বিদেশের মাঠে এশিয়ান টেস্ট ব্যাটসম্যানরা

Reading Time: 4 minutes

ক্রিকেট বিশ্ব মূলত দুইভাগে বিভক্ত। একভাগে উপমহাদেশের দলগুলো এবং অন্যভাগে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। উপমহাদেশের চার ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার উইকেট কন্ডিশন যেমন একই রকম, তেমনি উপমহাদেশের বাইরের ঐ চার দেশের উইকেট কন্ডিশনও একই রকম।

ভারত ও ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজের একটি দৃশ্য; Source: ndtv.com

দক্ষিণ এশিয়ার উইকেটে স্পিনারদের রাজ চলে, অন্যদিকে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ায় উইকেট পুরোপুরি পেস বোলিং নির্ভর। ফলে উপমহাদেশে খেলতে এসে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া যেমন নাকানিচুবানি খায়, তেমনি বিদেশের মাটিতে একই অবস্থা হয় ভারত বা বাংলাদেশের।

২০০০ পর থেকে ক্রিকেট বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দলই ঘরের মাঠে অনেকটা অপরাজেয় থাকে। কিন্তু নিজ দেশে যে দলটি বাঘ, সেই দলটি বিদেশের মাটিতে বিড়ালে পরিণত হয়ে যায়। তবে এসব খেলোয়াড়দের মাসের পর মাস ঘরবাড়ি, পরিবার, বন্ধুবান্ধব ছেড়ে বিদেশের মাটিতে গিয়ে খেলতে হয়। ফলে অচেনা পরিবেশে পারফরম্যান্স করা বেশ কঠিন। এরপরও অনেক ক্রিকেটার বিদেশের মাটিতে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল; Source: espncricinfo.com

এশিয়ার ব্যাটসম্যানরা নিজেদের মাঠে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করতে পারেন, বিদেশী কন্ডিশনে ততটাই আনাড়ি। এছাড়া বর্তমানে টি টোয়েন্টির ব্যস্ত সময়সূচির কারণে অধিকাংশ ক্রিকেটার ঘরোয়া লিগের ম্যাচ খেলা তো দূরে থাক, টেস্ট ম্যাচ খেলতেও আগ্রহবোধ করেন না। ফলে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাবে দেশের মাটিতেও এসব  ব্যাটসম্যান ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করতে পারছেন না।

অথচ ২০০০ সালের পর থেকে এশিয়ার অনেক ব্যাটসম্যান বিদেশী কন্ডিশনে খুব দ্রুত নিজেদের মানিয়ে নিতে পারতেন এবং প্রচুর রান তুলতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে সেটা খুব একটা দেখা যায় না। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এশিয়া ব্যাটসম্যানরা কেমন পারফরম্যান্স করেছেন, সেদিকে একবার নজর দেওয়া যাক।

শচীন টেন্ডুলকার; Source: indiatoday.in

২০০০ সালের পর থেকে এশিয়ান দলগুলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে মোট ৬০টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে।  এর মধ্যে তারা মাত্র ৫টি সিরিজ জিতেছে এবং ১১টি সিরিজ ড্র করেছে। যে ৫টি সিরিজ এশিয়ার দলগুলো জিতেছে, তার মধ্যে তিনটি ছিল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এবং ২টি ছিল ইংল্যান্ডে। কিন্তু  এশিয়ার কোনো দল এখনো অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার  মাঠে টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি।

শচীন টেন্ডুলকার; Source: edition.cnn.com

উপমহাদেশের বাইরে এই চারের দেশের মাটিতে এশিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শচীন টেন্ডুলকার সর্বোচ্চ ৩২২৭ রান করেছেন। শচীন বাদে আর মাত্র একজন ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং গড় ৫০ অতিক্রম করেছে। তিনি হচ্ছেন ভারতের বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক বিরাট কোহলি। শচীনের ব্যাটিং গড় ৫২.০৪ এবং বিরাট কোহলির গড় ৫০.৮৪। উপমহাদেশের বাইরের চার দেশে শচীন টেন্ডুলকার ৮টি সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু তার চেয়ে ১৮ ইনিংস কম খেলে কোহলি এখন পর্যন্ত ১০টি সেঞ্চুরি করেছেন।

২০০০ সালের পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অনুষ্ঠিত সিরিজগুলোর প্রথম টেস্টে করা রানের দিক থেকেও এগিয়ে আছেন টেন্ডুলকার। তিনি ১১ টি সিরিজের প্রথম টেস্টে ৪৭.৫৩ গড়ে তিন সেঞ্চুরিসহ মোট ৯০৩ রান করেছেন।

ভারতের ক্রিকেট ঈশ্বর টেন্ডুলকার তার ক্যারিয়ারে অনেকবার বিদেশের মাটিতে টেস্ট খেলেছেন। ক্যারিয়ারের প্রথম এক দশকে ৯টি সিরিজের প্রথম টেস্টে তিনি ৩৩.৪৮ গড়ে রান তুলেছেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবং ১৯৯৮-৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি সেঞ্চুরি করেন।

বিরাট কোহলি; Source: indianexpress.com

এক্ষেত্রেও শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে গেছেন বিরাট কোহলি। তিনি বিদেশের মাটিতে ৭টি সিরিজের প্রথম টেস্টে ৫৬.৭৯ গড়ে চার সেঞ্চুরিসহ ৭৯৫ রান করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি এই চার দেশে মোট ২৫টি টেস্ট খেলে ৫০.৮৪ গড়ে ২৪৯১ রান করেছেন।

রাহুল দ্রাবিড়; Source: cricketcountry.com

শচীন ও কোহলির বাইরে ভারতের আরেক ব্যাটিং কিংবদন্তি রাহুল দ্রাবিড় ৩৭টি টেস্ট খেলে ৪৭.৭২ গড়ে ৩০৫৪ রান করেছেন। এছাড়া তিনি সিরিজগুলোর প্রথম টেস্টে ৩২.৬২ গড়ে রান করেছেন। এক্ষেত্রে ভিভিএস লক্ষ্মণের  রানের গড় ৪০.৮২ এবং প্রথম টেস্টে রানের গড় ৩২.৩২। ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বিদেশের মাটিতে খেলা ২২ টেস্টে ৩৯.২৪ গড়ে ১৪৫২ রান করেছেন এবং সিরিজের প্রথম টেস্টে তার রানের গড় ৩৭.০৮।

রোহিত শর্মা; Source: sporteology.com

ভারতের বর্তমান টেস্ট দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে অজিঙ্কা রাহানে, মুরালি বিজয়, চেতেশ্বর পুজারা ও শিখর ধাওয়ানের ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ৪০.৬৮, ৩২.৫৩, ২৯.৩০ ও ২৪.০৮। তবে সবচেয়ে খারাপ করেছেন ভারতের হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলা টেস্টে রোহিতের  ব্যাটিং গড় ২১.৫০। বর্তমান ভারতীয় দলে কোহলির বাইরে অজিঙ্কা রাহানে সবচেয়ে ভালো করেছেন। তিনি মোট ১৯টি টেস্ট খেলে ৪০.৬৮ গড়ে ৩টি সেঞ্চুরিসহ মোট ১৩৮৩ রান করেছেন এবং সিরিজের প্রথম টেস্টে তার রানের গড় ২৪.৮৩।

এশিয়ার অন্য ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স

ভারতের বাইরে এশিয়ার অন্য দলগুলোর ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কুমার সাঙ্গাকারা দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। তিনি এই চার দেশে মোট ৩০টি টেস্ট খেলে ৪৫.৯৩ গড়ে ৭টি সেঞ্চুরিসহ ২৫২৬ রান করেছেন।

মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা; Source: dnaindia.com

এছাড়া পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ ইউসুফ ও ইউনুস খানও ভালো করেছেন। তাদের দুইজনের ব্যাটিং গড় যথাক্রমে ৪৪.৯০ ও ৪৩.৯৪। তারা দুইজনই সমান ৫টি করে সেঞ্চুরি করেছেন। এশিয়ার আরেক সেরা ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়াবর্ধনের ব্যাটিং গড় অবশ্য বেশ কম, তিনি ৩০ টেস্ট খেলে মাত্র ৩২.০৫ গড়ে ১৮৫৯ রান করেছেন।

সাকিব আল হাসান; Source: thedailystar.net

সিরিজের প্রথম টেস্টে রান করার দিকে এগিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আসাদ শফিক। সাকিব ৫ টেস্টে ৫৬.১১ গড়ে ৫০৫ রান করেছেন, অন্যদিকে শফিক ৬ টেস্টে ৪৯.৩০ গড়ে ৪৯৫ রান করেছেন। তবে বাংলাদেশের সেরা অলরাউন্ডার ২টি সেঞ্চুরি করলেও পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান করেছেন ১টি সেঞ্চুরি।  বাংলাদেশ থেকে এ তালিকায় আরো রয়েছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। তিনি ৬ টেস্টে ৪৫ গড়ে ৫৪০ রান করেছেন।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>