আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
অপরাধ বোধ
তোমার হাসির ফোয়ারা সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে। আমি ভীতু মানুষ, হাত থেকে জলের গ্লাস রাখতে গিয়ে ভেঙ্গে ফেলি। তারপর হাওয়ার ভেতরে একটি ঘূর্ণিপাক, আমাকে পৌঁছে দেয় পাতালে। শুনি, জলপ্রপাতের শব্দ। ঝড়ের কবলে পড়েছে যে নাবিক, সে ভুল করছে দিক, পেরিয়ে যাচ্ছে জলের সীমানা।
আমি তোমার দিকে তাকাই, আমি কি অতিক্রম করছি তোমাকে সেভাবে। তোমার শরীরে বোগেনভিলিয়ার ফুটে উঠা দেখি। তোমার স্তনের গভীরে কালো তিলের আড়াল আমাকে পূন্য স্নানে ডাকতে থাকে।
আমি যেতে পারি না, ডুবে থাকি প্রেম ও পাপে। শুশুকদের সাথে সাঁতার কাটি। সমুদ্রের ফুঁসে উঠা ঢেউয়ের সাথে আছড়ে পড়ি। এ মূলত জীবন পচে যায়, দূর্গন্ধ ছড়ায়। তোমাকে সম্পূর্ণ ভালবাসতে না পারার অপরাধ বোধে।
আত্নহত্যার প্ররোচনা
তোমাকে এতো বেশী ভালবাসা উচিত হয়নি আমার। তোমার প্রতিটি কথা যেনো চাবুকের ঘা, আমাকে আঘাতে জর্জরিত করছে। হৃদপিন্ড অন্তিম শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছে। অদূরে সাঁওতাল পল্লীতে আখরা নৃত্য, পুরুষগুলো বাজাচ্ছে ঢোল।
তোমার প্রসঙ্গে বলি, খেলার পুতুল ভেবে ঘুরিয়ে দিলে যে কান, তা কেটে তোমাকে উপহার পাঠাবো। সেই বন্য গাধা, পিঠে তুলোর ওজন, জলে নিজ ছায়া দেখে কাঁপছিলো। এই যে আস্তাবলের দ্বাররক্ষীর চাকুরী, আন্দালুসীয় ঘোড়াগুলোর সাথে কথা বলি, নক্ষত্রদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করি।
অভিশাপ দিও না, তোমাকে ভয় পাই। তোমার সমস্ত শরীরে প্রতারণা, ঝরতে থাকে শীতে গাছের পাতা, আমাকে দিওনা আত্নহত্যার প্ররোচনা।
ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা
তুমি আলো। জগতের প্রথম পুষ্প। জেনো আমি নেশায় চূর হয়ে আছি। দাঁড়িয়ে রয়েছি গিরি খাদের সামনে, যেকোনো মুহুর্তে পড়ে যেতে পারি। আমার সমস্ত গান, নৃত্যের মধ্যে যে তন্ময়তা তুমি সযত্নে রেখো। জানি না কখন যে ডেকে নেবে মৃত্যু, পড়ে থাকবো মাটির গভীরে, তারপর পচনকাল।
আমাকে মনে রেখো, তোমাকে ভালবাসতে চেয়ে তওবা পড়েছি। সকালে পাখিদের কিচিরমিচির ডাকের সাথে মিশে যেতে চেয়েছি। যেনো আমি তোমাকে ভালবাসি, জেনে গেছে বৃক্ষের প্রতিটি পত্র-পল্লব, আমি গোপন করতে পারিনি।
অতত্রব আমার দিকে দৃষ্টিপাত করো, ঘ্রাণহীন এক ফুল ছড়াচ্ছে যত মৌন সংকেত। তুমি কি বুঝতে পারছো, আমাকে যে ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখাতে নিয়ে যাবার কথা ছিল তা পূর্ণ করো। জানো তো, পুরুষের অর্থ এক সবল সিংহ।
ব্যাক্তিগত হ্রদের পাশে
পোশাক পরিচ্ছদ নেই। পরিধান করেছি গাছের ছাল-বাকল। খাদ্য নেই তবুও উনুনে সিদ্ধ হচ্ছে মৃত মাছের ফুসফুস। দূরে শোনা যাচ্ছে বাঘিনীর গর্জন, ছানাটি মরে পড়ে আছে তীব্র শীতে। আমার শিকারী বন্ধুগণ দূরে হরিণ শিকারে গিয়েছেন। আমি কেবল আমিষের লোভে পড়ে আছি হ্রদের ধারে।
আমাকে ক্ষমা করবেন পিতামহ, মানুষের বদলে জানোয়ার হয়ে উঠি। তার প্রেম আমাকে নেশার মতো তাড়িত করে। ছিড়ে যাওয়া কোষ ও মাংসের ব্যথায় কাতরাতে থাকি। লিখি প্রেম হয়ে যায় কামনার দগ্ধ গোলাপ। তার উরুতে মাথা রেখে আকাশের চাঁদ দেখি। চাঁদ না সে।
দানবীর অট্টহাসি ঘিরে ফেলে আমাকে। পাহাড়ে পাহাড়ে আদিবাসী উৎসব। মণিপুরী এক রমণী আমাকে মাটির পাত্রে পরিবেশন করছে চোলাই মদ। আমি পান করি। গভীর ঘুমে ঢলে পড়ার পূর্বে, দেখি দূরের বনে জোস্ন্যায় খেলা করছে কি সুন্দর হরিণ যুগল!
ফুলের খুশবু হতে
এক সরল প্রজাপতি, কখনো ভুল করবে না ফুলের জ্যামিতিক পাঠ। তোমার শরীরের সু-ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। স্নান ঘরে সাবানের বাষ্পীভূত ধোঁয়া কাছে আসছে। মনে হয়, তোমার নগ্ন শরীরে পোশাকের মতো জড়িয়ে থাকি। আমাকে কি করে পরিত্যাগ করবে। তোমার বিরহে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
এখন নিজেকে তোমার নামে ডাকি। তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হলে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে রাখি। জানি, কয়লার আগুনে পোড়াচ্ছ স্বর্ণের খাদ। তবুও তোমার বিষয়ে কোন অভিযোগ নেই। যদি এইসব অবহেলায় পাথর হয়ে যাই। তবে জেনো আমি শুধু তোমাকে ভালবেসে নিঃশেষিত হয়ে যাই। কোন শব্দের ভেতরে নিজেকে ধরে রাখি।
দেখি, আমাকে ভুলে গিয়ে, তুমি শিশুদের গান শেখাও। আমাকে নিয়ে তোমার আর কোন আফসোস নেই।
জন্ম ১২ ই নভেম্বর ২০০০। বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার অন্তর্ভুক্ত ক্ষেতলাল উপজেলার তিলাবদুল মৃধাপাড়া গ্রামে। বর্তমানে জয়পুরহাট সরকারী কলেজে দর্শন নিয়ে স্নাতক স্তরে পাঠরত। নিয়মিত লেখার কাগজ কবিতা পাক্ষিক, অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিক পত্রিকা, এছাড়াও দুই বাংলার অজস্র লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি। কবিতা ছাড়াও গল্প, নিবন্ধ, ছড়া প্রভৃতি লেখালেখির বিষয়।