আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
স্বপ্নাদ্য কবিতা
স্বপ্নে পাওয়া বিছনা
আকুল দুপুরে ঘনালো, রাই ওলঢাল, সে কোথায় –
দু আঙুলে সরিয়ে দেবে খোলা পিঠ থেকে চুলের বাধা ;
জ্বলে উঠবে ঘামের অক্ষর?
ননদী আছে, রায়ান ঘোষ,
সাত মন ঘি থরে থরে জাঁক দিই –
এলোমেলো, চাবুকশাসিত গার্হস্থ্য যাপন
মন পড়ে থাকে কবিতার কলসী ভরণে।
হায় আমার বর্ণ-রাখাল! উনুনশাল নিকোনোচিকোনো,
দলিত নারী মেটে হাঁড়িতে চাল ঢেলে আগুন জ্বেলেছি
জল নাই, অন্ন ফোটে না
উৎস ছুঁয়ে তুমি না ডাকলে
ঘরে জল আসবে কীকরে?
শস্যসম্ভব
ধাতব কুয়াশাভরা বিকেল নেমে এলে চোরকুঠুরিতে নোনা জ্যোৎস্নার আয়োজন।
তখন পরিত্যক্ত খনির গহ্বরে জল উঠে আসে,
দূষিত জলে খেলা করে আমাদের পরাণ ভ্রমর।
নিরুদ্দিষ্ট সে শান্তিনিবাস এই রেখে গেছে যৌতুক। আমি তাকে আলিঙ্গন করে ডুব দিই পাতাল অভিমুখ। তুলে আনতে হবে একডুবে শস্যসম্ভব মাটি। তবেই হয়তো জীয়ন্ত ভ্রমর তালুতে নিয়ে উঠে আসব মরণ পরাভব।
তখন এই স্পর্শাতুর আঙুল ছুঁয়ে আবার জ্বেলে দেবে তো জোনাকি?
আর্ষপ্রেম
স্বচ্ছ জলের নীচে গভীর মাছ।
পুচ্ছপাখনার আঙুল নাড়িয়ে সুধাচন্দ্রন করে ছাড়ে
আমি তো অপটু, দু-হাতের সঠিক যোজনায় ধরতে পারি না তাকে
দাঁড়িয়ে থাকি মহাকাশের চাতালে,
রোদবৃষ্টি নেমে আসে, কুয়াশা ঘনঘোর….
সমস্তই তাকেও জড়ায়, সন্ধ্যাতারার দিকে তাকাই –
আমার চোখের ভুবন পেরিয়ে তারও চোখ যায় তারার কাছে। তাতে আমাতে এভাবেই মিলি রোজ
আমার সঙ্গে তফাত, যা দেখে ও নিস্পৃহ; অপলক মাছের চোখ। মুগ্ধতায় নয়, প্রাকৃতিক স্বভাব।
চোখে যার এত সন্ন্যাস , মনের কুসুম তার নিবিড় অশোক,
স্থির চোখের কাঁটা যতই বিঁধুক –
ধুকপুক কলিজা প্রতিটি রোমকূপে আমিও জাগাই
চৌষট্টিকলা আলো পৃথিবীতে ডানা ঝাপটায়,
আমার হাতে লগ্নভ্রষ্টা আভা
তা দিয়ে
জলের নীচে খুঁজে যাবো –
ও মাছ
সারাটা জীবন খুঁজে যাবো
ও ভালোবাসা
শিক্ষক
সময়সারণি জুড়ে ধুলো পায়ে অপেক্ষা জেগে থাকে
আসবে বলে দাঁড় করিয়ে রেখে গেছ সেই কবেই –
একসাথে ভিজবে চান্দ্রজলে,
কুয়াশার ভেতর হেঁটে যাবে অনন্তের কাছাকাছি…
নিভে যায় দিন, জামরুলবনে হলুদ পাতা খসে আলতো,
তার অতীত বা ভবিষ্যত নেই
আমাকে কেন তাড়া করে সময়সারণি?
সব আগের মতো –
সমুদ্র ও নাক্ষত্রিক বিভা – পৌষের আদিগন্ত ফসল …
এইসব বৈভব আছে, শুধু কাঁধের বিস্তারটুকু সরিয়ে নিয়ে শেখাচ্ছ শূন্যতার ভেতরে থাকা শূন্যতার সংজ্ঞা
অনিকেত
মহুয়াফুল খেয়ে রাশিকৃত, ভোর হয়ে গাছেরই নীচে পড়েছিল ভল্লুকী। গাছটার আকাশের উপর যে অধিকার , তা কেড়ে তাকে মাটিতে ফেলে দিলে একদিন। তোমার গা ঘেঁষে – সে তো জলেরই শীতল,
সেই জলের ধারে ভিজে ভিজে আরামে বাসা বানায় পিঁপড়ের ঝাঁক। রাজমিস্ত্রী জল বন্ধ করে ঢালাই দিয়ে তুলে ফেলল দেওয়াল।
মুছে গেল একটুখানি যে কথার রেশ ছিল, পি্পড়ের বোবা কথা! – ভল্লুকীর বোকা বোকা নেশা বলো নেশা, মোহ বলো মোহ – সব কানাকড়ি কথা মুছে গেল।
হেঁটে যাচ্ছে কালো পিঁপড়ের সার
হেঁটে যাচ্ছে কালো ভল্লুকী
দুপাশে গাছ অন্ধকার হয়ে ঘনিয়ে আসছে। অন্ধকার থেকে হাত নাড়ছে বাবা, প্রাণপণ। আমি ডাকতে চাইছি, বাবা -!
কিন্তু পিঁপড়ে কথা বলতে পারে না,
ভল্লুকীর গলা থেকে উঠে আসে আর্তনাদ…
ফতোয়া
ইদানীং মাঝরাতে হঠাৎ আমার ঘুমের যেন বিস্ফোরণ ঘটে। অথবা বলতে পারো, ঘুম ফেটে যায় শিমুল বীজের মতো…তারপর ঘর জুড়ে চলে
শুধু তুলোর ওড়াউড়ি। তখনই জেগে ওঠে রাতের পৃথিবী।
টের পাই ইঁদুরের ফূর্তির চলাচল… শেয়ালের দল কেশে ওঠে জানলার পাশে ফক্কুরি করে…
টিকটিকিও মাথা নেড়ে চোখ ঘোরায় মহাবোদ্ধার মতো। –
আমি কি জানি না, ঠান্ডা ও অশেষ এই বিছানার প্রান্তে একটা মৃত বালিহাঁসের ফসিল রয়েছে –
সময়ের হাতে শিকার হয়ে গেছে যে?
তবু যত সমাজবদ্ধ বেতো ঘোড়ার খুকখুক হাসি কিংবা আধমরা হায়নাবুড়োর ফতোয়াঃ যাও, মৃত বালিহাঁসটাকে খুঁজে আনো! তাকে ঘাড়ে চাপিয়ে ব্রহ্মান্ড চষে ফেলো। কষে বুঝিয়ে দাও মৃত হলেও সে-ই তোমার একমাত্র অলংকার।
– এসব বাসি কথা ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলি আমি।
অথচ ঘুমের প্রত্যেকটা টুকরোকে জড়ো করে
আমি কেবল একটা নিটোল ঘুমেরই ভেতর
ঢুকে পড়তে চাই,
যতক্ষণ না একটা তাজা মানুষ হয়ে বেরোতে পারছি।
পূর্ব বর্ধমানের দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলের অজ পাড়াগাঁয়ের ধুলোবালিতে জীবনের অনেকটা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। শিক্ষকতার বৃত্তি। কবিতা প্রথম প্রেম। প্রকাশিত কবিতার বই এখনও পাঁচটি। গদ্যের বই তিনটি গদ্যগ্রন্থের মধ্যে ‘দক্ষিণ দামোদর জনপদ’ উপন্যাস, যেটি সাম্প্রতিক কালে ‘সাজি’ পত্রিকা কর্তৃক অজিত রায় স্মৃতি সম্মাননা লাভ করেছে।