| 13 জানুয়ারি 2025
Categories
প্রবন্ধ সাহিত্য

বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা: অসম বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যের অন্য এক নাম

আনুমানিক পঠনকাল: 22 মিনিট

    অসম বাংলার সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উপলদ্ধি করতে হলে আমাদের প্রথমে তৎকালীন অসমের ভৌগোলিক ও সামাজিক অবস্থান সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।তখনকার অসমের ভৌগোলিক রূপটিও আজকের অসম থেকে অনেক বড় ছিল।আজকের মেঘালয় রাজ্যের তখন কোনো অস্তিত্ব ছিল না।বৃহত্তর অসমের রাজধানী ছিল শিলঙ।১৮২৬ সনে ইয়াণ্ডাবুর সন্ধির মাধ্যমে অসম ইংরেজদের অধীনে আসে।এর ঠিক দশ বছর পরে ১৮৩৬ সনে অসমের বিদ্যালয় এবং প্রশাসনের কাজে ব্রিটিশ সরকার বাংলাভাষার প্রচলন করেন।১৮৭২ সনে অসমিয়া ভাষা তার স্বীয় মর্যাদা ফিরে পায়।১৯০১সনে গুয়াহাটি শহরে কটন কলেজ স্থাপিত হয়।এর আগে স্বাভাবিক ভাবেই অসমিয়া ছাত্রদের উচ্চশিক্ষার্থে কলকাতায় ছুটে আসতে হত।এভাবেই একদিন কলকাতায় পড়াশোনা করতে আসা কয়েকজন অসমিয়া যুবকের দ্বারা ১৮৭২ সনে ‘অসমীয়া সাহিত্য সভা’বা ‘অসমীয়া ছাত্রর সাহিত্যসভা’ প্রতিষ্ঠিত হয়।১৮৮৮ সনের ২৫ আগস্ট জন্মাষ্টমী তিথিতে সদস্যরা এই সভা ভেঙ্গে দিয়ে ৬৭ নং মির্জাপুর স্ট্রীটে ‘কলিকাতা অসমীয়া ভাষা উন্নতি সাধিনী সভা’প্রতিষ্ঠা করে।রজনীকান্ত বরদলৈ,বিনন্দি চন্দ্র ফুকন,হেমচন্দ্র গোস্বামী,দ্বারিকেশ্বর শর্মা,তীর্থনাথ কাকতি,লক্ষ্মীপ্রসাদ বরুয়া,চন্দ্রকুমার বরুয়া,যজ্ঞেশ্বর শর্মা এঁরাসবাই সভার সদস্য ছিলেন।১৮৮৯ সনের ১৩ জানুয়ারি সভার মুখপত্র ‘জোনাকী’প্রকাশিত হয়।মূলত চন্দ্রকুমার আগরওয়ালা,হেমচন্দ্র গোস্বামী এবং লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার প্রচেষ্টায় জোনাকীর জয়যাত্রা শুরু হয়।   

    উনবিংশ শতকে অসমিয়া বাঙ্গালির সাংস্কৃতিক জীবনে এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছিল।উনিশ শতকের শুরু থেকেই হলিরাম ঢেকিয়াল ফুকন (১৮০২-৩২),যজ্ঞরাম খারঘরীয়া ফুকন (১৮০৫-৩৮),যদুরাম ডেকা বরুয়া (১৮০১-৬৯),মণিরাম দেওয়ান(১৮০৬-৫৮)এর মাধ্যমে বঙ্গে্র প্রভাব অসমিয়া জীবন যাত্রাকে স্পর্শ করেছিল।এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ‘আসম দেশীয় অতি মান্য লোক’।‘সমাচার দর্পণ’, ‘সমাচার চন্দ্রিকা’,’সম্বাদ প্রভাকর’, ‘বঙ্গদূত’ইত্যাদি বাংলা সংবাদপত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ফলে বঙ্গে্র নতুন ধ্যান-ধারণা এবং সমাজ চেতনার ধারাটিকে এঁরা অসমে বহন করে নিয়ে এসেছিলেন।তাঁরা কেবলমাত্র বাংলা সংবাদপত্রের গ্রাহক বা পাঠকই ছিলেন না,লেখক এবং অসমের সংবাদ প্রেরকও ছিলেন।বাংলা সংবাদপত্রের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের ফলে তাঁদের মন হয়ে উঠেছিল কলকাতামুখী,মানসিকভাবেতাঁরা মোটামুটি কলকাতাতেই বসবাস করতেন।

    হলিরাম ঢেকীয়াল ফুকন ‘আসাম বুরঞ্জী’রচনা করেন।১৮২৯ সনে কলকাতার ‘সমাচার চন্দ্রিকা’প্রেসে মুদ্রিত এই গ্রন্থের নামকরণের মধ্যেই একথা স্পষ্ট যে গ্রন্থটি অসমের ইতিহাস বিষয়ে রচিত।গ্রন্থটিতে প্রাগতৈহাসিক যুগ থেকে চন্দ্রকান্ত সিংহের সময় পর্যন্ত ঐতিহাসিক বিবরণ এবং অসমের ভৌগোলিক বর্ণনা,শাসন প্রণালী,জাতিবিভাগ ইত্যাদি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে।সুকুমার সেনের মতে হলিরাম ঢেকীয়াল ফুকনই বাংলা গদ্যে প্রথম মৌলিক ইতিহাস রচনা করেন।সুকুমার সেন তাঁর ‘বাংলা সাহিত্যে গদ্য’গ্রন্থে লিখেন –‘আলোচ্য সময়ে ইতিহাস বিষয়ে একমাত্র স্বাধীন রচনা অর্থাৎ যাহা ইংরেজির অনুবাদ নহে,তাহা হইতেছে  হলিরাম ঢেকিয়াল ফুকন (১৮০২-৩২)রচিত ‘আসাম বুরঞ্জী’(১৯২৯)।

    উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদালতে অসমিয়া ভাষা প্রচলনের জন্য যে সমস্ত ব্যক্তিরা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে আনন্দরাম ঢেকিয়াল ফুকন অন্যতম। তাঁর ‘অসমীয়া লরার মিত্র’(১৮৪৯) এবং ‘A few Remarks on the Assamese language and Vernacular Education in Assam’(১৮৫৫) গ্রন্থে লেখকের মাতৃভাষার প্রতি অপরিসীম মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে অসমিয়া ভাষা প্রচলনের জন্য সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করলেও আনন্দরাম সামান্তরালভাবে বাংলা গদ্যের চর্চাতেও মনোনিবেশ করেছিলেন।বরপেটায় বসবাস করার সময় তাঁর আংশিক অনুবাদ করা গ্রন্থ –আইন ও ব্যবস্থা সংগ্রহ,প্রথম খণ্ড নামে ১৮৫৫ সনে প্রকাশিত হয়।গ্রন্থটি তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ‘কলিকতা নিউ প্রেস’থেকে মুদ্রিত হয়েছিল।

সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের রামকুমার বিদ্যারত্ন প্রধানত ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে কয়েকবার অসম ভ্রমণ করেন।তার এই ভ্রমণের ভিত্তিতে রচিত হয় ‘উদাসীন সত্যশ্রবার আসাম ভ্রমণ’।বইটি ১৮৮১ সনে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়।সূক্ষ্ণদর্শী রামকুমারের এই গ্রন্থে অসমের সমাজ সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে।অসমের চা শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার প্রতিও তাঁর আন্তরিক সহানুভূতি ছিল।তিনি তাঁর ‘কুলি কাহিনী’নামের উপন্যাসে চা শ্রমিকদের ওপরে চলা অত্যাচারের একটি বিশ্বাসযোগ্য ছবি তুলে ধরেছেন।

    ডঃ সূর্যকুমার ভূঞার প্রবন্ধ ‘কৃষ্টি সংযোগ’থেকে আমরা জানতে পারি সিপাহী বিদ্রোহের সময় মণিরাম দেওয়ানের উৎসাহে  কন্দর্পেশ্বর সিংহ চারিং রাজাকে অসমের সিংহাসনে বসানোর জন্য যে চেষ্টা করা হয়েছিল,তার একজন প্রধান নায়ক ছিলেন চারিং রাজার শিক্ষক বাঙ্গালি মধু মল্লিক।বিচারে তাঁর দ্বীপান্তরের শাস্তি হয়। আলোচ্য প্রবন্ধে শ্রীভূঞা নঁগাও জেলার তিনজন বাঙ্গালি ভদ্রলোক-জানকীনাথ সেন,মদনমোহন বিশ্বাস এবং জন্মেজয় দাস এর নাম উল্লেখ করেছেন।এই তিনজনই অসমিয়া মেয়ে বিয়ে করেন এবং তাঁদের সন্তান সন্ততিরা অসমিয়া বলে পরিচিতি লাভ করে।জানকীনাথ সেন প্রতিষ্ঠিত রঙ্গমঞ্চে প্রথমবারের জন্য অসমিয়া ঐতিহাসিক নাটক দেবনাথ বরদলৈর ‘হেমপ্রভা’অভিনীত হয়।জন্মেজয় দাসকে অসমের ‘টমাস আর্ণল্ড’বলা হয়ে থাকে।তাঁরই অনুপ্রেরণায় আনন্দরাম বরুয়া,জালনুর আলি আহমেদ,শিবরাম বরা এবং বলিনারায়ণ বরা বিলাতে উচ্চশিক্ষা লাভ করে এসে অসমে কীর্তিস্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন।সূর্যকুমার ভূঞা স্বয়ং কলেজ জীবনে বাংলা কবিতা লিখে স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে পুষ্পমাল্য লাভ করেছিলেন।বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পত্রিকাতেও তিনি প্রবন্ধ লিখেন।

    অসমিয়া গদ্য সাহিত্য যে মধ্যযুগে কতটা শক্তিশালীরূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল ভট্টদেবের কথাভাগবত,কথাগীতাই তাঁর জ্বলন্ত নিদর্শন।‘কথাগীতা’পড়ে বাংলার তিনজন মনীষী পণ্ডিতপ্রবর হেমচন্দ্র গোস্বামীকে যে চিঠি লিখেছিলেন তার থেকে ষোড়শ শতকের অসমিয়া গদ্য সাহিত্য যে কতটা উন্নত ছিল তাঁর একটা পরিচয় পাওয়া যায়।আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় লিখেন –‘Assamese prose literature developed to a stage in the far distant sixteenth century, which no other literature of the world reached except the writings of Hooker and Latimer in England…The katha –Gita shows clearly that the Assamese literature developed to a standard in the sixteenth century the Bengali literature had reached only in the time of Iswarchandra and Bankim Chandra।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীনউপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ‘কথা-গীতা’সম্পর্কে বলেন-‘The people who could write Gita in such prose in the sixteenth century was not a small people.’এবার আমরা ‘কথা-গীতা’সম্পর্কে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্য উল্লেখ করব।হেমচন্দ্র গোস্বামীকে তিনি চিঠিতে লিখেন –‘It is a book, striking book, interesting from many points of view. You may very well be proud of the author of this book who could handle prose in such a remarkably lucid style more than a century before we had any prose book in Bengal.  

    ১৮৯১ সনের ১১ মার্চ রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয়া কন্যা প্রজ্ঞাসুন্দরীর সঙ্গে লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়ার বিয়ে হয়।অসমিয়া সমাজে যৌতুকের প্রচলন নেই বলে কন্যার বাড়ি থেকে বরকে যৌতুক দেবার প্রস্তাবকে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্মীনাথ প্রত্যাখান করেন।লক্ষ্মীনাথের এই সুবিবেচনা এবং নির্লোভ আচরণ ঠাকুর পরিবারের সবাইকে সেদিন মুগ্ধ করেছিল।বিয়ের চারদিন পরে বহুমুখী প্রতিভাধর জ্যোতিরিন্দ্র নাথ ঠাকুর লক্ষ্মীনাথের একটি স্কেচ এঁকেছিলেন।সেই ছবি কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটিতে সংরক্ষিত রয়েছে।ঠাকুর পরিবারের নাট্যাভিনয়ের প্রভাব লক্ষ্মীনাথের জীবনেও পড়েছিল। কন্যা অরুণার সঙ্গে ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’অভিনয়ের মাধ্যমে লক্ষ্মীনাথ বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।কলকাতার রয়েল থিয়েটারের অভিনয়ে লক্ষ্মীনাথ ছিলেন দস্যু সর্দারের ভূমিকায়,বনদেবীর ভূমিকায় ছিলেন অরুণা।বাংলা এবং ইংরেজি পত্র পত্রিকায় তাঁদের অভিনয়ের প্রশংসা করা হয়েছিল।কেবল সঙ্গী্ত বা নাটকের সূত্রেই নয় ,এমনিতেও দিনেন্দ্রনাথ এবং লক্ষ্মীনাথের মধ্যে ব্যক্তিগত সখ্যতার সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল।



   অসম বাংলার এই বহমান সমন্বয়-সম্প্রীতির সূত্র ধরেই বিষ্ণুপ্রসাদ এই ঐতিহ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।কবির ভাইপো সৌ্মেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বিষ্ণুপ্রসাদের একটা সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ঊঠেছিল।সৌ্মেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কলকাতার এলগিন রোডের বাড়িতে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভাকে নিয়ে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।শ্রীমতী ঠাকুর একজন বিখ্যাত নৃ্ত্যশিল্পী ছিলেন।সৌ্মেন্দ্রনাথ রাভাকে তাঁর বাড়িতে অভ্যর্থনা জানিয়ে সোনার নিবের একটি কলম উপহার দিয়ে বলেছিলেন-‘কমরেড রাভা,আপনি আমার বাড়িতে থেকে নিশ্চিন্ত মনে সাহিত্য সেবায় মনোনিবেশ করুন।এখানে আপনি সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাবেন।প্রয়োজনে এখানকার ন্যাশনেল লাইব্রেরি থেকে বই পত্র এনে দেবার ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।অসম সম্পর্কে আপনি এখানে বসেই লিখতে পারবেন।আপনি অসমের কৃষ্টি জনজাতীয়,উপজাতীয়,সমাজতাত্ত্বিক বিষয়ের ওপর সমীক্ষামূলক গ্রন্থ,গল্প,কবিতা,নৃ্ত্য নাটিকা,ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থ,নাটকও লিখতে পারেন।আমি আপনার বই ছাপানোর বন্দোবস্থ করে দিতে পারব।’শ্রীমতী ঠাকুর ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য নৃ্ত্যকলার বিশেষ পারদর্শিনী মহিলা ছিলেন।তিনি রাভাকে বলেছিলেন –‘আমি আপনাকে একজন নৃ্ত্যশিল্পী জেনেই বলতে চাই আপনি অসমের নৃ্ত্যকলার বৈশিষ্ট্য বিষয়ে গবেষণা মূলক গ্রন্থ লিখুন।আমার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য পাবেন।’কিন্তু বিষ্ণু রাভা দুই একদিনের মধ্যেই ঠাকুর পরিবারের আভিজাত্যপূর্ণ অতি পরিমার্জিত নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে হাঁফিয়ে উঠলেন।রাভা নিজেই একদিন বললেন যতটুকু কাজ তিনি এখানে বসে করেছেন বাকিটুকু অসমে গিয়ে সমাপ্ত করতে পারবেন। সৌ্মেন্দ্রনাথ ঠাকুর রাভার কাছে প্রস্তাব রাখলেন যে মণিপুরী নৃ্ত্যকলার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য শ্রীমতী ঠাকুরের সঙ্গে রাভা এবং আরও দুজনের ইম্ফল যাওয়া উচিত।তাঁরা গুয়াহাটির এটি রোডে অবস্থিত ‘জেনারেল মোটর্স’এর মালিক শ্রীযুক্ত কুমার ব্যানার্জীকে সঙ্গে নিয়ে ইম্ফল যাত্রা করেন।তাঁরা তিনদিন ইম্ফলে থেকে মণিপুরি নৃ্ত্য বিষয়ে অনেক তথ্যাদি সংগ্রহ করেন।এই অভিযানের সমস্ত খরচ শ্রীমতী ঠাকুর বহন করেন।

    বিষ্ণু রাভা নিজের রচিত গান ছাড়া অন্যের রচিত গান গাইতেন না।কিন্তু এইক্ষেত্রে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিল রবীন্দ্রনাথের গান।কলকাতায় ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় দশমাইল সাইকেল চালিয়ে হলেও রবীন্দ্র সঙ্গীতের আসরে উপস্থিত হতেন এবং গায়কদের অনুরোধ করে রবীন্দ্র সঙ্গী্ত শিখতেন।এখানেই থেমে না থেকে তিনি শান্তিনিকেতনেও রবীন্দ্রসঙ্গী্ত শেখার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন।সৌ্মেন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃত একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট বিপ্লবী সঙ্গীতের রাভা ১৯৫৪ সনে অসমিয়া অনুবাদ করেন।গানের সুরটা আন্তর্জাতিক।রাভার অনুবাদ—

    ‘উঠ,জাগি উঠ,উপবাসী অন্ন ভূমিহীন দল

    বুকু পেট জ্বলা চিরদুখী শেষ যুদ্ধলৈ হের বল’

    সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজি থেকে অনুবাদ করা মূল গানটা ছিল –

    ‘ওঠ রে!জেগে উপবাসী অন্ন ভূমিহীন দল

    মোদের বুক জ্বলে দিবানিশি,শেষ যুদ্ধের তরে সবে চল।’

    বিষ্ণু রাভা ছাত্র জীবনে বঙ্গদেশে থাকার সময় বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের সেই সময়ের কয়েকটি জনপ্রিয় বিপ্লবী গানের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।রাভা লেখেন-

    ‘ভাঙ্ ভাঙ্ ভাঙ্ কারার কপাট

    শত অভিশাপ পূর্ণ এই দুঃখময় দুর্গ

    ভাঙ্ ভাঙ্ ভাঙ্ লোহার শিকলি ভাঙ্

    ছিঙ্ ছিঙ্ ছিঙ্ দাসর বন্ধন ছিঙ্

    খোল খোল খোল কারার কপাট খোল’

    নজরুল ইসলামের মূল গানটি-

    ‘কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙে ফেল কররে লোপাট

    লাথি মার ভাঙরে তালা যত সব বন্দীশালায়

    আগুন জ্বালা আগুন জ্বালা’

অসমের সমাজ জীবনে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব।এই মানুষটিকে বাদ দিয়ে অসমিয়া সমাজ,সংস্কৃতি,ভাষা,সাহিত্য এবং রাজনীতির আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।বিষ্ণুরাভা কেবলমাত্র একজন শিল্পী বা সাহিত্যিকই ছিলেন না,তিনি ছিলেন অসমের সমাজ জীবনের একজন মহান ব্যক্তি,সমন্বয়ের প্রতীক।মনে পড়ে আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে গুয়াহাটিতে বসবাস করার সময় ডিসপুর জেলা গ্রন্থাগার থেকে মেদিনী চৌধুরীর ‘ফেরেংগাদাও’উপন্যাসটি সংগ্রহ করে পড়েছিলাম এবং বলাবাহুল্য মুগ্ধ হয়েছিলাম।সেদিনই বিষ্ণু রাভার প্রতি মনের সঙ্গোপনে এক ধরনের শ্রদ্ধা জন্ম নিয়েছিল।পরবর্তীকালে ‘নন্দন’পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ ও লিখেছিলাম।রাভার অপূর্ব মানবতা বোধ এবং আপোষহীন সংগ্রামী মনোভাব চিরদিনই আমাকে আকৃ্ষ্ট করে।এমন একটি মহান মানুষকে আমরা প্রায় বিস্মৃত হতে চলেছি।তিনি জন্ম নিয়েছিলেন অবিভক্ত ভারতের ঢাকা শহরে।হাতে খড়ি শুরু হয়েছিল বাংলা ভাষায়।অনেক গুলো ভাষাতেই পাণ্ডিত্য ছিল।তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিলেন ভাষাচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়,কবি নজরুল ইসলাম, অন্নদাশঙ্কর রায়,উদয়শঙ্করের মতো বিদগ্ধ মানুষেরা।অথচ আমার ভাবতে দুঃখ হয় আজও বিষ্ণুপ্রসাদ রাভাকে নিয়ে বাংলায় সেরকম উল্লেখযোগ্য কোনো জীবনীগ্রন্থ লেখা হয়নি।


https://www.youtube.com/watch?v=kRKob-QuW3o


   বিষ্ণুরাভার জীবনের অনেকটা সময় বাংলায় কেটেছিল।কলকাতা শহরের সেন্ট পলস কলেজ এবং রিপণ কলেজের ছাত্র ছিলেন।সেই সময়ের প্রায় প্রতিটি সংস্কৃতিবান মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় পরিচয় ছিল।১৯০৫ সনে পূর্ববঙ্গ এবং অসম একত্রিত করে একটি ভিন্ন প্রদেশ গঠন করা হয়।তার রাজধানী হয় ঢাকা।ঢাকায় আসাম রাইফেলসের মুখ্য কার্যালয় স্থাপিত হয়।আসাম রাইফেলসের নতুন নামকরণ করা হয় ‘ইস্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস’।এর সুবেদার মেজর হিসেবে নিযুক্তি দিয়ে গোপালচন্দ্র রাভাকে চারিদুয়ার থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়। ঢাকায় গোপালচন্দ্রের পদমর্যাদা কমাণ্ডডেন্টের ঠিক নিচেই ছিল।কমাণ্ডডেন্ট ইউরোপীয় ছিলেন।নতুন সমস্ত ইউরোপীয় অফিসারদের বস ছিলেন গোপালচন্দ্র রাভা।তাঁর কাজের দক্ষতাস্বরূপ ইংরেজ বাহাদুর তাঁকে ‘সর্দার বাহাদুর’ এবং অ-বি-ই অর্থাৎ ‘অর্ডার অফ দি ব্রিটিশ এম্পায়ার’ উপাধি প্রদান করেন এবং তিনি ১৯০৭ সনে লাট সাহেবের ‘অনারেরী এডিকং রূপে নিযুক্ত হন।

    ১৯০৯ সনে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার জন্ম হয়।পিতা গোপালচন্দ্রের বিষ্ণু রাভাকেও মিলিটারিতে ভর্তি করার খুব ইচ্ছা ছিল।ইস্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের কমান্ডডেন্ট মেকফা্রসন বিষ্ণুপ্রসাদের সরকারি খরচে পড়াশোনার বন্দোবস্থ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিষ্ণূপ্রসাদের সরকারি চাকরির প্রতি কোনো ধরনের আকর্ষণই ছিল না।

    ১৯১১ সনে বঙ্গদেশ আবার একত্রিত হয়।অসম একটি ভিন্ন প্রদেশে পরিণত হয়।অসমের গভর্ণর নিযুক্ত হন স্যার নিকোলাস ভদ বিটসন বেল।স্যার নিকোলাসের ‘এডিকিং’হিসাবে সুবেদার মেজর রাভাকে শিলঙে বদলি করা হয়।ইতিমধ্যে তিনি ১৯১৩ সনে অবসর গ্রহণ করেন এবং তাঁর পরিবার তেজপুরে বসবাস করতে শুরু করেন।১৯১৭ সনে ঢাকা শহরেই গোপালচন্দ্র রাভার মৃত্যু হয়।গোপালচন্দ্র রাভা তেজপুরের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।তার মধ্যে ‘বাণ স্টেজ’,ভিক্টোরিয়া লাইব্রেরি’ এবং ‘অসম ক্লাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।তেজপুরের ‘ভিক্টোরিয়া লাইব্রেরিতে বই কেনার জন্য তিনি তিনশ টাকা দান করেছিলেন।১৯০৭ সনে তেজপুরের’বাণ স্টেজ’যখন প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন স্টেজের সভাপতি ভবানীচরণ ভট্টাচার্য কয়েকজন মুখ্য কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় যান এবং সুবেদার মেজর রাভার কাছে অর্থ সাহায্য প্রার্থনা করেন।রাভা চারশো টাকা নগদ এবং মঞ্চের জন্য কয়েকটি দৃশ্যপট আঁকিয়ে নিজের খরচে সেসব তেজপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

    ঢাকা শহরেই বিষ্ণুরাভার শিক্ষার শুরু হয়।ঢাকাতে তিনি বাংলা ভাষাতেই শিক্ষা লাভ করেন।গোপাল রাভা সেতার বাজাতেন।বাবার সঙ্গে সেতার বাজানো ছাড়াও বড়দার কাছে রাগ সঙ্গী্ত এর চর্চা করেন।সঙ্গী্তের প্রতি বিষ্ণুর প্রবল অনুরাগ দেখে পিতা জহরজান বিবি,মোতি মিঞা এবং ওস্তাদ কালাচাঁদকে সঙ্গী্তের শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেন।এভাবে তামিল পেয়ে মাত্র সাত বছর বয়সে ঢাকা শহরে ‘হরিশচন্দ্র’নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করেন।ঢাকায় থাকার সময় থেকেই তিনি নানা ধরনের খেলাধুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরতে খুব ভালোবাসতেন।

    পিতার মৃত্যুর পরে বিষ্ণুরাভা পরিবারের সঙ্গে ঢাকা চলে এলে তেজপুরের সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়।স্কুলে রাভা খুব মনোযোগের সঙ্গে পড়াশোনা করতে থাকেন।চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত রাভা প্রতি বছরই প্রথম বা দ্বিতীয় হন।১৯৬২ সনে বিষ্ণু রাভা প্রবেশিকা পরীক্ষায় তেজপুরের সমস্ত ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থান লাভ করেন।এর জন্য তিনি কুইন এম্প্রেস’নামে পুরস্কার এবং সোনার মেডেল লাভ করেন।কেবল পড়াশোনাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য সামাজিক কাজের সঙ্গে ও জড়িত ছিলেন।১৯২২ সনে তেজপুরে সদৌ অসম ছাত্র সম্মেলন বসেছিল।রাভা সম্মিলনে সমস্ত স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃ্ত্ব দান করেন।রাভা ফুটবল,ভলীবল,হকি খেলাতে সমান পারদর্শী ছিলেন।তবে খেলাধুলোর মতো সঙ্গী্তেও তাঁর বেশি আকর্ষণ ছিল।ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি আলিবাবা নাটকে মর্জিনার চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে অবাক করে দেন।প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রেশ্বর বরঠাকুর তার বহুমুখী প্রতিভার সন্ধান পেয়ে তাকে নানা ভাবে উৎসাহিত করেন।

    রাভার কলেজ জীবন শুরু হয় সুদূর কলকাতা শহরে।উচ্চ মাধ্যমিক বা আই এস সি পড়ার জন্য তিনি কলকাতার সেন্ট পলস কলেজের বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন।এই সময়ে তিনি কলেজের ক্রিকেট অধিনায়ক ও ছিলেন।১৯২৮ সনে প্রথম বিভাগে আই এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।সেন্ট পলস কলেজে তখন পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স না থাকায় রিপন কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন।রিপন কলেজেও রাভা মনোযোগের সঙ্গে পড়াশোনা করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।কলেজের ফুটবল সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৩০ সনের  বি এস সি টেস্ট পরীক্ষায় কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ নাম্বার লাভ করেন।সমস্ত কলকাতা শহর তখন রাজনৈ্তিক কার্যকলাপে উত্তাল।স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনের জোয়ারে সমগ্র কলকাতা শহর তখন উথাল পাতাল।ইংরেজ সরকারকে বিতাড়িত করার জন্য হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে নেমে পড়েছিল।ইংরেজ সরকারও হাত পা গুটিয়ে বসে ছিল না।যে সমস্ত বিপ্লবীরা ইংরেজের বিরুদ্ধে সশস্র সংগ্রামে নেমেছিল তাদেরকে জেলে পাঠিয়ে কঠোর শাস্তি দেবার জন্য ব্রিটিশ সরকার মরীয়া হয়ে উঠেছিল।কলকাতা মহানগরীর প্রতিটি গলিতে ব্রিটিশের গুপ্তচর বাহিনি বিপ্লবীদের ধরার জন্য ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।কলেজের তরুণ ছাত্র ছাত্রীদের ওপর স্বাভাবিক ভাবেই তাদের নজর বেশি ছিল।অটুট স্বাস্থ্যের অধিকারী বিষ্ণু রাভা  খেলাধুলো নাচ-গান সব কিছুতেই দক্ষ ছিলেন।তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিষ্ণু রাভার ওপর ও পুলিশের শ্যেন দৃষ্টি পড়তে দেরী হল না।পুলিশ তার ওপর সর্বক্ষণ নজর রাখতে শুরু করল।ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে কয়েকবার পুলিশ রাভার ঘরে তল্লাশি চালাল।সেই সময় রাভা রিপন কলেজের সাধারণ সম্পাদক।এভাবে ঘন ঘন পুলিশ এসে বিষ্ণুপ্রসাদের ছাত্রাবাসে জুলুম সৃষ্টি করায় তার পড়াশোনায় ব্যাঘাত জন্মাতে লাগল।এই পরিবেশে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব বিবেচনায় রাভা রিপণ কলেজ ছেড়ে যাবার কথা ভাবলেন।তিনি শীঘ্রই রিপন কলেজ ছেড়ে কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজে নাম লেখালেন।ভিক্টোরিয়া কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ না থাকায় বাধ্য হয়ে তিনি কলা বিভাগেই নাম লেখালেন।


   https://www.youtube.com/watch?v=vz7X6Zwc6iw


কোচবিহারের গৌ্রবময় ঐতিহ্য রাভাকে আকৃ্ষ্ট করল।নরনারায়ণ-চিলারায়ের গৌ্রবময় কর্মক্ষেত্র এই কোচবিহার।মহাপুরুষ শঙ্করদেব,মাধবদেব,গুরু দামোদর দেবের পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত এই শহরকে রাভা কিছুদিনের মধ্যেই ভালোবেসে ফেললেন।ষোলো শতকের অসমিয়া সাহিত্যের কেন্দ্রস্থল এই বেহার খণ্ড।কলেজের পরিবেশ ও তার আপন বলে মনে হল।তোরষাকে দেখে তার বড়-লুইতের কন্যা বলে মনে হল।

    ইতিমধ্যে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃ্ত্বে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সমগ্র দেশ জুড়ে গণ আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছে।সেইসময় একজন দেশীয় রাজা কোচবিহারে শাসনকার্য চালাতেন।তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতেন একজন ইংরেজ রেসিডেন্ট অফিসার।তখনকার দিনের ব্রিটিশ শাসকের নিয়মানুসারে কোনো ব্রিটিশ অফিসার রাজপথ দিয়ে যাবার সময় দেশীয় লোকদের মাথা নিচু করে পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হত।বিষ্ণু রাভা এই অপমানজনক প্রথার প্রতিবাদের সঙ্কল্প করলেন।একদিন সকালবেলা ছয় সাতজন সমবয়সী বন্ধুর সঙ্গে রাভা রাজপথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন।কিছুক্ষণ পরে ইংরেজ রেসিডেন্ট জেনারেল রিজেন্ট হাচিনসন এবং দেওয়ান নলিনী রঞ্জন খাস্তগীর ঘোড়ার পিঠে চড়ে রাজপথ পথ দিয়ে সদলবলে যাবার সময় প্রত্যেকেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলেন।ব্যতিক্রম বিষ্ণু রাভা এবং তাঁর বন্ধুরা।তাঁরা কোনোদিকে তাকানোর প্রয়োজন অনুভব না করে নিজের মনে পথ চলতে লাগলেন।ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধিদের দেশীয় তরুণদের এই উদ্ধত মনোভাব সহ্য হল না।অসন্তুষ্ট হাচিনসন এবং খাস্তগীর তাঁদের রাজদ্রোহী আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেন।রাভা সেই নির্দেশে কোনো গুরুত্ব তো দিলেনই না বরং সাদা কাগজে একটি কালো এবং এবং একটি সাদা পাঁঠার ছবি এঁকে,তাঁর নিচে একটি কবিতা লিখে রাজপ্রাসাদের প্রধান দরজায় ঝুলিয়ে দিলেন—

    ‘রাজ্যে আছে দুইটি পাঁঠা

    একটি কালো একটি সাদা,

    রাজ্যের যদি মঙ্গল. চাও

    দুইটি পাঁঠাই বলি দাও।’ 

রাভা এবং তাঁর সঙ্গীদের এই কার্যে রুষ্ট হয়ে রাজদরবার থেকে নির্দেশ জারি হল যে বিষ্ণু প্রসাদ রাভাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোচবিহার ছেড়ে চলে যেতে হবে।কোচবিহারে পড়ার সময় রাভা বি-এ শ্রেণির চতুর্থ বার্ষিক পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেন।

    রাজরোষে পড়ে বিষ্ণু রাভা এবং তাঁর সঙ্গীদের কোচবিহার ছেড়ে পূর্ববঙ্গে্র কার্মাইল কলেজে ভর্তি হতে হয়।কার্মাইল কলেজে থাকাকালীন অবস্থাতেও রাভা তাঁর প্রতিভার পরিচয় দান করেন।কলেজের ক্রিকেট সম্পাদক নির্বাচিত হন।সেই সময় কার্মাইল কলেজের তিনতলা অট্টালিকার ওপরে উড়তে থাকা পতাকা ‘ব্রিটিশ ইউনিয়ন জ্যাক’নামিয়ে এনে জ্বালিয়ে দিয়ে বিষ্ণু রাভা এবং তাঁর সঙ্গীরা সেখানে ভারতের ত্রিবর্ণ জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দেয়।ব্রিটিশ প্রশাসন ক্ষুব্ধ হয়ে রাভা এবং তাঁর সঙ্গীদের নামে গ্রেপ্তারের ওয়ারেন্ট জারি করে।ঠিক তখনই চট্টগ্রামে বিপ্লবী সূর্য সে্ন ওরফে মাস্টারদার নেতৃ্ত্বে মাস্টারদার অনুগামীরা চট্টগ্রাম অস্রাগার এবং অন্যান্য সরকারি অফিস দখন করে।রাভার ওপরে রেড-লেটার,সি আইডি এবং পুলিশের চোখ পড়ে।এই দুটি ঘটনার ফলস্বরূপ রাভা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে কার্মাইল কলেজ ছাড়তে বাধ্য হন।এভাবেই অকালে ১৯৩১ সনে বিষ্ণু রাভার ছাত্র জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

    ১৯১৭ সনে বিষ্ণু রাভার পিতা গোপাল রাভার জীবনাবসান ঘটে।১৯১৩ সনে সামরিক বিভাগের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া দুই হাজার বিঘা জমিতে চাষ বাস করে তেজপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। গোপাল রাভার মৃত্যুর সময় বিষ্ণুরাভার বয়স ছিল মাত্র আট বছর।১৯২৬ সনে রাভার মাতা গেথীবালা রাভার ও মৃত্যু হয়।

    কলেজ জীবন সমাপ্ত হওয়ার পরে বিষ্ণু রাভা কিছুকাল কলকাতায় বাস করেন।সেই সময় মাধবচন্দ্র বেজবরুয়া সম্পাদিত ‘বাঁহী’পত্রিকা কলকাতা থেকে প্রকাশিত হত।রাভা ‘বাঁহী’পত্রিকায় নতুন করে খোলা ‘চিত্রলেখা’বিভাগটি পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেন।বেশ কিছু সাংস্কৃতিক কাজ কর্মের সঙ্গে ও জড়িত হয়ে পড়েন।রাভা কলকাতা বসবাসের সময় ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম বিপ্লবের অন্যতম নেতা সূর্যসেন কলকাতায় আত্মগোপন করেন।সূর্য সেন কে ধরিয়ে দেবার জন্য দশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।সূর্য সেনের খোঁজে আসা পুলিশ এবং গুপ্তচররা রাভার ঘরে ও তল্লাশি চালায়।রাভা তখন সঙ্গী্ত-কলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।সেইসময় রাভার দাদা নন্দলাল রাভা ঢাকায় পুলিশ বিভাগের উচ্চপদে আসীন ছিলেন।তাঁর আশা ছিল ছোট ভাই ও পুলিশ বিভাগে তারই মতো সম্মানের সঙ্গে কাজ করবে।তাই জরুরি চিঠির মাধ্যমে তিনি ছোট ভাইকে ঢাকায় ডেকে পাঠালেন।বিষ্ণু রাভাও শৈশবের জন্মভূমিকে একবার দেখে আসতে চাইলেন।এই ঢাকা শহরেই শৈশবে মাত্র আট বছর বয়সে উর্দু নাটকে জীবনের প্রথম অভিনয় করেছিলেন।সেই অভিনয়ে তাকে তালিম দিয়েছিলেন ‘লায়ন থিয়েটার’এর ওস্তাদ কালাচান্দ সাহেব।বলতে গেলে রাভার অভিনয় জীবনের প্রথম প্রেরণাদাতা এই কালাচাঁদ সাহেব।গীতে-বাদ্যে,নৃ্ত্যে অভিনয়ে ঢাকা শহর তখন উথাল-মাথাল।এক কথায় ঢাকা তখন কলা সংস্কৃতির এক অন্যতম পীঠস্থানে পরিণত হতে চলেছে।দাদা নন্দলাল রাভা বিষ্ণুকে কাছে পেয়ে খুবই খুশি হলেন।

    নন্দলাল তাঁর পিতার বন্ধু কর্ণেল ডি স্মিথের মাধ্যমে বিষ্ণু রাভার উপ-আরক্ষী অধীক্ষক পদের প্রার্থী হিসেবে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেন। সাক্ষাৎকারে রাভা প্রথম হন।কিন্তু চাকরিতে যোগদানের সময় তাঁর মনে দ্বিধা দেখা দেয়।সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের পদানত হয়ে গ্লানিময় জীবন কাটাবেন না কি স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করে মানুষের মুক্তির জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করবেন?

    সাক্ষাৎকারের কয়েকদিন পরে দরং জেলার আরক্ষী অধীক্ষক মিঃবারবিজ রাভাকে ডেকে পাঠিয়ে জানালেন যে তাকে ডিএস পি এর চাকরিটা দেওয়া যেতে পারে যদি তিনি সরকারকে লিখিতভাবে জানান যে কোনো রকম রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত থাকবেন না। রাভা মিঃ বারবিজকে দৃঢ়তার সঙ্গে জানালেন যে –‘ক্ষমা করবেন মিঃবারবিজ।একটা সাধারণ সরকারি চাকরির জন্য আমি আমার রক্তকে অবনমিত এবং কলুষিত করতে পারব না।‘এটা ছিল ১৯৩২ সনের কথা।

    কলকাতা মহানগরীতে নিজের গুণ এবং প্রতিভার দ্বারা কলা এবং সাহিত্যপ্রেমী লোকের মধ্যে বিষ্ণু রাভা একটা স্থান করে নিলেন।উচ্চমান বিশিষ্ট সঙ্গীতে তাঁর জ্ঞান,ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তাঁর প্টুতা,বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা,শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যে স্বাভাবিক ব্যুৎপত্তি অনেকের কাছেই তাকে বিপুল জনপ্রিয় করে তুলল। এমনই একটি দিনে কলকাতার মেছুয়া বাজারে ওয়াই-এম-সি-এ দ্বারা আয়োজিত ‘ফেন্সি ড্রেছ একজিবিশন’এর আয়োজন করা হয়।এই অনুষ্ঠানে নিখিল বঙ্গ মিউনিসিপাল বোর্ডের চেয়ারম্যান জেসি বসু বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।এই প্রদর্শনীতে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা ভিক্টোর হুগোর ‘ Hunchback of Notredom’চরিত্রের ‘মেক-আপ’নিয়ে যখন মঞ্চে উপস্থিত হলেন তখন ওয়াই-এম-সি-এর সুপারিনটেনডেন্টের পরিবার মিসেস বাকনেল ভয়ে চিৎকার করে স্বামীকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। দর্শকদের মধ্যে একই সঙ্গে হর্ষ ও ত্রাসের সৃষ্টি হয়।হাঞ্চবেকের পিঠে এক বিশাল কুঁজ,পা দুটি বাঁকা,টেরা চোখ,কুৎসিৎ বীভৎস আকৃতির। এহেন নিঁখুত মেক-আপ দেখে উপস্থিত দর্শকেরা মুগ্ধ,উল্লসিত। বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক ভিক্টর হুগো সেদিনের সভায় উপস্থিত থাকলে অসমের একজন শিল্পীর এই অসাধ্য সাধনে নিজেও বিস্মিত এবং অভিভূত হতেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমেরিকার তখনকার দিনের কথাছবির মেক-আপের রাজা নামে খ্যাত মিঃ লংচেনিও সেই প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন এবং তাকে একটি বিশেষ মেক-আপে মঞ্চে দেখা গিয়েছিল।অভিনয়ের শেষে মিঃ লংচেনি হাসতে হাসতে রাভার সঙ্গে করমর্দন করলেন।সভার শেষে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে  রাভাকে একটি উত্তম মেডেল অর্পণ করা হল। বিশিষ্ট অতিথি জে সি বসু মন্তব্য করলেন যে সুযোগ পেলে রাভা ভারতের চলচ্চিত্র জগতে একদিন সুপ্রতিষ্ঠ হবে।

    শান্তিনিকেতনে ফুটবল খেলার প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ,পূর্ব বঙ্গ,কোচবিহার,রঙপুর ইত্যাদি নানা স্থান থেকে ফুটবলের দল খেলতে এসেছে। কলকাতার ওয়াই এম সি এ টিমে খেলার জন্য বিষ্ণু রাভাকে অনুরোধ করা হল। রাভা সানন্দে রাজি হলেন। রেলে চড়ে খেলোয়াড়ের দল শান্তিনিকেতন এসে উপস্থিত হল।হৃষ্টপুষ্ট স্বাস্থ্যের জন্য টগবগে যুবক বিষ্ণু রাভা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।এই দলের সঙ্গে সেই সময়ের বাংলা গানে ক্লাসিকেলের পরশ দান করে নতুন সুর সৃষ্টিকর্তা স্বনামধন্য হিমাংশু দত্তও ছিলেন। তিনিই পরবর্তীকালে ‘সুর-সাগর’নামে সঙ্গীত জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।সন্ধেবেলা গানের আসর বসল। দত্তের সঙ্গীতের নতুনত্বে মানুষ মুগ্ধ হলেন।গহীন-গম্ভীর স্বরে রাভার গানের পরে শ্রোতাদের কাছ থেকে আরও গান গাইবার জন্য অনুরোধ আসতে লাগল।রাভা অসমিয়া গান দিয়ে শুরু করে পরপর একটি করে বড়ো এবং রাভা গীত গাইলেন।সবার শেষে গাইলেন একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত। —

    একদা তুমি, প্রিয়ে,আমারি এ তরুমূলে

    বসেছ ফুলসাজে সে কথা যে গেছ ভুলে।।

    সেথা যে বহে নদী নিরবধি।

    সে ভোলে নি,

    তারি যে শ্রোতে আঁকা বাকা বাকা

    তব বেণী,

    তোমারি পদ রেখা আছে লেখা

    তারি কূলে।

    আজি কি সবই ফাঁকি –

    সে কথা কি গেছ ভুলে।।

এর পরে মিরি,মিকির,গারো,নাগা,মণিপুরি,খাসি,মিজো ইত্যাদি ভাষার গান চলল। ভাষা বুঝতে না পারলেও সুরের বিভিন্নতা সবাইকে আলোড়িত করল।হিমাংশু দত্ত বিষ্ণু রাভাকে জড়িয়ে ধরলেন।

    কিছুদিনের মধ্যেই ওয়াই-এম-সি এ আয়োজিত একটি বিচিত্রানুষ্ঠানে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম আমন্ত্রিত হয়ে এলেন।তখনকার যুব সমাজে নজরুল খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। সেদিন বাংলার প্রখ্যাত লেখক পরশুরামের ‘বিরিঞ্চিবাবা’গল্পের নাট্যরূপ মঞ্চস্থ করা হল।বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা দারোয়ানের ভূমিকায়  এত সুন্দর অভিনয় করলেন যে নজরুল ইসলাম এর পর থেকে রাভাকে ‘দারোয়ান ভাই’বলে সম্বোধন করতে শুরু করলেন।

    রাশিয়া থেকে বিশ্ববিখ্যাত নর্তকী প্রাইমা বেলেরিনা আনা পাভলোভা কলকাতায় এসেছিলেন।সমস্ত মহানগরী প্রাণচঞ্চল।বিষ্ণুপ্রসাদ মনে বড় আগ্রহ আর শ্রদ্ধা নিয়ে পাভলোভার নৃ্ত্য দর্শন করতে গেলেন। নতুন তাল-লয়-ছন্দের মনোহর সুর তার মনপ্রাণকে স্পর্শ করে গেল।মঞ্চে যেন কোনো দেবীর আবির্ভাব ঘটেছে।চমকে উঠলেন বিষ্ণু রাভা।পাভলোভার মধ্যে তিনি যেন প্রাচীন যুগের নৃ্ত্য পটীয়সী পদ্মিনী পার্বতীকে আবিষ্কার করলেন। নৃ্ত্যের এরকম জীবন্ত রূপ তিনি আগে কখনও উপলদ্ধি করেননি।

    পরেরদিন পাভলোভার শিষ্য হওয়ার মনোবাসনা নিয়ে রাভা আরাধ্যা দেবীর কাছে উপস্থিত হলেন।তাঁর আকুল প্রশ্ন কীভাবে নৃ্ত্য শেখা যেতে পারে। সুহাস্যবদনা,নৃ্ত্য বিশারদা শিল্পী পাভলোভা মিষ্টি সুরে বললেন-‘ভারতে নৃ্ত্য শিক্ষা লাভ করা অতি সহজ।নৃ্ত্যের সমস্ত কিছুই এখানে রয়েছে।জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে থাকা পাথরের মূর্তির ভঙ্গিমাকেই গতিশীল করে তাকে তালে ফেলে দিলেই ভাবব্যঞ্জক নৃ্ত্য হতে পারে।

    এত সংক্ষিপ্ত আর সুন্দরভাবে এই গভীর সমস্যার সমাধান পেয়ে রাভা মুগ্ধ হলেন।তাঁর শিল্পী মনের রুদ্ধ দরজা যেন পাভলোভা খুলে দিলেন।তাঁর দেহ-মন আনন্দে নেচে উঠল। পাভলোভাকে প্রণাম জানিয়ে বিষ্ণুপ্রসাদ ফিরে এলেন। মুখে মুখে গুণ গুণ করে বেজে উঠল –

    বিশ্বের ছন্দে ছন্দে

         মহানন্দে

         আনন্দে নাচা।

    নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার সময় কলকাতায় বিষ্ণুরাভার সঙ্গে দেখা হয় যোরহাটের ষোলো বছরের গায়িকা প্রিয়লতা দত্তের।প্রথম সাক্ষাতেই একে অপরের প্রতি আকর্ষিত হন।১৯৩৬ সনে উভয়ে বৈ্বাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন।কিন্তু মাত্র ছয়মাসের মধ্যেই প্রিয়লতা সান্নিপাত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজে মৃত্যুবরণ করেন।প্রিয় পত্নীর মৃত্যুতে বিষ্ণু রাভা ভেঙ্গে পড়েন এবং একটি অসাধারণ গীত রচনা করেন-

    ‘পরজনমর শুভ লগনত

         যদিহে আমার হয় দেখা।

    পুরাবানে প্রিয়ে এই জনমর

         মোর হিয়ার অপূর্ব আশা।।

   

    ১৯৩৭ সনে কলকাতার গ্লোব থিয়েটারের মঞ্চে বিষ্ণুপ্রসাদ ‘কামরূপ সৃষ্টি’নামে তাণ্ডব নৃ্ত্য প্রদর্শন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন।বাংলার ব্রতচারী আন্দোলনের প্রবর্তক গুরুসদয় দত্ত,বিশ্ব বিখ্যাত নৃ্ত্যশিল্পী উদয়শঙ্কর,খ্যাতনামা নর্তকী সাধনা বোস ইত্যাদি বিশিষ্টজনেরা সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।নাচের শেষে গুরুসদয় দত্ত মহাশয় রাভাকে বুকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন-‘ওহে ছোকরা,তোমার নৃ্ত্যে এত সরলতা এবং পবিত্রতা কোথা থেকে পেলে?’

    অসম মায়ের সুযোগ্য সন্তান রাভা সগৌ্রবে চট করে উত্তর দিলেন-‘আমাদের শঙ্করী ধর্মের অনুষ্ঠান থেকে।’একথা শুনে দত্ত মহাশয় খুব খুশি হয়ে রাভাকে চুম্বন করেন।সত্রীয়া নৃ্ত্যগুলি দেখে শ্রীদত্ত বলেন যে এত সুন্দর নৃ্ত্যসমূহের প্রবর্তক শ্রীশঙ্করদেব স্ত্রী বিহীন যে নৃ্ত্যের সৃষ্টি করে রেখে গেলেন,সেই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি কতটা প্রতিভাশালী ছিলেন তা কল্পনারও অতীত।অভিনেতা ইন্দ্রেশ্বর বরঠাকুরের ছেলে শ্রীনিরঞ্জন বরঠাকুর নৃ্ত্যশিল্পী উদয়শঙ্করকে মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন –‘শ্রী রাভার নৃ্ত্য কেমন দেখলেন?’

    উদয়শঙ্কর গভীরভবে উত্তর দিলেন-‘There are some peculiarities in Mr.Rava’s dance which I must learn.’পরবর্তীকালে হিন্দি পত্রিকা ‘সঙ্গী্ত’এর একটি প্রবন্ধে উদয়শঙ্কর রাভার নৃ্ত্যের প্রশংসা করেছিলেন।গ্লোবের দর্শকদের মধ্যে সেদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক তীর্থনাথ শর্মাও ছিলেন।উদয়শঙ্কর শ্রীশর্মাকে বলেন যে-‘ভারতের অনেক জায়গায় প্রাচ্য নৃ্ত্য দেখেছি,কিন্তু নৃ্ত্যশাস্ত্রের নির্দেশনা্রূপে নৃ্ত্য করা এরকম নৃ্ত্য আর কোথাও দেখিনি।’সেদিন শ্রীশর্মার সুন্দর মুখে গর্বের হাসি ফুটে উঠেছিল।

    অসমিয়া শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কলকাতার প্রতি একটা গভীর আত্মীয়তা এবং আকর্ষণের মনোভাব সক্রিয় ছিল।আধুনিক অসমিয়া সাহিত্যের বিকাশে প্রথম কেন্দ্রবিন্দুওছিল কলকাতা,সেকথা ইতিমধ্যে আমরা আলোচনা করেছি। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে অসমের একটা আত্মিক সম্পর্ক শুরু থেকেই গড়ে উঠেছিল।‘বিশ্বভারতী’গঠন করার মূলে কবির আদর্শ ছিল ‘যত্র বিশ্ব ভবত্যেকনীড়ম’।কবির সেই এক নীড়ের আহ্বানে অসমের অনেকেই সাড়া দিয়েছিলেন।অসমে রবীন্দ্র চর্চার একটা পৃ্থক ধারা গড়ে উঠেছিল।ভবানন্দ দত্তের মতো রবীন্দ্র দর্শনে গভীর অন্তর্দৃষ্টি সেই সময় বাংলাতেও খুব বেশি ছিল না।

    অসম-বাংলা সংস্কৃতির প্রাণপুরুষ হেমাঙ্গ বিশ্বাসের সঙ্গে রাভার নিবিড় বন্ধুত্ব ছিল। ১৯১২ সনে শ্রীহট্টের মিরাছী গ্রামে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের জন্ম হয়।কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে ১৯৪২ সনে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের নেতৃ্ত্বে গঠিত হয় –ভ্রাম্যমান সাংস্কৃতিক দল-সুরমা ভেলি কালচারাল স্কোয়াড।ইতিমধ্যে প্রগতিশীল লেখক সংঘের জন্ম হয়েছিল।হেমাঙ্গ বিশ্বাস তারই আদর্শে গঠন করেন ‘সিলেট সাহিত্য চক্র’।১৯৪৫ সনে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ‘সুরমা ভেলি কালচারাল স্কোয়াড’এক মাসেরও বেশি সময় অসমের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করে সাংস্কৃতিক কার্যসূচি পরিবেশন করে।সাক্ষাৎ হয় অসুস্থ ও শয্যাশায়ী জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালার সঙ্গে।পরের বছর ১৯৪৬ সনে শিলচরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের অসম শাখার প্রথম সভাপতি হিসেবে জ্যোতিপ্রসাদকে নির্বাচিত করা হয়।জ্যোতিপ্রসাদের প্রতি হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গভীর শ্রদ্ধা ছিল।জ্যোতিপ্রসাদ ছাড়াও মঘাই ওজা,বিষ্ণুপ্রসাদ রাভা,ফনী শর্মা,ভূপেন হাজরিকা,লক্ষ্মীনাথ বেজবরুয়া ইত্যাদি অসমের জাতীয় সংস্কৃতির পুরোধা ব্যক্তিদের বিষয়ে হেমাঙ্গ বিশ্বাস কেবল মূল্যায়ন করেই ক্ষান্ত থাকেন নি,তাঁদের কীর্তিকে বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে পারস্পরিক সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের পথটিকে প্রশস্ত করে তুলেছিলেন।ষাটের দশকের ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় যখন অসমের আকাশ বাতাস কলুষিত হয়ে উঠেছিল তখন লোকসঙ্গী্ত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস এবং ভূপেন হাজরিকার মিলিত প্রয়াসে গণনাট্যের মাধ্যমে দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চলের মানুষ আবার নতুন করে মিলনের স্বপ্ন দেখেছিল।অসমিয়া কৃ্ষকের ভূমিকায় সেদিন রংমনরূপী ভূপেন হাজরিকা গেয়েছিলেনঃ

লুইতর চাপরিত চাকৈয়ে কান্দিলে

   মানুহর নাওখন চাই

   মানুহর দুখেতে মানুহ বুরিব

   আনকচোন দেখিবর নাই।

অন্যদিকে পদ্মার উজানে ভেসে আসা উদ্বাস্তু বাঙালি কৃ্ষক হারাধনরূপী হেমাঙ্গ বিশ্বাস গেয়েছিলেনঃ

    আমার ভাঙ্গা নাওয়ে বন্ধু তুমি দিলাই পাল

    আমি ধরলাম বৈঠা বন্ধু তুমি ধরলাই হাল।

    এ মিলন গাঙে আনলো বলে কে বিভেদের বান

    চর ভাঙ্গিল,ঘর ভাঙ্গিল ডুবলো সোনার ধান।

    যে কলকাতা শহরে একদিন রাভার প্রতিভা বিকশিত হয়েছিল,সেই কলকাতা মহানগরের ১০ নং হিন্দুস্থান পার্কে ২৯ জুন রবিবার প্রয়াত রাভার স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করার জন্য এক জনসভার আয়োজন করা হয়।সভায় সভাপতিত্ব করেন পশ্চিমবঙ্গে্র বিখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়।এই সভার আহ্বান করেছিলেন ‘সর্ব্বভারতীয় কবি সম্মিলন’,লোক সঙ্গী্ত এবং লোকগাথা গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং অসম সাহিত্য-সংস্কৃতি চরা যুগ্মভাবে।প্রধান অতিথি ভাষাচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর মূল্যবান ভাষণে রাভাকে ‘পূর্ণ মানব এবং সুফী দর্শনের ইন্সাফ-এ-কামিন’ বলে প্রণিপাত জানান।রাভার অন্তরঙ্গ বন্ধু শিল্পী সাহিত্যিক হেমাঙ্গ বিশ্বাস বলেন-‘রাভা ছিলেন পাহাড় এবং সমতলের সবচেয়ে আপন মানুষ,সমন্বয়ের সেতু।’কলকাতার দৈনিক ইংরেজির খবরের কাগজ অমৃতবাজার পত্রিকায় রাভার মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়।–‘Mr.BishnuRava,artist turned revolutionary and a legendary figure in Assamese folk song and drama died of Cancer at Tezpur at 2-25 early this morning. Mr.Rava was an independent left member of Assam Assembly. The death of Mr.Rava removed from the nationed Scene an unique personality of rare talent of a singing ministral, dancer, actor and gun-carrying revolutionary…He died a pauper…’দুই হাজার বিঘা মাটির মালিকের সন্তান হয়েও,প্রাচুর্যতায় পরিপূর্ণ একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি কপর্দকহীন হয়ে পড়েছিলেন।জীবন-সংগ্রামে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু থেকেই তিনি ধীরে ধীরে বঞ্চিত হয়ে পড়েছিলেন-যেন জগতের সর্বহারাদেরই একজন।তবু তাঁর হাসিভরা মুখে কেউ কোনোদিন মলিনতার ছাপ দেখেনি।তিনি ছিলেন সর্বযুগের,সর্বদেশের,সর্বহারার সংগ্রামী শক্তির প্রতীক।

    অসমের জাতি,উপজাতিসমূহের বিষয়ে বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার জ্ঞান ছিল অপরিসীম।‘বিশাল অসমিয়া কৃষ্টি- সংস্কৃতি নানা জাতি,উপজাতির কলা-সংস্কৃতির সামগ্রিক রূপ’-একথা গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন।কেবল বিশ্বাসই নয় তাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে গিয়ে বিষ্ণুপ্রসাদ অসমিয়া,বড়ো,রাভা,মিছিং,কার্বি,নাগা,মণিপুরি,খাসি,মিজো,নেপালি,হিন্দি,উড়িয়া,ভূটিয়া,বাংলা ইত্যাদি অনেকগুলি  ভাষাতেই দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।অসমের জনগোষ্ঠীর ভাষা যে অসমিয়ারই ভাষা এ কথা তিনি মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করেছিলেন।অসমের বিভিন্ন কৃষ্টি-সংস্কৃতির মধ্যে তিনি অহরহ যোগাযোগ হওয়াটা চেয়েছিলেন।তিনি বলেছিলেন ‘একটা জাতির সঙ্গে অন্য একটি জাতির সমন্বয় হওয়ার জন্য ,পরম্পরের মধ্যে  উভয়ের বিষয়ের সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা উচিত।নিজের ধর্ম,কৃষ্টি,সমাজ এবং সংস্কৃতি ছাড়াও অন্যের ধর্ম,সংস্কৃতি,কৃষ্টি-কলা এবং সমাজ বিষয়ে গভীর জ্ঞান থাকা উচিত।

    একবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে উদয়শঙ্করের রামলীলা চলছিল।হঠাৎ বিষ্ণু রাভার কী মনে হল প্যাণ্ডেলের পেছন দিকে গিয়ে পাহারারত প্রহরীকে বললেন তিনি উদয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করতে চান।প্রহরী তাকে কিছুতেই ভেতরে ঢুকতে দিলেন না।অনেক কথা বার্তার পরে প্রহরী বললেন নাম ঠিকানা লেখা থাকা কোনো কার্ড থাকলে তিনি তা নিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।কিন্তু বিষ্ণু রাভার কাছে তো কোনো কার্ড নেই,এমনকি পরিচয়জ্ঞাপক কোনো কাগজপত্রও তার কাছে নেই।ব্যাপারটা ম্যানেজারকে জানালে তিনিও দেখা করার সম্মতি দিলেন না।এদিকে শো আরম্ভ হওয়ার আর বেশি বাকি নেই।উদয় শঙ্কর তখন সাজ ঘরে মেক আপে ব্যস্ত।বিষ্ণু রাভাকে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না দেখে ম্যানেজার শেষ পর্যন্ত একটা চিরকুটে বিষ্ণু প্রসাদের নাম লিখে সাজঘরে পাঠিয়ে দিলেন।কিছুক্ষণের মধ্যেই মেককাপ নেওয়া অবস্থাতেই উদয়শঙ্কর তাড়াহুড়ো করে সাজঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।তারপর সাদরে রাভাকে আহ্বান জানালেন।সেদিনের এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ফণী শর্মা এবং গুরুপদ চৌধুরী।

    ছাত্রাবস্থা থেকেই বহুলোকের সঙ্গে তার মেলামেশা ছিল।কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে অর্থাৎ কলেজ স্ট্রীট থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত তাঁর অবাধ গতিবিধি ছিল।১১৫ নং আমর্হাস্ট স্ট্রীটের নীলকণ্ঠ কেবিন ছিল তাদের চা খাওয়া আর আড্ডা দেওয়ার জায়গা। ৬ নং বঙ্কিমচন্দ্র স্ট্রীটে প্রতি বৃহস্পতিবার আসর বসত।অসম বাংলার অনেক গুণী জ্ঞানী ব্যক্তিদের সঙ্গেই তাঁর চলাফেরা ছিল।অসমের অনেক ছাত্রই তখন উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে কলকাতা আসত।সেই সূত্রে ফণী শর্মা,ভূপেন হাজরিকা,হেমাঙ্গ বিশ্বাস,মহেশ্বর নেওগ,পরাগ চলিহা,কমল নারায়ণ চৌধুরী,গুরুপদ চৌধুরী,প্রমুখ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বৃহস্পতি বারের আড্ডার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন নাট্যাচার্য শিশির ভাদুড়ি।অন্যান্য সভ্যদের মধ্যে ছিলেন বিনয় দত্ত,ভোলা চট্টোপাধ্যায়,তারক গঙ্গোপাধ্যায়,সুকুমার সেন,রবি মিত্র,কালিদাস নাগ প্রমুখ ব্যক্তিত্ব।

    বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার চরিত্রের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম দিক হল তাঁর অপরিসীম মানবপ্রেম।তিনি যেন মানুষের মধ্যে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে এক সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলার জন্যই জন্মেছিলেন।আজ যখন আমরা  বিবেক বিবেচনা বিসর্জন দিয়ে নিজেদের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম করে তোলার ভয়ঙ্কর এবং সর্বনাশা প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছি তখন বিষ্ণুরাভার সাহিত্য সৃষ্টিই আমাদের সঠিক পথ দেখাতে পারে।এই মহান যুগস্রষ্টাকে আমার অন্তরের অভিনন্দন এবং প্রনাম।

———

   

পোড়া গ্রামে পহেলা বৈশাখ

সৈয়দ আব্দুল মালিক 

মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ -বাসুদেব দাস 

 আমি এখানে আবার কেন ফিরে এলাম?

 বারবার ফজলের মনে এই প্রশ্নটাই আসছিল।

 এটাতো আমাদের ঘর নয়। সরকার দেওয়া কয়েকটা টিন মাত্র। জাতি বাঁশের খুঁটি দরজা নেই ,মাঝখানে বেড়া নেই। এই ঘরটার ভেতরে দ্বিতীয় কোনো প্রাণী নেই। ঘরের ভেতরে গরুর জোড়া  ভালোভাবে চলে না ।কোন গন্ধ পায় নাকি? আমি কিসের জন্য গরুর জোড়া রামেশ্বর নেপালির কাছ থেকে নিয়ে এলাম? আর ভালুকা থেকে আনা নতুন লাঙ্গল জোয়াল–কী যে মূর্খামি। আগের লাঙ্গল জোয়াল সমস্ত কিছু পুড়ে গেছে। এটাই কি আগের  ভিটে ? পুরোনো ভেটিতে নতুন ঘর। ফজল আছে সেখানে, ঘর একটাই।দুই বান্ডিল টিনের ঘর। তার একপাশে সে থাকে, অন্যদিকে গরুর জোড়া।একই ঘরের ভেতরে। জাতি বাঁশের খুঁটির উপরে বাঁশ দিয়ে দশবাণ্ডিল টিন দিয়ে  উপরের ছাদ বাকি দিনগুলোতে বাকি দিনগুলোতে ঘরের চারপাশ ঘিরে দেওয়া আছে গোয়ালঘর রান্নাঘর কিছুই নেই এই চালার নিচের সমস্ত কিছু মানুষ গরু দেখছি সসপ্যান বাসাবাটি একটা মাটির কলসিতে এক কলসি জল বাক্স পত্র কিছুই নেই বাসার চান নিচে বিছানা তাঁতের তুরি বালিশ নেই শাড়ীও নেই গ্রামের সমস্ত মৌস ঘর গুলির সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বোধহয় গেঞ্জিটা কুর্তা একটা এবং লুঙ্গি দুটির একটি পড়ে অন্যটি মাথার নিচে বালিশ হিসেবে ব্যবহার করে কখনো ঘুম আসে কখনো সারারাত বিন্দুমাত্র ঘুম আসেনা তুলি গারু তোষক বালিশ বড় কথা নয় চীনের চলার ঘন্টার ভিতরে মাথা বোঝাটা কম কথা নয় সেই স্কুলের মেয়েটা অবশ্য এতটা খারাপ ছিল না অন্তত এতটা ছিলনা তুসক বালিশ সেখানে ছিল না রিলিফ ক্যাম্প সেগুলো চাওয়াটাও মুখখানি সেখানে একটা কথা খারাপ ছিল না ভাত তরকারি নিজের আনতে হয় না কিন্তু জনগণের রান্নায় স্বাদের লেশমাত্র নেই পেট কোন অজুহাত মানে না আর তার হাতটা ছিল বল শালী জাল ফলো জোনাকি হলে কথাই নেই মাছ না ফিরে আসে জাল গুলো কি কিছুই না থাকলে খালটিতে নেমে শুধু খাচ্ছে কাদা কাদায় হাট হারিয়ে তোরা বতিয়া কই মাগুর ধরে আনে ভজন গ্রামের মানুষ সেইজন্যে চাঁদকে ম্যাচ টা বলতো তবে তাদেরকে মাছ খাওয়াবে ডালের পানি ডালো আর এক মুঠো ভাতই যথেষ্ট যারা কাটা পড়লো না দৌড়ে গিয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকলো তারা ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে অবস্থা ভাল হয়ে এসেছে ভেবে ভাতের খুঁজে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসেছিল তাদেরকে ধরে ধরে কাটলো তার চেয়ে নিজের গ্রাম থেকে সংগঠিত বিরুদ্ধে মৃত্যু হওয়াই ভাল ছিল যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ফজল বাড়িতে ছিল না নদীর ওপারের লালন গ্রামে গিয়েছিল ঘড়ি একজনের নাম বল কাঠ দিয়ে তৈরি যুলি একটি করে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল তৈরি হয়ে গেছে যদি নিয়ে আসা উচিত আরো দুটো গ্রামের মধ্যে জঙ্গলের পশ্চিমে থাকুন বিলটা মরেছে কিনা তারও খবর করে আসতে হবে ঘরের মানুষ এ সময় তাকে গ্রাম ছেড়ে যেতে বাধা দিয়েছিল কোথায় কি ঘটে বলা যায়না চারপাশে কাটাকাটি মারামারি চলছে স্ত্রী বাধা দিয়েছিল ওদের সঙ্গে আল্লাহ করার কি আছে আমাদের মানুষ যেখানে পায় তাদের এই কাটছে মারছে ওদের হাতে বন্দুক বারুদ মেশিনগান আছে একটা দুটো নয় হাজারে হাজারে জলন্ত আগুন নেভানো যায় না ওদের উকিল হাকিম নাকি বুদ্ধি দিয়েছে আমাদের মানুষকে মারার জন্য বাড়ি ছেড়ে তুমি কিন্তু দূরে যাবে না ছেলেমেয়েরা ফজলকে এই সময় বাড়ি থেকে না বেরোচ্ছে জোর করে বলেছিল ভজন মুখ ভেংচে বলেছিল তোদের আমাকে বুঝাতে হবে না তাড়িয়েছে যদি কে ছেড়েছি যোদি বিদেশিদের কেটেছে আমি কি বিদেশে দেখি বড় মেয়ে বলেছিল জেলেদের গ্রাম দেখি বিদেশে ছিল নাকি সেই গ্রামটা নাকি আমাদের চেয়েও পুরনো মুসলিমদের গ্রাম সে তার মানুষগুলি কেটে মেরে শেষ করেছে প্রতিটি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে কোথাও যেতে হবে না জলিলকে অবশ্য কেটেছে জেলের করে মাঝে মাঝে আসা-যাওয়া করতে উপদেশ দিয়েছিল ভিডিও জলিলকে খারাপ লাগেনি পরে সেও কাটা পড়ল এমন ভয় পাচ্ছিস আমাদের গ্রামে থাকা প্রতিটি মানুষ কতদিনের পুরনো সবাই জানে আমাদের ফেরদৌসি আলি হাই স্কুল পাতার সময় পঞ্চাশ বছরেরও বেশি হয়েছে আকরাম আলী আতা নিজের মাটি দিয়ে স্কুল ঘর সাজিয়ে দিয়েছিল তাতে কিবা সেখানে কি কেউ বাংলা পড়িয়েছে হাশিম বাজারের এই স্কুলটা ওরা যায়নি নাকি সেটাও কি আমাদের মানুষরাই তৈরি করা অসমের স্কুল ছিল না কবে সেই ক্ষতিতে স্থাপিত স্কুল বলল আমার জন্য আর তোদের চিন্তা করতে হবে না আজকে কালকে আমি ফিরে আসবো তোরা গ্রামের মানুষের কথা মত চলাফেরা করবে কোন বিপদ হলে অন্য মানুষ যা করে তার আওতায় করবে দুদিনের মাথায় ভজন ফিরে এসেছিল নিজের গ্রামে এসে কাউকে কাউকে পায়নি গ্রামটা নাই হয়ে গিয়েছিল ওদের ঘর বাড়ি কোথায় ছিল নির্ণয় করার চেষ্টা করল সে সমস্ত ঘর পুড়িয়ে একই রকমের কালো ছাই হয়ে গেছে বুড়ো মানুষ আর ছোট ছোট মেয়েরা ঘরগুলির সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ঘর পোড়া ছাই আর মানুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই সেই গুলি মারি এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এই জায়গাটা ছিল নারকেল গাছের পাতাগুলো সব ঝরে পড়ে গেছে আগুন বোধহয় অনেক উপরে উঠেছিল দুটো আম গাছ এবং সুপুরি গাছের পাতাগুলো জ্বলে গিয়েছে ঘরের উপরে উঠার জন্য তার খারাপ লাগলো কে কে আছে তার ছোট ছেলে মেয়ে দুটি পুড়ে গেছে শ বছরের মেয়েটি অবশ্য ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে উঠোনের সামনে পৌঁছে গিয়েছিল কোন একজন তাকে দু টুকরো করে ফেলে অন্য একজন ধড়ফড় করতে থাকা টুকরোটা টুকরোগুলি আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিলে হা হা করে হেসে অন্যকে কেটে ফেলার জন্য এগিয়ে গেল পরে শুনেছিলাম তার ছেলে মেয়ের ছায়া হতে পারে মা রাতে তার খারাপ লাগছিল বন্দুকধারী পুলিশ কয়েকজন কিছু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল ওরা সেগুলি পাহারা দিচ্ছে কৃষ্ণা পেয়েছিল খুব রোদ উঠেছে সে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পাতা পুড়ে যাওয়া একটা গাছের ছায়ায় বসলো আকাশে কয়েকটি শকুন আপন মনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল নদীর তীরে বাঁশ বনে কয়েকটা কাক চিৎকার করছিল ভিজে মাটি এবং ফেসবুক থেকে একটা গন্ধ বেরিয়ে আসছিল গুলিতে কোনরকম শক্তি ছিলনা হাতে বন্দুক পুলিশ কয়েকটি তার দিকে তাকিয়ে থেকে কিছু কথা বলছিল আর সিগারেট খাচ্ছিল ওদের কয়েকটা আধপোড়া গাছ বলে মনে হচ্ছিল তার কথা সে ঘুরে গিয়েছিল ক্ষুধার চেয়ে যেন ক্লান্তি বেশি লাগছিল তার গলা শুকিয়ে আসছিল রোধের জন্য সে ভাল করে চোখ দুটো বলতে পারছিল না দুটো পুলিশ তার দিকে এগিয়ে আসছিল ওদেরকে দেখে সে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল তার শুকনো গলা টা ভেজানোর জন্য সে একটু জল চাইল কিছুটা দূরে কয়েকজন মিলে খনন করা কুকুরটার দিকে তাকাল কিন্তু বেশ নিচে পুকুরের জল শুকিয়ে গেছে সে পুকুরের দিকে যেতে চাইছিল না বলল ওই পুকুরের জল খাস না তার মুখের দিকে তাকালো তার কথাটা সে বুঝতে পারেনি কয়েকজন মানুষ ক্রিকেটে সেই পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছিল লাশগুলি লাশ পচে গেলাস গুলি পৌঁছে গিয়েছে মানুষগুলি দায়ী ছিলেগে থাকা রক্ত সেই পুকুরের হয়েছিল পুকুরের পানি সব লাল হয়ে গিয়েছিল পুলিশ জনগণের কাছে কিছু করছে কথাগুলি ফজলের ভালো করে বুঝতে পারছি না বলে মনে হল আমার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে সে কোনমতে বলল পুলিশ তাকে কিছুটা দূর থেকে তাদেরকে নিয়ে গেল এবং টিউবলের জল খেতে দিলে সে একেক করে চার গ্লাস জল খেলো কেমন যেন একটা কাঁচা মাংসের গন্ধ রয়েছে বলে তার মনে হলো কাঁচা রক্ত শুকিয়ে গেলে যেরকম গন্ধ বের হয় তেমনি গন্ধ তার বমি পেতে লাগলো পুলিশ গুলি তার সমস্তখবর নিয়ে তাকে একটা রিলিফ ক্যাম্প এ পাঠিয়ে দিল গ্রামে যাওয়ার সময় পড়ে যাওয়া পোশাকের উপর আরো একটি লুঙ্গি একটি কুত্তা এবং একটি গেঞ্জি সে নিয়ে গিয়েছিল কাপড়গুলি এখন তার কাজে আসলো রিলিফ ক্যাম্প একটি কথায় তার বড় অস্বস্তি লেগেছিল ক্যাম্পের মানুষগুলি আলাদা আলাদা গ্রামের মানুষগুলি চুপচাপ থাকে খুব বেশি কথাবার্তা বলে না জেনে শুনে যেন কেউ কি কথা বলে কোন দল কেউ কান পেতে শুনে কারো কাছে গিয়ে নালিশ করবে লোকগুলি কাউকে বিশ্বাস করে না যেন সমস্ত কিছু সার্কাসের রিং মাস্টার একটু দূরে সরে গেলেই একে অপরের উপর ঝাপিয়ে পড়বে একই ধরনের ভাগ জল কোন স্বাদ নেই এভাবে প্রতিদিন লোকের রান্না একই রকমের ভাত তরকারি খাওয়াটা একটা শাস্তি কতটা ক্ষতি হলে তার হিসেব মনে মনে নেয় অন্যের সামনে বড় একটা বলেনা যেন আমার বাইরে আমাদের সবাইকে কেটে ফেলেছে বলে বলাটাও যেন একটা অপরাধ ক্যাম্পে থাকা মানুষগুলো যেন কোন দুঃখ নেই কোন কাজ কর্ম ছাড়া বসে শুয়ে থাকার ফজরের মত অনেকেরই খুব বিরক্ত বোধ হচ্ছিল এভাবে বসে থাকাটা একটা শাস্তি কোথায় ফিরে যেতে হবে সঠিক ভাবে না জেনে আর ফিরে গেলে কি অবস্থা হবে বড় বেশি চিন্তা না করে সবাইকে যত তাড়াতাড়ি পারেন মরে যাবার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল বন্দিশালা এক ঝাঁক তুফান এসেছিল মেঘের গর্জন ঘরবাড়ি গাছপালা নিমেষের মধ্যে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল অন্ধকারে কারো মুখ দেখা যাচ্ছিল না সেই অন্ধকারে মানুষগুলি কিছু একটা যুদ্ধ করছিল অনেক মানুষ মরেছিল কত কেউ বলতে পারে না নিজের নিজের গ্রামে ঘুরে গেলে হয়তো হিসেবে পাওয়া যাবে কারা কারা নাই হয়ে গেল এখানে রিলিপের হিসেব করে লাভ নেই সমস্ত গড়বড় হয়ে গেল সমস্ত ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল বেঁচে থাকা মনের মানুষ গুলি মরে গেল জীবন্ত গ্রামগুলি শ্মশান হয়ে গেল আকাশের মুখে কালো চাই জন্মদিনের উপরে উঠে গেল লোকগুলি নিজের নিজের জায়গায় ফিরে গেল কিছু লোক নিখোঁজ হয়েছে ক্যাম্পিয়ন এই হাসপাতালেই জঙ্গলে রয়েছে বলেও কোন খবর নেই স্বজনদের নিয়ে বাসায় এসে প্রোগ্রামের সীমান্তে থেমে গেল গ্রামে গরুগাড়ি আশা যাওয়া করতে পারছিল বড় বাস ট্রাক আসার মত রাস্তা ছিল না রাস্তাটার সংকীর্ণ উঁচু নয় বর্ষার সময় রাস্তার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায় গ্রামের সীমান্তে আকাশ সেতু টা পুড়ে গেছে এখনো তৈরি হয়নি বাস স্টপ থেমে গেল একেক করে এগারোটা মানুষ বাস থেকে নামল ফজল নামল তার বহু দূর থেকে কোনো এক দূরান্তের অপরিচিত জায়গা থেকে তারচেয়ে অপরিচিত একটি জায়গায় আসা বলে মনে হল বাসটা ওদেরকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল সজল চোখ দুটো বড় বড় করে চার পাশে তাকালো জায়গাটা তার একেবারে অপরিচিত বলে মনে হচ্ছে রোদের তাপ বড় বেশি মনে হচ্ছে চৈত্র মাসের রোগ পড়ে থাকা কুত্তাটা সে শরীর থেকে খুলে নিয়ে গাছের উপরে ফেলে রাখলো তার কাপড়ের ছোট প্রতি লিটার রিলিফের চাল ডালের পত্রিকা হাতে নিল এবং অন্য মানুষগুলির পেছনে পেছনে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল তার মনের মধ্যে নিজের গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে আসার কোনো আনন্দ কোনো উৎসাহ সে অনুভব করলো না বাতাসে আগের পরিচিত গন্ধটা নেই অন্য সময় এই চৈত্র মাসের ভোরবেলা বাতাসের মধ্যে একটি মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায় নদীর তীরের জঙ্গলে ফুলগুলো ফোটে গাছের পাতাগুলো থেকেও একটা কোমল গন্ধ ভেসে আসে একটু শুকনো শুকনো মনে হয় কাঁচা মাছের গন্ধ এসে ফজলের নাকে লাগলো কবরস্থানের গন্ধ এই ধরনের দুর্গন্ধ এর আগে জান্নাতে কোনোদিন লাগেনি নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যেন বন্ধ হয়ে যাওয়া যেন মনে হলো তার প্রোগ্রাম খেতে বেঁচে থাকা কিছু মানুষ ফিরে এসেছে বেশিরভাগ মানুষ কেঁদে ফেলেছে মহিলা এবং ছোট ছোট শিশুদের কেউ বাঁচল না কোলের এক মাসের শিশু থেকে কোলের এক মাসের শিশু দৌড়ে পালিয়ে যেতে না পারার ১০- ১২ বছরের ছেলেগুলি এবং বুড়ো-বুড়িদের প্রত্যেকটি কাটা হলো গায়ে শক্তি না থাকায় শক্তি থাকা যুবকরা এবং তাদের সামনে ২৪ টি মেয়ে এবং বউ কোনভাবে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেল কেউ কম আলোতে দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে নদীতে আসনের সেখানে বল্লম দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে মারা হয়েছে কিছু লোক হারিয়ে গেছো হারালো মানে নাই হয়ে গেল ওদের কাউকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না কোথাও যদি বেঁচে থাকে কোন খবর পাওয়া যায়নি ওদেরকে মৃত্যুর তালিকা ধরা হলো গ্রামটি একটি কবরস্থান যে সমস্ত মানুষকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে তাদের মুখে কথাবার্তা নেই এরাও যেন এক প্রকারের মৃত মানুষ জীবন্ত কিছু কঙ্কাল বসে থাকবে উঠে দাঁড়ায় হাটে পুজো পুজো হয় কিছু কিছু কথা বলে যদিও তাদের ঠোঁটগুলি কাঁপে না বাস থেকে নামা মানুষ গুলোর দিকে অন্য রিলিফ ক্যাম্প থেকে আগেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনা মানুষগুলি এভাবে চোখ আজ খুলে তাকায় যেন তারা এই মানুষগুলোকে চিনতেই পারছেনা ওদের দিকে এভাবে তাকায় মুখে কিছু বলল না ফজল কিছুটা গোয়ার প্রকৃতির মানুষ কম কথা বলে মানুষের সঙ্গে বসে গলায় গলায় ভাব করে ঘুরে বেড়ায় না গরু ছাগল কুকুর হাঁসগুলো স্ত্রী এবং ছেলে মেয়ে ওদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেশি অন্য না হলে ওঠার অভ্যাস থাকার জন্য বাড়ি থেকে সামনে থাকা মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে যায় বাড়িতে থাকলে সময় পেলে মগ্রিবের নামাজ পড়ে সারাদিন পড়ে থাকে পাট আলোর শেষে নিজের পরিবারকে প্রচলন করে বিপদে আপদে অন্যকে দোষ দিয়ে সাহায্য করেন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত