| 29 মার্চ 2024
Categories
কবিতা সাহিত্য

ইরাবতী সাহিত্য: তানিয়া কামরুন নাহারের একগুচ্ছ কবিতা

আনুমানিক পঠনকাল: 3 মিনিট

 

 
 
ফ্র্যাঙ্কনস্টাইন
 
আমাকে চিনতে পারছ না?
আমি তোমারই সৃষ্টি।
অনেক ভালবেসে,
একটু একটু করে,
অনেক যত্নে,
অনেক গোপনে,
তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ।
তোমার মতো করে।
 
তোমার কুৎসিত ভালবাসায় ধীরে ধীরে
আমি জন্ম নিয়েছি।
জন্ম দেবার জন্য স্রষ্টার প্রতি আমার
কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা অফুরন্ত।
 
অন্ধ আমার এ ভালবাসা!
তাই দেখতে পাইনি তুমি কীভাবে ভয়ে
কাপুরুষের মত পালিয়ে যাচ্ছ;
আমাকে একটি বিভীষিকাময় জীবন উপহার দিয়ে।
আমার প্রতি তোমার ভালবাসা রূপান্তরিত হলো,
ঘৃণা, উপেক্ষা ও অবহেলায়।
 
তোমার প্রতি আমার  নিখাঁদ ভালবাসা রূপান্তরিত হলো
এক প্রচণ্ড প্রতিহিংসায়।
আমি পরিনত হলাম বিকট,ভয়াল,বিভৎস্য,প্রকাণ্ড এক দানবে।
আজ আমি তোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর।
আমি কোনদিন তোমাকে ক্ষমা করব না।
 
কী? আমাকে আজ চিনতে পারছ না?
হ্যাঁ, আমিই ফ্র্যাঙ্কনস্টাইন।
আমার জন্ম হয়েছে নিজের স্রষ্টাকে ধ্বংস করার জন্য।

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,read bengali kobita tanya kamrun nahar

 

শীর্ষবিন্দু
 
পৃথিবীর শীর্ষবিন্দুটি আমাকে হাতছানি দিয়ে ডেকে যায়,
অবিরাম,
‘’আয়, আয়, আমার কাছে আয়।‘’
সে ডাকে আমার নেশা ধরে যায়।
কী এক আকর্ষণে আমি ছুটে চলি ঐ পর্বত চূড়ার দিকে।
যেমন লোহার গুঁড়োর সাধ্য নেই চুম্বককে এড়ানো।
তাই আমি বারবার ছুটে চলি ভয়ংকর পাহাড়ি এ পথ ধরে।
ঐ শীর্ষবিন্দুটি একটু ছোঁব বলে।
এ পথ আমার বহুদিনের চেনা।
তবুও এই অন্ধকার গিরিখাতটির কাছে এসে আমি পা হড়কে পড়ে যাই, প্রতিবারই।
প্রাণপণে চেষ্টা করেও আমার পড়ে যাওয়া আমি কোনবারই এড়াতে পারিনা।
প্রচণ্ড আঘাতে জ্ঞান হারাই।
জ্ঞান ফিরে এলে অন্ধকারে হাঁচড়ে পাঁচড়ে উপরে উঠি ।
এর আগের বারগুলোতে যেভাবে উঠেছিলাম, ঠিক সেভাবেই।
ক্লান্ত আমি নিজের পায়ে দাঁড়ালেই আবার আমাকে ডেকে উঠে কেউ,
‘’আয়, আয়, আয়।‘’
আমি ভুলে যাই আমার আঘাত আর ক্ষতের কথা।
পূর্ণশক্তিতে আবারও ছুটে চলি ঐ শীর্ষবিন্দুটি জয় করবো বলে।
কিন্তু আবারও সেই গভীর খাদ……।
আমার এ অভিযান কবে সফল হবে জানি না।
হয়ত কোনো দিন পর্বতচূড়ার ওপর প্রচণ্ড অভিমান হবে আমার।
চিৎকার করে বলব, ‘’যাবো না, যাবো না আমি। ছোঁব না তোমাকে।
তোমার মত অটল আরেকটি শীর্ষবিন্দু তো আমিও হতে পারি।‘’
হয়ত কোনদিন এমনি অভিমান করে ফিরে আসবো,
হয়ত কোনদিনই ফিরবো না।
 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,read bengali kobita tanya kamrun nahar

 

উপহার
 
অনেকদিন ধরে নগরীর এখানে সেখানে ঘুরে বেড়িয়েছি,
একটা দারুন কিছু খুঁজে বের করবো বলে।
খুঁজতে গিয়ে অহেতুক দাঁড়িয়ে থেকেছি বিপনি বিতানগুলোর সামনে।
অকারণে এটা ওটা নাড়াচাড়া করে আবার রেখে দিয়েছি।
কারণ, আমি জানি ওটা তোমার জন্য নয়।
আর দেখেছি, প্রিয়জনের জন্য একটা কত সহজেই না একেকজন পেয়ে যাচ্ছে একেকটা উপহার!
তারপরে কী আত্নতৃপ্তি নিয়েই না একেক জন ফিরে যাচ্ছে!
যেন ওটা তাদের জন্যই, তাদেরই।
শুধু তোমার জন্যই নেই কোনো কিছু।

 

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,read bengali kobita tanya kamrun nahar

 

 
মাঝে মাঝে কোথা থেকে যে,
অভিমানের একরাশ কালো মেঘ এসে
জড়ো হয় মনের আকাশে।
কোনো পুর্বাভাস ছাড়াই।
 
কালো মেঘের ঘন ঘটায় আকাশ ছেঁয়ে যায়।
এরপর চলে হালকা থেকে মাঝারি,
মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ।
একটানা।
কখনো কখনো বজ্রসহ বৃষ্টিপাত।
কদাচিৎ শিলাবৃষ্টি।
 
বৃষ্টি শেষে থমথমে আকাশ।
বেশ কিছু পরে ঝকঝকে রোদও উঠে।
‘’পাতায় পাতায় আলোর নাচন’’ ঝলমলায়।
কিন্তু তার মাঝেও কোন এক বুড়ো গাছ মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে।
ঝড়ের ক্ষতস্মৃতি হয়ে।
ঝকঝকে রোদও এ ক্ষত সারাতে পারে না।

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত