পারমার্থিকতা
আরেকটা দিন ফুরিয়ে এলো পাখিদের পিছু পিছু।
সাহেব বুলবুলির তরঙ্গ উড্ডয়নে হারিয়েছিলাম
বিজন বাঁশবনে। করতালির মতো ধ্বনিত হলো
বন্যাঘুঘুর ডানা। আর হড়িয়ালের প্রেম খুনসুটি আমায়
ভোজন বিমুখ করে রাখলো তামামদিন। স্বরাজের
টুংটাং সুরের মতন টুনটুনির নৃত্য-মাতন, মিলন
পাতার নীড়। আমার চোখ আড়াল করে হারিয়ে
গেলো পতঙ্গ-প্রেমী অনুদ্ধত বনমোরগ। সেই শৈশবে
ফেলে আসা জঙ্গল, যেখানে গাবফলের মৌসুম
জুড়ে আমার স্মৃতি হাত ঢুকে দেয় গাঙশালিকের
ডেরায়—সেখানেই বসে পোহালাম যোহরের পাতাফালি রোদ
পিতরাজের শুষ্ক পাতা উড়ছিলো চোখের পাপড়ি ময়
দূর হতে আসা বাষ্পীভূত মরমি বেহাগ নিয়ে—
.
প্রেমিক
তোমার হারানো নদী আমার নেত্র সহোদর,
হারানো নুপুর হাতে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম আমি,
দিকে দিকে মৃত্যু দেখে, আয়ু ভেবে আমায় জড়ালে,
ভালবাসতে গেলে হৃদয়কে রুপান্তর করো মাতৃত্বে, শুশ্রূষায়—
প্রেমিক মূলত কবর, একটুকরো জান্নাত।
.
অপাঠ্য
আপাত দৃশ্যমান কোন জন্ম দিন নেই আমার
আবহমানকাল ধরে ক্রম-জন্মা ঘুরছি জঠরে জঠরে
আমার জন্মের ঠাহর করতে গেলে বৃত্তান্ত মেলে
একটি বিপ্লবী চিন্তায় জন্মাই আমি, বা রাষ্ট্রের
ভেকধরা বিদ্বেষ নীতির ভঙ্গুরতায়, রাষ্ট্রহীন উদ্বাস্তুর
মনস্তাত্ত্বিক অসহায়ত্ব জুড়ে অঙ্কুরিত হই স্ফুলিং —
জন্ম আমার উড়তি মেয়েদের উড়ন্ত কেশবিন্যাসে
নতুন ভাবনার প্রতিটি পুস্তকে পুস্তকে। মহাগ্রন্থে —
গ্রাফিতির দেয়ালে,পথশিশুর হাতে ধরা হাওয়াইমিঠাইয়ে
জন্ম— শস্য আদিগন্ত সবুজ চিৎকারে, শ্যামলিমায়
প্রেমিকার কামনা ভরা ঠোঁটে, লজ্জার অঙ্গধামে।
আপাত দৃশ্যমান কোন জন্ম দিন নেই আমার
তবু ভুল সংবিধানের বাদিতায় জন্মাই দৈবনিয়মে—
.
সজ্ঞান
মানুষ হিসেবে
জীবনে শুধুই অসুখ কিনেছি আমি
ভালবাসাতে গিয়ে
ভালবাসা ভুলতে গিয়ে
ভালবাসতে না পেরে
ভালবাসা না পেয়ে
ঐশ্বর্যের পিছু-পিছু
খ্যাতির জন্য নির্লজ্জে
জীবনে শুধুই অসুখ কিনেছি আমি
জড়িয়ে জেনেছি মৃত্তিকা, গোপন গোর তুমি—
.
মহামারি
বিষবীথি পথ
নীলজল চুপ
মধ্যরাতে একহাতে কূপ !
কতদূর পরে
মৃত্যুচিতা, কবরখানা
মানুষ কি ছুঁয়েছিল গাঙ শালিখের ডানা —
কবি