রসবতীর দো পেঁয়াজা
রসবতী যখন ছোটো, মানে ইস্কুলে পড়ে, তখন হাতে গোনা রেস্তোরাঁ ছিল। বাইরে খেতে যাওয়াও ছিল কালে ভদ্রে। আর অপশনও ছিল হয় চীনে , নয় নর্থ ইন্ডিয়ান, সে সময় বলত পাঞ্জাবি খানা। সেই পাঞ্জাবি খানারও এত রকম ভ্যারাইটি জানত না কলকাতা। সেই সব মোগলাই পরোটা আর কষা মাংসের দিনে আর একটা বেশ গালভারি আর জনপ্রিয় নাম ছিল দো পেঁয়াজা। অনেকে বলতেন দো পেঁয়াজি। বেশ গরগরে একটা রান্না। বাঙালির জিভে জমত। উত্তর ভারতীয় রান্না বাঙালির চিরকালের প্রিয়। তেল-হলুদ-লংকা-আদা-রসুন-পেঁয়াজ এই কম্বিনেশন বাঙালি রান্নাতেও আছে। তবে কসুরি মেথির ব্যবহারটা বাঙালির নিজস্ব নয়। বাঙালির হল ঘি-গরম মশল্লা, সেটাও উত্তর ভারতে চলে। তা এই দো পেঁয়াজা হল উত্তর ভারতীয় রান্না। কেন দো পেঁয়াজা নাম সে নিয়ে নানা মত থাকলেও যেটা সর্বজনগ্রাহ্য সেটা হল এই রান্নায় দু বার দু’ রকমভাবে পেঁয়াজ ব্যবহার হয়। এই তো! একে পেঁয়াজ অগ্নিমূল্য তার মধ্যে রসবতী এই পেঁয়াজ সর্বস্ব রান্নার গল্প ফেঁদে বসল! না, না, অত পেঁয়াজও লাগে না। একটা বড়ো, আর গোটা দুয়েক মাঝারি হলেই চলবে। আচ্ছা, ডিটেলস বলছি-
উপকরণ :
মুরগী ৫০০-৬০০ গ্রাম
পেঁয়াজ কুচি- ১ টা বড়ো
ছোটো পেঁয়াজ- ২ টো (কিউব করে কাটা, ৪ টুকরো)
হলুদ- ১ টেবিল চামচ
লাল লংকার গুঁড়ো- ১ টেবিল চামচ
তেল-পরিমাণ মতো
নুন-স্বাদ মতো
ধনে গুঁড়ো- ১ চা চামচ
তেজ পাতা- ১ টা
টমেটো- ১ টা বড়ো, কুচি করে কাটা
আদা বাটা- ১ চামচ
রসুন বাটা- ২ চামচ
পাতি লেবু- অর্ধেকটা
ধনে পাতা কুচি– এক কাপ
রন্ধন প্রনালী:
এবার রান্না শুরু করা যাক। প্রথমেই একটা পাত্রে ধুয়ে পরিষ্কার করা চিকেনের টুকরো গুলোয় আধ চামচ হলুদ, ১ চামচ লাল লংকার গুঁড়ো আর ১ চামচ ধনে গুঁড়ো ভালো করে মাখিয়ে মিনিট ২০ রেখে দিন। এবার যে কোনো একটা পাত্র গ্যাসে বসান, কড়াই, প্যান ,হাঁড়ি যা আপনার সুবিধে হয়। তেল দিন ২-৩ চামচ। এমন পরিমাণে তেল দেবেন যাতে কাটা পেঁয়াজ পুরোটা ডুবে যায়। তেল গরম হলে প্রথমে তেজ পাতা দিয়ে কাটা পেঁয়াজ দিন। এখানে একটা ছোট্টো ট্রিক আছে রসবতীর। পেঁয়াজ ভাজার সময় তাতে এক চামচ নুন দেবেন। তাতে স্বাদ বাড়ে। এবার পেঁয়াজ হাল্কা বাদামী হওয়া পর্যন্ত নেড়ে চেড়ে ভাজতে থাকুন। বেশ ভাজা হলে এক চামচ আদাবাটা আর ২ চামচ রসুনবাটা দিন। এখানে আর একটা ছোট্টো টিপস- মাংস রান্নার সময় আদাবাটা আর রসুনবাটার রেশিওটা সবসময় হবে ওয়ান ইসটু টু, অর্থাৎ যতটা আদা বাটা তার ঠিক দুগুণ রসুন বাটা। এবার কষার পালা। বেশ গন্ধ বেরোলে টমেটো দিতে হবে। টমেটোর পরিমাণ হবে ঠিক পেঁয়াজ কুচির অর্ধেক। আবার কষতে হবে কিছুক্ষণ। টমেটো বেশ গলে মিশে গেলে ম্যারিনেট করা চিকেনটা দিতে হবে আর ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে, যাতে পুরো মশলা চিকেনের সাথে মিলেজুলে যায়। এবার ঐ যে কিব করে কেটে রাখা পেয়াজ সেটা দিতে হবে। পঞ্জাবীরা বলেন, দো-পেঁয়াজায় পেঁয়াজ মুখে যাবে প্রতি গরসে, তাই এভাবে পেঁয়াজ দেওয়া। এবার আধা কাপ গরম জল। এখানে আর একটা টিপস রইল রসবতীর, রান্নায় জল দেওয়ার সময় জল একটু গরম করেই তারপর দেবেন। আজকাল সবারই তো গ্যাসের দুটো বার্নার; কাজেই একটাতে জল গরম করবেন পাশাপাশি। আসলে রান্না যেটা কষাচ্ছেন সেটা গরম আর তাতে ঠান্ডা জল দিলে তাপমাত্রার হেরফেরে রান্নায় সেই স্বাদ, টেক্সচার আসে না। জল দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন। দেখবেন সব মশলা মিশে গেছে , কিউব করা পেঁয়াজ নরম গুলাবী চোখে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। আর একটাই স্টেপ বাকি, সেটা হল লেবু আর ধনে পাতা। ওপর থেকে ধনে পাতার কুচি আর লেবুর রস দিয়ে নামিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম হাতে গড়া রুটি, নান, পরোটা যার সাথে ইচ্ছে। গন্ধতেই অর্ধেক ভোজনমঃ হয়ে যাবে, পাক্কা!
রন্ধনশিল্পী