স্টেশনে নামতে না নামতেই কিছুর মধ্যে কিছু না, কাঁধে একটা থাপ্পড়। আমার ছোট্টবেলার অন্তরঙ্গ বন্ধু লোকনাথ। ছাতিমতলায় বসে নাকি ওর স্পেশাল বিড়িতে সুখটান দিচ্ছিল। সেখান থেকেই নজর করেছে।
— কী রে? অ্যাদ্দিন কোথায় ছিলি?
— কেন, জানিস না? ৪ নম্বর প্রতাপাদিত্য রোড, আদি ও অকৃত্রিম।
— ধ্যার, ওটা তো তোর বাসাবাড়ি! আদি-অকৃত্রিম কী করে হয়? প্র্যাক্টিক্যালি ঠিক হল কি?
আমি হাসি। ওটা আদি অকৃত্রিম নয়, এইটাই আদি, এইটাই অকৃত্রিম। কী, এ বার ঠিক আছে? খুশি?
— খুশি অখুশির ব্যাপার নয় রে নিখিল, ফ্যাক্ট ইজ ফ্যাক্ট।
দু’জনে গল্প করতে করতে এগিয়ে যাই। রিকশা স্ট্যাণ্ড পর্যন্ত ও সঙ্গে সঙ্গে আসে। তার পর আচমকা বলে— চলি।
গোবিন্দ আমার বাঁধাধরা রিকশাওলা। সওয়ারি ধরে ফেলেছে। এক ভুঁড়িয়াল দু-দু’টি নাগরি রিকশার পাদানিতে রেখে, সিটে চেপে বসেছেন। গোবিন্দ বলল— ইস্ দাদা, তিন-চার সেকেণ্ডের জন্যে মিস হয়ে গেল। এই বিলেস! দাদাকে সাবধানে মনসাতলায় নিয়ে যা। যান দাদা। বিলেসটা ভাল চালায়। নতুন রিসকা ওর, সিট হড়কাবে না।
যতই নতুন হোক। রিকশাতে মৌজ করে বসা যায় না। সিটটা বড্ড সরু হয়। ব্যাগ পাদানিতে নামিয়ে ধারের রডটা ডান হাতে আঁকড়ে থাকি। বিলাসের রিকশা শনশন করে উড়তে থাকে। আমিও যে উড়ে যেতে পারি, সে খেয়াল নেই। ইয়াং ব্লাড!
তবে চুপচাপ এতটা পথ পার করা আমার ধাতে নেই। দেশের মানুষের জন্যে আমার আঁতের টানও বটে।
— কী বিলাস, কদ্দিন এ লাইনে এসেছ? আগে তো দেখিনি!
— খেতে খাটতুম আজ্ঞে। গোবিন্দদাদা জোর করে এনে ভর্তি করে দিল।
— বাড়িতে মা-বাবা আছেন তো?
মাথা হেলিয়েই উত্তর দিল— হ্যাঁ।
— রোজগার কেমন?
— আপনাদের আশীর্বাদে চলে যায়। এ দিকে তো ট্যাসকি নেই, ইস্টিশান থেকে যাবার আসার একমাত্তর রুপায় এই রিসকা।
আমি দেখেছি, বিলাস চালাচ্ছে, ওর হাতের পেশিগুলো ফুলে ফুলে উঠছে। গোবিন্দকে ডাইনে-বাঁয়ে একটু হেলতে হয়, চমৎকার একটা ছন্দ তৈরি হয় তাতে। এ ছোকরা লম্বা আছে, স্বাস্থ্যখানাও পেটাই। এ ও-রকম এক-দুই ছন্দের ধার ধারে না। একেবারে মেট্রো রেলের এসক্যালেটর।
তবে গ্রামগঞ্জের রাস্তাতে ন্যাচারাল বাম্পার তো পদে পদে। তখন একটু উছলে উঠি রিকশাসুদ্ধ। খানাখন্দে গাড়ি পড়তে দেয় না বিলাস। পাক দিয়ে ঘুরে যায়। সিটে বসে আমিও সে পাক শরীরে মোক্ষম টের পাই।
— এই শুরু হল মনসাতোলা— বিলাস হাঁকে, খানিকটা বাস কণ্ডাক্টরের কায়দায়।
ও কি ভেবেছে আমি মনসাতলার বাইরের লোক? যা বাব্বা! আরে এ খোকা, তুই আমাকে মনসাতলার মোড় চেনাবি? বলি না কিছু। নিবিড় চোখে বটগাছটার দিকে তাকাই। সেই মোটা মোটা গোলচে পাতা। লাল বট ফল সারা গাছটার মাথার ওপর পট পট করে ছড়িয়ে আছে। ঝুরি নেমেছে মহারুদ্রর বটের মতো। গাছ ঘিরে গোল বেদি, কারা কবে বাঁধিয়ে দিয়েছিল, সারাই-সুরুইও করে বোধ হয়। কেননা, বেদিটা বেশ নিকোনো।
বলি— বিলাস, তুমি হাঁফিয়ে গেছ, আমারও ইচ্ছে যাচ্ছে এই গাছতলাটায় একটু জিরোই।
গুঁইগাঁই করল একটু। যদি তার প্যাসেঞ্জার ফসকে যায়!
বললুম— শোনো বিলাস, অল্প বয়স, বুঝতে পারছ না। দম না ফেলে যদি সওয়ারি টানতে থাকো তো চট করে শরীর-স্বাস্থ্য ভেঙে পড়বে। গোবিন্দকে জিজ্ঞেস করো ঠিক বলছি কি না! ও-ই তো তোমার মুরুব্বি, নাকি?
বলতে বলতে আমি নেমে পড়ি। বটতলার ও-দিকে ডাবওলা বসে আছে গুচ্ছের ডাব নিয়ে— বেশ শাঁসওলা মিষ্টি ডাব দাও দিকি চারখানা। প্রথমে দু’জনে দুটো শেষ করি। তার পর পরের দুটো কাটবে।
বসে বসে ডাব কাটা দেখি পরম আনন্দে। কী অনায়াসে কাটারি দিয়ে কোপ করে ফেলল, তার পর এক চাড়ে ডালা খুলে ফেলার মতো করে খুলে দিল ডাবের মুখ।
আহ্, ডাব তো নয় অমৃত। ডাবের খোলা দিয়েই চামচের মতো করে দেয় ডাবওলা, চিরে দেয় ডাবগুলো আধাআধি। মোটা নরম শাঁস। কেটে কেটে খাই দু’জনে। ডাবের শাঁসের তুলনা, তা যদি বলেন, আমি জীবনে কখনও কিছুতে পাই না।
— কী রে বিলাস! খিদে-তেষ্টা মিটেছে?
ঘাড় হেলিয়ে দন্তপঙ্ক্তি বার করে বিলাস। খুব খুশি।
বটতলার ছায়ায় হাওয়া খাই। রোদটা চনচনে ছিল এতক্ষণ। হেমন্ত কাল এই বারে ছায়া ফেলেছে চার দিকে। ছায়ায় ছায়ায় আবার যাত্রা। মনসাতলার মোড় থেকে আমাদের বাড়ির দূরত্ব বেশ খানিকটা। ও-দিকটা ভিন্ন পঞ্চায়েত এরিয়াও বটে। আস্তে ধীরে চল বাবা, চার দিকটা দেখতে দেখতে যাই। ওই বাঁ দিকে মনসাতলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। খানিকটা এগিয়ে ডান দিকে পড়বে মাধব মিস্ত্রির কাঠগোলা। তার পর শুধু ধানখেত আর ধানখেত। এখন তো এক দফা ফসল তোলা সারা। আধ ন্যাড়া মাঠ। এখানে ওখানে একটা দুটো মানুষ বসে শুধু ঝিমোচ্ছে। চমৎকার একটা কুয়াশামাখা শেষ দুপুর এখন মাথায় জড়িয়ে ধরেছে আমাকে। এখানে কলকারখানা নেই, গাড়ির ডিজেল-শ্বাস নেই, পরিচ্ছন্ন আকাশ। এই কুয়াশাও মেট্রো-ধোঁয়াশা নয়, সহজ স্বাভাবিক হৈমন্তী কুয়াশা। এই হেমন্ত শহরে গেলে কখনওই টের পাবেন না। সেখানে সবেতেই গ্রীষ্ম বা বর্ষার ভেজাল।
শিউলিতলায় যথারীতি ফুল কুড়োচ্ছে বুলবুল। শ্যামলা রঙের স্বাস্থ্য-নিটোল বছর বারোর বালিকা। পরনে একটা লম্বা ফুলছাপ ফ্রক। কোঁচড় ভর্তি ফুল ফেলে দৌড় দিল খবর দিতে।— ‘দাদা এসেছে, দাদা এসেছে।’ যখনই আসি এই একই দৃশ্য। হয় শিউলিতলায়, নয় বকুলতলায়। মেয়েটা যে ফুল কী ভালবাসে!
আওয়াজ কানে গেছে। ঠাকুমা গোয়ালঘরের পেছন দিয়ে বেরিয়ে এল। নির্ঘাত গোবরগাদায় ছাতুর খোঁজে গিয়েছিল।
— কী রে মুখপোড়া। মনে পড়ল অ্যাদ্দিনে?
আমি চার-পাঁচ মাস অন্তর অন্তর নিয়ম করে আসি। তবু ঠাকুমার সেই একই অনুযোগ।
— যা সদর দিয়ে ওঠ গিয়ে। আমি আসছি।
খিড়কির দুয়ারে একটু দাঁড়িয়ে থাকি। আমি এসেছি এ সংবাদ আর কার কার কানে গেল? মা কি এক বার এ দুয়ার দিয়েও বেরিয়ে আসতে পারে না! এক বারটি!
খিড়কি ঘুরে দাওয়ায় গিয়ে উঠি। জ্যাঠামশায় বোধ হয় আদালত থেকে সবে ফিরেছেন। ক্যাম্বিসের আরাম চেয়ারে কাত হয়ে গুড়গুড়ি টানছেন। অম্বুরি তামাকের গন্ধ চার দিকে। গন্ধটায় আমার নেশা লাগে। ছোটবেলায় দু’এক বার টেনে দেখেছি। টানতে মজা পাই না, যেমন বিড়ি-সিগারেটেও কোনও দিন পাইনি। কিন্তু গন্ধটা আমার ভাল লাগে। এক বার আমার দিকে আড়চোখে চাইলেন জ্যাঠামশায়। খুব খুব মৃদু একটু হাসি চোখে। হাসি না বলে খুশি বলাই ভাল। উনি রাশভারী মানুষ। এর বেশি ওঁর থেকে আশা করা বৃথা। অবশ্য ওঁর উপস্থিতিটুকুই যথেষ্ট ভরসার। ছোটবেলা থেকে! বাবা নেই তো কী! বাবার অভাব উনি কোনও দিন বুঝতে দেননি আমাদের। কী শাসনে, কী সাহায্যে! আদর আর প্রশ্রয়ের ভাগটা অবশ্য জেঠিমার।
ভোরবেলা, কী শীত কী গ্রীষ্ম, জ্যাঠামশায় উঠে একটা হাঁক দেবেন। ব্যস, অমনি আমরা কাঁথাটাথা ফেলে সটান উঠে দাঁড়াব। কুয়োতলায় নিমদাঁতন সম্পন্ন হবে। খুব শীত পড়লে ঠাকুমা গজগজ করবেন— অ ভোলা, কুচোগুলোকে কি এই জাড়ের মধ্যে না তুললেই নয়!
জ্যাঠামশায়ের ব্যক্তিত্বের ধরনটা হল শাল দোশালার মতো। তোমায় চার দিক থেকে ঘিরে রেখে দিয়েছে। কিন্তু বারবার খোঁচা দিয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দেবে না।
— কেমন চলছে? গুড়ুকের ফাঁকে বললেন।
দাওয়ায় বেতের মোড়া। চেপে বসেছিলুম। জানা কথা, জ্যাঠামশায়কে পার হয়ে ভেতরে ঢোকা যাবে না। উনি ওঁর সময় মতো মাপ মতো কথা বলবেন। আমি আমার সময় ভুলে, মাপ সম্পর্কে সচেতন হয়ে বসে থাকব। এটাই রীতি। এতে আমার আর কোনও আপত্তি নেই। আমি তো সময় হাতে নিয়ে এসেছি। এখন ভালও লাগে এই পুরনো ব্যক্তিত্বের হাল্কা চাপ। একটা অন্য রকম ভিন্ন জগতের হাওয়া। এখন এগুলো বুঝতে পারি। বয়ঃসন্ধিতে ভাল লাগত না। তখন মন একটা নির্দায় স্বাধীনতা খুঁজত। স্বাধীনতা যে কখনও নির্দায় হতে পারে না, সেটা আমার থেকে বেশি কে বোঝে এখন?
— ভাল-ই।
— আবার ‘ই’ কেন? ঝেড়ে কাশো না খোকন! হয় ভাল থাকবে, নয় মন্দ থাকবে। এর মধ্যে কোনও ‘ই’ নেই।
কী যে বলেন উনি! নির্ভেজাল ভাল থাকা সম্ভব নাকি? আর নির্ভেজাল খারাপ থাকলে কি এতটা পথ উজিয়ে আপনজনদের খবর নিতে আসাটা হয়ে উঠত? বলি না অবশ্য এত কথা। প্রথমত, আমার অত সাহস নেই। এখনও জ্যাঠামশাই আমাকে ছেলেমানুষই ভাবেন। মুখে মুখে তর্ক, কথা পছন্দ করেন না। দ্বিতীয়ত, উনি ওঁর নিজের তৈরি জীবনদর্শনের মধ্যে খাঁচায় পাখি হেন আটকে আছেন। আর কিছু ওঁর মাথায় ঢুকবে না।
— ভাল উপায় করবে… উনি গুড়গুড় থামিয়ে বললেন— ওপরওলাকে খুশি রাখবে, স্ত্রী-পুত্রকে নরমেগরমে রাখতে পারলে সংসারের ব্যালান্স ঠিক থাকে। অধিক সন্ততি করবে না। খুব অল্পে সন্তুষ্ট হবে না, আবার অত্যুচ্চ দ্রাক্ষাফল লাভ করবার জন্য লম্ফঝম্ফও করবে না। দিনাগ্রে এক বার, দিনান্তে এক বার অনন্যচিত্তে শ্রীহরির পাদপদ্ম স্মরণ করবে— এই তো ফর্মুলা খোকন। এর কোন খান থেকে আবার ‘ই’ এল।
কী করে বলি— এসেছে সব খান থেকে। না হলে উপায় তো মন্দ করছি না। কিন্তু বাজেটে সব সময়েই ঘাটতি। সে মোটেই স্ত্রী-পুত্রের অন্যায় আবদারের জন্যে নয়, সমাজের অন্যায় চাপ, ইকনমির চূড়ান্ত অব্যবস্থা, সর্বস্তরে গাফিলতির জন্যে। ওপরওলাকে খুশি রাখা আজকাল আর বচ্ছরকার দিনে ভেট পাঠানোর মতো সরল নেই। খুব জটিল হয়ে গেছে। কারণ, কে যে ওপরওয়ালা তা-ই ঠাহর হয় না। নীচওয়ালাও এক ধরনের ওপরওয়ালা। আর, স্ত্রী-পুত্রকে আমি নরমেগরমে রাখব কী? তারাই দিনরাত সে সাধনা করছে। আমাকে, প্রতিবেশীদের, দোকানদারকে, ফেরিওলাকে, স্কুলের ম্যাডাম, কলেজের স্যরকে, পার্টিকে! নরমগরমের ফর্মুলা সব মানুষ এখন প্রাণের দায়ে শিখে নিচ্ছে। কাজেই, ‘ভাল-ই আছি’ বলা ছাড়া আমার উপায় কী? আর, জ্যাঠামশাই যতই কেন ওকালতি করুন— সত্যবাদিতার ওপর তাঁর পয়লা ঝোঁক। মক্কেলকে গোড়াতেই বলে থাকেন— সত্য কথা বলবেন। উকিল আর ডাক্তারকে মিথ্যে কথা বলতে নেই। তার পর কোথা দিয়ে আপনার সুসার করব, সে আমার ভাবনা।
— বউমা, নাতি সব ভাল তো?
— ঠিক আছে।
—ওই তোমার আর এক এড়ানে জবাব খোকন। ‘ঠিক আছে’ মানেটা কী? হিন্দি বুলি তো বলছ না। হয় ভাল আছে, নয় নেই।
উকিলি জেরার সামনে আমি জেরবার। ত্রাহি মধুসূদন! —আপনার বউমার ওই কোমরের ব্যথাটা জ্বালাচ্ছে, ছোটন এ বারেও জয়েন্ট পায়নি। বি এসসি-টাই করছে।
— তা ডাক্তার দেখাও। কোচ রাখো, যেমন সাধ্য তেমন।
— দেখিয়েছি জেঠু। কোমরের ব্যথাটা লাম্বার স্পণ্ডিলাইটিস। সারবে না। বেল্ট দিয়েছে, ব্যায়াম দিয়েছে। ওই করে ভাল থাকা।
— করছেন সেগুলো? মেয়েরা বড্ড কুঁড়ে হয়, এ সব ব্যাপারে।
— করছে বলেই তো জানি।
— নাতির কোচ রেখেছ?
— রেখেছিলুম, কাজ হল না। ওর কোচিং এ বার ও-ই বুঝে নেবে, জেঠু। আমরা আর কূল পাই না।
— সাধ্যের মধ্যে যা করার করেছ। দ্যাখো, এখন শ্রীহরি যা করার করবেন। সমর্পণ করো, সমর্পণ। অত দুশ্চিন্তা করা ঠিক নয়। ভাল করে হেঁকে বলবে— ভাল আছি। ভাল আছি। সব অমঙ্গল দূর হয়ে যাবে।
ভেতর থেকে জেঠিমা বললেন— হাত-মুখ ধুয়ে আয় খোকন। কত ক্ষণ আর জ্ঞানমশায়ের জ্ঞানবিজ্ঞান শুনবি? গরম মুড়ি মাখা হচ্ছে। চা বসেছে।
এই মুড়ি মাখার ব্যাপারটা জিভে জল আনার মতো। এটা শুনলে আর স্থির থাকা যায় না। কী যে এতে দেওয়া হয়, আর কী যে হয় না! অতি অপূর্ব। সঙ্গে থাকে লম্বা লম্বা বেগুনি। একটা করে সবুজ কাঁচালঙ্কা গাঁথা। বেগুনও নিজেদের গাছের, লঙ্কাও তাই। ঝালটা এঁরা কেমন করে নিয়ন্ত্রণে রাখেন, আমার জানা নেই। কিন্তু রাখেন। ঝাললঙ্কার চারা, গন্ধলঙ্কার চারা সব আলাদা আলাদা। আমি আনমনে লঙ্কা তুলি, লেবু তুলি। ঝাললঙ্কা, গন্ধলঙ্কা!
তালা খুলে নিজের ঘরে ঢুকলাম। এক দিকে একটা তক্তপোশ, দেওয়ালে আটকানো আলনায় টাঙিয়ে রাখি শার্ট। বসুধারার আবছা চিহ্ন দেওয়ালে এখনও রয়ে গেছে। হাতমুখ ধুয়ে এসেছি কুয়োতলা থেকে। এত সজীব কখনও লাগে না শহরে। পশ্চিমের জানলা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি— গাছপালার পেছনে রক্তমুখী সূর্যাস্তের রাঙা রেখা ধরে হালদারমশাই আসছেন। হাতে টর্চ, এখন জ্বলছে না। গায়ে বেশ করে আলোয়ান জড়িয়েছেন। বুড়ো হয়ে পড়েছেন, সেটা হাঁটার ধরন দেখেই বুঝতে পারছি।
— এলে নাকি হে! জানলার বাইরে থেকে হাঁক দিলেন।
— হাজির! আমি গলায় একটু মজালাগা সুর আনি।
— এই নাও তোমার চা— খুড়ি পাঠিয়ে দিলেন।
ফ্লাস্ক থেকে চা বার করে তার ঢাকাতেই ঢেলে চুমুক মারি।
উনি আলুর চপ বার করেন ঠোঙা থেকে। —ও বেলা কি হরিমটর গেছে— না। টিফিন নিয়ে এসেছিলুম সঙ্গে করে।
— থাক।
এ বার হিসেবনিকেশ শুরু হয় পড়ন্ত আলোয়।
— আলুর অতিরিক্ত ফলন খোকন। জানোই তো, ধানও খানিক মার খেয়েছে। সার, শ্যালোর ভাড়া, মজুরি সব বাদসাদ দিয়ে এ সিজনে পাচ্ছ তোমার চোদ্দো হাজার সাতশো টাকা, পঁয়ত্রিশ পয়সা। লম্বা ফর্দ, পিনকরা, বুঝিয়ে সুজিয়ে আমার হাতে তুলে দিলেন হালদারকাকা।
— কিছু চিনিকামিনী করেছিলুম শখ করে। কেমিক্যাল সার নয়, স্রেফ গোবর আর পাতা-পচা। হয়েছে উৎকৃষ্ট। পাঁচ সের পুঁটলি করে বেঁধে এনেছি। নিয়ে যাও। সরেস পায়েস হবে। বউঠান এইখানে রাঁধতেন সুবাস ছড়াত এক দেড় ক্রোশ পর্যন্ত।
পায়েস আমার ছেলে তত ভালবাসে না। সে পুডিং আইসক্রিমের ভক্ত। সে কথা বলি না। জিজ্ঞেস করি— বউঠান বলতে? জেঠিমা?
— না, না। আমি রাঙা বউঠানের কথা বলছিলুম। ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে সরু চিঁড়ে, ধান সেদ্ধ, মুনিষদের জন্যে রোজ পাঁচ-সাত সের চালের ভাত, ডাল, কাঁকড়া চচ্চড়ি। এ সব করেও সে কী করে অমন পিঠে পায়েস রাঁধতেন! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন হালদার খুড়ো, পায়েস পিঠের জন্যে, না আমার মায়ের জন্যে, বুঝলুম না।
— রাত্তিরে খেতে এসো। ভাল শোল মাছ পেয়েছি। টর্চ এনেছ তো?
হ্যাণ্ডল দেওয়া নতুন টর্চ জ্বালিয়ে দেখিয়ে দিই।
এ দিকটা অনেক দূর পর্যন্ত ফাঁকা। মাঠ মাঠ গোছের। বাড়িঘরও কাছাকাছির মধ্যে নেই। এমন জায়গা এখনও পর্যন্ত আছে পশ্চিমবঙ্গে যেখানে ইটকাঠ নেই, বাড়ি নেই, আবর্জনা নেই, গা-ঘেঁষা ভিড় আর শব্দ নেই— ভাবাই যায় না। বিজলি এলেই সব ধীরে ধীরে এসে পড়বে। মনে মনে ভাবি— বিজলি না এলেই বোধ হয় ভাল। শুনলে গাঁয়ের লোক আমায় মারতে আসবে।
কোন ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। তখন বোধ হয় আমি বছর তিন। জ্যাঠার সংসারে তখন থেকেই। আমি আর ছোট বোন বুলবুল— পসথিউমাস। জ্যাঠামশায়ের কী ভাগ্য ছেলেপুলে ছিল না, তাই ওঁদেরটা খেয়েপরেই বড় হয়েছি। আমরা ওঁদেরই সন্তান। বুলবুল তো ওঁদেরই বাবা মা বলত। মাকে বউমা।
হালদারকাকার বাড়ি যাওয়ার পথে নীলমণি খুড়োর তাসের আড্ডায় ঢুঁ দিয়ে যাই। সব আলোয়ান জড়িয়ে জমিয়ে বসেছেন, লণ্ঠন জ্বলছে দুটো। আমাকে দেখে সরে গিয়ে জায়গা করে দিলেন।
— রঙের টেক্কাটি এতক্ষণ তুমি চেপে রেখেছিলে? বলিহারি যাই হারু।
— হবে নাকি এক হাত? হাতের তাস থেকে চোখ সরছে না। নীলুখুড়ো আমাকে লক্ষ করে বললেন।
— না খুড়ো, আমার কাজ আছে। এই একটু দেখা করে গেলাম।
— ভাল থাকো বাবা। বাবা জানো, এই বিজলিহীন গাঁয়ে সন্ধের পর থেকে সব ফাঁকা। কিচ্ছু করবার নেই। ভদ্দর ঘরের ছেলেপুলেরা তো সব পগার পার।
হারাধনকাকু বললেন— তবে কী জানো? তাসের আড্ডাও এখন তেমন জমে না। আড্ডা জমতে হলে, হাতে হাতে চা চাই, পান চাই, অনুপান হলে ভাল। তোমাদের বাড়ি যখন আড্ডা বসত, সর্বেশ্বরদা বলতেন— নিশ্চিন্তে বসুন। আমি ভেতরে বলে দিচ্ছি। নিজে তো মামলার নথিপত্তর নিয়ে ঢুকবেন ঘরে। কিন্তু বউঠানের হাতের চায়ের কামাই নেই। সে চা যেমন চমৎকার কড়া, তেমন মিঠে। ঝিমুনি কেটে ভেতরটা কষকষিয়ে ওঠে। আলুর চপ, বেগুনি, কী খাস্তাই করতেন বউঠান।
— কার কথা বলছেন? জেঠিমা?
— আরে না না। তিনি তো জবরদস্ত গৃহিণী। তোমার মা-র কথা বলছি হে। অল্প বয়সে বিধবা হলেন। একেবারে সাদা ঘোমটায় মুখ ঢেকে গেল। অত সুন্দরী! নিজের হাতে সুতো কাটতেন। পশম বুনতেন, তোমরা তো পরেছ ছেলেবেলায়। আমাদের ছেলেপিলেও পরেছে। তুমি তো তবু মনে করে আসো। তারা সব পরস্য পর।
বছর দশেক বয়সেই আমাকে মিশনের বোর্ডিং স্কুলে দিয়েছিলেন জ্যাঠামশাই। ছুটিতে আসলে জেঠিমা কান্নাকাটি করতেন, আর যেতে হবে না। আর যেতে হবে না। আমার ঘরদোর সব খালি খালি ঠেকে।
জেঠু বলতেন— ওর আখেরটা তো দেখতে হবে? কই বউমা তো তোমার মতো করেন না!
— ছেলেপিলের মর্ম ও কী বুঝবে! বুকে করে মানুষ করেছে কে? অন্তরাল থেকে কোনও সাড়া আসত না। রাত্তিরবেলায় অনেক রাত্তিরে একটা ঠাণ্ডা হাতের স্পর্শ। স্বপ্ন কি সত্যি, তা-ও জানি না।
হালদারকাকু জোর করে তাঁর সেই চিনিকামিনী পাঁচ সের আর মুক্তকেশী বেগুনের দুটো পুঁটলি গুছিয়ে দিলেন। বাড়িঘর, খেতখামার, জনমজুর সব কিছুরই দায়িত্ব নিয়েছেন। বদলে যা নেন রিজনেবল। উনি চলে গেলে আমাকে হয় সব বেচে দিতে হবে, নয় এখানে এসে থাকতে হবে। সেটা তো আর সম্ভব নয়!
ট্রেন স্পিড নিয়েছে। উনিশ-কুড়ি, উনিশ-কুড়ি, উনিশ-কুড়ি…। কী বলতে চাইছে ট্রেন? ট্রেন তো নিজে কথা বলে না। প্রত্যেকে তার মনের ভাষা ও ছন্দ শুনতে পায় ট্রেনের আওয়াজে। আসলে আমি ভাবছিলুম— এ বারেও আমি রাঙা বউঠানকে দেখতে পেলুম না। বাবা যখন মারা যান, আমি তিন, বুলবুল মাতৃগর্ভে। মার তখন কত বয়স? উনিশ কি কুড়ি। এর চেয়ে বেশি সঠিক হিসেব করার মতো তথ্য তো আমার হাতে নেই। ফাঁকা পাতা একটা। আমার থেকে মাত্র ষোলো বছরের বড় রাঙা বউঠান। গর্ভ বেদনায় কাতর। তাঁর স্বামী হয়তো বাইশ কি তেইশ, বজ্রাঘাতে মারা গেলেন। শুনেছি তাঁদের ভাবের বিয়ে ছিল। ব্রাহ্মণ কন্যা ও শূদ্র পুত্র। বজ্রাঘাতটা ওই জন্যেই, এমন কথাও শুনেছি। কন্যা প্রসব করে মরি-মরি করেও যখন বেঁচে উঠলেন, তখন তাঁর পুত্র-কন্যা দু’জনেই হাতবদল হয়ে গেছে।
দীপিকা আমার স্ত্রী, হাত থেকে পুঁটলিগুলো নিয়ে বলল— তোমাকে এ বার এত শুকনো দেখছি কেন? অত ধকল সয়ে মনসাতলা অভিযানে আর যেতে হবে না।
ওর উৎকণ্ঠা আমার ভাল লাগে। মনে হয় অনেক দিন আগে অন্য কোনও বউ তার তরুণ স্বামীকে অনেকটা এমন কথাই বলেছিল, বলত। কেমন একটা হুহু শব্দ ওঠে চার দিকে। স্পষ্ট শুনতে পাই।
টাকাপয়সার খামটা আমি দীপিকার হাতে তুলে দিই।
— উনি তো এগুলো মানি-অর্ডার করেও পাঠাতে পারেন।
— চাল, গুড়, আনাজপাতি এগুলো কোন অর্ডারে আসবে?
— না হলেও চলবে। আজকাল এখানে সব পাওয়া যায়।
আমি হাসি। বাঘের দুধ মিলতে পারে তোমার মল-এ, কিন্তু এই চিনিকামিনী মিলবে না। লুপ্ত হয়ে গেছে। পায়েস বাসে এক মাইল দূর অবধি সুবাস ছড়িয়ে যাবে।
— কে বলেছে? হালদার খুড়ো!
আমি হেসে বলি— রাঙা বউঠান।
— তিনি কে?
— যাঁর হাতের পায়েসের গন্ধ দু’তিন ক্রোশ অবধি ছড়িয়ে যেত।
— সে কি চালের গুণে, না হাতের গুণে?
এর উত্তর আমি জানি না। খুঁজছি।
সত্যিসত্যিই স্বর্গীয় সুগন্ধে বাড়ি ভরে গেল। ছোটন তার দুই বন্ধু নিয়ে ঢুকছিল। ওর বন্ধুরাই বলল— তোদের বাড়িতে রান্নার কী ব্যাপক ফ্লেভার রে? ছোটন রান্নাঘরে এসে বলল— ব্যাপারটা কী হচ্ছে মা! ঠাকুরের ভোগ-টোগ রাঁধছ নাকি?
— ব্যাপারটা হচ্ছে পায়েস, যা তুমি খাও না।
— অবশ্যই খাব, বন্ধুদের নিয়ে। এ রকম ফ্লেভার যার, সে কী বস্তু দেখতেই হচ্ছে।
কিন্তু এই সুবাসের মধ্যে আমি রাঙা বউঠানকে পেলাম না।
দীপিকাকে বললুম— ওই যে বেগুন এনেছি দেশ থেকে আর কাঁচালঙ্কা! বেগুনি করো দেখি। যেন খাস্তা হয়। একটা করে কাঁচালঙ্কা গেঁথে দিয়ো।
সত্যিই বেশ খাস্তা হয়েছিল বেগুনিগুলো, ভেতরের বেগুন তো মাখনের মতো। কাঁচালঙ্কাও অতি সুগন্ধী। কিন্তু দীপিকার তৈরি বেগুনির মধ্যেও আমি রাঙা বউঠানকে কোনও মতেই খুঁজে পেলাম না।
রাত্তিরবেলায় সে-দিন শোবার আগে দাঁত ব্রাশ করছি, হঠাৎ দপ করে মনে হল কথাটা। আমি তো তাঁকে তাঁর বাধ্যতামূলক কাজগুলোয় খুঁজছি। তার ভেতরে তাঁর নিপুণতা থাকতে পারে। মনোযোগও হয়তো। কিন্তু তিনি কি ছিলেন?
পউষপ্রখর শীতে জর্জর। আবার তাই ফিরে এসেছি। অভিযান, ভাল বলেছে দীপিকা। না বুঝেই, না জেনেই। বকুলতলায়, শিউলিতলায় কোনও ফুল নেই এখন। বারো বছরে মৃত বুলবুল বোনকে আর দেখতে পাচ্ছি না। আমি যখন সাতাশ, জ্যাঠামশায় তখন গত। জেঠিমা আর দু’বছর পর। কেউ দীপিকাকে বরণ করেনি। কেউ আমাকে প্রদীপ দেখায় না। তালা খুলে শূন্য ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকি তবে কার প্রতীক্ষায়? কিছুতেই মনে পড়ে না, কোনও দিন যেন দেখিনি সে মুখ। স্পর্শ? হ্যাঁ। সেবা? অনেক? কিন্তু… কিন্তু…। কলকল হাসি ওঠে কোথা থেকে শিশুকণ্ঠের। বুলবুল আর আমি জেঠিমার কোল নিয়ে কাড়াকাড়ি করছি। ওই যে হালদারকাকু আসছেন। পুরনো কোট পরেছেন একটা। তার ওপরে শাল। মাথায় মাফলার জড়ানো। কাঁধে একটা ঝোলা। আরও জবুথবু লাগছে যেন। এগিয়ে নিতে যাই। ঝুলি থেকে চায়ের ফ্লাস্ক, কচুরির ঠোঙা। খোসাসুদ্ধু আলুর শুকনো তরকারি বার হয়। কাপও এনেছেন আজ। নিজে ফ্লাস্কের ঢাকনিতে চা নিয়ে কাপটা ওঁর দিকে এগিয়ে দিই। গরম চায়ে চুমুক। খুব সন্তর্পণে বলি, আমার মাকে আপনার মনে পড়ে কাকু?
থতমত খেয়ে যান হালদারকাকু। যেন তিনি এক্ষুনি মায়ের কথাই ভাবছিলেন। ধরা পড়ে গেছেন। সামলেসুমলে বলেন— মনে পড়বে না? তোমাকে দেখলেই মনে পড়ে যায়।
একটু চুপ করে থেকে বললেন, চক্কোত্তি ঠাকুরের ছোট মেয়ে। ওইটুকু মেয়ের কী ব্যক্তিত্ব? তোমরা ছেলেপুলের বাপ হয়ে গেছ বাবা। বলতে দ্বিধা নেই, আমরা এ গাঁয়ের ছেলেছোকরারা বাবা সবাই তাঁর অনুরাগী ছিলুম। সরস্বতী ঠাকুরকে যে চোখে দেখে, সেই চোখে দেখতুম। তা ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল তোমার বাবার। তিনিও দর্শনধারী ছিলেন। গুণও কম নয়, গ্র্যাজুয়েট হয়ে চাকরি করতেন কলকাতায়। রাতের ক্লাসে এম কম পড়তেন। দেখো বাবা, তখন খুব রাগ হয়েছিল। কিন্তু স্বীকার করতেই হয় বড় সুন্দর জুড়ি। কী ভাব দু’জনের!
হালদারকাকু আনমনে এক টিপ নস্যি নিলেন— বোশেখের দিনে ঝড়ের মুখে না একটা রিকশা না একটা গো-গাড়ি। ছুটতে ছুটতে আসছিলেন মণিদা। তোমার বোনটি হওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল তো! …এক এক সময়ে মনে হয় আমাদের হিংসেয় নয় তো? বড্ড জ্বালা করে বুকের ভেতরটা। বড্ড জ্বালা।
শীত খুব। রুটিতরকারিতে কোনও মতে পেট ভরিয়ে বোতলের জলে নাম কা ওয়াস্তে হাতমুখ ধুই। জানলা-দরজা বন্ধ করে দিই। তবুও শীতের হাওয়া পুরনো জানলার ফাটল দিয়ে ফিসফিস করে— খুঁজিস না খোকন, খুঁজিস না খোকন, খুঁজিস না।
ভোর রাতে কে যেন জানলায় ধাক্কা দিল। খটাস করে খুলে গেল কপাট। বন্ধ করতে গিয়ে থেমে যাই। মেঘের মতো ঘন কুয়াশার মধ্যে দিয়ে কারা যেন হাত ধরাধরি করে চলে যাচ্ছে। যতক্ষণ দেখা যায় দেখি। কিছুই কি দেখতে পাচ্ছি ছাই? কুয়াশার মাঠে কত রকমের আবির্ভাব! কোনটা সত্যি? কোনটা রচনা? কে জানে! জানলাটা বন্ধ করে দিতে দিতে দেখি খুব চোখ করকর করছে, খুব। ভেবেছিলুম আমার সতেরো বছর বয়সে স্কুল বোর্ডিং থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সময়ে মাকে হারিয়েছিলুম। পরীক্ষা শেষ না হওয়া অবধি জ্যাঠামশাই ঘুণাক্ষরেও জানতে দেননি। এ নিয়ে আক্ষেপ ছিল। অভিমান ছিল খুব। আজ বুঝি সবই ভুল। মাকে তো সতেরো বছরে হারাইনি, হারিয়েছি আসলে সেই সদ্য কথা ফোটা তিন বছর বয়সেই, যখন আমার তরুণ বাবা মণিমোহন দাস মনসাতলার মাঠে বৈশাখী ঝড়ে বজ্রাঘাতে মারা যান।