ইরাবতী সাহিত্য: একগুচ্ছ কবিতা । তৈমুর খান
ছয়-এ ঋতু
শরৎ
তোমার আঁচলে নেমেছে নীলআকাশ
অধরে অস্ফুট ধ্বনি
মনের মুকুরে দেখি রঙিন মুখখানি
মণ্ডপে মণ্ডপে আলো
তাকিয়ে আছো নিরুক্ত সন্ধ্যায়
পদ্মগুলি ফুটে উঠছে স্নেহের বিলে
কাশ দুলছে হৃদয়নদীর উপকূলে
লুকোচুরি আজও ছুটছে স্মৃতির রাস্তায়
হেমন্ত
শিশির পড়ছে শিরশির শরীরে
অনুভূতিরা জন্মাচ্ছে আবার
বাতাসে কার ছোঁয়া আসে?
নুয়ে পড়ছে ধান সোনালি আভাসে
তুমি রোদ্দুরের দিকে বাড়ালে হাত
ঝিকিমিকি আংটিগুলি মরমী করাত
আনমনে ডেকে নেয় আমাকে আবার
কবরী খোঁপায় দেখি জুঁই ফোটে কার!
শীত
কুয়াশায় স্মৃতি খুঁজে ফিরি
ভেজা স্মৃতিগুলি আজ শুধু ওম নিতে আসে
একফালি রোদ এসে গড়াগড়ি খায়
অভিমান তার, বড় অভিমান
নিরীহ বেদনাগুলি একটু আগুন চায়
চাদর সরালে দেখি ফর্সা হাতে
চুড়ি বেজে ওঠে ঘনঘন
নতুন রসের ঘ্রাণে ডুবে যেতে থাকি
বসন্ত
পাতা ঝরে যায়, ধুলো ওড়ে
গাছের ছায়ায় আজও অপেক্ষা আমার
দূরে কোথাও তোমার কন্ঠের প্রতিধ্বনি
বাতাস বয়ে নিয়ে যায়
চুল খুলে একাকী তুমি পুকুর ঘাটে
পুরনো আলতার রং তুলে দাও
আর উজ্জ্বলতা হারানো নেলপালিশ গুলিও
গ্রীষ্ম
কাক উড়ে যায়, উঠোন ফাঁকা
উড়ে উড়ে আসে শুকনো পাতা
পাতায় পাতায় গাছের জীবনবোধ
তৃষ্ণা নিয়ে সারা দুপুর কাটে
ঘরের ভেতর তোমার ছায়া আঁকি
ধুলো উড়ছে নববর্ষের পথে
শুভেচ্ছারা বাঁচতে চাইছে নতুন উৎসবে
বর্ষা
দরজা খুলে রাস্তায় তাকাই
তুমি আর আসো না এই পথে
সন্ধ্যা নেমে আসে
ঝড়-তুফানে বর্ষাকাল যায়
দু-একটা ভেজাবেড়াল এসে
সন্ধ্যার অন্ধকারে কাঁপে
নৌকা নিয়ে কারা চলে যায়!
মৎস্যজীবী
মাছের পেছনে ছুটি সারারাত সারাদিন
গভীর জলের দিকে চলে যায় দুরন্ত মাছগুলি
মাছেদের সরলমন জটিলমন আজও কি বুঝি?
শুধু জল ঘেঁটে ঘেঁটে জলের তলায় ডুবে যাই
নৌকার ওপর দোলে জীবিকা আমার
ভেজা আর আঁশটে গন্ধে ভরা
জলের খাতায় লিখে যাই জলসমাচার
রূপপুর
গ্রামের নাম রূপপুর, ঘোড়াগুলি রূপক
আমরা সবাই রওনা হলাম
রাস্তা অনেক দূর
পথের মাঝে নদী আছে,তার নাম সময়নদী
পেরিয়ে গেলেই রাজার বাড়ি
রাজপ্রাসাদ এক স্বপ্নপুরী
ধারণাগুলি জিরিয়ে নিচ্ছে,জেগে উঠছে
আমরা শুধু গল্প শুনছি, গল্পের ভেতর পাখি উড়ছে
অনেক রকম সেসব পাখি
অনুভূতিরাই একে একে দরজা খুলে ঢুকতে চাইছে
আসলে দেহ আর কেহ নয়
মনই শুধু ভেঙে ফেলছে বাস্তবে তার যত সীমানা
ছুটছে সবাই
কেউ কি জানে রূপপুরের কোন্ ঠিকানা?
ভ্রান্তি
দরদিয়া বাতাসে গান খুঁজতে খুঁজতে
উদাসীন হয়ে যাই
অথচ সব গান-ই ইংরেজি শব্দের এখন
মানে বুঝতে বুঝতে
আমাদের উনুন নিভে যায়।
কী করে মহাপুরুষ হবো তবে?
দীক্ষা নিতে নিতে
সেসব দীক্ষাও ভিক্ষা মনে হয়।
বারবার অনুমান করি
কত অনুমান যাওয়া-আসা করে
মনে মনে তাদের হাসি দেখি
মনে মনে তারাও দেবতা হয়।
তবু এ-বিকেলে কেন যে হলুদ জ্বর
আলো এসে মুখ পুড়িয়ে দেয়
সব অনুমান হনুমান হয়ে যায়…
এই অনন্ত জন্ম
তোমার মুখ আজ অনন্ত মুখ
তোমার ভাষা আজ অনন্তের ভাষা
তোমার হৃদয় আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত
সব লেখা পাঠ করো একে একে
তুমি আজ অনন্ত সম্পাদক।
এ দুর্যোগে কে আর মানবিক প্রত্যয় জাগাবে?
কার তীব্র সংরাগে এ কলম তরবারি হবে?
এ রোদ্দুরে এ স্বপনে এই কাঙ্ক্ষিত জীবনে
তুমিই চৈতন্যগান গাও আমাদের কণ্ঠস্বরে।
তোমার সাহিত্যরথে আমাদের উদ্দাম সফর
দিকে দিকে মহানন্দ অদ্ভুত বিজয়
বারবার চেয়ে দেখি ওই মুখ ওই হাত
ওঠানামা করে ওই বুকের পাঁজর…
সংগোপনে এসে ছুঁয়ে যাও বারে বারে
আকাশ বাতাস আজ তোমারই ঘোষণা করে:
আবার এসেছি ফিরে…আবার অনন্ত কুহক
সকলের মাঝে তুমি অনন্ত এক এবাদুল।
