ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-৮) । মুম রহমান
রাশিয়ার শিল্প-সাহিত্য মানেই বিপ্লব, রাজনীতি, আন্দোলন। ইজাবেলা আখাতোভনা ‘বেলা’ আখমাদুলিনা (১৯৩৭-২০১০) এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কবি, অনুবাদক ও ছোট গল্পকার বেলা আখমাদুলিনাকে সম্পর্কে বলতে গিয়ে রুশ নোবেল বিজয়ী কবি জোসেফ ব্রডস্কি বলেছিলেন, রাশিয়ান ভাষায় জীবিত শ্রেষ্ঠ কবি। তবে রুশ রাজনীতিতে তার আগ্রহ না-থাকলেও শিল্প-সাহিত্য এবং সত্যের পক্ষে তিনি কথা বলেছেন জোড়ালোভাবেই। নির্বাসিত নোবেল জয়ী কবি-লেখক বরিস পাস্তারনক, আলেক্সান্দার সোলানেৎঝি আর নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আন্দ্রেই সাকারভের পক্ষে তিনি লেখালেখি করেছেন। ক্রুশ্চেভের সময় শিল্প-সাহিত্যের উপর রাশিয়ার কড়া নজরদারি শিথিল হয়। এই সময় বেলা আখমাদুলিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত হয়ে উঠেন। কোন কোন ক্ষেত্রে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক তার কবিতা শুনতে আর তাকে দেখতে উপস্থিত হয়েছে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস ৭৩ বছরে বেলা আখমাদুলিনার মৃত্যুর সময় লিখেছিলো, ‘তিনি সব সময়ই রুশ সাহিত্যের সম্পদ হিসাবে বিবেচ্য হয়েছেন এবং সেই সঙ্গে সেই লের্মেন্তোভ থেকে পুশকিনের ধ্রুপদী সাহিত্য ধারার সাথে একাত্ম তিনি।’ তার মৃত্যুকালে রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদেভেদেভ তার কবিতাকে ‘ রুশ সাহিত্যের ধ্রুপদী’ ধারার তুল্য বলে উল্লেখ করেছিলেন।
শীত রাতের স্বপ্ন
তুষারপাত হচ্ছিলো। আর তুষারের প্রতি,
মাটি ও আকাশের ঠান্ডার প্রতি
যত গভীর ঘুমে আমি তলিয়েছি
চ্যাজেমের টিউলিপের রঙের ছটা ততো।
তুষারপাত হচ্ছিলো। আত্মা গাইছিলো
সুদূরের তুষারপাত থেকে সাক্ষী হয়ে।
তুষারপাত হচ্ছিলো। সমতলের বৃক্ষরা সবুজতর।
কত্তো সবুজ, শীতের স্বপ্নরা, তুমিই! …
আরো পড়ুন: ফুল, অশ্রু, প্রেম-৩১ নারীর কবিতা (পর্ব-৭)
বৃষ্টি চাবুক হেনেছিলো আমার মুখে…
বৃষ্টি চাবুক হেনেছিলো আমার মুখে আর কণ্ঠার হাড়ে
একটা ঝড়ঝঞ্জা গর্জে উঠেছিলো ছাতার উপরে।
তুমি সজোরে ঢুকেছিলেন আমার মাংসে আর আত্মায়,
যেমন করে জাহাজের উপর ঝড় ঢুকে যায় সজোরে।
আমি মোটেও জানতে চাইনি একবারও,
আমার উপর এরপর কী আসতে পারে-
আমি হয়তো থেতলে যাবো দুর্দশায়
অথবা নিক্ষিপ্ত হবো সুখের সাগরে।
এক আতঙ্ক আর আহ্লাদে উৎক্ষিপ্ত হয়ে
একটা জাহাজের মতো যে ঝড়ের মধ্যে দিয়েও,
আমি দুঃখিত নই যে আপনার সঙ্গে মিলিত হয়েছিলাম
আর আমি শঙ্কিত নই আপনাকে ভালোবেসেও।
জন্ম ২৭ মার্চ, ময়মনসিংহ। এমফিল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা লেখালেখি।