ইরাবতী এই দিনে: বিকাশ দাস বিল্টু’র তিনটি কবিতা

Reading Time: 3 minutes
আজ ০৩ এপ্রিল কবি, সম্পাদক বিকাশ দাস বিল্টু’র শুভ জন্মতিথি। ইরাবতী পরিবার তাঁকে জানায় শুভেচ্ছা ও নিরন্তর শুভকামনা।

Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,biltu das

ভাত ও ঈশ্বরের ফুল

আমার বাড়ি থেকে পাহাড় কত মাইল দূরে আমি তা জানিনা। হেঁটে, সাইকেলে, গাড়িতে কত সময় লাগে আমার হিসেবের খাতায় লেখা নেই। অথচ, প্রতিটি ভোরে শিশির মাখা চোখে আমার তন্ময় নতুনভাবে, নতুন নতুন টিলার খোঁজ দিত। আমি অবাক চোখে মাটির উনুন জ্বালা দেখতাম। আচঁ নিতাম।
মা গনগনে আগুনের মাটির টিলায় বসিয়ে দিয়েছেন ধান। ঠেলে দিচ্ছেন পক্ষকাল আগের মা এর হাতের গোবর ঘুঁট। মাঝে মাঝে তুষ। জ্বলছে। নিভছে। সাদা-কালো ধোঁয়া ক্রমে ক্রমে আকাশপথে ধূসর হয়ে মিলিয়ে দিচ্ছে ভোরের স্নিগ্ধ পরশ।
প্রথম সূর্যের ছটা আমাদের চিবুক ছুঁইয়ে দেওয়ার আগে সিদ্ধ হয় ধান। কয়েকমন। আমরা ঘিরে ধরি শীতের সকালে আগুনের টিলা। মা বসিয়ে দেন শ্যামলী নামের গাই এর দুধ। টগবগ করে ফোঁটে। আগুনের আঁচে মা’ও পোড়ে।
যে যার মতো শুরু করে দি’ই দিন। উষ্ণতার পারদ কমার আগেই মা আবারও মাটির উনুনের টিলায় বসিয়ে দেন হাঁড়ি। অবলীলায় চাল ভাত হয়ে যায়। গরম ভাতে ভুলে যাই অতীত ও স্মৃতিরজল।
আজ অনেক অনেক বছর পরেও মাটির উনুন ও উনুনের টিলা চোখের কাজল। সকালে, দুপুরে, রাতে দিনের প্রতিটিক্ষণে অনুভব করি ভাত ও ঈশ্বরের ফুল। ঐশ্বরিক ঘ্রাণে নুন কেমন ঘি হয়ে যায়। ফুলগুলো কবিতা।
আমার চৌকাঠে থিতিয়ে পড়ে আমাদের মাইল কিমি ঘন্টার হিসেব। আদতে আমার ঘরের মাটির উনুনের প্রতিটি টিলা আমার সবুজ পাহাড়। সতেজতার ঘ্রাণ।
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,biltu das
সোনা মাঝি , বুধু মিঞা ও মানসাই পাড়ের জীবনকথা
মাধুরী দেখো ওঁদের শীতল ছায়া
মিষ্টি এই স্রোতের পথে ক্যামন চলমান
একটি নির্জন বিকেল ও শান্ত জলধারায়
ছুঁইয়ে থাকা তাঁদের গোপন অভিসার
তুমি বৈঠার দিকে তাকাও। টলমল এই জলে
ওই যে প্রতিবিম্ব
জীবন ভারকেন্দ্র
কালো পাটাতনের ছাউনির ঘরে
চুপটি করে থাকা সোনা মাঝি বুধু মিঞার
মায়ামুখ
মাধুরী তুমি কি শুনতে পাও
ওদের জীবনের গান, ভাটিয়ালী টান?
কায় আঁধারে মিশতে থাকা
রোজনামচার জীবন-কাহন
Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com, biltu das
স্বপ্নরা যখন ছাই হতে থাকে
প্রতিনিয়ত অদৃশ্যে কেউ হেসে ওঠে খিল খিল করে। একটি প্রতিধ্বনি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে আমার চৌদ্দ বাই চৌদ্দ ফুটের ঘরটিতে। কি তীব্র তার আওয়াজ! এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়? অথচ বেঁচে থাকার ইচ্ছেতে কোনোরকম বুজরুকি থাকেনা। থাকেনা বলেই তো বাঁচার আকাঙ্ক্ষা এতটা প্রকট হয়ে ওঠে।
যখন বাঁচার ইচ্ছেতে নিজেকে নতুন করে ভাবি। সাজাই। ঠিক তখনই দুঃস্বপ্নের মতো একটি কালোমেঘ আকাশ ছেয়ে দেয়। গম্ভীর হয়ে যায় সব। ক্রমে গরম হতে থাকে ঘর। একটি ভাঁপা উষ্ণতা গিলে খেতে থাকে আমার সমস্ত অস্থি-মজ্জ্বা। তিলে তিলে মরতে থাকি। ঝাপসা হতে থাকে সব। ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে জীবন। বোধের গল্প জীবনের কাছে দপ করে নিভে যায়।
এভাবেই বেশ কিছুদিন কাটিয়ে দিয়েছি নিজেকে নিজের সাথে। কাটাতে হচ্ছে দম বন্ধ করা একটি আর্তনাদকে পাশ বালিশ করে। জানিনা আর কতদিন কতকাল এই সংগ্রামে টিকে থাকা যাবে নিজেকে নিজের কাছে। অস্তিত্বের কাছে। ক্রমে তো ছোট হয়েই আসছে সে ঘর। আলো কমে আসছে।
বন্ধ ঘর। একটি উন্মাদ মন। বেঁধে রাখা যায়! এলোমেলো সব। তিলে তিলে জ্বলা সে আগুন, ছারখার করে দিচ্ছে আমার দেখা প্রতিটা স্বপ্ন। অথচ কি নির্বিকার আমি! অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছি সে ভূষির আগুনের দিকে। ছাই হতে থাকা আমার প্রতিটি স্বপ্নের পানে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>