গুচ্ছকবিতা
সেদ্ধ শালুকের শরীর
বড্ড উজ্জ্বল সেই স্মৃতিময় সকাল
সেদ্ধ ধানের সাথে বেরিয়ে আসে কালো শালুকের শরীর
গরমভাপের মিহিন কুয়াশায় ভরে যায় গবরলেপা উঠোন
দুচারটে সেদ্ধ ধান দাঁতে দিতেই মোমের মতো নরম চাল–ভাত নয়
ক্রমাগত ফুৎকারে হাতের তালুতে জুড়িয়ে নেয়ার সময়টুকু যেন
দ্বাদশীর পারণকাল
বড্ড মায়াময় সেই দৃশ্য
কালো শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে সোনারঙ শালুক
যেন পাটালিগুড়ের দুধক্ষীর
একটা মোহনীয় নেশায় ভিজে যায় জিহ্বার পাটাতন ওপর-নিচ
ঠাকুরমার শতর্কবাণী ‘আর খাস না, আর খাস না’
গোটাপাঁচেক ইংলিশ প্যান্টের পকেটে পুড়েই ভোঁ দৌড়
সেদ্ধ ধানের সাথে সেদ্ধ শালুকের পকেট ভেদ করা উষ্ণতা
উরুর অনুভবের ইতিহাসে এখনো লেগে আছে, থাকবে অনন্তকাল
আঙুলে শাপের খেলা
পেন্সিলে উঁকি দিয়ে নেমে যায় ক্লান্ত-ধূসর হাত
রাবারে মুছে যায় শনাক্তকরণ রেখা
নর্তকীরা এখনও রাতের প্রেমে একা
আঁধারেরা আয়নায় খুঁজে ফেরে চিরুনির আয়ু
সকালে দিন শুরু হবে, এইভেবে কে যেন হয় উবু!
ফসিলের লজ্জা ভেঙে হেঁটে বেড়াও প্রেমিক?
ম্যাচবাক্সের কাঠিগুলো তবুও দিগ্বিদিক
লেট নাইট শো’র সাবটাইটেলে ভেসে ওঠে রক্তমাখালিপি
কোথাও যেন যাওয়ার নেই; শেষবেলায় প্রশ্রয়হীন ঘুম
রঙিন কাগজের ঝালরে হাসে ভাঙা মাস্তুলের মেলা
বসুন্ধরা শূন্য হলে হবে লালনীল আঙুলে শাপের খেলা
সিনেমার দৃশ্যে আর কিছুই করার থাকবে না
হৃদয়ের কাছাকাছি রিফ্লেক্টর ধরো
বাউন্স করে আলো ঢুকে যাক গহীনে; যতোটা সম্ভব
তারপর বাড়িয়ে দিও সোলারের ক্ষমতা
ভীষণ তাড়া মেকআপ আর্টিস্টের!
নবীন পার্শ্ব অভিনেত্রী তার সাথে নিরালায় যাবে
রোদ চশমায় ঢেকে যাবে দুজনের বুকের কষ্ট
ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে চেয়ারে চিৎ হয়ে থাক
ব্যর্থ জনমের জনপ্রিয় প্রোডিউসার
ভীষণরকম মেদক্লান্ত শরীর তার
গ্রিনরুমের অপেক্ষ্যমান আয়নাগুলোও ভালো নেই
ঘামে ভেজা কপালের দুশ্চিন্তায়
তবুও জ্বলছে টাংস্টেন বাল্বের পুরনো সিরিজ
সিরিয়াসমুডের ফোকাসপুলার হুপিংকাশি আক্রান্ত
ক্যামেরা রোলিং হলেই কেল্লাফতে
কাশির নয়েজে ভরে যাবে ফ্রেমের পর ফ্রেম
কিংবা প্যাক-আপ!
প্রোডাকশনবয়ের থ্রি-কোয়ার্টারের ফোল্ডিংয়েই মূল শক্তি
নাস্তা-পানি-চা-সিগারেট-বিরিয়ানি-কোল্ড ড্রিংকস
আরো যতো প্রকার হুকুম সম্ভব
ডিরেক্টরের সাথে আজও আমার দেখা হলো না
আমারে দিয়ে সে অভিনয় করায় রেডক্যামেরার সামনে
ওওওওওও ডিরেক্টর সাহেব!
একটা নাচের দৃশ্য দাও, সখিদের সাথে সাথে আমিও নাচি
সমবেত করতালি নিয়ে স্বর্গে যাবো, একা
তারপর সিনেমার দৃশ্যে আর কিছুই করার থাকবে না আমার

কবি
জন্ম ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪, সাঁথিয়া, পাবনা, বাংলাদেশ। কবি, কথাসাহিত্যিক, আলোকচিত্রী ও আইনকর্মী।
পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর। এমবিএ করেছেন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (এইচ.আর.এম) (প্রথম মেজর) এবং মার্কেটিং (দ্বিতীয় মেজর) বিষয়ে। আইনবিজ্ঞানে স্নাতক (এলএল.বি) ও স্নাতকোত্তর (এলএল.এম)। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে বর্তমানের একাডেমিক ব্যস্ততা। পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর করার সময় অসামান্য ফলাফলের কারণে অর্জন করেছেন উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ড অ্যাওয়ার্ড এবং সর্বোচ্চ একাডেমিক সম্মান The Summa Cum Laude অ্যাওয়ার্ড। ফটোগ্রাফিতে বেসিক, ফাউন্ডেশন ও ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি ফটোগ্রাফি বিষয়ে বহু উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বিভিন্ন সময় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। প্রতিনিয়ত বর্ণিল কর্ম-অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে নিজেকে তিনি করে তুলেছেন অনন্য। বর্তমানে বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি)-এর মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগে কর্মরত। সৃজনশীল কাজগুলো সবসময় তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। সেই তাড়ণ থেকে লিখে চলেছেন কবিতা-গল্প-উপন্যাস-গান। সম্পাদনা করছেন শিল্প ও সাহিত্যের কাগজ ‘সমরাত্রদিন’। আইন বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে ও সহযোগিতা করতে পরিচালনা করছেন স্বেচ্ছাশ্রম প্ল্যাটফর্ম ‘ইভোকেটিভ লিগ্যাল সার্ভিসেস’।
লেখকের প্রকাশিত বইয়ের তালিকায় রয়েছে :
প্রায়ান্ধকারের ফুটনোট (কথাকবিতা)
প্রায়শ্চিত্তের অর্কেস্ট্রা (গল্পগ্রন্থ)
স্বীকৃতিহীন অপরাজিতা (উপন্যাস)
দেবতার সাথে ছলচাতুরী (উপন্যাস)
নিঃশব্দে অপরাহ্ণের মৃত্যু (উপন্যাস)
ভূত ও গোয়েন্দা মুখোমুখি (থ্রিলার উপন্যাস)
অথচ আছি নিখোঁজের বেশে (কবিতা)
দৈবযোগে বেঁচে আছি (কবিতা)
অজানা (কবিতা)
সুবর্ণ জন্মজয়ন্তী : সুব্রত কুমার দাস (সম্পাদনা)
মাহফুজা খানম সম্মাননা গ্রন্থ (যৌথ সম্পাদনা)
E-mail : [email protected]