মা
বরফ গাছ কুর্ণিশ করে পৌষের ছায়ায়
.
গোলাপ ফ্লুইডে ভাসতে ভাসতে ভ্রমণ জন্মান্তর
শুনেছিলাম মধুময় বাঁশি প্রেম বৈষ্ণব
রক্তময় পৃথিবীর ফুঁসে উঠা আদিম শ্লোক।
.
মায়া ছিলো-ছিলো অগ্নিজল
মরু প্রেমিকার ময়ূর মসনদে ঘুরেছি কতোকাল
কাঠ শ্যাওলার স্তুপে প্র-পিতামহের বাড়ি
মায়ের ঘর; পিতার খেয়ালি জীবন।
.
জন্মেছিলাম! জন্মের রেখায় মুছে গেছে মায়ের চোখের কিনারা
বেহুলার ভেলায় শীত মলাটে আজন্ম বন্ধন।
সিঁদুর টকটকে সূর্যে শঙেখর ধবধবে সাদায়
তোমার সুরেই জেনেছি-
মানুষ সমুদ্র হয়; মাটিই পবিত্র উর্বর।
.
মায়ের কোনো দেশ নেই, নেই সময়ের চাটাইয়ে মৃতের নিবাস
আমার ঋণ জমা আছে; পৃথিবীর সকল মায়ের নিউরনে।
সুইসাইড নোট
সুইসাইড নোটে মানুষ হত্যার পাপ। গোলাপ জলের ভিক্ষা।
তোমার চোখ জুড়ে যে সতেজ সবুজ সেখানেই অরণ্যের স্তব্ধতা।
রাতকে আগুন নিঃশ্বাস মনে হয়; মেঘের বিনিদ্র সন্ন্যাস।
.
আমি কামরূপ সন্তান। বালিকার ঠোঁটের রেখায় চিনেছি নিখুঁত জ্যোতির্বিদ্যা।
পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুমের চাষাবাদ। সুঠাম পেশির আন্দোলন।
পূর্ণিমা জোসনায় দোলে নারীর জিভের ক্ষত।
আহত চিতার মতো নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে বাড়ি।
.
তোমার উঠোনে যে শীতল সবুজ তা আমারই বিগত সিজোফ্রেনিয়া।
একদিন মানুষ হত্যার পাপে ঈশ্বর দাঁড়িয়ে ছিলো কাঠগড়ায়।
ফেরাতে পারেনি নিষিদ্ধ রাতের টোটেম, হৃদপিন্ড হত্যার ইতিহাস।
.
তোমার চুল জুড়ে লবণ ঘ্রাণ। দূরত্বের ব্যাকরণ; বুনে দেওয়া ঘৃণা
মাটির এপিটাফে শশ্মান যাত্রায় সরল কোকিল।
জলজ রমনীরা ভেসে যায়, ঘৃণা করে পদ্ম অথবা পুরুষ বৈভব।
আত্মাকে দেখেছি মুখোমুখি ব্যবচ্ছেদের কাঁচিতে লাল।
.
এটি হত্যাই ছিলো। সুইসাইড নোটে তোমার নাম
বদলে গেলো কেরাম চাল। সাপ লুডুর গুটি।
তুখোড় উল্লাসে বৃহন্নলারা নাচে: নাচে কাচঘর।
.
তুমি তখনো দাঁড়িয়ে ভেজা মন্দিরে।
কপালে ডুবে যাওয়া ভাজে আঁকছো অহংকারী তাল পাতার শব্দ।
কাজল রেখায় তীব্র হিমোফেলিয়া।
.
হৃদপিন্ড একা থাকে না; ভরে যায় প্রজাপতি রোদে বিকালের ঘণ্টায়
সমুদ্র হাওয়ায় অথবা বিগত সুইসাডের খসড়া নোটবুকে।
নীল চিরকুট
বহুদিন তোমার অপেক্ষা নেই। নেই বাতাসের ফিসফাস। ঘুম সেলাইয়ে রাতের উত্তাপ। লৌহিত্য নদীর তটে আমাদের বসবাস; চোখের ক্যাকটাসে রক্ত ঝরা আলপিন। সরিয়ে নিয়েছি বুকের কবজ হিরন্ময় কুন্ডলী। যে চিঠিতে লেখা ছিলো বন্ধনহীন বন্ধনের ক্যালিগ্রাফি। তা হয়তো ছুঁড়ে দিয়েছো ময়লার বাক্সে। বন্দি সময়ে অপেক্ষা নেই। নেই উপচে পড়া কালিতে জীবনের ধারাপাত। অন্ধজলের পাটাতন অথবা খুঁজে ফেরা মৌন ঋষি; যাকে তোমরা দেবতা বলো।
.
মন উড়ে কুতুবদিয়া চ্যানেলের ড্যানিশ বোটে; কাউখালীর নিরালা অরণ্যে, হিমছড়ির ঝর্ণা, কাপ্তাই লেক পাহাড় কন্যা রেংখিয়াং এ। অপেক্ষায় ভাসছে সমুদ্র শহরের বালুময় নিঃসঙ্গতা। নাগরিক কন্যাদের হাসি। বান্দরবান পর্বতের নরম মেঘ; চৌদ্দগ্রাম হাইওয়ে রোডের একলা ডাক বাংলো।
.
সজল শিউলি ভোর হয়ে ফুটে। আমার শহর। মগড়া নদী; গ্রামের সূর্যমুখী মায়ের নিজস্ব আদর। বুদ হয়ে থাকি‘এন্টিগোনি’র মুখস্থ সংলাপে। হ্যামেনের প্রেমের ট্রাজাডিক মৃত্যুর মহড়ায়। জগৎজ্যোতি দাসের অলিখিত বীরত্বে। বাউল সহজিয়ার পুড়ে যাওয়া বাড়ি লাল মুদ্রায় ঝড় তুলে। ক্লান্ত এন্টিফাংগাল আচরণ। অখিলদার সরল হাসি মনে পড়ে । মনে পড়ে তার মাটির ডেরায় সদ্য বানানো বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় ভাস্কর্য। যতীন স্যারের অগাধ গল্প । রঙ চায়ে জীবনের অবাধ বন্ধন মানুষের উৎসব। ছাদ কার্ণিশে ঝুলে আছে ভাঙা কাঁচের মন্দিরা; দোলচাঁপার একলা সুর।
.
বোধের মিথোজীবীতায় বালিকারা প্রেমিক ভেবে জলের শরীরে আঁকে ভুল অবয়ব। গির্জার ফটকে বানায় বুদ্ধের মূর্তি। প্রতিরূপে সাধক দেখি;অন্ধ প্রেমিকা। রাজপথে হাঁটি। ঝুম বর্ষায় বন্ধুর হাসিতে প্রাচীন বেদান্ত। কাঁটাবন সিগন্যালে পাখির পাষাণ বাজার। ইস্কাটনে কদমতলায় বরফের সূতা; রমনার রঙ্গণ ফুল। হ্যালোজেন লাইটে পর্দা কেঁপে উঠে। তোমার শাড়ির আচলে শুদ্ধ ইথোলজি। তুমি আর অপেক্ষায় থাকো না কিংবা আমিও।
মাউথ অর্গান
তোমাতেই বিভোর ছিলো মুখস্থ অভ্যাস
জারুলের দিন; রেইনট্রির পাতায় অবগাহন
.
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বায়োলজিক্যাল ক্লকের
ধ্যানে নুয়ে পড়ে তোমার ডানা
কাঠবিড়ালির উষ্ণতায় রাত দীর্ঘ হয়।
.
বাদুর ঝুলানো গল্পে সূতপুত্রের মাটি!
তীর্থযাত্রার সহযাত্রী ডুবে গেলো সূর্যের ম্যাজিক্যাল দহনে।
.
দোয়েলের শিস নিয়ে যায় স্বর্গে
মধুময় পাতার নোলক
গোলপাতার ফিতায় মেপে নেওয়া হৃদয় পরিধি।
.
গ্রন্থি নিঃসরণে রক্ত ঝরে; সার্জিক্যাল ট্রমা
ভাস্কুলার কোষ লিখে রাখে দিনের লিপি
গাছেদের মৃত্যু সংবাদ।
.
মেয়েটির ঠোঁটে হীরক বিস্ময়;
আলোকময় হিজল সুর
বর্ষার আগেই পৃথিবীতে স্নানের উৎসব!
প্রোফাইল
ক্যালেন্ডারের মমিতে খুঁজতে হয় আমাকে
খুঁজতে হয় রেকসিন বিজ্ঞাপনের মাকড়সায়।
.
কবুতরের নরম পা স্থির হয়ে গেলে ভেসে আসে
‘বাংলামটর’ নগরের শৈবাল নিবাস; রুদ্ধ ফটক
সারাদিন বাজে মেঘের পিয়ানো রোদ ঘুমের নির্যাস।
.
ইদানিং জলছায়ায় সমুদ্র দেখি না
কান হাওয়ায় ফুঁসে উঠে নবীন বৃদ্ধ শিক্ষকের কøাস
আর্কিমিডিসের সূত্রে নীল বরফে জমানো হৃদয়
বুঝে নিতে হয় রাতআয়ুর বিচ্ছিন্ন গণিত
ত্রিকোণোমিতির ব্যাবিলনীয় সমীকরণ
প্রেমিকার বহুমাত্রিক ভাসান।
.
রঙ চায়ে ফুঁ দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলি
রাষ্ট্র কাঁটাতারহীন অদৃশ্য নয়ন
ললিতকান্তের মাটির ঘরেও জোসনা আসে
বুক কাঁপে বর্ণবাদী বৈষম্যে; প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতায়
শ্রমিক ছাঁটায়ের লজ্জাহীন সিদ্ধান্তে।
.
ঘৃণিত সায়ানাইডে আমাকে হত্যার পর
নিষিদ্ধ হবে মৃত্যু সংবাদ
জিওগ্রাফির বক্র প্যাটার্নে দখল হবে মাঠ জলমহল।
.
আমার কোনো নিজস্বতা নেই; নেই নাচ মুদ্রার বেহাগ
প্রিয়তমার কাঁঠালচাঁপা চুমু; গন্ধের কস্তুরী।
একা…লক্ষ…পিঁপড়ার সারি জুড়ে আছি নিঃসঙ্গতায়
শামুক হৃদয়ে! রাষ্ট্র ঘড়ির টিং টিং এ, তোমার জানালায়!
কবি