Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

কেন দেই ভাইফোঁটা

Reading Time: 2 minutes

ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোটা – যমের দুয়ারে পড়লো কাটা ভাই ফোটার দিন বোনেরা এই প্রার্থনা করেন ভাইয়ের জন্য। ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও মঙ্গলের জন্য বোনেরা এদিন উপবাসী থেকে ভাইদের ফোটা দেন। ভাই ফোটা কার্ত্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় । এদিন ভাইরাও বোনের ফোটা নিয়ে বোনের বাড়ীতে রান্না করা খাবার খান। নিয়ম এমনটাই।

ভাই ফোটার সাথে জড়িয়ে আছে যমরাজ ও যমুনা দেবীর ঘটনা । যম আর যমুনা সূর্য দেবতার পুত্র। পুরান শাস্ত্র এমটাই বলে। পুরানের ঘটনা শোনা যাক। সূর্য দেবতার প্রথম স্ত্রী হলেন সংজ্ঞা । সংজ্ঞার সন্তান সন্ততি হলেন যম ও যমুনা। সূর্যের প্রবল তেজ সহ্য করতে না পেরে একদিন সংজ্ঞা তারই মতোন দেখতে এক নারীকে সৃষ্টি করে সূর্য লোক থেকে পৃথিবীতে চলে আসেন। সেই সৃষ্ট নারী সংজ্ঞার ছায়া মূর্তি ছিল । তাঁর নামা ছায়া। ছায়ার সন্তান হলেন শনি দেবতা।

একদিন যম আর যমুনা জানতে পারেন এটি তাঁদের গর্ভ ধারিনী মা নন, বরং তার মতোন দেখতে অন্য নারী। যমুনা তখন মাকে খুঁজতে পৃথিবীতে আসেন ও নদী রূপে প্রবাহিতা হলেন । সেই শোকে যম রাজাও বোনকে খুঁজতে বের হলেন। যমুনা সূর্য লোকে ফিরতে নারাজ। কিন্তু যম রাজা শোকাকুল। দেবর্ষি নারদের পরামর্শে যমুনা দেবী, যমরাজ কে ভাই ফোটা দিলেন।

ললাটে দিলেন চন্দনের তিলক । সেই থেকে ভাইফোটা মর্তে প্রচলন হল। ভাইফোঁটা যমের প্রিয় অনুষ্ঠান। বলা হয় ভাইফোঁটা উৎসব যে ভাই বোনেরা পালন করেন, তাঁদের ওপর যমের কোপ দৃষ্টি পড়ে না। তারা দীর্ঘায়ু হন।

আজও এই প্রথা নিষ্ঠা সহকারে পালিত হয়। বোনেরা উপবাসী থেকে ভাইয়ের কপালে চন্দনের ফোটা দেন। ধান, দূর্বা, পান, প্রদীপ দিয়ে ভাইয়ের মঙ্গল কামনা করেন। ভাইকে মিষ্টি মুখ করান, বস্ত্র উপহার দেন। ভাইরাও এদিন বোনকে মিষ্টি, শাড়ী উপহার দিয়ে বোনের হাতে রন্ধন ভোজন করেন। এই অনুষ্ঠান ভাই বোনের মধুর সম্পর্ককে আরও উজ্জ্বল করে। দ্বিতীয়া তিথিতে হয় বলে এই অনুষ্ঠানের নাম ভাতৃ দ্বিতীয়া।

পারিবারিক এই অনুষ্ঠানটি সকল ভাই এর প্রতি বোনদের যে মমতা তুলে ধরে তা অনন্য । ভাইফোঁটা তাই সকল ভাইয়ের, সকল বোনের অনুষ্ঠান । ভাইদের

মঙ্গল কামনায় উন্মুখ বোনের হৃদয় মাঙ্গলিক নানা অনুষ্ঠানে ধরা দেয় ভাইফোঁটায়। পারিবারিক নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় । সাধারনত ভাইরা বোনেদের কাছে এসে চন্দন চর্চিত ফোটা নেয় । বোন ছোট হলে দাদা আর্শীবাদ করে থাকেন । সেই সাথে দাদার পক্ষে বোনদের জন্য স্পেশাল কোনো গিফট তো থাকছেই।

বোন বড় হলে আদরের ভাইকে ফোঁটার সাথে ভাইকে উপহার দেয়া হয়ে থাকে । ভাই ফোটা অনুষ্ঠানের কোনো ধর্মীয় মন্ত্র নেই । বিষয়টি কোনো ধর্মীয় গন্ডীর অনুষ্ঠানও নয় । সাধারণত প্রদীপ জালিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে মাঙ্গলিক পরিবেশে অনুষ্ঠানটি হয়ে থাকে । সবশেষে ভাইকে মিষ্টি খাইয়ে, প্রণাম ও আর্শীবাদ দেয়া নেয়ার মধ্যে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

ভাই বোনের সম্পর্কটা যে কতটা আন্তরিক, মধুর ও স্নেহের পরশ মাখানো তা এই ভাই ফোঁটার দিনটা আসলে আরো গভীর ভাবে অনুভব করা যায়।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>