বইমেলা ২০২০
’বহুদিন ব্যাকফুটে এসে’ কবি সাজ্জাদ সাঈফের নতুন কবিতার বই আসছে। পান্ডুলিপি থেকে তিনটি কবিতা রইলো।
প্রেমের কবিতা
ভিড় থেকে রোদ ছিটকে বেরিয়ে আসে, দেখে মনে হয় মরিচাবাতির ঝার; এই ভেবে ভেবে তোমারও তন্দ্রা পায়?
মরিচা বাতির গহন-শৈশব থেকে, দেয়ালে দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে সহপাঠীদের জোকস!
উজান-ব্যাকুলহাওয়া, ছুঁড়ে দেয় নোঙর-পঠিত মেঘ, মৃদুল সাঁতার;
আর, ডুব-তরঙ্গে ডুবছেনদী-বিস্মিত মেঘ দেখে সরে আসে ঢেউ;
যেনো, গানের ভঙিমা এসেপাঁজরে পিছল খেয়ে, স্নায়ু জুড়ে মেঘলা সেতার!
আর কি-যে ফিরে চাও তুমি গানের খাতায়?
স্নান পেয়ে আধুলির মতো জল,নাকি জলের কবিতা এসে দোদুল্যমান
তোমার শরীরে?
সুইসাইড নোট
(অকালপ্রয়াত কবি শামিম কবির ও মুনিরা চৌধুরির বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধায়)
যেভাবে ডিপ্রেশন এসে হাড়ের গলিতে বসে প্রাণায়াম করে, ঝারবাতিগুলি জ্বলে ওঠে
সন্ধ্যায়, সে-রকম সান্নিধ্য চাই তোমার-যেনো ভোর হবার আগেই দেশলাই বাকশোর মতো
ছোট পরিসরে জায়গা দিতে পারি সবগুলিভাবনাকে; শিশুকন্যাকে হাত ধরে রাস্তা পার করে এসে
যেনো ফিরে যেতে পারি বাগানেরটগরফুলে, আর, যেমন ঘন হয়ে বসে আছে কবুতরগুলি, তেমন করে
নিজেরই ঘনিষ্ঠ হতে পারি আর একটিবার!
জানি, মৃত্যুকাল নিয়ে তুমি ভাবো, জামগাছটার নিচে বসে এ-বছর বৃষ্টি হওয়া দেখবো দুজনে;
আর, তোমার আঁচল থেকে এক এক করে সরিয়ে দিবো আশংকার মেঘ, চিলেকোঠার ঘরে এসে
কবিতা শোনাবো উদ্বেগের।একটা লাল স্যুটকেসে, নিজেকে লুকিয়ে রেখে ঘাবড়ে দেবো তোমায়
এক এক দিন, মা তো এলেন না, তুমিই বরং শ্রোতা হয়ে সইতে থাকবে হতাশা আমার-
ও আমার পুরনো বন্ধু, আমাকে বোঝে, ধীরে ধীরে কব্জা করে ফেলে মগজের স্টেম সেল
হয়তো ভালোবাসে তাই প্রেমভাব নিয়ে, ছাতা মেলে ধরে বৃষ্টি এলে;হাড়ে হাড়ে
ঘড়ির কাঁটার মতো শব্দ করে আগায়, ডিগবাজি দেয়, কটুবাক্যে শাসন করে আজকাল!
আর, একটা ঝকঝকে ব্লেড হাতে নিয়ে আমি আয়নার সামনে দাঁড়াই, নথফুলে তোমায়
কতোটা সুন্দর লাগে ভেবে ঘামতে থাকি!
আর ভাবতে থাকি, কাফনে মোড়ানো আমাকে ঠিকঠাক দেখতে পাবে নাকি? চোখ ঝাপসা হয়ে যাবে না?
সারাদিন প্রশ্নের মতো, পশুপালনের মতো
আমার কোনো বাদ্য ছিলো না নিজের
ফটিকছড়ি কিংবা নিমাই পাহাড়, কোনোটাই ছিলো না আমার;
অল্প আঁচে জ্বাল হচ্ছে চা, পিছনে হরগঙ্গাপুর-
নিস্তরঙ্গ থাকার মানে ছুটি, বিকাল ছেড়ে অন্ধকারের পথে, রওনা হবে সূর্যালোকের কুঁচি!
পশুপালনের মতো, অনেক দূরের চরগুলিতে ঘুরতে যাচ্ছে হৃদয়, কুয়া খুঁড়ে
পানি তুলছে কেউ, সামনেই ঘুঘু-ডাক, ঘরগুলি ছনে বাঁধা;
সারাদিন প্রশ্নের মতো, মেঘেদের আসা আর যাওয়া, স্বরভঙ্গ লাগে;
গমের ক্ষেতে লুকিয়ে পড়ছে শেয়াল!
যেনো প্রচন্ড রাতে নোঙর আটকাচ্ছে মাটি, একটি মাত্র শব্দের মতো
একান্ত, যেনোক্ষরণ আসে, চিরদিন স্তব্ধতাকে ভেঙে দিয়ে!
এর নাম রেখেছি আবেগ, লুকায় মনস্তাপ। ঘূর্ণি থেকে পৃথক হচ্ছে হাওয়া-
অনেকটা দূর এগিয়ে গিয়েছে ঘাস, কোথাও তৃণভোজন মানায়, কোথাও উপাসনা কল্পনা করছে
কেউ; অনেকটা দূর সামনে এসেও, পিছন ফিরে জোৎস্নাকে দেখে মানুষ। ঘূর্ণি থেকে পৃথক।
যতোদিন পায়ে হাঁটাহাঁটি আছে, ফুরাবে কুয়াশা, স্বপ্নকে ভিতর-ঘরে ডেকে!
প্রচ্ছদ- নির্ঝর নৈঃশব্দ্য
প্রকাশক- বুকিশ পাবলিকেশন্স, ঢাকা
প্রকাশিতব্য- একুশে বইমেলা, বাংলা একাডেমী, ঢাকা।