| 20 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

তৈমুর খান এর গুচ্ছ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

 

 বিবৃতি

 

 নিজেকে বিবৃতি ছাড়া আর কিছুই ভাবি না

 সারাদিন নিজেকে প্রকাশ

 অন্ধকারেও যতটা সম্ভব আলো হয়ে ওঠা চাই

 কখনো পুড়ি, কখনো ভেজাই ডানা

 কখনো ডানায় মাখি রং

 কখনো এই রংকেই ভেবেছি জীবন

 ভাঙা চৌকাঠে দাঁড়িয়ে দেখেছি বাবার চলে যাওয়া

 দুঃখের অন্ন খুঁটে কয়েক ফোঁটা অশ্রু ফেলে মা-ও চলে গেছে

 ফিরেও তাকায়নি কোনো এলোকেশী সুখ- জ্যোৎস্নারাত

 তবুও বৃষ্টির হাতে ভেসে গেছে মন

 কোথাও কি পদ্মপাতা কুড়িয়ে নেবে না?

 নিজেকে বিবৃতি ছাড়া কিছুই ভাবি না

 সমূহ শূন্যের ভেতর দু’হাত তুলে রোজ

 দেখি দিনরাত্রি চলে যায়….

 

 

 

  পদাবলি

   

 পদাবলিগুলি মানুষের রোদবৃষ্টি

 অথবা জখম ঢেউগুচ্ছ

 প্রতিদিন জানালায় মুখ বাড়িয়ে দেখি

 শব্দ আর শব্দের বউ যায়

 নীলমাধবীর সোহাগে রাঙা হয় মুখ

 কোথাও রং নেই তবু বাড়িভর্তি গল্প

 পুরনো সংকটের নতুন জন্ম

 ব্যক্তি ও বাচ্যার্থে জ্বলে ওঠা শ্রাবণ

 গন্ধরাজের মেঘ ছাপিয়ে নামে উঠোন

 লম্বাজীবনের গুহা ও গেরস্থালি

 অন্ধকার ও আলোর উপমা খুঁজে

 হাঁস ও সাঁতারগুলি কার্যকরী ভূমিকা শেখায়

 

 

 দেবতা

  

 দূর থেকে দেখি খুব সুন্দর নাচ

 কোথাও দারিদ্র্য নেই, অভিজাত জলে

 সোনালি পদ্মের পাশে নীল ঠোঁট সুবেশ মরাল

 

 দূর থেকে সোনা কুড়োই

 তরঙ্গ কুড়িয়ে নিয়ে

 ঘুমিয়ে থাকি নিঃস্ব বিছানায়

 

 এই শতাব্দীর মেঘ চেনে না আমাকে

 তবুও জলের গন্ধে কত কত নাচ

 জ্যোৎস্নার অন্ধকারে ঘাইকাটে মাছ

 

 

 

 ছুটি

  

 মুগ্ধরা সব বই-খাতা ফেলে গেছে

 পাখিদের সব ক্লাসরুম ফাঁকা

 ব্ল্যাকবোর্ডে অংকের হাসি

 বেঞ্চে বেঞ্চে দুষ্টু চোখের লুকোনো ইশারা

 

 বারান্দায় ক্লান্ত অবেলার বক

 সারি সারি কমলাবনের ছায়ায় উড়ে যায়

 দূরে, দূরে চেয়ে আছি

 বিকেলের মাছরাঙা আজ বৈষ্ণবী

 হলুদ ফিকে চড়ুই বাউল গাইছে দু’এককলি

 

 আলো নিভছে পাহাড়ের বাঁকে

 বাসায় বাসায় উষ্ণতারা ডাকে

 এই অবেলায় উদ্বাস্তু হয়ে ফিরি

 দু-ডানায় সংশয় সংলাপ ঝরে পড়ে

 সব স্কুলে আজ ছুটি হয়ে গেছে।

 

 

 

 মহাভারত

  

 বিকেল গড়িয়ে যায় রক্তের ওপর

 আমরা ফিরি নিজের কাছে;

 এ সময় সঙ্গম প্রার্থনা কার?

 সংকটকালের বাঁশি বেজে ওঠে

 উঠে দাঁড়ায় সব এক-একটি জীবিত লাশ।

চলাফেরা, জলপানের শব্দ,হাতের চুড়ির বাজনা

 নদীতে চুবিয়ে নেওয়া কিছুক্ষণ

 তারপর দ্রুত প্রস্থান

 

 এত রক্ত! কে লিখবে মহাভারত?

 আজ কুরুক্ষেত্র থেকে বলছি

 জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্রের কাছে যুদ্ধ-ইতিহাস…

 

 বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে

      পাথরে পাথরে পায়ের চিহ্নে

                            ছুটছে যুগান্তর

 তবু কারা সঙ্গমে সঙ্গমে ফেলে যায় বীজ

                                        নতুন জন্মের!

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত