| 19 এপ্রিল 2024
Categories
গল্প সাহিত্য

তুমি তো আমার ভালোবাসা

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

আমি ধীরস্থির পায়ে ঘরে ঢুকলাম।দেখি রূপকথা ভিজে চুলে তোয়ালে চালাচ্ছে।রূপকথার গা দিয়ে কালকের মায়াময় রাতের সেই মোহময় গন্ধ বেরুচ্ছে।একেবারে শান্ত আর স্বাভাবিক সে চোখের মায়াবী হাসিতে আমায় বললো–বোসো ঘরে।ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি আসছি।

আমি ভেতরে ভেতরে বিধ্বস্ত হচ্ছি অবিরত কাল রাতের পর থেকে অথচ সে কত স্বাভাবিক।আমি শুধু মাত্র নিজের জীবন ধারনের রসদটুকু জোগাড় করতেই এই শহরে এসেছিলাম।জীবনের যেটুকু দেখি শুধু খেলাঘর এ।একটা বন্ধনহীন জীবন থাকলে  মানুষের বেঁচে থাকবার জন্য আর কিছুর চিন্তা করতে হয়না এ পৃথিবীতে।আমার যাযাবর জীবন তবে এ জীবনে কারও ক্ষতি বা বিশ্বাসঘাতকতা করিনি।তাই ভেঙ্গে পড়ছিলাম বারবার।

একটু হাতমুখ ধুয়ে সোফায় বিধ্বস্ত দেহটা এলিয়ে দিয়ে ভাবছি সবে,দেহ থেকে মন আজ বিধ্বস্ত বেশি। মানুষের মন ই হল আসল। ঐ মনেই আমরা আসলে মরি বা বাঁচি।এইসময় রূপু মানে রূপকথা পাশে গা ছুঁইয়ে বসলো।
— তুমি সকাল থেকে এত কিছু গভীর কি ভাবছো বলতো?
আমি বলতে যাচ্ছিলাম অন্যকিছু কিন্তু বললাম-কই কিছু না তো।
–মেয়েদের চোখকে কোন পুরুষ মানুষ ফাঁকি দিতে পারে না।আর তুমি তো আমার এখন সবচেয়ে প্রিয় পুরুষ এই মুহূর্তে।
রূপকথার কথায় তার আরও গাঢ় বন্ধন টের পেয়ে আমি চমকে উঠলাম।

তুষারকে ফেসবুকে হঠাৎ করে পেলাম।তারপর আমার যা স্বভাব বাউন্ডুলে সেই টানটা।জব্বলপুরে ছিলাম।তুষার নাসিকে।একটা বড় সিমেন্ট কোম্পানিতে একাউটেন্ট।আমায় একটা চাকরী সে এখানে এলেই জোগাড় করে দেবে।আমি ঠিকানা পেয়ে চলে আসি নাসিকে।তার ঘরের ঠিকানা খুঁজে পেতে কোন দেরী হয়নি।কিন্তু গিয়ে দেখলাম বাড়িতে তুষার নেই।আমি দ্রুত ওখান থেকে চলে আসছিলাম।রূপকথার অমন ব্যবহারে পারলাম না।এত আন্তরিক আর স্বাভাবিক সে।বললে–আপনার বন্ধু তো সপ্তাহের শেষে দুদিনের জন্য বাড়ি ফিরে আসে।আপনার চাকরীর সব ব্যবস্থা করে রেখেছে সে,আপনি আজ বিশ্রাম নিন।কাল সকালে কাগজটা নিয়ে কোম্পানিতে দেখা করবেন।সব হয়ে যাবে।আমাদের দুটো রুম কোন অসুবিধে নেই।পুপাইকে আমি একটা রুমে আর আপনি পাশের রুমে থাকবেন।তারপর ধীরে সুস্থে ঘর খুঁজে নিয়ে চলে যাবেন।আমার কোন আপত্তি নেই।রূপকথার এই ব্যবহারে আমি যারপরনাই আনন্দিত হলাম,সমুদ্র সাঁতরে এসে ডাঙ্গা খুঁজে পেলাম মনে হলো।সত্যি তো নাসিক ও খুব ছোট শহর নয়।একটা ঘর খুঁজে পেতে সময় লাগবেই আর বিকল্পের সস্তার  হোটেলে হাজারটা ঝক্কি।আমি ব্যাগ থেকে জব্বলপুরের মিঠাই বের করে রূপকথাকে হাতে দিলাম।
রম্মানিদের বিস্কুট কারখানায় হিসেবরক্ষকের কাজটা পরদিন শুরু করে দিলাম।জব্বলপুরের পাথরের কারখানা থেকে এদের বেতন দ্বিগুণ।এই সিন্ধিরা পাক্কা বেনিয়ার জাত।এরা কাজের দাম দেয় শুনেছি।তুষারের এই প্রবাসে ভালোই যোগাযোগ দেখছি।তবে নিশ্চয়ই ও প্রচুর টাকা বেতন ঐ সিমেন্ট কারখানায় পায়,নইলে ঘর সংসার ছেড়ে ওখানে পড়ে থাকে!রূপকথাদের বাড়িঘর আর তার সাজসজ্জা দেখে তাইতো মনে হচ্ছে।তুষারকে ফোনে থ্যাঙ্কু জানালাম।বললাম–তোর বৌ তো আমাকে তাড়াহুড়ো না করে একটা ভালো ঘর খুঁজে পেয়ে যেতে বলেছে।আরে ভাই আমি তো আর ঘরবদ্ধ জীব নই।আমি তাড়াতাড়ি ঘর পেলেই কেটে পড়বো।
—–কোন তাড়াহুড়ো নয়।তুই যতদিন পারিস থাক না।রূপুর হাতের তৈরী খাবারের স্বাদ পেলে আমি বলছি তুই আর কোথাও যাবিনা আর—-না থাক।ঠিক আছে পরে কথা হবে।

তারপর সপ্তাহান্তে তুষারের আসার কথা কিন্তু আসে না তুষার। তবে অনলাইনে সংসার খরচের টাকা ঠিক চলে আসে রূপকথা জানায়।তুষারের এই না আসাটা আমার কাছে রহস্যের সৃষ্টি করে চলেছে ক্রমাগত অথচ রূপকথা আরও স্বাভাবিক আরও মিশুকে খোলামেলা হয়ে উঠছে আমার কাছে।আমি বাড়ি খুঁজে পেয়ে দু-দুবার রূপকথাকে দেখাতে নিয়ে যাই আর রূপকথা সে বাড়ি দেখেই এটা ওটা অমুক তমুক বলে নাকচ করে দেয়।
তুষার ফোন এখন আমার ধরতেই চায়না আর ধরলেও সংক্ষিপ্ত কথায় সে ফোন ছেড়ে দেয়।বন্ধনহীন জীবনে কি এক রহস্যময় বাঁধনে পড়লাম ভেবে আমি যখন সাতপাঁচ ভাবছি তখন গতরাতের ঘটনাটা আমায় অন্য এক গভীর মানসিক ভাবনায় বিপর্যস্ত্য করে দিলো।

বেশ কিছুদিন হলো রূপকথা আমার ঘরে অনেক রাত পর্যন্ত থাকত।গল্প হাসি মজা ঠাট্টা এইসব হতো।একটু ভালো লাগার ছোঁয়াছুঁয়ি সেটাও একটু একটু করে শরীরে আন্দোলিত হচ্ছে,বুঝতে পারি।আমি যে ঘরে থাকি আর রূপকথাদের ঘরের মাঝে দরজা আজকাল খোলাই রাখা হতো।আমায় ছিটকিনি দিতে রূপকথা না করেছিল।গল্প করতে করতে আমার যখন চোখ বেয়ে ঘুম ঘনীভূত হত তখন রূপু নিজের ঘরে যেতো।গতরাতে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি রূপু আর আমি পৃথিবীর আদিম খেলায় মেতে উঠলাম।রূপুর মুখ ধরে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলাম।রূপুর দীর্ঘদিনের উপোসী শরীর সব ভেঙ্গেচুড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছিল।আমায় আদরে আদরে ভরিয়ে তুলছিলো সে।আমার শরীরের খিদে মেটাতো তো ব্রথেলের যৌনকর্মীরা তাদের থেকে এ তো অন্যরকম এ শারীরিক আদর।যা আমি কখনো পাইনি বোধহয়।আমিও আমার সব আদর দিয়ে ভরিয়ে দিতে থাকলাম রূপুকে।

রূপু পাশেই গা ঘেঁষে বসলো।বললো—পুপাইয়ের তিন বছর বয়স এখন।ওর দু বছর বয়স থেকেই তুষার বাড়িতে আসা একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছে।সেখানে আর একজনের সাথে সংসার করছে।তুষারের নামে ফেসবুকটা আমি চালাই। আমার অনেক জানাশোনা লোকজন সোর্স আছে এখানে, চাকরীটা আমি তোমাকে যোগাড় করে দিয়েছি।তুষারের ফোনে যার সাথে তোমার কথা হয় ও তুষার না।অন্যকেউ।মহল্লার লোকেরা অনেক কিছু বলে আমি পাত্তা দেইনা।তবে তুষারকে একটা মাসোহারা আমায় দিতে হয়।নইলে ওকে আমি কবে খুন করে লাশ বানিয়ে দিতাম।তোমার অপরাধ বোধ হচ্ছে ?বন্ধু থাকতে দিলো আর তার বৌকে নিয়ে বেজায় স্ফূর্তি করলে বলে?
পাশের ঘর থেকে পুপাই ডেকে উঠলো– আঙ্কেল এই রাইমটা পড়িয়ে দাও না।

অনেকটা রাতে আজ আবার গভীর টালমাটাল সঙ্গমের পর দেখি আমাকে জড়িয়ে ধরে রূপু  ঘুমোচ্ছে।প্রবল শান্তির নিরাপদ ঘুম।

রূপকথার হাতটা আস্তে আস্তে সাবধানে সরিয়ে
দিলাম,তারপর বাইরের বারান্দায় এসে  দাঁড়ালাম।একটা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে রাতের পৃথিবীর রস নিঙড়ে নিচ্ছি এ মনে।গোটা পৃথিবী গভীর ঘুমে, পথের কুকুরগুলো ও।আকাশের চাঁদটাকে সাক্ষী রেখে বন্ধনহীন পৃথিবীর খোঁজে আবার বেড়িয়ে
পড়লাম। তুমি রূপকথা রূপু তাহলে একমাত্র ভালোবাসা আমার।বন্ধনে জড়াবে!বরঞ্চ ভালোবাসার আর এক নাম তুমি হয়েই থাকো।ফেসবুকে সব বোঝা যায়না ঐ আসল মানুষটাকে।মুখোশ পরা মুখ,ফেসবুক।ভেবেছিলে একটা বন্ধনে জড়াবে আমার সাথে ভাব জমিয়ে।উ হুঁ না।আমার ভালোবাসা বন্ধনহীন এই পৃথিবীর পথ।সেই অজানা পৃৃৃৃৃথিবীর পথেই আমার হেঁটে চলা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত