বইমেলা ২০২০
মধ্যপ্রাচ্যের কবি মারাম–আল–মাসরি আজ নির্বাসিত। তাঁর কবিতাগুলিকে খুঁজে খুঁজে অনুবাদক নন্দিনী সেনগুপ্ত দুই মলাটে আবদ্ধ করে আমাদের উপহার দিয়েছেন। বইটির নজরকাড়া প্রচ্ছদটি র কৃতিত্ত্বেও নন্দিনী। প্রচ্ছদের দিকে তাকালেই বোঝা যায় শৃঙ্খলিত মেয়ে পুতুলের করুণ কাহিনীগুলিই হয়ত কবিতায় ধরা আছে। মারামের এইসব কবিতাগুলির মধ্যে অনেকগুলিই নাকি তাঁর মাতৃভূমি সিরিয়ায় অশ্লীল বলে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নন্দিনীর বাংলায় অনুবাদগুলি এতোই হৃদয়স্পর্শী যে বুকের মধ্যে থেকে কান্না উঠে এসে গলার কাছে দলা পাকিয়ে মাঝেমাঝেই বইখানি বন্ধ করতে বলে। মনে হয় একটু কেঁদে নিই সেই মেয়েগুলির জন্যে। আবারো খুলে বসতে হয় লেখার মায়ায়, ভাষার টানে। নারী এবং শিশুরা যে যুগে যুগে স্থান, কাল, পাত্র ভেদে কতটা অবলা, কতটা অসহায় আবারো উঠে আসে সেই অনুভূতি। এই কারণেই বুঝি নন্দিনী প্রাণিত হয়ে কাজটি তে হাত দিয়েছেন। যেখানেই থাকুন মারাম–আল্–মাসরি তাঁর সুস্থতা এবং সার্বিক মঙ্গল কামনা করি আর নন্দিনীর মিঠে অনুবাদ সাহিত্য বেঁচে থাকুক। বইটিতে মোট একশো ষোলটি ছোটো ছোটো কবিতা রয়েছে। জটিল বিষয়গুলি মনস্তাত্ত্বিক আলো ফেলে সহজ করেছেন অনুবাদক। যুদ্ধ কি থামবে না তবে? নারীর কি মুক্তি হবে আদৌ অথবা শান্তি কি আজন্মকাল অধরাই থেকে যাবে সেই সব উত্তরগুলো আমরা খুঁজতে থাকি এই কবিতাগুলির মধ্যে। মারামও ভেবেছেন, খুঁজেছেন সেই অজানা উত্তর। নন্দিনীও তাঁর সুললিত মাতৃভাষায় পাঠকের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দিয়েছেন সেইসব ভাবনা। তাঁর বিস্তীর্ণ কবিতা বীথির দুধারে ছড়ানো রইল সেই ভাবনার খোলাখাতা। অদূর ভবিষ্যতে হয়ত আমরাও সেই খাতার পাতা সরিয়ে বড্ড মনকেমন করা বহু প্রতীক্ষিত শান্তির শব্দকণা খুঁজে পাব।
“আমি শূন্যতার ভিতরে পাক খাই, বিছানার শীতলতায়, স্বপ্নের একাকীত্বে” কিম্বা
” আমরা এখন নির্বাসিত, বাঁচতে কিছু পেইন কিলার লাগে,
দেশকে এখন দেখি ফেসবুকে। তবুও তো একটু আকাশ জাগে“
…
” আমরা যারা নির্বাসিত আজ জানিনা তো কোথায় মরে যাবো।
দেশকে ভালোবাসার অপরাধে, মরতে হয়… এটা তুচ্ছ খবর। “
অথবা স্বাধীনতার সন্ততিরা কলা কিম্বা স্ট্রবেরির স্বাদ জানেনা, ওরা শুকনো রুটি খায় ধৈর্যের জলে ভিজিয়ে ” এমন সব বাক্য পড়তে পড়তে রোমকূপে শিহরণ জাগে।
এমন সব কবিতার লাইনগুলি মর্মস্পর্শী। অনেক দিন মনের মণিকোঠায় ধরে রাখা থাকবে। আরও অনুবাদ করুন নন্দিনী !
শান্তি অন্তরিন
মূল রচনা– মারাম–আল–মাসরি
অনুবাদ– নন্দিনী সেনগুপ্ত
প্রিয়শিল্প প্রকাশন
মূল্য– ১২০ টাকা
উত্তর কলকাতায় জন্ম। রসায়নে মাস্টার্স রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে। বিবাহ সূত্রে বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। আদ্যোপান্ত হোমমেকার। এক দশকের বেশী তাঁর লেখক জীবন। বিজ্ঞানের ছাত্রী হয়েও সাহিত্য চর্চায় নিমগ্ন। প্রথম গল্প দেশ পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাস সানন্দা পুজোসংখ্যায়। এছাড়াও সব নামীদামী বাণিজ্যিক পত্রিকায় লিখে চলেছেন ভ্রমণকাহিনী, রম্যরচনা, ছোটোগল্প, প্রবন্ধ এবং ফিচার। প্রিন্ট এবং ডিজিটাল উভয়েই লেখেন। এ যাবত প্রকাশিত উপন্যাস ৫ টি। প্রকাশিত গদ্যের বই ৭ টি। উল্লেখযোগ্য হল উপন্যাস কলাবতী কথা ( আনন্দ পাবলিশার্স) উপন্যাস ত্রিধারা ( ধানসিড়ি) কিশোর গল্প সংকলন চিন্তামণির থটশপ ( ধানসিড়ি) রম্যরচনা – স্বর্গীয় রমণীয় ( একুশ শতক) ভ্রমণকাহিনী – চরৈবেতি ( সৃষ্টিসুখ) ২০২০ তে প্রকাশিত দুটি নভেলা- কসমিক পুরাণ – (রবিপ্রকাশ) এবং কিংবদন্তীর হেঁশেল- (ধানসিড়ি)।অবসর যাপনের আরও একটি ঠেক হল গান এবং রান্নাবাটি ।