বেড নাম্বার ১৪২৪ (পর্ব-৯)

Reading Time: 2 minutes

বিতস্তা ঘোষাল আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ইরাবতী পরিবার তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে। কিছুদিন আগেই হাসপাতালের দিনগুলো নিয়ে ধারাবাহিক  লিখেছিলেন কেবিন নং ৩০৪। আজ থেকে শুরু করলেন বেড নাম্বার ১৪২৪ নামে এক নতুন লেখা। ডায়েরির মত করে লেখা এই আখ্যান কেবল একজন রুগীর নয়, একজন কবির চোখে দেখাও বটে। আজ তার শেষ  কিস্তি।


অষ্টম দিন

 

সকাল থেকে আজ মনটা আনন্দে ভরে আছে ।শরীর যে খুব ভালো , তা নয়, বরং বেশ ক্লান্ত, কাল রাতে ঘুম না হওয়ায় ।এই প্রথম অপরিচিত আরো নানান বয়স্ক মানুষের সঙ্গে থাকা ।তাদের প্রত্যেকের বিভিন্ন সমস্যা ।প্রতিটি বেডেই এই ৮ দিনে মুখ পরিবর্তন হয়েছে ।তবু কোথায় যেন সব কটা মুখ এক।সে মুখ কোনো মায়ের, কোনো দিদার।
আমি এবার কারোর সঙ্গে মানসিক ভাবে হয়তো জড়াই নি।কিন্তু কোথায় একটা অজানা সুর অনুভব করেছি ।তাই আমার সীমিত সামর্থে, শারীরিক প্রতিকূলতা অবজ্ঞা করে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
আর তাতে যে খুব খারাপ লাগলো তাও নয়।বরং একটা প্রশান্তি।বাবার সময় যা পারিনি,( মার সময় আমি ছিলাম না)সেটা কিছুটা যেন সামলাতে পেরেছি নিজের মতো করে।
অনেকটা যেন নিজের মনের ড্যামেজ কন্ট্রোল।
ড: ছাড়পত্র দিয়েছেন।কিন্তু আজকেই আমার নিজেকে সবচেয়ে দূর্বল লাগছে। আর অস্থির লাগছে ।এটার কারন নিজের মনে ব্যাখ্যা করে চলেছি।
প্রথমত, এই মানুষগুলোর আমার উপর নির্ভরতা কোথায় যেন ভিতরে ধাক্কা মারছে। মনে হচ্ছে , শেষের চলার পথগুলো কী ক্রমশ এমনি নির্জন, এমনি পরিজন বিহীন! প্রত্যেকেরই ভিজিটিং আওয়ারে এক জন বড়জোড় ২ জন দেখতে আসা, সন্তান বাইরে, ওভার টেলিফোন কথা বলা, এগুলোই কী ভবিষ্যত!

আর দ্বিতীয়ত, আবার চেনা ঘরে ফিরে গিয়ে নিজের ছন্দে ফেরা।

এবার পরপর এত দিন হাসপাতালের জীবন আমাকে বুঝিয়ে দিল, পৃথিবীতে আমার বলে কিছু নেই।সবই আপেক্ষিক ।বাবাকে বলতাম, আমি সন্ন্যাস হতে চাই, এই রোজকারের নুন, তেল মশলার গল্প আমার ভালো লাগে না বাবা।
বাবা হাসতেন।যখন সময় হবে তখন সব কিছুর মধ্যে থেকেও মন সন্ন্যাস হবে। কেন জানিনা মনে হচ্ছে , আমি সেই পথে পা বাড়ালাম এতদিনে।যেটুকু লোভ, অহংকার ছিল সব যেন মন থেকে এই কদিনে বাবা মুছে দিলেন।
আমাকে দিলেন অমৃত লোকের দীক্ষা । বললেন, জীবনে সব পাবে, বলো শান্তি শান্তি শান্তি ।

একটু পরেই আমার যাবার প্রস্তুতি শুরু হবে।অথচ আমি বাবার স্বর শুনতে পাচ্ছি ।
আমার কানের পাশে বাবার মন্ত্র উচ্চারণ ভেসে আসছে।

” অসতো মা সদগময়। তমসো মা জ্যেতির্গময়।।
মৃত্যোর্মাঽমৃতংগময় আবিরাবির্ম এধি।।
ওম শান্তি ওম
শান্তি শান্তি শান্তি ওম

অসৎ থেকে সৎ স্বরূপে নিয়ে যাও, অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে যাও, মৃত্যু থেকে অমৃতে নিয়ে যাও। হে স্বপ্রকাশ ব্রহ্ম, আমার নিকট প্রকাশিত হও। আমাদের ত্রিবিধ বিঘ্নের শান্তি হোক।

 

 

 

 

 

.

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>