বেড নাম্বার ৩১১৮ (পর্ব-৩)

Reading Time: 2 minutes
আমার বাবা ডাক্তার ছিলেন। জীবন কৃষ্ণ ঘোষ, মা মঞ্জুরানী ঘোষ।বিশাল সে বাড়ির হেঁসেলে চাকরবাকর। সব কাজ অন্যরা করলেও  মা রান্নার দায়িত্ব ছাড়ত না। ১০০ জনের রান্না হত নিয়মিত। আমিষ রান্নার দায়িত্বে মা।
নিরামিষ রান্না করত  জ্যেঠিমা। পশ্চিমের জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে জাল দিয়ে রান্না করা হত।সে এক এলাহি ব্যাপার।
আমাদের নিজেদের পুকুর ঘাট আছে।সিঁড়ি দিয়ে নেমে দল বেঁধে বন্ধুরা সাঁতার কাটতে নামতাম।ডুব সাঁতার দিয়ে পুরো পুকুর তোলপাড় করতাম।
বাঁধানো ঘাট ছিল তোমাদের?
হ্যাঁ। বাড়ির মেয়েদের জন্য আলাদা আর প্রতিবেশী মহিলাদের জন্য আরেকটা ঘাট বাঁধানো। আমরা তো সেখানেই স্নান করি।
এখনো সেখানেই করো? বাথরুম নেই?
বাথরুম তো সাহেবদের ছিল। পুকুরে সাঁতার কেটে কত সুখ।
মাসিমার কথা শুনতে শুনতে আমার শাশুড়ি মার কথা মনে পড়ে যায়। তিনিও প্রায় একই কথা বলেন। এখনো বাথরুমে খুব যে মজা পান তা নয়।
আগেকার দিন মানুষদের জীবন চর্চা আলাদা ছিল। আমার মার কাছে শুনেছি বিয়ের পর যে বাড়িতে তিনি বৌ হয়ে উঠেছিলেন, সেই বাড়িটায় বাথরুম বলে কোনো জায়গা ছিল না।দূরে কূয়ো ছিল।সেখানে স্নান সেরে গায়ে গামছা জড়িয়ে ঘরে আসতে হত।
আবার মাসিমার কথা কানে আসে।
আমি আবার বাবার সঙ্গে শহরে যেতাম।আমার বাবা একদিকে জমিদার, অন্যদিকে মেডিক্যাল কলেজ  থেকে পাশ করা ডাক্তার ।শহর থেকে ওষুধ নিয়ে আসতাম ঘোড়ার গাড়ি করে।
মাসিমা তার ফেলে আসা জীবনের অজস্র কথা বলে চলেন।যেন এই মুহুর্তেই ঘটছে সব। কিন্তু বলতে পারেন না রোজ দেখতে আসা ছেলে মেয়ের কথা ।বললে বলেন, আমার বিয়ে হল কবে যে বাচ্চা হবে?
দীপ্তি বলে, এই যে এরা তোমাকে মা বলে ডাকে, রোজ দেখতে আসে, এরা তবে কে?
আমার অমন ছেলেপুলে কত আছে! জন্ম দিলেই কেবল মা হয় না, মা হবার জন্য. . .।
মাসিমা কথা শেষ না করেই বলে ওঠেন, ও সোনাই ব্যথা পাচ্ছি।
সোনাই রূপী দীপ্তি বলে, এই তো দিদা মলম দিয়ে দিচ্ছি।
দীপ্তি থম্বোকম লাগাতে না লাগাতে মাসিমা নাক ডাকতে শুরু করেন।
আর আমি পাশের বেডে বসে কোন সুদূরের এক কল্পনার গ্রাম, যাকে চিনি না, জানি না তাকে ছোঁয়ায় চেষ্টা করে যাই।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>