বৃষ্টি আসার আগে

Reading Time: 2 minutes

ঘড়িতে তখন পাঁচটা বেজে ছাব্বিশ। ভোর নামছে জানালায়। তোর কাছে আজ আমার নিমন্ত্রণ ।
অস্থির প্রাণ আচমকা প্লাবনে ভাসছে ।
কোন রকম মুখ হাত ধুয়ে মোজাহীন জুতোয় পথে নেমে পড়ি। গন্তব্য তোমার বাড়ি। কত’কি ভাবছি চলতে চলতে ।
ট্রেন, অটো, পায়ে চলা পথের ঝক্কি সামলে শেষমেশ তোর পাড়ায়। ঘার্মাক্ত শরীর মুছতে মুছতে A–84 ধিরাজ সরনি লেন।

তোর ডোরে কলিং বেল। হেসে ডাকবি তুই। ফ্যানের হাওয়ায় ঘাম চুষছে শরীর। লেবুর সরবত এগিয়ে দিবি হাতে। আমি জলের গ্লাস ধরার সময় তোর আঙুলের প্রিয় স্পর্শ পাবো।

কিছু লজ্জা আর কিছু উৎকণ্ঠা তোর চোখে ভাসবে তুই তখনো সহজ নোস, আমিও…।
অতিচেনা কিন্তু প্রথম বারের দেখা হলে যা হয় আরকি! তোর শাড়ির নিচে কোমরের আশেপাশে নরম মেদ আমাকে টানবে কিন্তু আমি তোর চোখের ভাষা বুঝতে চাইবো। চুল গড়িয়ে পড়বে কপালে, ওই দৃশ্যে আমি আটকে থাকবো অনেকক্ষণ তুই চুল সরাবি, আর তোর চোখ সরাবে লজ্জা ।

এই প্রথম আমি তোর হাত ধরবো, আঙুল, নোখ, এমনকি প্রতিটা লোম ছোঁবো নিজের মতো করে। তোর ঘরে দক্ষিণের জানলায় গিয়ে দাঁড়াবো দুজন।

পরনে তোর বালুচরি শাড়ি, কপালে কুসুম টিপ। হাতে লাল পলাদের সাথে কচকচে মেরুন চুড়ি
তুই আমাকে আকাশ দেখাবি আর আমি দেখবো তোকে। এই প্রথম প্রচন্ড নির্লজ্জ হয়ে উঠবো , এই প্রথম পরম প্রেমে বুকে জড়াবো, এই প্রথম বন্য চুম্বনে বাঁধবো।
তুই উপরে ভিতু কিন্তু ভেতরে চরম সাহসী হয়ে খামছে ধরবি পিঠ। আমার ভেতরে কেমন আনন্দ প্লাবন হবে…।

প্রথম পরীক্ষায় পাশ করলে যেমন হয় আর কি! লোক দেখার ভয়ে আমরা আবার নিকট দূরত্বে যাবো আমরা আবার প্রতিবেশী হবো। তুই চায়ের ছুতায় কিচেনে পালাবি, তোর মুখে চোখে লজ্জার উত্তাপ। আমি অবশ্য নিজেকে স্বাভাবিক করতে তোর দেওয়ালে চোখ রাখবো যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ আর কাদম্বরী দেবী। 

 

 

ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে নজরুলও ।
তুই চেঁচিয়ে বলবি, মশাই চায়ে চিনি ক’চামচ ? আমি বলবো চিনি দিতে হবে না তুমি শুধু ঠোঁট ছুঁয়ে দাও ।
তুই তেড়ে আসবি আমি লুকোবার ছলে তোর ভিতরে পালাবো। ফের তুমি প্রশ্ন করবে ডিম পোজ খাবে না ওমলেট ? আমি কানে কানে বলবো ওম দিতে তো তুমিই লেট করে ফেলছো পোজ’ই দাও। এবার সত্যি তুমি লজ্জায় নত হবে।
ফ্রাইপ্যানে ডিম তেলের উত্তপ্তে গাঢ় হচ্ছে, অমনি সময় আমি বেড়াল পায়ে তোর পিছে।
আমার বুক ছুঁয়েছে তোর খোলা পিঠ, আমার ঠোঁটের স্পর্শে তোর কানের দুলের ঘুম ভাঙে, আমার হাত তোর পাঁচ আঙুলের শিকল পড়ে। ডিম পোড়া গন্ধ তবু আমরা ভ্রুক্ষেপহীন অনেকক্ষণ।
তারপর, ওই চোখ এই চোখকে শাসিয়ে বলে, আবার কবে আসবে এভাবেই…।

 

 

 

প্রচ্ছদ: নাওয়াজ মারজান

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>