নরক গুলজারে বাজছে মেহেদী হাসান
তানহিম আহমেদ
প্রকাশক : বৈভব
প্রচ্ছদ : রাজীব দত্ত
প্রকাশকাল : ২০২৫
অমর একুশে বইমেলা।
আমরা তিন
২.
তুমিও যাচ্ছো চলে – মেট্রোর গতিতে
পিতাপুত্রের অংকের মতো সরলতর হচ্ছো
বয়েসের সাথে সাথে
তোমার পারফিউমের কৌটায় বাড়ন্ত গোলাপের সুঘ্রাণ
সবুজ শাসিত তল্লাটের টিয়াঠুঁটি আমেদের
তরঙ্গের মতোই মলিন;
সমস্তকিছু উপেক্ষা করে তুমি যাচ্ছো চলে, বৃষ্টিলীন।
তোমার যাওয়ার স্তুতি করবে গল্পগাছা কবির দল
উপমান ও উপমেয়ে
তুমি বনে যাবে ঘাসফড়িঙেদের স্যাঙর…
নারী নয়,
পৃথিবীরে তখন মনে হবে পুরুষ নদীর ‘পরের পাটক্ষেত
শে যখন –
তোমার প্রস্থানের ক্লিশে
জীবনানন্দীয় উপমায় – মুহুর্মুহু বোমায় ছারখার…
৩.
তিনটি যুবক সরে গেলো মধু ও দুধের বনে
চতুর্থটির ছায়ায় ঢাকা পড়েছে নটীদের আত্মহত্যার রটনা
অথচ আমি কবেই হজম করে ফেলেছি অপ্রেমের ফিলোজফি…
তিনটি ছায়া সরে গেলো হরমোনদাসী বয়ঃসন্ধির নদীতে
চতুর্থটি বহুদূরে কাঁপছে, কাঁপছে শুঁড়িখানার পাশে কালভার্টের কোণে
অথচ আমি বসে বসে লিখছি ওদের জন্য পোড়ামুখো এলিজি
তিনটি কালভার্ট হঠাৎ সরে গেলো স্বর্গের দেউড়িতে
চতুর্থটি কাঁদছে, শে হরবোলায় উবে যাবে হারিকিরি, হারিকিরি ধ্বনি
অথচ আমি মালা গাঁথছি মরণের জন্য, তোমায় করছি খারিজ…
তিনটি কান্না সরে গেলো বাউরি সঙেদের সাজঘরে
চতুর্থটি অস্ফুট বলছে সহজ, সহজ…বাঙময় চাহনির চোরাস্রোত…
অথচ আমি অবলীলায় খেয়ে ফেলছি আস্ত একটা জীবন!
৭.
পিঁপড়াদের কলোনি ভেঙে পড়ে
ভেঙে পড়ে সমস্ত এলগরিদম…বিজ্ঞাপন মুহুর্মুহু…
আরেকটু এগুলেই দেখা পাবো শৈশব উত্তীর্ণ
হানিট্র্যাপড পতঙ্গদের
দেখা পাবো হয়তো
অ-থেকে তেড়ে আসা অজগরের;
পেয়ে যাবো ছেঁড়া চিঠিগুলোর অংশবিশেষ
পেয়ে যাবো মধুকূপী ঘাসের ঠিকানা…
আমি সে জ্যোতিষী যে পড়তে পারে না
নিজেরই হস্তরেখা –
ওদের কিভাবে জোড়া লাগাবো আমি, বলো?
ভেঙে পড়ে অজস্র ফিসফাস, কানাকানি…
ভেঙে পড়ে নক্ষত্রদের সন্ধি—অগোচরেই…
নক্ষত্রের জাদুঘর
আমাকে আবিষ্কার করো
তোমার মায়োপিক চোখের ক্যারিশমায়
ফ্যাকাসে লালিমার ভেল্কিতে
মধুবন্তী রাগের সুষমায়—নক্ষত্রের
রূপালি জাদুঘরে
মহাকাশে একটি তরঙ্গরেখার মতো আমি ভীষণ একা
আমাকে আবিষ্কার করো!
আমাকে আবিষ্কার করো তবে
দড়িছুট গাভীর বিকেল
রামধনু
অগণন মেঘমল্লারে
হুডউইংকের আঘাতে ফেরা প্রত্যাখাত ফুটবলের মতো
ক্লাশ ক্যান্সেলের আনন্দ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি
বোকাবালকের বিস্ময়বোধ কাঁধে তুলে
অভিধানের পাতায় চাপা পড়া শব্দের মতো
আবিষ্কার করো আমাকে – প্রাচীন, ব্রাত্য, হিমায়িত –
বহুগামী লিরিকের বাইপাস ধরে
ঢুঁ মেরেছি আইরোনিক্যালি
তোমার অন্দরমহলে
নিমপাতা ধোয়া বৃষ্টিতে কেউ সেরে নিচ্ছে
শেষ স্নানপর্ব – এরপরই মাগরেব অভিমুখে অনন্ত যাত্রা
চেপে আছে কিছু প্রবল “আমিত্ব” – বেতালের মতো
প্রতিটি ফ্ল্যাশে প্রতিটি চিৎকারে
আমাকে আবিষ্কার করো বহুত্ববাদী পুস্তকের মোড়কে…
বারুদ
ওহ্, বুক পকেটে গোঁজা টিকিট গেছে ভিজে!
তালা ঝুলছে সিনেমা হলে – বন্ধ্যা হৃদয়ের আঙিনা –
এসব
বাওজুদ আপনি বসে আছেন পুকুরের কিনারাতে
পকেটে আয়ুখসা টিকেট… থ্রিডি ভিউয়ে
ধারণ করা আইরোনিক সন্ধ্যা –
জখমী বাঘের পিঠের মতোই বর্ণিল যার শোভা…
আপনি টলমল জলে ঢিল ছুড়ছেন অনবরত
জলের বুকে কম্পন ছড়িয়ে পড়ছে
নিটোল পয়ারের ছন্দে মৃদু
আপনি খুব সম্ভবত জলাবর্তে ধরাশায়ী হয়ে গেছেন…
সিৎজোফ্রেনিক থ্রিকালের থ্রিডি মুডে বন্দী…
বারুদে আগুন ধরে যাচ্ছে ক্রমশ আর
আপনি উসখুস করছেন
বেরিয়ে যেতে দৃশ্যটা থেকে
কিন্তু কেউ আবেদন করে বসতেছে “হাও ওয়াজ দ্যাট!”
নট আউট আপনি তথাপি
আরও জড়িয়ে পড়তেছেন জলের দঙ্গলে
এসব
বাওজুদ মুহূর্তেই আপডেট করছেন ফেইসবুক স্ট্যাটাস
এবং কুটিকুটি করে ফেলছেন আপনার
রমণেচ্ছা, এ্যাড্রেনালিনের রাশ…
হামিংবার্ড
তারাপীঠে আমি যাই নাই কোনোদিন
বাঁধিনি লাল ফিতা মাজার আঙিনায়
চুরি করিনি হামিংবার্ডের ছানা সংগোপনে…
তবু হায়, অজ্ঞেয়বাদী অনুরাগ,
মৃত বন্ধুর স্মৃতির মতো পোড়াবে কতকাল আমাকে?
তারাপীঠ আমি গিয়েছি কখনও বা যাইনি বহুকাল
আমার যমজের শবের পাশে
যেখানে ছড়ানো বার্ড ফুডের গুঁড়ো…
শে শুয়ে আছে খণ্ডবিখণ্ড, আছে ওসিরিসের
মতো পাতালপুরীতে, নীরব
শে একা নয়, সঙ্গে রয়েছে মুমূর্ষু সিডেটিভ
সঙ্গে রয়েছে হারানো সবুজ ফ্রকের টুকরো…
মাজারের আঙিনায় রাখিনি কোন চিহ্ন আজও
তথাপি
জীর্ণ অজপাড়াগাঁয়ের মাজারে যাওয়া দরকার আমার
পদধূলি নেয়া দরকার তারাপীঠের সে বটের…
যেই আমাকে হত্যা করেছে ওরা
অর্থাৎ প্রেমিকাগণ, মিত্র ও মর্ষকামী স্বজনেরা
তার সদগতির জন্য একটু যজ্ঞাদি না করলেই নয়
বেঁধে না আসলেই নয় সস্তা লাল সুতা
হে… হে, আধুলি, সিকি, পয়সার মতো খুচরা
কবিতার দশক!
বহুবচন
একাকী রূপকথার লোরি
তন্দ্রাচ্ছন্ন করে রাখে তোমাকে অনন্তকাল
শেষতক সমস্ত আহাজারি ফুরোয়
সমস্ত কলহাস্য থমকে দাঁড়ায় একবচনে, বিব্রত
উপরে ঠ্যাঙ তুলে হাসেন ঈশ্বর এক হতচ্ছাড়া
পিগমী উচাটনগুলি ঘুরঘুর করে
মাঝরাতের লাল-নীল সাকুরার বাইরে…
আমি সবকিছুই লিখে ফেলি নিখাদ একবচনে
হাইবিপি – টেনশন – উষ্মা – হিউমার
হিল ট্র্যাকিঙের স্মৃতি
তপ্ত পদব্রজ…
আভিনাধিক ক্রমে টুকে রাখি জ্যান্ত অপমানগুলি
যেন তারা
বেখাপ্পা না হয়ে পড়ে পাঁচতারকা রেস্তোরার আলেয়ায়
অথচ মুহূর্তেই বহুবচনে পরিণত হয় ওরা
সিঁদ কেটে রিডিরেক্টড হয়ে যায় তোমাদের নিউজফিডে
আমার একবচন ক্লান্তি
তোমাদের ট্রিগারড করে নিঠুর বহুবচনে… চমকায়…
মৈত্রী ও সঙ্ঘের মধ্যে পোরা আছে
কতোশতো সোনাদানা
তুমি তো তার হুদিশ জানো না…
প্রতিষ্ঠানের চাদরে স্রেফ মুড়ে রাখো নিজের কঙ্কাল!
মৃত আত্মীয়স্বজনের নিঃশ্বাসে ভারী হয়ে আছে ঘর
বাইরে এসো, রাস্তায়, বেন্সনে হবে কথা…
তাদের শ্রুতিলিখন হবে বহুবচনে…
কেননা বেদনা সর্বজনীন
আ ম রা
চিত্রকলার ইতিহাসে ভুলে যাবো পরস্পরের জন্মদিন!
কবি
জন্ম ২০০৩ সালের ৩ রা এপ্রিল ঢাকার অদূরে বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যয়ন করছেন।