বর্জ্য নামতাঃ দাগ আর্ট স্টেশন এর একটি শিল্প প্রদর্শনী
শহরের শেষ পাখিটি চলে যাবার আগে, নদীটি মরে যাবার আগে, শিশুর ফুসফুসটি ফুটো হবার আগে, গাছগুলো সব উধাও হবার আগেই……
ভোগ, বর্জ্য, শহর নিয়ে দাগ স্টেশনের এই ভাবনা থেকেই দাগ স্টেশন আয়োজন করেছে বর্জ্য নামতা।
সামাজিক সর্ম্পকের তাড়না থেকেই গড়ে উঠেছিল সমমনা আঁকিয়ে-ভাস্করসহ সকল শাখার ভিজুয়াল আর্টিস্টদের নিয়ে এক শিল্পী সংঘ-দাগ আর্ট স্টেশন। যার যাত্রা শুরু হয়েছিল গত বছর ২০১৮ সালের ১৩ ইজুলাই, নারায়ণগঞ্জ থেকে। আলী আহাম্মদ পৌর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে উন্মুক্ত শিল্পকলা প্রদর্শনীর মাধ্যমে।
আয়োজকরা বলছেন, অনেক মানুষের ভিড়ে একা না হতে চেয়ে, সকলের সাথে বিনিময় করতে চাইছি আমাদের শিল্প চিন্তা। প্রতি শুক্রবার বিকাল থেকে রাত ৯টা র্পযন্ত চলছে শিল্পকর্মের সাপ্তাহিক মুক্ত প্রদর্শনী ও বিক্রয়। স্বল্প মূল্যে শিল্পকর্ম বিক্রয়ের নীতিতে দাগ আর্টস্টেশন সব সময় এই উন্মুক্ত প্রদর্শনী আয়োজন করে যাবে। এর প্রধান উদ্দেশ্য, নগরবাসীর মাঝে নিয়মিত শিল্পকর্ম ক্রয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং শিল্পী ও শিল্পকর্মের সাথে জনতার নিকটবর্তী সর্ম্পক গড়ে তোলা।
আর এ সকল কিছুরই উদ্দেশ্য একটাই, শিল্প ভাষায় সমাজের বিভিন্ন শ্রম পেশার মানুষের সাথে সর্ম্পক স্থাপন, যে সর্ম্পক শাস্ত্র থেকে আমরা শিখতে চাই আগামী দিনের-পরিবর্তনের চিত্ররূপরেখা। হ্যাঁ, অবশ্যই শুধু ভিজুয়াল আর্ট নয়, আমরা চাই পাশাপাশি গান-আড্ডায় মুখরিত হয়ে উঠুক প্রতি শুক্রবারের দাগ আর্ট স্টেশন।
শিল্পী আরিফ বুলবুল বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে দাগ আর্ট স্টেশনের সৃষ্টি হয়েছিল স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও দায়িত্বের একটা সম্মিলিত তাগিদ থেকে। সমাজ, রাজনীতি ও চলমান জীবনের সাথে দূরত্ব ঘুচিয়ে জীবনের নব নব উল্লাস ও বেদনা আবিস্কার করার নেশায় আমরা মিলিত হয়েছি। এই সাধনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দাগ আর্ট স্টেশনের সবাই মিলে ভাবছিলাম কিভাবে আমরা যুক্ত হতে পারি এক প্রতিরোধের মিছিলে, পালন করতে পারি এক অগ্রনী ভূমিকা; কিভাবে আমরা আমাদের শিল্পসাধনাকে লিপ্ত করতে পারি এই বর্জ্য দানবের বিরুদ্ধে; কিভাবে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি মানুষের চিন্তাকে নাড়িয়ে দিতে, এগিয়ে নিতে।
তিনি বলেন, কিন্তু ফুল-ফল লতাপাতার জগতে আটকে যাওয়া তরুণদের নতুন জগতে বের করে আনাও একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করে কিছু তরুণ শিল্পীকে যুক্ত করা গেল এক নতুন যুদ্ধে। এ যুদ্ধ শিল্পের, মননের, ভালোবাসার। এ যুদ্ধ জীবনের সাথে মৃত্যুর। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন তরুন শিল্প-সমাঝদার মুনতাসির মঈন। এরই মধ্যে কিউরেটরের দায়িত্ব নিয়ে আমাদের সাথে যুক্ত হলেন মাসুম চিশতি যিনি নারায়ণগঞ্জেরই সন্তান। যাত্রা শুরু হল কর্মশালা বর্জ্য নামতা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন আমাদের নানাবিধ সহযোগিতা করে চলেছেন সেই প্রথম থেকেই। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। ২০১৯ সালের জানুয়ারীর ১২ তারিখ থেকে আটজন তরুণ তরুণী নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। কিউরেটরের সাথে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সহকারী কিউরেটর সুমনা আক্তার আর কর্মশালা সমন্বয়ক নাসির আহমেদ। নারায়ণগঞ্জের অলিগলি, মাঠ-ঘাট, খাল-নদী-জলাশয় চষে ফেললো সবাই মিলে। তন্ন তন্ন করে খুঁজে মনি মুক্তো নয় আবিস্কার করা গেল প্লাস্টিক বর্জ্যের অসংখ্য টিলা, রঙ-কেমিকেলের রঙিলা প্রবাহ আর দুর্গন্ধে ভরা থমথমে বাতাস।
শিল্পী বলেন, একরকম ধারণা আগে থেকেই ছিল কিন্তু ভয়াবহতার মাত্রা পাওয়া গেল কল্পনার অতীত। সরোজমিনে তদন্ত করে যা বের হলো তা হজম করা খুবই কঠিন। আরও কঠিন সেটাকে শিল্পরূপে প্রকাশ করা। নবীন এইসব শিল্পীদের জন্য এ এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। সব দেখেশুনে তারা স্তম্ভিত। স্তম্ভিত আমরা সবাই। সবাই নতুন করে আবিস্কার করলো নিজেদের অস্তিত্ব যা দখল করে নিচ্ছে নানাবিধ বর্জ্য চিন্তার স্তুপ। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি প্রদর্শনী হলো আলী আহম্মদ চুনকা মিলানায়তন ও পাঠাগার ভবনের বেজমেন্টে। বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখলেন। প্রতিক্রিয়া জানালেন।
আরিফ বুলবুল বলেন, এরই মধ্যে কলাকেন্দ্র থেকে শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান আহবান জানালেন একটা প্রদর্শনী করার জন্য। স্বাভাবিকভাবেই আমরা এ সুযোগ লুফে নিলাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এপ্রিলের ছাব্বিশ তারিখ থেকে কলাকেন্দ্রে শুরু হল বর্জ্য নামতার দেড় মাস ব্যাপী দ্বিতীয় প্রদর্শনী। শুরু হল আমাদের দ্বিতীয় পর্যায়। প্রদর্শনীতে যুক্ত হলেন আরও ছয়জন নতুন শিল্পী।
যেসকল শিল্পীরা যুক্ত রয়েছেন- খন্দকার নাসির আহাম্মদ, রঞ্জিত কর্মকার, লিটন চন্দ্র সরকার, মোহাম্মদ বদরুল আলম ইমন,মুনতাসীর মঈন, সুমনা আক্তার, রুহিত ভক্ত, রাজীব শীল, জাহিদ হৃদয়, ফাহমিদা আক্তার, নিক্কন দাস, ফাতেমা আহমেদ কথা, মোঃ ফয়সাল হোসেন, সৈকত মন্ডল।শিরনাম
দাগ আর্ট স্টেশনের আয়োজনে ১/১১ ইকবাল রোড মোহাম্মদপুর ঢাকা কলা কেন্দ্র প্রদর্শনীটি চলবে ১৫ই জুন পর্যন্ত।
.
কথাসাহিত্যিক