রাত সাড়ে বারোটার ফ্লাইটে ল্যান্ড করলো মধুরা দত্তগুপ্ত দমদম এয়ারপোর্টে। প্রায় একবছর হলো সে রাজারহাটের ওবেরয় এনক্লেভে এসেছে টাওয়ার নাম্বার সেভেন ব্লু বেলে। বারোতলার প্রায় চোদ্দোশো স্কোয়ারফুটের এই ফ্ল্যাট টা পারেখ এন্ড তলোয়ার ডিস্ট্রিবিউটার্সদের দেওয়া। ওই একটাই সে অভিনন্দন পারেখের সঙ্গে শুয়ে লিট্যারালি পেয়েছে। বাকি যা কিছু পাওয়া তা হল বিজনেস, পরিশ্রমের বদলে পরিশ্রম আর কিছুই না। কিন্তু সে তো অভিকে ভালোবাসে! পারেখ হাউসের জন্যে কি না করেছে সে। মন্ত্রী কেষ্ট বিস্টুদের মনোরঞ্জন, মিডিয়ার আডভাইসরী বোর্ড থেকে এডিটোরিয়াল বোর্ড, পেজ থ্রির পাছা পাকা সাংবাদিক, এমন কি ওর টাউনশিপের প্রোজেক্টের জন্যে ব্যঙ্কের ম্যানেজারের সাথে — বেদিক ভিলেজ রিসোর্ট পর্যন্ত দৌড়েছে।
মধুরা ট্যালেন্টেড অভিনেত্রী এই সব কাজ কি ওর কাজ পাওয়ার জন্যে দরকার ছিল! না তেমন।
রাত বারোটার পর ফোন ধরার ক্ষমতা নেই অভির। বারণ আছে।মুটকি ধুমসি বউ নেহার দেওয়া ফোঁটা না কাটলে অভিনন্দনের দিন ভালো যায় না! অথচ সে শুয়ে বসে তার অর্ডার গুলো কি ভাবে জোগাড় করেছে!! নাহ! তার অভিমান নয়, দুঃখ হয় শুধু! সে মুম্বাই গেছিলো একটা আস্যাইনমেন্টের জন্যে। একমাত্র অভি জানতো, অভি নিজেই তাকে পাঠিয়েছিল! সে অভিকে ফোন ও করতে পারছে না।
ফ্লাইটে বসার আগে সে শুনে এসেছে, তার মনোনয়ন নাকচ হয়ে গেছে! পাওয়া কাজ কি ভাবে নষ্ট হয়ে গেল এ ভাবে তাও অভির রেকমেন্ডেশনে! বহুদিন বাদে মধুরা হাউ হাউ করে একা কেঁদে উঠল। এই প্রথম সে মুম্বাই মেইন স্ট্রিমের ফিল্মে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিল।ড্রয়ার থেকে আল্প্রাক্সের স্ট্রিপ থেকে এক সঙ্গে দুটো পয়েন্ট টু ফাইভের ট্যাবলেট নিল। যদিও আজকাল তার ঔষধ খেলেও ঘুম আসছে না। মধুরার সিক্সথ সেন্স বলছে অভিনন্দন পারেখের সঙ্গে তার সম্পর্ক শ্বশুর বলবীর তলোয়ার জানতে পেরে গেছে। অভি জানে না!
ভোর রাতে ঘুম ভেঙে গেল মধুরার, সেল্ ফোনের পরিচিত রিংটোনে।
ফোন করেছে তার বহু পুরোনো বন্ধু সুনন্দ রায়। সুনন্দ কলকাতার সবচেয়ে বড় সংবাদপত্রের চীফ করেসপন্ডেন্ট। সুনন্দের বউ একটি মুম্বাই ফিল্মী ম্যাগাজিনের কলকাতা এরিয়ার হেড। আসলে ওর বউ বড় বড় ডিরেক্টর আর প্রোডিউসারদের মধ্যে আসাইনমেন্ট ফিক্স করে। কাস্টিং মানি, ডিরেকশন। সে জানতে চেয়েছিল কে তার আস্যাইনমেন্ট টাকে ক্যান্সেল করালো! ঘুমের মধ্যে নামটা শুনে সে স্তব্ধ হয়ে গেল কিছুক্ষন! বিছানা ছেড়ে উঠে সে তার বেশ পুরোনো আড্রেস বুক খুলে কারুর ফোন নাম্বার জোগাড় করে ফোন লাগালো।
ফোন নাম্বার টি তার ক্লায়েন্ট ইনকাম ট্যাক্স জোনাল ডিরেক্টর শোভন সুন্দর দেব নাথের। রিং হচ্ছে।
মধুরার বেশ কয়েকটি ইনফরমেশন দেবার আছে অভিনন্দন পারেখের সম্পর্কে। অভিও জানে না সে সিনেমায় আসার আগে বেশ কিছুদিন একটা হোটেলে পক্ষে-এসকর্ট গার্লের কাজ করেছিল…