বিষাদকন্যা

Reading Time: 2 minutes

 

বিষাদবন্দনা

তোমার অন্তর্লীনে বুকের গভীরে নিষাদ জমে জমে
কখন তৈরি হয়েছে বিষাদের এক গোপন খনি
তুমি তা নিজেই জানো না প্রিয়তমা
তুমি বোঝোও না মনপোড়ার এ কাহিনী!

শরতের আকাশে তুমি তখন উড়ছিলে আনন্দরথে
ঘুরছিলাম আমি উদাসী-বাউল-চকোর পথে পথে
চোখের তলে জলের নাচন
বুঝিনি এ বরাভয়ে হবে তুমি আপন
স্নিগ্ধ হেমন্তের শিশির কণায় প্রথম আলোর ঝলকানি
রেখো না আর চোখে আমার বিস্ময়ভরা তোমার চোখ দু’খানি

নদী ও নারী এক ও অভিন্ন সত্ত্বা
একে অপরকে ভাঙে আর ভাঙায়
নদী ভাঙলে তীর সব ভাসিয়ে নেয় স্রোতে
নারী ভাঙলে… সারা জীবন ভাসে অশ্রুতে!

আমার বাড়ির পাশঘেঁষে যে বাড়িটা উঠবে উঠবে
করছে তার সীমানার দেয়ালের ধ্বংসাবশেষ থেকে
ভেসে আসছে তোমার সিঁড়িতে ওঠার আওয়াজ
আপাত-মধুর প্রেমে মগ্ন হয়ে নির্জন রাতের
সৌন্দর্য খুঁড়ে খাচ্ছে এক দিগম্বর চাঁদ

মায়াময় দারুণ চোখে তাকিয়ে আছি
আশার ঈগলকে মুঠোয় পেতে
শূন্য-মনোভূমিতে অনুরাগের আবাদ বাড়াতে
নিষ্প্রাণ-ঊষর বাগান গোলাপ চাষে ভরিয়ে তুলতে।

বিষাদ-বালিকা! তুমি এতো বিষাদিত বলেই
তোমার মাঝে এত ভালোবাসা ফুটে ওঠে
যার কোনো বিষাদ নাই ভুল নাই
তার মাঝে কোনো ভালোবাসাও নাই

তোমার ভুলগুলো ব্যক্তিগত মনে করে
বুক-পকেটে জোনাকি-পোকার মতো ভরে
রেখেছি, যখনি তুমি বিষাদ-রূপ ধারণ করবে
তখনই তারা পকেট থেকে বেরিয়ে এসে
আলো বিলাবে আমার ভালোবাসার দেয়ালে

শৈশবে যে নদীটার সাথে আমার প্রেম ছিলো
একদিন সে আমাকে তার বুকে টেনে নিয়েছিলো
আজ এখনো বুঝি না তার মর্মব্যথা
পরিণত যৌবনে এসে নিরব গতিহীন নদীমুখ
দেখলেই মনে পড়ে প্রাণ-দায়িনী সে নদীকথা

এখনও পাঠ করি আমার প্রাণে প্রতিক্ষণ
ব্যাকুল নদীটার প্রাণ নির্মাণ
জানি না সে নদীটার চোখ টলমল
কে জানে করবে আর কতোকাল!

প্রকৃতির সমস্ত সবুজকে জড়ো করে
মেলে ধরলাম তোমার সামনে
এখন তুমি তোমার সুনীল ইচ্ছাকে
মেলে ধরো আকাক্সক্ষার সবুজ প্রপাতে
হৃদয়ের যতো গভীর কথা আছে তার
সবই বলে যাও তাদের এখানেতে
তোমার শর্ত তো একটাই
বসন্ত আর কুসুমিত মাস
তাতেই আমার বসবাস…

সে এসেছিলো কাল রাতে
চাঁদ ডুবে গিয়েছিলো যখন
উত্তাপের নগ্নজ্বালা দিয়ে পালিয়ে
গেলো, এখন মৃত পড়ে আছি
দীর্ঘশ্বাসের গন্ধটা ঘিরে আছে সারাক্ষণ!


চেতনায় ফিরে এসে মুঠোফোন হাতে নিই
এক দুই তিন করে ডায়াল করি চৈতন্যের
অনুভূতির কাছে; হৃদয়ের আনাচে কানাচে
অনেক কথা জমে আছে
একটু সময় পেলেই বলবো
আমার আনন্দের কাছে

তুমি কিন্তু এই নামেই আমাকে ডেকো
যে-নামে প্রথম চিনেছিলে জেনেছিলে
বলেছিলে ‘আমি আগুনমাখা নদী
আমাকে আর কখনো ডেকো না
তোমার সাথে আমার প্রেম হবে না!’

বিকেলের রোদে শুকিয়ে নিলাম তোমার
বিছানা-পত্র বালিশ চাদর… গভীর রাতে
যখন তুমি ঘরে ফিরে একাকিত্বে সাঁতরাবে
তখন চাদরের ভাঁজ ভেঙে রৌদ্রেরা জড়িয়ে
ধরবে যেন পুরনো প্রেমিক। রাত জুড়ে চলবে
পরকীয়া সুখের মহড়া। ভূমিহীন চাষী আমি, একা
ঘুমাই শীতের সাড়াসি রাতে; অবিকল তুমি সাথে

১০

ডেক্সটপে জমা হচ্ছে কিছু অকেজো ফাইল
সাফল্যের সিঁড়ি অতিক্রম না করতে পারার
বেদনায় প্রাণশূন্য ফটোগ্রাফ
বাকিতে আবার মেলে ধরি নগদের খতিয়ান
বিষাদের চুমু চাই পেশাদার চুমুখোর।

১১

আমার যে নদীটা আছে তার অনবরত
কলকল জলধারা প্রতিদিন আমার ঘুম-ভাঙায়
গ্রীষ্ম বর্ষা কিংবা শীতে তার বুকে তার ঠোঁটে
লেগে থাকে অবিরাম হৃদয়-হরণ করা গান

আমি এতটুকু ফুরসত পেলেই ছুটে যাই
তার গানের কাছে তার প্রাণের কাছে
কান পেতে রাখি জলমগ্ন বুকে, শুনতে
থাকি নদীরূপী নারীর আনন্দ-সংগীত

আমি হাত বাড়ালেই নদীটা মেলে ধরে
তার ফেলে আসা শৈশবের স্বপ্ন-জানালা
পল্লবিত স্বপ্নের অঙ্কুরোদ্গম দেখে দেখেই
আমি পার করি আমার প্রতিটি স্বপ্ন-সকাল।

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>