ভাষা এবং বাংলা সাহিত্যের জন্য।
ইরাবতী, সম্পাদক মন্ডলী এবং পাঠকদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা।
শ্রমণ ও চারটি কবিতা আপনাদের পাঠের অপেক্ষায়।
ধন্যবাদ ?
পাঠমুগ্ধ
ধন্যবাদ কবি
আপ্লুত। ভরসা পেলাম। ভালো থাকবেন ?