Irabotee.com,irabotee,sounak dutta,ইরাবতী.কম,copy righted by irabotee.com

চন্ডুওয়ালা হারিয়ে যাওয়া এক পেশা

Reading Time: 2 minutes

আল হাসান

 

ঢাকায় চন্ডু নামের এক জঘন্য নেশার উদ্ভাবন করেন সোনাউল্লাহ নামে রোকনপুরের এক বাসিন্দা। ১৮৩০ সে তিনি কোলকাতা থেকে এক চীনা লোক নিয়ে এসে এই ব্যবসা শুরু করেন। অল্প দিনের ভেতর ঢাকার অভিজাত মুসলিম সমাজ এই নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পরবর্তী বিশ বছর দোকানের সংখ্যা হয় ২০ টি। চন্ডুওয়ালারা মূলত মুসমিম ছিলেন। আর চন্ডুর পাইকারী চালানদার ছিলেন হিন্দু সাহারা। ক্রমান্বয়ে পূর্বভারতের অনেক জায়গাতে চন্ডুর চল শুরু হয়।

ঢাকায় জনবসতি গড়ে উঠার সাথে সাথে আফিমের প্রচলন শুরু হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে শিল্পীদের ছবিতেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। জেমস ওয়াইজের বর্ননায় ঢাকায় আফিম ব্যবসার সম্পূর্ন বিবরন জানা যায়। পপি নামের উদ্ভিদের রস থেকে আফিম তৈরি হয়। শ্রী নগেন্দ্রনাথ বসু সম্পাদিত বাংলা বিশ্বকোষ মতে,”চন্ডুর গুলি খাইবার জন্য লোকে ইহা ক্র‍য় করে। আফিম দেখতে কটাবর্ন। ইহা তিক্ত বা বিশেষ গন্ধযুক্ত। “

আঠারো শতকের শেষ দিকে ঢাকার অলিতে গলিতে চন্ডুর দোকান দেখা যেত। অনেক সময় এটাকে অভিজাত্য হিসেবেও ধরা হতো। তবে শহরের ধনী ও দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে পার্থক্য ছিল। সে সময় আফিম এতটাই জনপ্রিয় ছিল যে নবজাতকের মুখে আফিম দিয়ে বরন করা হতো। ঢাকায় মুঘল অভিজাতদের ঘরে নিয়মিত আফিমের চালান যেত। সর্দি,কাশির ঔষধ হিসেবে মুসলিম শিশুদের আফিম খাওয়ানো হতো। সে সময় ঢাকায় শিশুমৃত্যুর হার ছিল সবচেয়ে বেশি। যদিও সেসময় সঠিক কারন না জানলেও তা জন্য যে আফিম অনেকটাই দায়ী ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সন্ধ্যার পরেই ছেলে বুড়ো সবাই আফিমের নেশায় ঢুলতো। আফিমের বিভিন্নমুখী ব্যবহার দেখা যায় জেমস টেইলরের লেখায়। ১৮৩৮ সালে বার্ষিক আফিম চালানের পরিমাণ ছিল ৮৯২ পাউন্ড। গড়ে প্রতিবছর শহরবাসীর চাহিদা মেটানোর জন্য ১ হাজার ৫৬০ পাউন্ড আফিম লাগতো। ১৮৫০ সালে সরকার আফিম ব্যবহারের উপর লাইসেন্স ধার্য করে।

জেমস ওয়াইজ আফিম প্রস্তুত প্রণালীর কথাও লিখে গেছেন। প্রথমে আফিমকে শুকনো পান দিয়ে সংমিশ্রিত করে প্রস্তুত করা হতো এবং ছোট ছোট টুকরো করে কাটা হতো। তারপর আলকাতরার মতো ঘনীভূত না হওয়া পর্যন্ত জ্বাল দেয়া হতো। এরপর তা শুকিয়ে গেলে ছোট ছোট বড়ি বানানো হতো যার একেকটির ওজন ছিল ৮০ গ্রেন। একটি বড়ি এক পয়সা দিয়ে কেনা যেত।

ঢাকায় আফিম সেবন পরিচিত ছিল চন্ডু সেবন নামে। খাঁটি আফিমের গন্ধ ছিল খুব বিশ্রী। সেই আফিমকে খাওয়ার উপযোগী করার জন্য দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হতো। আবার ধোয়ার সাহায্যেও আফিম সেবন করা যেত। হুঁকোর সাহায্যে ধোঁয়া টেনে নেয়া হতো। বিশ্রী গন্ধের কারনে তার সাথে তামাক মেশানো হতো। আনাড়িদের বুঁদ হতে তিনটি গোলা যথেষ্ট ছিল আর অনেকে পাঁচটি থেকে সাতটি গোলাও সেবন করতেন।

হিন্দু সম্প্রদায় গাঁজা ও মুসলিমরা চন্ডু এই দুটোকে ধূমপানের নেশা হিসেবে ব্যবহার করতেন। সে সময় প্রচলিত ছিল চন্ডু হলো যৌন উত্তেজনাবর্ধক তাই বিয়ের রাতে বরকে চন্ডু মেশানো বড় এক গ্লাস দুধ খাওয়ানো হতো।

ব্রিটিশ আমলে তো বটেই পাকিস্থান আমলেও আফিম এর বেশ প্রচলন ছিল। ১৯৫৮ সালে ঢাকায় ১৪ টি আফিমের দোকান ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আফিমের ব্যবসা সরকারিভাবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

 

তথ্যসূত্রঃ

১। ঢাকার প্রাচীন পেশা ও তার বিবর্তন -ইমরান উজ জামান, পুথিনিলয় প্রকাশন,ঢাকা,২০১৯,(পৃষ্ঠাঃ ১১,১২)

২। উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গের গরীবদের জীবন,মুনতাসীর মামুন, অনন্যা প্রকাশন,ঢাকা,২০১৮, (পৃষ্ঠা- ৫৮)

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>