আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট
বরেন্দ্র পথে প্রান্তরে
তোমার জন্যে অপেক্ষা করছি। বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। রোদে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছি। আমার মাথায় চুলের জটায় পাখিরা বাসা বেঁধেছে। চিবুক ছুঁয়ে উড়ে গেছে জন্মান্ধ প্রজাপতিরা। আমি নিশ্চুপ ছিলাম, কেননা পতঙ্গের বিষয়ে কথা বলবে একমাত্র পাখিরা।
প্রস্তর যুগে মানুষেরা গুহায় বসবাস করতেন। কখনো সমুদ্র তটে খালি পায়ে হাঁটতেন। আগুনে পুড়তে থাকতো বন মোরগের কলিজা, তার হাড়ের তোরঙে জমে থাকতো কান্না। পাহাড়ের ঋতু তখন বসন্ত, শিকার ভুলে তোমার নিকটে এলাম, অজস্র নক্ষত্রপুঞ্জের ভেতর গেলাম ডুবে, আমার ফেরার কথা ছিলো না মনে।
তবুও ব্যতিব্যস্ত একটি ট্রেন আমাকে ভুল প্ল্যাটফর্ম থেকে তুলে নিয়ে ছুটলো বরেন্দ্রের পথে প্রান্তরে। আমি দেখলাম, শুয়ে আছি একটা কফিনের ভেতর, আর হাজারটা লোহার চাকা আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, বহুদূর।
বিদায় সূচক চিহ্ন/ মানোসের গুহাচিত্র
দুঃস্বপ্নের রাত, ভোর হতে চায় না। জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ে চাঁদের আলো। তোমার চোখে মুখে কাঁপছে তার ছায়া। যেনো বনভূমির ভেতরে একটা হরিণ ক্রমাগত দৌড়াচ্ছে, তার দিকে তাক করা শিকারীর ধনুক, তাকে ধরে ফেলবে প্রস্তুত একটা কালো চিতা।
হে জীবন, তুমি আর কতদূর পালাতে পারো। এ মেদ মাংসের শরীর সূর্য তাপে ক্রমশ গলছে, ভেতরে বসবাস করা রেশম পোকাগুলো তুঁতের পাতাগুলো খেয়ে ফেলেছে, এ কি এক তুঁত গাছ, ছড়িয়ে যাচ্ছে শেকড় মাটির গভীরে, আমার পশম থেকে ভয়ে ঘাম ঝরছে।
যদি তুমি জিজ্ঞাসা করো, এ জীবন কিভাবে যাপন করেছি। আমি বলবো, নদীর কাছে গভীরতর পিপাসার পাত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তারপরে মানোসের এক গুহাচিত্র, শুধু বাম হাতের আঙ্গুল নাড়াতাম, বিদায়সূচক চিহ্ন।
নিষেধাজ্ঞা
নিষেধাজ্ঞা জারী হলো, আমার মুখের দিকে তুমি তাকিয়ো না, এই যে উচুঁ নিঁচু খানা-খন্দক, পাহাড়-পর্বত, আলোর তীব্র ঝলকানি, তুমি পা পিছলে পড়ে যেতে পারো। জানো তো, আমার চোয়ালে রাগী পিপঁড়েদের বাসা। চোখের ভেতর গভীর সমুদ্র, তুমি স্নানের বাসনা নিয়ে খুলে ফেললে বুকের কাচুঁলি, আমার ভীষণ ভয় করে।
আমি কাউকে বলি না, তোমার প্রেমে পড়ার স্বভাবে মৃত্যু আসে। সমুদ্র শামুকের মতো নিজেকে গুটিয়ে নিই। তোমাকে ভালবাসি আর বলি না। পাখিদের কাছে, নাম না জানা ফুলেদের কাছে ফিরে যাই। তাদেরকে বলি, আমি কবি জীবন ঘৃণা করি, আমি তোমার সন্তানের পিতা হতে চেয়েছিলাম।
সুন্দরের ক্রীতদাস
আমি আজন্ম সুন্দরের ক্রীতদাস থেকে যাবো। যদি তোমার জন্য কিউনিফর্মে একটি শব্দও না লিখি কমতি হবে না। তুমি অমরত্ব পাবে। যেভাবে সভ্যতার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দর নারী মূর্তি, মূলত তারা সুন্দর ও ধ্বংসের দেবী।
যে সুন্দর সমুদ্রে পরিভ্রমণ করায়। নির্জন রাত্রে জাহাজের শেষতম কামরায় ডেকে নেয়, তারপর রুটির মতো ছিড়ে ফেলে দেয়, হাঙ্গরের ঠোঁটে। ভাবি, তুমি কি এমন সুন্দর,আমাকে একা করে দিয়েছো। মাথায় চাপিয়ে দিয়েছো পৃথিবীর সমান ওজন।
ফলশ্রুতিতে আমার পরিবার আমার উপর ভীষণ বিরক্ত। আমার শিক্ষক আমাকে একটি গণিতও বোঝাতে পারেননি। আমি ভাষা শিক্ষার বদলে স্বর্গীয় পাখির নৃত্যের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, তারপর তোমার দিকে এগিয়েছি। জানি, আমার অনিবার্য পতন তুমি ঠেকাবে না।
অভিযোজন প্রক্রিয়া
তোমাকে ভালবাসতে পারি না। ঐ যে শিমের লতা উঠে যাচ্ছে খড়ের চালে, তার মতো করে যদি তোমাকে ভালবাসতে পারতাম! আমার চিরকাল আক্ষেপ থেকে যাবে। সমুদ্র জলে মাছ হয়ে সাঁতার কাটতে গিয়ে মনে পড়বে, পৃথিবী আবার বরফের নিচে ঢাকা পড়ে যাবে।
আহা বরফ যুগ, আমার মাথা কোথায় জমে থাকবে। তোমাকে পড়বে মনে, আমরা বরফের জামা গায়ে ফায়ার প্লেসে ঢুকে যাবো। আহা জীবন, তোমার কাছে কতো ঋণ। সাদা ভাল্লুকদের সাথে পায়ে ছাপ মিলিয়ে হাঁটতে গিয়ে করুণ কমলালেবুর মতো গড়িয়ে যাচ্ছি। সামান্য হাওয়ায় দুলে উঠছি যেনো পুড়ে যাওয়া মোম।
তুমি তো জানো, তোমাকে ভালবাসা ছাড়া আমার আর কোন পথ ছিল না, তুমি আমার অভিযোজন প্রক্রিয়া।
জন্ম ১২ ই নভেম্বর ২০০০। বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার অন্তর্ভুক্ত ক্ষেতলাল উপজেলার তিলাবদুল মৃধাপাড়া গ্রামে। বর্তমানে জয়পুরহাট সরকারী কলেজে দর্শন নিয়ে স্নাতক স্তরে পাঠরত। নিয়মিত লেখার কাগজ কবিতা পাক্ষিক, অনুপ্রাণন ত্রৈমাসিক পত্রিকা, এছাড়াও দুই বাংলার অজস্র লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখি। কবিতা ছাড়াও গল্প, নিবন্ধ, ছড়া প্রভৃতি লেখালেখির বিষয়।