বর্ষবরণের দিনটি বিভিন্ন দেশীয় খাবার থাকে আমাদের আয়োজনে। ভোরবেলা নানারকম ভর্তা আর মাছ ভাজা দিয়ে পান্তা খাওয়া, সেইসঙ্গে নানা মিষ্টান্ন, মুড়ি-মুড়কি, নাড়ু তো রয়েছেই। অন্যান্য উৎসবের মতোই এই দিনটিতেও নতুন পোশাক পরার, ব্যতিক্রম খাবারের আয়োজন করার ট্রেন্ড গড়ে উঠছে। চলুন জেনে নেয়া যাক বৈশাখে কেমন খাবার খাবেন, কিভাবে খাবার ঘর সাজাবেন-
কেমন হবে বৈশাখের খাবার
বৈশাখে হরেকরকম ভর্তা আর মাছ ভাজা দিয়ে পান্তার পাশাপাশি কাঁচা আমের জুস, মাঠা, লাচ্ছি, বাঙ্গির শরবত, তরমুজের জুস খেতে পারেন। এই জাতীয় তরল দেহের তরলের চাহিদা মেটায়। দইয়ের লাচ্ছি বা মাঠা তারল্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেহে ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।
বৈশাখে নানারকম মিষ্টি খাবার খাওয়া হয়। সেমাই, গুড়ের পায়েস, দই, ছানা, মণ্ডা, রসগোল্লা ইত্যাদি বৈশাখের মিষ্টান্ন। বৈশাখের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর মিষ্টান্ন হলো মৌসুমি রসালো ফল তরমুজ, বাঙ্গি, আনারস ইত্যাদি। ডেজার্ট হিসেবে ফল বেশ স্বাস্থ্যসম্মত।
বাইরের খোলা খাবার, বাইরের জুস, কোমল পানীয়, কড়া চা ও কফি, আইসক্রিম ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত। বাইরের জুসে যে পানি মেশানো হয়, তা থেকে অনেক পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা থাকে। বাইরের আচার, চাটনি, মুরালি ইত্যাদিতে অনেক রঙের ব্যবহার হয়। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
খাবার ঘরের সাজ
নববর্ষে খাবার টেবিলেও থাকা চাই দেশীয় আমেজ। সেক্ষেত্রে খাবার পরিবেশনে মাটির বাসনের বিকল্প কিছু নেই। মাটির থালা, বাটি, গ্লাস, জগ ইত্যাদি দিয়ে খাবার পরিবেশনের সুবিধামতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন খাবার টেবিলটি। টেবিলের মাঝখানে মাটির পাত্রে রাখুন তাজা ফুল। ন্যাপকিনগুলোকে কোণাকৃতিতে ভাঁজ করে রাখুন প্লেটের সামনে।
বিকেলবেলায় হালকা খাবার পরিবেশনের সঙ্গে খাবার টেবিলের সজ্জাটা হতে পারে অন্য রকম। সেক্ষেত্রে আদিবাসী থিম ধরে সাজাতে পারেন খাবার টেবিলটি। টেবিলক্লথ হিসেবে বিছিয়ে দিন নীল-কালো রঙের সমন্বয়ের থামি। এর ওপরে রানার হিসেবে রাখুন রেশমি সুতার আদিবাসীদের হাতে বোনা ওড়না।
আদিবাসীদের তৈরি বাসনকোসনে বিকেলে পরিবেশন করুন খই, মুড়ি, বাতাসা, নিমকিসহ দেশীয় মুখরোচক খাবার। পানি রাখার জন্য লাউয়ের তৈরি বিশেষ ডিজাইনের জগ ব্যবহার করতে পারেন।
নারিকেলের মালা দিয়ে তৈরি বাঁশের ট্রেতে একটি মালায় রাখুন তাজা কিছু ফুল, অপর মালায় রাখুন মোমের ছোট ছোট শোপিস। গোধূলির মায়াবি আলোয় দেখুন না কেমন জমে উঠেছে পয়লা বৈশাখের বিকেলের এই আনন্দ আয়োজন।
দুটি রেসিপি:
সবজির আচারি খিচুড়ি
উপকরণ: তেল ১/২ কাপ, রসুন কুঁচি ৩ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুঁচি ৩ টেবিল চামচ, শুকনো মরিচ ৪-৫ টি, পাঁচ ফোড়ন ১ টেবিল চামচ (আস্ত), হলুদ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, পানি(সামান্য), লবণ স্বাদমতো, পেঁপে ১/২ কাপ (কিউব করে কাটা), বরবটি ১/২ কাপ, গাজর ১/২ কাপ (কিউব করে কাটা), ফুলকপি ১/২ কাপ, নাজিরশাইল চাল ১/২ কেজি, ডাল ১ কাপ, টক মিষ্টি আমের আঁচার ১ কাপ।
প্রণালি: প্রথমে তেল গরম করে রসুন কুঁচি, পেঁয়াজ কুঁচি, শুকনো মরিচ, পাঁচ ফোড়ন দিয়ে বাদামি করে ভেঁজে নিতে হবে। এবার হলুদ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, আদা বাটা ও সামান্য পানি দিয়ে মশলা ভালোমত কষিয়ে স্বাদমতো লবণ দিয়ে দিতে হবে। এরপর পেঁপে, বরবটি, গাজর, ফুলকপি দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করে নিতে হবে। এরপর আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে রাখা নাজিরশাইল চাল, ডাল দিয়ে ভালো মতো কষিয়ে এবং পরিমান মতো পানি দিয়ে ২০ মিনিট ঢেকে দিয়ে ভালোভাবে রান্না করে নিতে হবে। রান্না হয়ে গেলে টক মিষ্টি আমের আঁচার দিয়ে পুরো খিচুড়িটি ভালোভাবে নেড়ে মিলিয়ে নিলেই হয়ে যাবে মজাদার সবজির আচারি খিচুড়ি।
কাচকি মাছ ভর্তা
উপকরণ: কাচকি মাছ এক কাপ, পেঁয়াজ কুঁচি ১ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ২ চা চামচ, কাঁচামরিচ ৪টি, ধনেপাতা কুঁচি ১ টেবিল চামচ, লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: কাচকি মাছ ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন। কাচকি মাছ, পেঁয়াজ কুঁচি, রসুন কুঁচি, কাঁচামরিচ অল্প তেলে কড়াইতে হালকাভাবে ভাজুন। ভাজা হলে লবণ ও ধনেপাতা দিয়ে পাটায় বেটে ভর্তা তৈরি করুন।