| 19 এপ্রিল 2024
Categories
শিশুতোষ

শিশুতোষ গল্প: কিডন্যাপারের মুখোমুখি । শুদ্ধসত্ত্ব ভট্টাচার্য

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

 

বেশ কিছুক্ষণ ধরে সোরগোলটা কানে আসছিলো রুপমের। বাইরে মেঘের গর্জন। এরমধ্যে এই সোরগোল। করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রুপম এখন তার বাড়িতেই আছে। দুজন চিৎকার করছে। গলা দুটো চিনতে ভুল হয়না রুপমের। এ হলো হারু ও রায় বাড়ির সমর বাবুর গলা। বাড়ির ভেতরে থাকায় রুপম সব কথা শুনতে পায়নি। রুপম বাড়ির বাইরে এলো। সোরগোলটা হচ্ছে রায় বাড়ির সামনের হারুর দোকানের পাশে। দোকানে বসে আছে হারুর ছেলে গণেশ। গণেশ রুপমের ছোটবেলারবন্ধু। রুপম গণেশকে জিজ্ঞাসা করল ‘গণেশ এত সোরগোল হচ্ছে কেন রে?’ গণেশ তার উত্তরে বলল ‘বাবলু দাদু কালকে রাত থেকে উধাও। রাতে ভাত খাবার পর দাদু তালগারিয়ার পাড়ে হাঁটতে গিয়েছিল। দিদিমা আগে ঘুমিয়ে পরে তাই সেও কিছু টের পায়নি। সমর দাদু আজ সকালে উঠে দেখে বাবলু দাদু নেই। ’ বাবলুহলো রায় বাড়ির বড় ভাই সুবীররায়ের ডাকনাম। রুপম গণেশকে তার সাথে রায় বাড়িতে যাবার প্রস্তাব দিল। গণেশ এক কথায় রাজি। রুপম এবং গণেশ চলল রায় বাড়ির দিকে। বাড়ির ভেতরে গিয়ে তারা দেখল সবার গালে হাত।

রায় বাড়ির সব ভাইকে রুপম জেঠু বলে ডাকে। রুপম দেখল একদিকের বারান্দায় মানিক জেঠুর ছেলে ধ্রুব দাদা বসে আছে। রুপম তার কাছে গেল। রুপম তাকে জিজ্ঞাসা করল ‘ধ্রুবদাদা ঘটনাটা কী হয়েছে?’ ধ্রুব দাদা তার উত্তরে বললো ‘জেঠু প্রতিদিন হাঁটতে বেরোয়। হাঁটতে হাঁটতে তালগারিয়ার পার গিয়ে ফেরার সময় শিবেনের দোকানের মাচায় কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর বাড়ি ফেরে’। গতকাল আমিও জেঠুর সাথে ছিলাম। শিবেনের দোকানের মাচা পর্যন্ত এসে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল জেঠু। আমাকে বলল সদর দরজা খোলা রাখিস। আমি গিয়ে লাগিয়ে দেবো। এরপর আমি আর কিছু জানি না।’ রুপমের মনে হলো ধ্রুব দাদা সত্যি কথাই বলছে। এরপর ধ্রুব দাদাকে রুপম জিজ্ঞাসা করল ‘রাত্রে সদর দরজায় তালা থাকে না?’ ধ্রুব তার উত্তরে বলল ‘না, শিকলের মধ্যে একটা কাঠি ঢুকিয়ে তারপর দরজার সাথে একটা বাঁশ আটকে দেয়া হয়’। শুনে খুব অবাক লাগল রুপমের। রুপম এবং গনেশ এবার বাড়ির মাঝখানটায় অর্থাৎ বাবলু রায়ের ঘরের দিকে এলো। সেখানে গিয়ে রুপম দেখল বড় জেঠিমা অর্থাৎ বাবলুরায়ের গিন্নি গালে হাত দিয়ে বসে আছেন। রুপম আস্তে আস্তে তার কাছে গেল। রুপম গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করল ‘জেঠিমা আপনি কাল রাতে কখন শুয়েছেন?’ তার উত্তরে তিনি বললেন ‘আমি আর তোর জেঠু একসাথেই ঘুমাতে যাই। কাল কী মতি হলো তোর জেঠুর তিনি হাঁটতে বেরোলেন। শুধু তাই না ধ্রুবকেও সাথে নিয়ে বেরোলেন। আমাদের সাড়ে দশটার মধ্যে খাওয়া হয়ে যায়। আমি সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। তোর জেঠু আসছে না দেখে আমি শুয়ে পড়ি।’ রুপমের একটু খটকা লাগলো। রুপম ভাবল ধ্রুব দাদা বলল বাবলু জেঠু রোজই হাঁটতে বেরোন আর জেঠিমা বললেন তিনি শুধু গতকাল রাতেই বেরিয়েছিলেন। কোথায় যেন একটা গন্ডগোল আছে!

 

রুপম এবার গণেশকে বলল ‘চল একবার তালগাড়িয়ার পাড় দেখে শিবেনের দোকানে যেতে হবে।’ তালগাড়িয়ার পাড় জায়গাটা একটু হলো একটা ফাঁকা প্রান্তর। সেখানে ফাঁকা জমির মধ্যে একটা বড় বটগাছ রয়েছে। এখানে কোনো সময় কেউ তালগাছ লাগিয়েছিলো সেই থেকে জায়গাটার নাম তালগাড়িয়ার পাড়। তালগাড়িয়ার পাড়ে সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে এবার তারা চললো শিবেনের দোকানের দিকে।

শিবেন লোকটা একটু অলস প্রকৃতির এবং তার দোকানে জিনিসপত্রের দাম ভীষণ বেশি। সেই জন্যে কেউ তার দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনে না। এখন সে দোকানে বসে টিভি দেখে, বিড়ি খায় এমনকি রাতেও দোকানেই ঘুমায়। খালি তিন বেলা খাবার খেতে বাড়িতে যায়। শিবেনের দোকানে গিয়ে রুপম দেখল শিবেন বিষন্ন মুখে বসে আছে। রুপম শিবেনকে বলল ‘কাল রাত থেকে বাবলু জেঠুকে পাওয়া যাচ্ছে না।’ শিবেনের দোকান রায় বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। ওদিকের খবর এদিকে আসতে বেশ কিছুটা দেরি হয়। কিন্তু শিবেনের হাবভাবে মনে হলো এই খবরটা তার কাছে নতুন কিছু না। সে বলল ‘ওনার কাজ কারবারই ওনাকে গুম করেছে’। কথাটা শুনে রুপমের মনে হলো এই শিবেন নিশ্চয়ই কিছু জানে। রুপম এবার জেরা শুরু করলো।
রুপম- আপনি রাতে কয়টায় দোকান বন্ধ করেন?
– সাড়ে বারোটা।
– কাল বাবলু জেঠু কখন এসেছিলেন?
– আমি ঘড়ি দেখিনি। আন্দাজ সাড়ে এগারোটা থেকে পৌনে বারোটার মধ্যে।
– একাই এসেছিলেন?
– না। সাথে ধ্রুব ছিল।
– উনি কতক্ষণ ছিলেন?
– উনি আমার দোকানের সামনে দিয়ে আগে তালগাড়িয়ার পাড়ের দিকে যান। তারপর আমার দোকানে এসে বসেন। ধ্রুব বাড়ি চলে যায়।
– সেই সময় দোকানে আর কেউ ছিল?
– সুবাস এসে একটা হলুদের প্যাকেট কিনে নিয়ে যায়।
– সুবাস কখন আসে ?
– ১২টা নাগাদ।
– উনি কয়টা পর্যন্ত এখানে ছিলেন?
– রাত সাড়ে বারোটার দিকে উনি চলে যান।
– আচ্ছা।

এবার রুপম এবং গণেশ ফিরতি রাস্তা ধরল। রুপম গণেশকে বলল ‘শিবেন অনেক তথ্য চেপে গেল। এবার একটু সুবাসকে ধরা যাক’। দুজনে হাজির হলো সুবাসের বাড়িতে। সুবাস কৃষিকাজ করে। একটি ছেলে। ছেলেটি সোনার দোকানে কাজ করে। সুবাস তার বাড়ির দাওয়ায় বসে সবে একটা বিড়ি ধরিয়েছে এই সময় তার বাড়িতে রুপম প্রবেশ করে। গণেশ আবারও গিয়ে দোকানে বসেছে তাই রুপম একাই এসেছে। সুবাস জানে রুপম এখন গোয়েন্দাগিরি করে, তাই তাকে দেখে বিড়ির ধোঁয়া গলায় লেগে সুবাসের বিষম লেগে গেল। সুবাস যে রুপমকে দেখামাত্র টেনশনে পরেছে তা বলাই বাহুল্য। জল খেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে সুবাস এসে আবারও বাড়ির দাওয়ায় বসল। রুপমকে এবার সুবাস বলল ‘কী সমস্যা তোর? এই সাতে নেই পাঁচে নেই মানুষটাকে জ্বালাতে এলি কেন?’ রুপম প্রশ্নগুলো শুনে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল ‘কিছুই না, একটা সামান্য কৌতুহল’। সুবাস বলল, বাবলু বাবুর ব্যাপারে তো? রুপম বলল ‘এরা তো পুলিশেও খবর দেয়নি। তাই দেখি আমি কী করতে পারি’। সুবাস বলল ‘ওনার কাজই ওনাকে গুম করেছে’। এবার রুপম জেরা শুরু করল-
– আপনি কাল রাতে শিবেনের দোকানে কখন গিয়েছিলেন?
– ১২টা নাগাদ। সেখানে বাবলু বাবু ছিলেন। আমি একটা হলুদের প্যাকেট কিনে নিয়ে চলে আসি।
– বাবলু জেঠুকে কে কিডন্যাপ করতে পারে সে সম্পর্কে ধারনা?
– কোনো ধারনা নেই।
– এতেই হবে।
এবার রুপম ফিরতি রাস্তা ধরল। হাঁটতে হাঁটতে রুপম যাচ্ছে এমন সময় একটা ঢিল এসে লাগল রুপমের পিঠে। রুপম সেটাকে কুড়িয়ে নিয়ে দেখল একটা ইটের টুকরোর সাথে কাগজ বাঁধা। কাগজটায় লেখা আছে “সাবধান!”

বিকেল ৫টা। হারুর দোকানের সামনে আবারও সোরগোল শুরু হয়েছে। এবার হারু আর সমর বাবুর গলা শোনা যাচ্ছে। রুপম এবার হারুর দোকানের দিকে না গিয়ে সটান চলে গেল রায় বাড়ির ভেতর। এবারও রুপম ধ্রুব দাদাকে পেয়ে গেল। সে সরাসরি ধ্রুব দাদাকে জিজ্ঞাসা করল ‘বাইরে সোরগোলের কারণ কী’? ধ্রুব দাদা তার উত্তরে বলল ‘আমার মোবাইলে একটা ফোন এসেছিলো। অচেনা নম্বর। ফোনটা ধরলাম। অন্য প্রান্ত থেকে কথা এলো ‘বাবলু বাবুর ভাইপো?’ আমি তার উত্তরে হ্যাঁ বললাম। এবার বলল -যদি জেঠুকে বাঁচাতে চাস তাহলে পাঁচ লাখ টাকা তালগাড়িয়ার পাড়ের বটগাছের তলায় রেখে আসবি। সময় ২৪ ঘন্টা, বলে কেটে দিলো।’ রুপম বলল ‘এইবার একটা কেস কেস গন্ধ পাচ্ছি। পুলিশে খবর দিয়ে রাখতে হবে। ব্যাটাদের আজ রাতেই ধরবো। এখন তোমার কাছ থেকে কিছু জানা দরকার’।
যা প্রশ্ন করবো তার সত্যি জবাব দেবে। গতকাল রাতের ঘটনাটা পরিস্কার করে বলো।
– গতকাল রাতসাড়ে এগারোটায় আমরা বের হই। হারুদার দোকান থেকে আমি একটা পালস চকোলেট কিনি। সে সময় মদন কনট্রাক্টর রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। জেঠু তাকে ধরে। এককালে দেনায় পরে মদন জেঠুর কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার নেয়। সেই টাকা এখনো শোধ করেনি সে। জেঠু টাকাটা ফেরত চাইলে মদন তখন বলে ‘আপনার কর্মের কারণে আপনি আর এই টাকা ফেরত পাবেন না।’
– এই কর্ম বলতে কোন কর্মের কথা বলা হচ্ছে?
– আমি সঠিক জানি না কোন কর্ম তবে অনুমান করতে পারি। আমাদের বাড়ির পুকুরটার উপর মদনের খুব লোভ। পুকুরটা ওর বাড়ি লাগোয়া তাই ও ওটা কিনতে চায়। মদনের বাড়ির জমিটা আগে ছিলো অশোক সাহার। তিনি এই জমি বিক্রি করে দিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন। মদন একদিন প্রস্তাবটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো। জেঠুকে প্রস্তাবটা দেওয়া মাত্র জেঠু মদনকে দু’কথা শুনিয়ে দেয়।
– এতে মদনের প্রতিক্রিয়া কী হয়?
– সে যে খুব খুশি হয়নি বলাই বাহুল্য। এটা তার সবশেষে বলে যাওয়া কথা থেকে বোঝা যায়।
– সে কী বলে?
– সে বলে -‘এর ফল ভালো হবে না। কথাটা মনে রাখবেন।’
– কাল রাতের এই ঘটনা দেখার পরেও তুমি বাবলু জেঠুকে একা ফেলে এলে?
– বাবার শরীর খুব খারাপ। বাবা যদি দেখে যে আমি ফিরছি না তাহলে অনেক চিন্তা করতো।
– এখন তো মনে হচ্ছে এসব মদনেরই কাজ। তুমি ওই নম্বরে মেসেজ করে দাও যে আজ রাত বারোটায় আমরা টাকা নিয়ে যথাস্থানে হাজির থাকব। আমি এখন বাড়ি যাই। রাত সাড়ে এগারোটায় তুমি শিবেনের দোকানের সামনে হাজির থাকবে।
ফেরার পথে রুপমের সাথে গণেশের দেখা হলো। রুপম গণেশকে বিস্তারিত বলে রাত সাড়ে এগারোটায় শিবেনের দোকানের সামনে হাজির থাকতে বলল।

রাত সাড়ে এগারোটা। শিবেনের দোকান।
ঘুরঘুট্টি অন্ধকার। গা ছমছমে ভাব। ধ্রুব সেখানে সবার আগে হাজির হলো। একটু পর একটা টর্চের আলো দেখা গেলো। আরেকটু এগোতেই ধ্রুব বুঝতে পারলো রুপম আসছে। আজ শিবেনের দোকান আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। রুপম বললো, ‘দোকানের ভেতরে একটা আলো দেখা যাচ্ছে। তার মানে শিবেন এখনো জেগে আছে’। রুপম তার ঘড়ির দিকে দেখল ১১টা ৪০ বাজে। কিন্তু গণেশ কোথায়? একটু পর একটা ছায়ামুর্তি দেখা গেলো। সে রুপমদের দিকেই এগোচ্ছে। কাছে আসার পর গণেশকে চিনতে পারলো। গণেশ বলল ‘আমি মদন কনট্রাক্টরের বাড়ির দিকে নজর রাখছিলাম। একটা বাইক বের হতে দেখলাম যেটা এদিকেই আসছে। আমি তাই বাঁশবনের ভেতর দিয়ে শর্টকাটে চলে এলাম’। রুপম বলল ‘আর দেরি করা ঠিক হবে না। আমরা এবার বটগাছটার দিকে এগোই। ধ্রুব দাদা পুলিশকে খবর দিয়েছো?’ ধ্রুব মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝিয়ে দিলো। এবার তারা বটগাছের দিকে চললো। দুর থেকে শেয়ালের ডাক ভেসে আসছে। বটগাছের সামনে এসে তারা কাউকে দেখতে পেলো না। তারা একটা ঝোপের আড়ালে চলে গেলো। রুপম তার কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ নিয়ে এসেছে। এবার রুপম তার ভেতর থেকে তিনটি লাঠি বের করে একটা ধ্রুবকে এবং একটা গণেশকে দিয়ে একটা নিজের কাছে রাখলো। গনেশ জিজ্ঞাসা করলো ‘ব্যাগে আর কিছু আছে?’ রুপম সকলকে একটা করে মাস্ক ও কালো চশমা দিলো। এবার রুপম বললো ‘আমার কাছে মহৌষধী আছে। এই অস্ত্র যাতে আমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে তাই এই ব্যবস্থা। প্রয়োজন হলে এই মহৌষধী ব্যবহার করবো’। একটু পর রুপম ঝোলা থেকে একটা কালো অ্যাটাচি কেস বের করে বললো ‘এটা ধ্রুব দাদা নিয়ে যাবে। যদি দুজন লোক হয় তাহলে যে লোকটা বেশি ষন্ডা ধ্রুব দাদা তার হাতে বাক্সটা দিয়ে টাকাটা গুনে নিতে বলবে।সে সেখানেই মজা টের পাবে এবং অন্যজনকে আমি আর গণেশ ঘায়েল করবো। দুই জনের বেশি হলে মহৌষধীর প্রয়োজন হবে।’ ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে একবিন্দু আলো দেখা গেলো । আলোটা ক্রমশ কাছে আসছে। রুপম একটা কট কট আওয়াজ শুনতে পেলো। এটা হলো গণেশের দাঁতে দাঁত লাগার শব্দ। সে ভয়ে কাঁপছে। একটু পর একটা বাইক এসে দাঁড়ালো। বাইক থেকে দুজন নেমে এসে বটগাছের তলায় দাঁড়ালো। এবার একজন জোরে চিৎকার করে বলল ‘কোথায় রায় বাড়ির লোকজন?’ এই লোকটাই ষন্ডা তাই রুপম ধ্রুবকে এর দিকে এগিয়ে যেতে ইশারা করলো। ধ্রুব গিয়ে যে লোকটা চিৎকার করেছিলো তার হাতে ব্যাগটা তুলে দিলো। ধ্রুব এবার তাকে বললে ‘টাকাটা গুনে নিন’। ইতোমধ্যে রুপম এবং গণেশ অন্য লোকটির পেছনে চলে এসেছে। প্রথম লোকটি ব্যাগটা খুলতেই স্ব-শব্দে একটা বক্সিং গ্লাভস এসে লাগলো লোকটার মুখে। লোকটা ধরাশয়ী হয়ে গেলো। অন্য লোকটি এবার আস্তে আস্তে ধ্রুবর দিকে অগ্রসর হবার সাথে সাথেই রুপম তার মাথায় লাঠি দিয়ে মোক্ষম একটা বাড়ি দিলো। সেও ধরাশয়ী হয়ে গেলো। ধ্রুব এবার একটা হুইসেল বাজিয়ে দিতেই পুলিশের সাব ইন্সপেক্টার আব্দুস সামাদ তাঁর দুজন কনস্টেবল নিয়ে আরেকটি ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। এবার দুজনের মুখে টর্চ ফেলে দেখা গেলো একজন হলেন মদন কনট্রাক্টর এবং অন্যজন হলেন শিবেন। সাব ইনস্পেক্টর আব্দুস সামাদ দুজনের হাতেই হাত কড়া পড়ালেন। এবার তিনি রুপমের দিকে এসে বললেন ‘ধন্যবাদ রুপম এন্ড কোং’।

সকাল দশটা। রায় বাড়ির বৈঠকখানা।গতকাল রাত ২ টায় সুবাসের বাড়ির ধানের গোলা থেকে পুলিশ বাবলু রায়কে উদ্ধার করে। এখন এখানে বাবলু রায়সহ রায় বাড়ির সকলে উপস্থিত। রুপমের সাথে গণেশও আছে।

রুপম শুরু করলো ‘গতকাল আমার প্রথম সন্দেহ হয় শিবেনের উপর। ওনাকে বাবলু জেঠুর নিখাঁজ হবার খবরটা দিতে উনি বলে ওঠেন ‘ওনার কাজ কারবারই ওনাকে গুম করেছে’। তখনই আমার ওর উপর সন্দেহ হয়। এরপর ও আমাকে যখন বললো, সুবাস গত পরশু রাতে ওর দোকান থেকে হলুদের প্যাকেট কিনে নিয়ে যায় তখন আমার সন্দেহ আরও পোক্ত হয়। কারণ এতো রাত্রে হলুদের প্যাকেটের কী দরকার হতে পারে? আসলে ওর উদ্দেশ্য ছিলো বাবলু জেঠু আছে কিনা তা দেখে গিয়ে পালের গোদাদের খবর দেওয়া। আমি তারপর সুবাসের বাড়িতে যাই। ওর বাড়িতে গিয়ে দেখলাম ও আমাকে দেখামাত্র বিষম খেল। এরপর আমি সুবাসের মুখেও একই কথা শুনলাম যে ‘ওনার কাজই ওনাকে গুম করেছে’, তখন আমি শিওর হলাম যে এরা সবাই একই দলের লোক। এরপর আমি যখন সুবাসের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরছিলাম তখন আমাকে হুমকি দেওয়া হয়। তখন আমার মনে হলো এই দুজনই তাহলে শত্রুপক্ষের। এরপর ধ্রুব দাদার সাথে কথা বলে আমি যখন জানতে পারি যে মদন কনট্রাক্টরের সাথে বাবলু জেঠুর শত্রুতা আছে তখন দুইয়ে দুইয়ে চার করার সিদ্ধান্ত নিলাম। গনেশকে সব জানিয়ে আমি মদনের বাড়ির দিকে নজর রাখতে বললাম আর ধ্রুব দাদার উপর পুলিশে খবর দেবার দায়িত্ব ছিলো। মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনাটা শুনে আমি একটা নকল বাক্স বানাই এবং বক্সিং গ্লাভসটা সেখানে সেট করি। বাকি ঘটনা তো আপনাদের সবারই জানা। জেঠু একটা কথা বলুন তো আপনাকে কীভাবে তুলে নিয়ে গেলো?’

বাবলু রায় তার উত্তরে বললেন ‘ধ্রুব চলে আসার মিনিট পাঁচেক পরে এক ব্যক্তি আমার মাথায় শক্ত একটা কিছু দিয়ে আঘাত করে। তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান হবার পর দেখলাম আমি একটা ধানের গোলার মধ্যে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছি। একটু পর একজন আমার মুখে একটা রুমাল ঠেসে ধরলো। তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান হয়ে দেখলাম নিজের খাটে শুয়ে আছি।’

এবার রুপমের হাতে বাবলু রায় একটা প্যাকেট দিয়ে বলল ‘এই হলো তোর পুরস্কার’। রুপম তখন বলল ‘পুরস্কার সবারই পাওয়া উচিত। বাবলু রায় এবার ধ্রুব আর গণেশের হাতে পুরস্কার তুলে দিলো’।

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত