Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,bangla kobita tumake by zillur rahman

ইরাবতী একগুচ্ছ কবিতা: তোমাকে । জিললুর রহমান

Reading Time: 3 minutes
১.
 
আমার এই একাকিত্বের পথ কার হাতে তৈরি, আমি জানি না। তবে তুমি বলবে আমার। কিন্তু, কী আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় একা হবার পথে? শুধু টের পাই, পথই আমার পথ তৈরি করে, পথই হাঁটিয়ে নেয় পথে প্রান্তরে—— যেমন নদীর পথ, যেমন গ্রহ-নক্ষত্রের —— সকল পথের চাবির ঠিকানা অজানা পথের কাছেই পড়ে থাকে।
 
 
 
২.
 
তুমি জানো, সরাসরি ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ —— এমন সিনেমা মার্কা কথা কোনোদিন বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম আমার অন্তরের ভালবাসার ডাক তোমার অন্তরে টঙ্কার বাজাবে। সেই না বলা’কে না’বাসা ভেবে তোমার ভেতরে জেগে ওঠা মেঘ আমি কখনও সরাতে পারিনি। এদিকে বিচ্ছিন্নতা আমাকে কুঁরে কুঁরে খায়…
 
 
 
৩.
 
যেদিন তোমাকে প্রথম স্পর্শ করেছিলাম, তোমাকে মোমের মতো মনে হয়েছিল, তুলতুলে জেলির মতো মনে হয়েছিল, চোখের পাপড়ির মতো চঞ্চলা। সময়ের কষাঘাত তোমাকে কঠোর, পেটানো লোহার মতো গড়ে তোলে। তুমি দৃঢ় হাতে সামলাও জগতসংসার। তবুও মনের গভীরে আমি টের পাই সেই কোমলতার ছোঁয়া। আমি তোমার অতলে ডুবে থাকি অনন্ত প্রহর।
 
 
 
৪.
 
তোমার নৈঃশব্দ আমাকে অস্থির করে রেখেছে। ফোনে রিং বাজে, অথচ নিরুত্তর। তোমার কানে তো দুল ছিল না, ফুলও না।কানে তালাও লাগাওনি নিশ্চয়। তবু সাড়া নেই।
 
আমার চারপাশে কেবল ফিরে ফিরে আসে কর্কশ রিংটোন।
 
তুমি কি ঈশ্বরের মতো হয়ে যাচ্ছো? কেবল তিনিই কোনো প্রত্যুত্তর করেন না।
 
 
 
৫.
 
জাদুবিদ্যা কখনও শিখিনি, তবু মাঝে মাঝে জাদুর মতন যেন ছুটে আসে তোমার সৌরভ। গত সপ্তায় পাল্টে রেখে যাওয়া জামার ভেতর থেকে, শয্যায় ব্যবহৃত বালিশের কভার থেকে, গায়ে জড়ানো তুলতুলে কম্বলের শরীর থেকে সুরভী লকলকিয়ে ওঠে —— সুরসুর করে নাসারন্ধ্রে ঢুকে যায় জাদুর বাতাস যেন। কেবল সাপ্তাহিক ছুটির দিন কিছুতেই সাতদিনের আগে আসে না।
 
 
 
৬.
 
মুঠোফোনে কল দিলেই তোমার জীবন্ত মুখ দেখা ডালভাতের মতো, তবু এখানে তোমার ঘ্রাণ অন্তরজাল ভেদ করে কিছুতেই পৌঁছাতে পারে না। তোমার মুখ নাড়া, তোমার চোখের চকিত ইশারা —— সব দেখতে পাই। কেবল মেলে না ওই স্পর্শের ইন্দ্রিয়-বাহিত অতীন্দ্রিয় অনুভূতি। টেকনলজি জীবনের অপর নাম নয় —— টের পাই প্রতিটি প্রশ্বাসে।
 
 
 
৭.
 
মন্ত্রে আমার বিশ্বাস ছিল না। তবু তুমি দীক্ষা দিলে। সেই থেকে আমি একদর্শী। আমার সামনে পেছনে ঈশানে নৈঋতে ঊর্ধ্বে অধে কেবল তোমার প্রতিচ্ছবি। আমার কর্ম ও কামনা কেবল তোমাকে তওয়াফ করে। আমি টের পাই জীবন প্রবাহের জন্যে তো এমন কে বলার কোনো বিকল্প নেই।
 
 
 
৮.
 
আকাশে অনেক মেঘ, বাতাস কুয়াশা-কাতর, বেশিদূর দৃষ্টি চলে না। তবু তোমাকে পাবার জন্যে বিমানের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে, তুমি অনেকক্ষণ কোনো ফোন করোনি। নিশ্চয় মন খারাপের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছো। মনখারাপের মাত্রা মাপার জন্যে কোনো যন্ত্র আছে কি? জানি না। শুধু জানি তোমার মন খারাপ করলে আমার হৃৎকম্পন বাড়তে থাকে, অস্থিরতা বাড়ে——আমি কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়ি। কিন্তু তার কার্যকারণ বিবেচনা আমার বোধের অতীত।
 
 
 
৯.
 
মেঘের রাজ্যে কেবল শাদা দিকদিগন্ত ছাপিয়ে গেছে। দূর——যতদূর দৃষ্টি চলে——কেবল ঘোলা শাদার ঘোলে চোখের ভেতরযন্ত্রণা দেয়। এমন সময় পাশে যদি তুমি থাকতে আলতো করে হাতটা নিয়ে কচলে দিতে। তোমার হাতের তৃষ্ণা এসে ভর করেছে আমার হাতে। শীত ঋতুতে তোমার দুহাত ঘামতে থাকে, আমার হাতও মনের মতো আর্দ্রতা পায়। এখন আমি মেঘের রাজ্যে, তুমি কোথায় ব্যস্ত নাকি অলস ঘুমে পার করো দিন। মহাকাশের অসামান্য শূন্যতা আজ আমার চোখে আমার বুকে ভর করেছে।
 
 
 
১০.
 
সাগরের পাড় ধরে রাস্তায় চলেছি। দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের অন্তহীনতায় শিউরে উঠছি ক্ষণে ক্ষণে। কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছি —— শীতে? নাকি অজানা আশঙ্কায়? এক কোণে একজোড়া শালিক, আরেক দিকে একজোড়া কাপল——বেশ আয়েশ করে বাদাম খুটছে, আর একে অপরের ওমে লাল হয়ে উঠছে। আর এ সময়ে তুমি বসে আছো কোন্ দূরে পড়ার টেবিলে। আমরা একত্রে ফের কবে সাগরের তীর ধরে হাঁটব বলো তো?
 
 
 
১১.
 
যখন তোমার কাছে যাই——ছুটে যাই মোহগ্রস্তের মতো, দেখি তুমি নির্বিকার, সংসারের খুঁটিনাটি সামলে চলেছ। তোমার বাঁকাদৃষ্টি, তেরছা কথার বৃষ্টি আমাকে ভেজাতে থাকে। আর্দ্র করতে থাকে। তবু টের পাই, টের পাই এ উদ্বেগ উৎকন্ঠা সব তো আমার জন্যেই…
 
 
 
১২.
 
ট্রেনে অনেক রকম শব্দ শোনা যায় —— বাতাসের শব্দ, ঘর্ষণের শব্দ। কখনও ইস্টিশনের হৈচৈয়ের গ্যাঞ্জাম, কখনও মনে হয় দাঁতেদাঁতে ঠোকাঠুকি, কখনও তোমার ভর্ৎসনার ভাষার মতো শব্দগুলো আমার কানের উপর হামলে পড়ে। তবে টের পাই, ট্রেনের গতি থাকলেও তোমার মতো হৃদয় থাকে না।
 
 
 
১৩.
 
কাল সারা রাত্রি ট্রেনের কামরায় একটু ঘুমাই তো ফের জেগে উঠি। এভাবে ঢাকায় পৌঁছার পর থেকে মাথার ভেতরে এক ভোঁতা যন্ত্রণা বসে আছে। টনটন করে সেই ব্যথা তালুর তলায় ছোটাছুটি করে। চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চাই, তবু কমে না। অথচ তোমার হাত কপালে ম্যাসাজ করলে কী সুন্দর উপশম হয়ে যেতো…
 
 
 
১৪.
 
হঠাৎ রাজেন্দ্রপুর। রাজা নেই ইন্দ্র নেই, যেন আমিই দখল নিচ্ছি নতুন রাজ্যের। কিন্তু চারপাশে জমে থাকা ভারী কুয়াশার বিষণ্নতা বারবার মনে করিয়ে দেয় তুমি আমার পাশে নেই। এই সারাহ রিসোর্টের প্রতিটি প্রান্তরে বাতাসেরা তোমার জন্যে হাহাকার করে যাচ্ছে। তোমাকে ছাড়া আজকাল বেড়াতে পারি না।
 
 
 
১৫.
 
বিষণ্নতা আমাকে কাবু করে ফেলছে। আমি কোলাহলের মধ্যে নিরালা কোণ খুঁজেছি আজীবন। কিন্তু নিরালায় এসে অস্থির হয়ে কোলাহলের জন্যে আকুল হয়ে পড়ছি। অথচ এই ঢাকা জ্যামের শহর। আমি এই জ্যাম এই গ্যান্জামেও ভীষণ একা। আসলে আমরা জানি না আমরা প্রকৃত অর্থে কেমন থাকতে চাই। আমাদের পথ আমরা তৈরি করতে গিয়ে বারবার ভুল পথে হাঁটি। আবার পথ আমাদের যেদিকে নিয়ে যায় সেই পথে যেতে চাই না। তোমার হাত ধরা থাকলে আমি আর কোন পথের সন্ধান করবো না। আমরা সময়ের স্রোতে ভাসতে থাকবো যেদিকে দুচোখ যায়…
 

One thought on “ইরাবতী একগুচ্ছ কবিতা: তোমাকে । জিললুর রহমান

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>