| 19 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

ইরাবতী সাহিত্য: একগুচ্ছ কবিতা । মারুফ আহমেদ নয়ন

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট
আমার মাবুদ জানেন
আমার মাবুদ জানেন, আমার ভালবাসা কতো পবিত্র । তুমি তার সামনে দাঁড়ালে পুড়ে খাঁক হয়ে যেতে। যদি আমি তার পরিমাপ করতে পারতাম ! পারি না বলেই তোমার কাছে আমার যাবতীয়  নিঃস্বতা। আমার এমন নিঃস্বতা নিয়ে যে এতো খেলা করো তবুও তোমার স্বস্তি মেলে না। আমি কাউকে বলি না, আমার ভীষণ অসুখ।
তোমার চিঠি পায়ে বেঁধে উঠে আসা পায়রার ঝাঁক আটকা পড়েছে মাথার খুলিতে। বাক বাকুম শব্দে ভরিয়ে তুলেছে জীবন। আমি যেখানেই যাই, এক ঝাঁক পায়রা মাথার উপর উড়তে থাকে। আমি তাদের বলি, আমি কি পাখি বিক্রেতা!
রোদ নেমে আসে ঘাড়ে, যেনো দুপুর, মাথার খুলিতে কাল কেউটের ছানারা রোদ পোহায়, দংশন করে। আমি যন্ত্রণায় ছোটাছুটি করতে থাকি। চিৎকার করি, হে আমার মাবুদ, আপনি আমাকে রক্ষা করুন।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,bangla kobita Maruf Ahmad
দূর পাহাড়ের নেকড়েরা
আমার আশ্চর্য সহ্য ক্ষমতা। পুরনো আঘাতে তরবারীর মতো ঝন ঝন শব্দে বেজে উঠি। রক্তের স্বাদ গ্রহণ শেষে ঘুমিয়ে পড়ি। যেনো এ ঘুম কখনো না ভাঙ্গে, আত্নহত্যার সাদৃশ্য নিয়ে যে আতা গাছ বেড়ে উঠেছে তার কাছে আমাকে ঋণী করো না।
দেখো, তোমার স্বপ্নের ভেতরে খেলা করছে অজস্র সাপ ও ব্যাঙ। মর্গ থেকে প্রজাপতির ডানায় ভর করে আমি উড়ে আসছি আমি। আমাকে কবুল করো। এই যে দূর্ভিক্ষের দিন, তোমার বাথটবে লেজ নাড়াচ্ছে অজস্র কুমির। অজস্র মাছ ড্রয়িং রুমকে নদী ভেবে সাঁতার কাটছে।
আমাকে ভুলে গেলে এমনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তুমি, অভিশাপ দিচ্ছি না। তবুও তোমার ব্যাক্তিগত হরিণগুলোকে টেনে নিয়ে যাবে দূর পাহাড়ের নেকড়েরা।

আরো পড়ুন: ফিরোজ শাহের পাঁচটি কবিতা


আগন্তুকের শাদা ঘোড়া
যদি একদিন তোমাকে ভালো না বাসি, বুকের ভেতর বজ্রপাতের শব্দ শুনি। হৃদ-স্পন্দন থেমে যায়। ভয়ে জুবু থুবু হয়ে পড়ে থাকি। নিজেকে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এই ক্লান্তি। প্রিয় আগুনের ফুল, আমার এই খেলায় একমাত্র প্রতিপক্ষ তুমি।
আমার প্রেম ও কামনা সম্পর্কিত ধারণায় মিশে গেছো তুমি, অবচেতন মনে। যখন মাটির ছাঁচে ঢালি এই মদ, অপূর্ব এক বাসনা। টাল-মাটাল হবার সম্ভাবনা থাকে প্রবল, তবুও খনির অন্ধকারে তলিয়ে যাই, যেতে থাকি।
জানি, কোন মানুষ শোক করবে না মাছের পুত্র হত্যার পাপের জন্যে। পৃথিবী এক লীলাময় প্রান্তর, কেউ চেনে না আমাকে। সবাই ভাবে, হয়ত দূর দেশ থেকে আসা কোন আগন্তুক। শাদা ঘোড়া বেঁধে রেখে বিশ্রাম করছে হিজলের ছায়ায়।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,bangla kobita Maruf Ahmad
পূর্বজন্মের কবিতা
জলের গভীরে ডুবে আছি এ জন্ম। শরীরে কোন পচনের চিহ্ন নেই। পাথরে পাথরে শ্যাওলা জমেছে, মাছেরা নিচ্ছে গিলে জলের বুদ বুদ। পূর্বজন্মে আমি এক মৎস্যকুমারীর প্রেমে পড়েছিলাম। মূলত সে আমাকে ডেকে নিয়েছিলো এভাবে, যেনো লুম্বিনীর রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে এলাম গৃহত্যাগী সিদ্ধার্থের মতো।
তারপর নদী ও জলের কিনারে বসে এতোকাল শুধু তোমার ধ্যান করেছি। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল খেয়ে গেছে লবণাক্ত জল। সহস্রবার তুমি যুবতী হয়েছো আর নৃত্যরত নর্তকীরা ছুঁড়ে দিয়েছে রুপের টোটেম।
আমার মানুষজন্মের এইসব ঘুম ও ঘোর কেটে গেলে, তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না, হে মৎস্যকন্যা, হে মায়াবী মানবী। শুধু শরীর জুড়ে লেপে আছে আমিষের আশঁটে গন্ধ।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,bangla kobita Maruf Ahmad
দেবতাখূমের অন্ধকারে
যখন আমি থাকবো না, তুমি সমুদ্র ভ্রমণে যেয়ো, দু-পাশে পাহাড়, সারি সারি নারিকেল বন, তোমাকে ইর্ষা করবে। বাতাসে কাঁপতে থাকবে পিয়ানোর রিডগুলো। মনে পড়বে, এই অরণ্যে রাত ভর বৃষ্টি, খোঁপা খুলে ভিজেছিলো তোমার দীঘল চুল।
তখন আমি দেবতাখূমের অন্ধকারে নিজেকে খুঁজছি। পাখি সংগীতের এমন দিনে কেনো যে পালক হারায়! পাতা ঝরা দিন মানে তো শীতকাল নয়। ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের হৃদপিন্ডের ভেতর বসে গুনগুন করে গান গাইছি। এমন দুপুর, মদের মৌসুম, জুয়ার টেবিলে নিজের মাথাকে রেখেছি বন্ধক।
তুমি কি করুণা করে এসে দেখে যাবে, জল্লাদের লোমশ হাত ছুঁয়ে আছে কন্ঠনালী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত