| 19 এপ্রিল 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

একগুচ্ছ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 5 মিনিট
বর্ষণসন্ধ্যা
 
বর্ষণমুখর সন্ধ্যা আজ আর আমাকে টানে না
এখন সন্ধ্যার কালে বৃষ্টির ফোঁটার সাথে
প্রেতিনীরা নেমে আসে ঘরের চালায় পুকুরের ঘাটে
তাদের কেউতো আছে আমাদের চেনা জানা খুব
এই তো সেদিন সাঁঝে আড্ডা মেরে ফিরেছিলো ঘরে
ভূত হয়ে উড়ে গেল ক’দিনের জ্বরে ও ঠাণ্ডায় ভুগে
কিছু কিছু ভূত আছে যাদের উত্তাপ আজও
আমাদের গায়ে লেপ্টে রয়— চেতনাও তাদের দখলে
আমরা চেতনাহীন বেহুদা বৃষ্টির গান
শুনে যাই একঘেঁয়ে সরোদের ভাষার মতোন কিছু
কিছু তার অনুভবে আসে কিছু যায় মাথার উপরে
যেমন ঝড়ের ঝাপ্টা বৃষ্টিকে উড়িয়ে নেয়
ওপাড়ার মন বালিকার চিলেকোঠা তাক করে করে
এমন বর্ষণ সাঁঝ অতীতে আসেনি আর পৃথিবীর বুকে
আষাঢ়ও এমন করে নেতিয়ে পড়েনি কোনো দালির ঘড়িতে
তোবড়ানো ভাঙাচোরা আষাঢ়ের বৃষ্টি আজ
শরীর ভেজাতে পারে মনকে পারে না কিছুতেই
কেবল প্রেতিনী আর পরিচিত ভূতেদের ঝাপ্টা টেনে এনে
চোখে মুখে ঢেলে দেয়ে তাদের গায়ের বাস শুকনা আদল
শ্বেত বসনের সাথে আতরের খুশবু শোঁকায় পাড়া বেপাড়ায়
আজ আর এমন দিনেতে তারে বলার জাগে না সাধ
এ ঘন আষাঢ় আজ না আমার না কোনো রবীন্দ্র ঠাকুরের
 
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
হাস্নুহেনা ও মা
 
হাস্নুহেনা কোন্ মাসে সুবাস ছড়ায় মা আমার ভুলে গেছে
সত্তুর পেরিয়ে গেলে কেউ কেউ ভোলে ফুলগাছ
যেদিন ঘূর্ণির তোড়ে গাছটি মটকা মেরে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়
সমস্ত পাড়ায় তবু ছড়িয়েছে ফুলগন্ধ নালা-নর্দমায়-কাদায়-জংলায়
তারপর জলের ভীষণ টানে ফুল-পাতা ভেসে গেলো চাক্তাই খালের জোয়ারের জলে
ওখানে সুবাস খুব প্রয়োজন ছিল পাঁকের জঙ্গমে
হাস্নুহেনা ভেসে গেলে জোছনার চাঁদ লেম্পোস্টের বাতি ছাড়া কিছু নয় আর
ম্লান ফিকে স্বাদহীন গন্ধহীন জোছনাকে কোনোদিন চাইনি জীবনে
সেই যে প্রথম বোধ যে সন্ধ্যায় রূপালী উঠোন জুড়ে জোছনার মায়াচাঁদ আর হাস্নুহেনা গন্ধ বিলিয়ে অমল
আউলা ঝাউলা করে আলুথালু করেছে শৈশব
মা আমার এক রাতে সে উঠোনে চুল খুলে ছেড়ে দিলো চন্দ্রালোকে হাওয়ার মাতমে
সেদিন সুতীব্র ঘ্রাণে বারবার টেনেছি নি:শ্বাস—চুলের, হাস্নুহেনার…
সেই থেকে যতো প্রেম ওই হাস্নুহেনার সাথেই
সকালে কুড়িয়ে নিয়ে ঝরে পড়া সেই ফুল যত্নে মমতায় রাখি
নরোম করতলের আদরে আহ্লাদে
যে রাতে মা চুলখোলা চাঁদের তলায় বসে হাস্নুহেনা ঘ্রাণ হা করে টেনেছে
নারীর সৌন্দর্য বুঝি আমার প্রথম আবিষ্কার, প্রেমেরও প্রথম!
 
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
সাঁতার
 
 
 
সাতটা পুকুরে পালা করে সাঁতার এখনো কাটি মনের গুমরে
বাঁশডুঁয়াদের ফাঁক গলে ঢুকে পড়ে চাঁদের প্রশ্রয়ে বুইজ্জার পুকুরেই তোলা ঝড়
পোনামাছগুলো কাঁচুমাচু ভয়ে সরে যেতো খোঁড়লের দিকে
কউচ্চা পুকুরে পানাদের দল বারবার তেড়ে আসে তাই
এ পুকুরে মজা নেই পুকুরটাই মজা হয়ে যায় কালে কালে
ফায়ারের পুকুরে সাঁতার দিলে তেড়ে আসে খাঁকি পোষাকের দল
লম্বা লম্বা নলে টেনে তোলে টনে টনে জল গাড়ির ভেতর
তারপর সে কি ত্রাহি হরণ ছুটিয়ে কোথা যায় কেন যায়
 
আমরা জানিনে
শুনেছি আগুন নাকি কোথা আজদাহা সাপের মতন খেয়ে যায়
বাড়ি ঘর দোর, সেটাই নেভাতে ছোটে সামান্য পিঁপড়ার মতো লাল গাড়িদের দল
মনুমিজ্জিদের পুকুরে ভীষণ ভীড় জমে বেকার বয়স্কদের
খেজুরে আলাপ জুড়ে বগলে সাবান ডলে ঘন্টা জুড়ে আড্ডার বাহার
কাজকর্ম জোটে নাই, মেসে থাকে অথবা লজিংয়ে, কেউ কেউ
প্রাচীন বংশের নি:স্ব সন্তানের মতো বিড়ি ফুঁকে সুখটান মারে
কেউবা কাতল মাছের মতো ঝুপ করে ডুব মেরে উঠে যায়
চুলাতে চড়ানো ভাত পুড়ে যাচ্ছে সে আফসোসের তুলে খেই
হেলেনের বাপের বাড়ির পেছনের খৈয়াটাতে না পারতে দিয়েছি ডুব
অনিচ্ছায়, কাদায় কাদায় কদাকার হয়ে যেতে কার অতো ভালো লাগে
দেড়-ব্যাটারির ঘরের পেছনে যে পুকুরে বাসন কোসন ধুতো
কোনোদিন জাগেইনি সাধ এমনকি পঞ্চমীর চাঁদ যখন বাড়িয়ে হাত ডেকেছিলো
ফেরদৌস মিয়ার পুকুর সে ছিল জীবন্ত খুব সারাক্ষণ মাছেদের ঘাই
আমরাও সারামাঠ বল খেলে ধুলোকাদা যথেষ্ট মেখেই গায়ে
ঝপাঝপ লাফ দিই ঘাটের উপর থেকে কেউ লুঙ্গি গোছ মেরে
কেউবা উলঙ্গ নামি, অনন্ত কালের সেই বেশুমার দাপাদাপি
ওপাড় যাবার যতো প্রতিযোগিতার ছলে দলে দলে
পুকুর অশান্ত করে কালোজল ঘোলা থেকে ঘোলা করে যাই
ওপারে ডাবের গাছ দু’চারিটি পেড়ে খাই শীতের বড়ই থোকা থোকা
যখন শরীরে আর একরত্তি বল নেই ঘাটের ফোঁকর থেকে ধরে নিই তেলাপিয়া কিছু
পাশেই ছুট্টুর ঘরে ভেজে খেয়ে মুখ মুছে বাড়ি ফিরি মাসুমের মতো।
একটাই খেদ, কেবল দুবার গিয়ে আর যেতে পারি নাই
কী সুন্দর টলটলে পরিষ্কার সেই জলে মাছ চড়ে জলপরীদের মতো
তলার পাথর থেকে জলজ উদ্ভিদ সব খালি চোখে দেখেছি উপর থেকে
আমাদের হট্টগোলে পুকুরে যাবার পথ বন্ধ করে দিয়েছে দুর্জন
এখনও স্বপ্নের ঘোরে পেঁচুমিয়াদের সে পুকুরে জলপরীদের সাথে
হাজার বছর আমি সাঁতরে চলি, কেবল বন্ধুদের সেই দল ব্যস্ত হয়ে গেছে, সাঁতার দেবার ছলে কেউ তো আসে না …
 
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
 
সেই জংলা সেই বারিছা
 
সেই জংলা সে বারিছা যদিও ছড়ারকুলে জেগে নেই
গরখাই শুকিয়ে মরা গর্তের মতন রূপ ধরে আছে
এখনও বারিছা থাকে এখনও গরখাই আছে, তবে
আমাদের স্বপ্নের ভেতর তেমনি সঘন গহন যেন
শনশন বাতাসে আর কুলুকুলু জলশব্দে বাঁচে
বরষার ঢল নেমে এলে গরখাই খরস্রোতা হয় জুনে
আমার কিশোর মন লুঙ্গি গোছ মেরে নেমে পড়ে
কই পুটি মলা ঢেলা মাছের নেশায় কখনওবা কোঁচ দিয়ে
কখনও লুঙ্গির জালে—নেশা তো যুক্তি মানে না
এখনও লুইস ক্যারলের মতো কে যেন আমাকে ঠেলে
বারিছার ঘন জংলায় ঢুকিয়ে দেয় অখণ্ড অবসরে
ফড্ডাসির গুলতির জন্যে আছারগুলা খুঁজতে খুঁজতে
গোলাপের মন্দারের কাঁটা তুচ্ছ হয়ে পড়ে হতাশায়
বেতগুলা পেয়ে ভুলে যাই, পৃথিবীতে সূর্য ওঠা নামা করে
ভুলে যাই কর্মক্ষেত্র বলে কিছু থাকে কিছু সংসারটংসার
দুহাতে বেতফল ছিঁড়ে খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে জোছনা নেমে আসে।
পেকে যাওয়া আছারগুলা হাতছানি ডাকে — আয় আয়
পরম মমতা ভরে পাকা আছারগুলা উদরস্থ করি
কাঁচা আছারগুলা জেবের ভেতরে ভরি ফড্ডাসির গুলতি বানাবো
তারপর বেতপাতার বাঁশি বাজাতে বাজাতে বের হই
বিস্তীর্ণ চারপাশ শুনশান দেখি না কিছুই তাই
মন ভরে কাঁদি, কেঁদে কেঁদে ভাসাই চরাচর
তারপর সেই জলে জন্ম নেয় দিগন্ত ছাপানো এক
বিশাল পুকুর, যার পাড়ে নীল গাই বাছুরেরা চড়ে
জোছনার চাঁদ পুকুরে নেমেছে স্নানে নগ্নদেহে
জলের ভেতরে তাই পোনামাছেদের কতো তোলপাড়…
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com
 
পুন্ন্যাল
(নীলাঞ্জন বিদ্যুৎকে)
পুন্ন্যাল ফুল জুনের সকালে আগুন লাগায় বুকে
মোটা মোটা পাতা প্রগাঢ় সবুজ জুনে থাকে খুব সুখে
 
পুন্ন্যাল মানে ফুল শুধু নয় আনন্দ ধারা স্রোতে
উৎসবে মাতে সারা সন্দীপ বর্ষার জলজোটে
 
বৃষ্টি এলেই বটবৃক্ষের ছায়ার অন্ধকারে
থোকা থোকা ভয় জমা থাকে কোন্ সূর্যের চুপিসারে
 
পুন্ন্যাল ফুলে দেখো লেগে ওই কোন কন্যার চুল
ঘন বরষায় কোন্ ভোমরায় সেঁধিয়ে রেখেছে হুল
 
এখানে জোয়ারে জল জমে যতো ভাটায় শুকিয়ে যায়
পুন্ন্যাল তুই এই বরষায় ভাগ্যটা নিয়ে আয়
 
 
 
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত