| 28 নভেম্বর 2024
Categories
ক্যাম্পাস চত্বর খবরিয়া লেখাপড়া

এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেপালও আছে, বাংলাদেশ নেই

আনুমানিক পঠনকাল: 2 মিনিট

চার শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তালিকায় কোনোটির উন্নতি হয়েছে, কোনোটি নেমেছে কিছুটা নিচের দিকে। আবার নতুন করে তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে কয়েকটি ইউনিভার্সিটি।

সম্প্রতি লন্ডন-ভিত্তিক সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, এশিয়া মহাদেশের ৪১৭টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।

গত বছর ৩৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে এই জরিপ চালানো হয়েছিল।

তবে, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের অনুমোদিত ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটিও স্থান পায়নি এই তালিকায়।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাপদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায়ই উঠে আসে বিভিন্ন অসঙ্গতি ও সমালোচনা।

মোট ১৩টি দিক বিবেচনা করে এই তালিকা প্রস্তুত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

গতবারের তালিকায় প্রথম স্থানে থাকা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরকে টপকে এবার প্রথম স্থানে এসেছে চীনের সিনহুয়া ইউনিভার্সিটি। ৩ এবং ৪ নম্বরে রয়েছে হংকং এর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়।

চার শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তালিকায় কোনোটির উন্নতি হয়েছে, কোনোটি নেমেছে কিছুটা নিচের দিকে। আবার নতুন করে তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে কয়েকটি ইউনিভার্সিটি।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, কেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এশিয়ার সেরা তালিকায় জায়গা করে নিতে পারল না?

এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মত, “তারা (টাইমস হায়ার এডুকেশন) সেসব সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকাটি দিয়েছে তাতে তারা সেগুলো এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পায়নি। কিন্তু, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা ওভারঅল যে মানের, তা বিশ্বমানের চেয়ে খুব বেশি যে পেছনে তা নয়। আমাদের ছেলেমেয়েরাই অন্যান্য নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছে। সেখানে তারা প্রতিযোগিতা করে ভর্তি হচ্ছে। সেখান থেকে ব্রিলিয়েন্ট রেজাল্ট করে বের হয়ে আসছে। এমন চিত্র প্রতিবছরই আমরা দেখতে পাই। আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের মান যদি র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্যাটাগরিতে নিয়ে আসি তাহলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাবো বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু, অবকাঠামোর দিক থেকে- বাজেট বরাদ্দ, ল্যাবরেটরি-লাইব্রেরি সুবিধা- এগুলোর দিক থেকে আমরা বিশ্বমানের চেয়ে পিছিয়ে আছি- সেটি অস্বীকার করা যাবে না। এই সীমিত সুযোগ দিয়ে আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের যে পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছি সেটি একটি র‌্যাঙ্কিংয়ের দাবি রাখে।”

সর্বত্র আলোচনার বিষয় দেশে শিক্ষার মান কমছে বা  বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হচ্ছে না।- “গবেষণার মাত্রা আগের থেকে বেড়েছে। আগের থেকে তহবিলও বেড়েছে। কিন্তু, যে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় যাওয়ার কথা ছিলো সেটি হয়তো এখন পর্যন্ত যায়নি। সেই চেষ্টাই চালিয়ে যেতে হবে। রাতারাতি তো কোনো কিছু পরিবর্তন করা যায় না। মোটামুটিভাবে এখন আগের থেকে ভালো অবস্থায় আমরা যেতে চেষ্টা করবো। তহবিলের একটা সঙ্কট থেকে যায়। সমসাময়িককালে তা অনেক বাড়ানো হয়েছে। এখন মান বাড়ানোর জন্যে  গুরুত্ব বেশি দেওয়া দরকার। এখন আমাদের ফ্যাসিলিটি আর শিক্ষকদের মান বাড়ানোর জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তা শুধু উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নয়। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও বাড়াতে হবে। শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষায় এসে মান বাড়ালে চলবে না। প্রাথমিক-মাধ্যমিক পর্যায়ে মান বাড়ানো না গেলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিং হঠাৎ করে বাড়াতে পারবো না।”

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরেও গুটি কয়েক বিভাগে গবেষণা হয়।

বিশ্ব র‍্যাংকিং এর ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা বড় ভূমিকা পালন করে। যেটা হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে একসময়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বরাবর এসেছে দেশের নানা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে।

কিন্তু এসব যে উচ্চ মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নাম লেখানোর জন্য কোনো কাজ করে না সেটাই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা।

তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, পরিচালনা নিয়োগ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে রাজনীতি মূল নিয়ামক হয়ে ওঠার কারণে পড়ালেখা, গবেষণা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ বের করা একেবারেই একটা জটের সৃষ্টি করেছে। এখানে শিক্ষা ছাড়া সব কিছুকেই মূল্য দেওয়া হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বিবিসিকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পদ্ধতি এখনো সনাতন পদ্ধতির মধ্যেই রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে নানা অরাজকতা।

তিনি বলেন, আমাদের একটা বড় ঘাটতির জায়গা হল যে টিচিং এন্ড লার্নিং। এই দুটি পদ্ধতি খুব পুরনো আমলের রয়ে গেছে। লার্নিং কত ধরণের আছে সেটা নিয়ে গবেষণার অভাব আছে, বোঝাবুঝির অভাব আছে। এখানে তো অনেক দিন ধরে অনেক অরাজকতা চলছে সেসব মিটিগেট করার ব্যবস্থা নেয়া হয় নি। সেটাই বড় সমস্যা।

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত