Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com,binoy-majumdar A poet of recent times

সাম্প্রতিককালের এক কবি । ঋত্বিক ঘটক

Reading Time: 2 minutes

বর্তমান কবিতা প্রসঙ্গে কিছু লিখতে গেলে প্রথমেই রবীন্দ্রনাথের একটি উদ্ধৃতি দিতে হয়। সমালোচনা গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-
অনেকে কল্পনা করেন যে, অশিক্ষিত অবস্থায় কবিতার বিশেষ স্ফ‚র্তি হয়; তাহার একটি কারণ এই যে, তাঁহাদের মতে একটি বস্তুর যথার্থ স্বরূপ না জানিলে তাহাতে কল্পনার বিচরণের সহস্র পথ থাকে। সত্য একটি মাত্র, মিথ্যা অগণ্য। অতএব, মিথ্যায় কল্পনার যেরূপ উদরপূর্তি হয়, সত্যে সেরূপ হয় না!
কল্পনারও শিক্ষা আবশ্যক করে। যাহাদের কল্পনা শিক্ষিত নহে, তাহারা অতিশয় অসম্ভব অলৌকিক কল্পনা করিতে ভালোবাসে…
আজকে যখন কবিতা পড়ি, তখন এই কথার সত্যতা ক্রমশ উজ্জ্বল হতে থাকে। এত বেশি কবিতা লেখা হচ্ছে যে কবিরা নিজেরাই দশকভাগে পরমায়ু নির্ধারণ করেন।
জীবনানন্দ দাশ বলতেন-‘উপমাই কবিত্ব’, রবীন্দ্রনাথ বলতেন, ‘স্বপ্নই কবিতা’। স্বপ্ন, উপমা, অনুভ‚তি, চিত্রফলন এসব কবিতারই যা সৎ, বিশুদ্ধ কবিতায় থাকে। আমি সাম্প্রতিক কালের এক কবির সম্পর্কে আশা রাখি, যিনি কবিতার জন্য যথার্থ জন্মেছেন। আমার মনে হয় একালে বাংলাদেশে এত বড় শক্তিশালী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কবি আর জন্মাননি। তিনি হলেন বিনয় মজুমদার। যাঁকে অনেকে পঞ্চাশ দশকের কবি বলেন। কিন্তু আমি নিজে দশক বিভাগে বিশ্বাসী নই, তাই আমার আলোচিত এই কবি কোনো দশকের নন।
বিনয় মজুমদারের কবিতাগ্রন্থে ফিরে এসো, চাকা, অধিকন্তু, ঈশ্বরীর কবিতাবলী, ঈশ্বরীর, নক্ষত্রের আলোয়, গায়ত্রীকে, ঈশ্বরীকে অনেক আগের বই। দেবকুমার ছেপেছিলেন যখন, তখনই পড়ি। আজ ফিরে এসো, চাকা নিয়েই হইহই হচ্ছে। কিন্তু এর সব কৃতিত্ব দেবকুমার বসুর। তিনিই আলোচ্য কবির সমস্ত কবিতাগ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। ইতিহাস কখনো কিছু ভোলে না। আজকের বিনয়ের পিছনে ঢাক-ঢোল, বাদ্যি-কাঁসর বাজানো হচ্ছে। যেদিন বাজাবার দরকার ছিল সেদিন বই প্রকাশের ব্যাপারে কানাকড়িও কেউ ঢালেনি। সম্প্রতি বিনয় মজুমদার যেসমস্ত লেখা লিখছেন, অথবা তাঁকে দিয়ে…, কিংবা ঢক্কানিনাদে তিনি দুর্বোধ্য হতে চাইছেন, এটা আতঙ্কের বিষয়। ঈশ্বরীর যে ব্যাপারে তিনি প্রেমকে, জীবনযাত্রাকে এমনকি মানুষের সাধারণ কার্যকারণগুলোকেও এক স্বাভাবিক অতীন্দ্রিয়তায় উচ্চারণ করেছিলেন প্রথমদিকে, যদিও তাঁর ঈশ্বরী বারবার স্বরতের বাসনায় (কবির নিজস্ব বিরহে) স্বর্গে যাবার পথ সামাজিক সংসারে ফিরে ফিরে মিশেছে। নিসর্গে কাটল; এই কবি আজকের এমন এক-একটি অলৌকিক কল্পনার আশ্রয় নিচ্ছেন, যেখানে তাঁর বিষয়ে সন্দেহ জাগতে শুরু করেছে, তবে কি শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের সেই মন্তব্য কবিকে ছুঁতে যাচ্ছে? উপমাকে, চিত্রকল্পকে পরিশীলিত রুচিতে নিয়ন্ত্রিত করে নির্মাণের চিহ্ন আজ কোথায়? বিনয় মজুমদার ক্রমশ থেকে যাবেন। অঘ্রানের অনুভ‚তিমালা অনেক আগের কথা। আমি কয়েকটি কবিতা গৌরাঙ্গ ভৌমিকের ‘অনুভব’ কাগজে দেখেছিলাম। এ-ও জানি বই আকারে প্রকাশিত হলে মাতামাতি শুরু হবে। কিন্তু সে-ও তো অনেক আগের লেখা, আজকের নির্মাণ কোথায়? তবু বিনয় মজুমদার যা লিখেছেন, তাতে তিনি এ শতাব্দীর একজন শ্রেষ্ঠ কবি। কবিতার সমস্ত পঙ্ক্তির অর্থ করা হয়তো অর্থহীন, কিন্তু সামগ্রিকরূপে শেষ পর্যন্ত একটা অর্থে আসতে বাধ্য, যখন কবিতাটিকে পড়ে শেষ করা হবে। পাঠকের মনকে একটু কুয়াশায় হাঁটাবে। কবিতার সমস্ত উপস্থিতিটাও যদি অর্থহীন হতে থাকে, কেবল ধ্বনি টালমাটালে, একটু ছন্দের নাচনে কি হবে?
ঋত্বিক ঘটক সমালোচনায় বন্ধুকৃত্য করে না। নিজে যা ভালো বোঝে তাই লেখে। আমার জ্ঞান ও বিশ্বাসমতে অনেক কবিতার মেলায় এই কবিকে সহজেই চেনা যাবে।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>