চোরের বাড়িতে চুরি

Reading Time: 9 minutes

 

।।শেখ সাদিয়াতুত তায়্যিবা।।

 

এক

মা-বাবা আজ কিন্তু আমি আর ছাড়ব না। এবার গরমের ছুটিতে আমাকে নানি বাড়ি নিয়ে যেতেই হবে। সেই  ছোট থাকতে গিয়েছিলাম। তারপরে আর যাই নি।

মা বলল, কি করি বলত? তোমার মেয়েটা যে আর ছাড়ছেই না। যেমন বাবা তেমন মেয়ে।

বাবা বলল, আহ্, যেমন বাবা তেমন মেয়ে বলছ কেন?

মেয়েটা যেতে চাইছে নিয়ে যাই। আমরাও তো অনেক দিন হলো যাইনি।

আমি ভাবলাম, এবারে হয়তো যাওয়া হবে।

রাতে সবাই মিলে একসাথে বসে ঠিক করা হলো আমরা কালই যাব নানি বাড়ি। আমরা পরিবারে আছিই বা কয় জন? তিন জন। আমি, বাবা আর মা। সকাল বেলা শুরু হয়ে গেল ব্যাগ গুছানো। আমার ব্যাগ ভরে আমি জিনিসপত্র নিলাম। এর মধ্যে ছিল, জামা-কাপড়, বুট জুতা হাতে তো একটা ঘড়ি ছিলই। আমি তাও আরো একটা ঘড়ি নিলাম। দড়ি, রুমাল, তোয়ালে, এক্সটা গামছা, হ্যাট, বাড়িতে কি একটা ছিল, খেলে পেট নাকি খুব ব্যাথা হয়। সেটাও নিয়ে নিলাম, সানগ্লাস। এসব দেখে বাবা বলল, কিরে  অ্যাডভেঞ্চারে যাচ্ছিস নাকি?

আমি বললাম, বাবা! গ্রামে যাচ্ছি একটু অ্যাডভেঞ্চার না করলে হবে?

আমার কথা শুনে বাবা একটু হাসলেন।

আমরা রওনা দিলাম। বাসে বসে আছি। দেখি নানি বাড়ি পৌঁছাতে কত সময় লাগে?

 

দুই

নানি বাড়ির গ্রামে পৌঁছে গেছি। এখন যাচ্ছি নানির বাড়িতে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। কে যেন বসে আছে দরজার সামনে। একটু কাছে গিয়ে দেখি সে একটা মেয়ে। নানি বাড়ির উঠানে গিয়ে দেখি সে আমার মামাতো বোন টুয়া। আমাকে দেখে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল।

আমি বললাম, কিরে তুইও এসেছিস?

টুয়া বলল, হ্যাঁ আপু। শুনলাম তুমি আসছ। তাই কখন থেকে দরজার সামনে বসে আছি।

তাই নাকি?

টুয়া কিছু না বলে দৌড়ে গেল বাড়ির ভেতরে। চিৎকার করে বলে, টিঙ্কু, মা-বাবা, দিদি ভাই সবাই আস আপু, আন্টি আর আঙ্কেল এসেছে। টুয়া যতক্ষণ বলছে আমি ব্যাগটা মাটিতে রেখে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। শহরে এমন হাওয়া কোথায় পাব। কিছুক্ষণ পরেই ভেতর থেকে টিঙ্কু, নানা-নানি, মামা-মামী সবাই ছুটে এল। সবাই যে কি হৈ চৈ শুরু করল। আমরা ঘরে ঢুকলাম। আমার ঘরটা দোতলায়। বাড়িটা অনেক সুন্দর। মাটির দোতলা। রান্না ঘরটা যে কি সুন্দর! আর বাড়ির পাশে একটা পুকুর। আর সামনে আম আর লিচুর গাছ। আমরা আম আর লিচু খেলাম। নানির কাছে গল্প শুনলাম। সন্ধ্যায় বসে একদিন আম খাচ্ছিলাম। বাবা বলল, কতদিন হলো এভাবে একসাথে বসা হয় না। বাবার কথা শুনে মামা বলল, তোমাদের ফ্যামিলি মেমবারই তো মাত্র তিনজন।

বাবা বলল, তা অবশ্যি ঠিক।

এমন করেই আম, লিচু খেয়ে আনন্দ করছিলাম। টুয়া আমি আর টিঙ্কু মিলে অনেক দুষ্টুমি করলাম। নানির শুকোতে দেওয়া আচার খেয়ে নিলাম। আম আর লিচুর গাছ থেকে ফল চুরি করলাম। যাই হোক, একদিন রাতে নিচ তলার ঘরটাতে আমি, টিঙ্কু আর টুয়া একসাথে শুলাম। রাতে অনেক গল্প হলো। অনেক রাতে আমার ঘুম ভেঙে গেল। বাথরুম গেলাম। বাথরুম থেকে এসে আর ঘুম ধরছেনা। হঠাৎ শুনলাম পায়ের শব্দ। বাহির থেকে আসছে। আমি প্রচন্ড ভাবে ভয় পেয়ে গেলাম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। দেখলাম কয়েক জন টর্চ জ্বালিয়ে গাছে কি যেন দেখছে। কিছুক্ষণ পরে বুঝতে পারলাম গাছ থেকে আম আর লিচু পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ডালা ভরে নিয়ে যাচ্ছে। একজন পেড়ে দিচ্ছে আর কয়েকজন ডালাগুলো নিয়ে গিয়ে ওপাশে রাখছে। আমি তাড়াতাড়ি করে টুয়াকে ডাকলাম।

টুয়া, টুয়া, এই টুয়া, তাড়াতাড়ি ওঠ। দেখ কি হয়েছে।

টুয়া চোখ টেনে ঘুম ঘুম চোখে বলল, কি হয়েছে?

আমি বললাম, আম, আম। লিচু-

কি আম লিুচ?

আরে আম আর লিচু নিয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ দেখলাম টুয়া ঘুমিয়ে গেছে। টিঙ্কু গুমুতে ঘুমুতে হাসছে। আমি নিজেই বাইরে বের হয়ে গেলাম। দৌড়ে গিয়ে চিৎকার করতে করতে বললাম, কে? কে ওখানে? কে …. ? ডালাগুলো নিয়ে তারা দৌড় দিল। আমিও তাদের পেছনে দৌড় দিলাম। তবে বেশিদূর যেতে পারলাম না। অন্ধকারে আমার খুব ভয় লাগে। হেঁটে হেঁটে বাড়ি চলে এলাম। খাটে উঠে শুয়ে থাকলাম।

 

তিন

সকালে চোখে রোগ লেগে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি উঠে বসলাম। আমি ঘুমিয়ে গেছিলাম। কি আশ্চর্য! আমাদের আম, লিচু সব চুরি হয়ে গেল আম আমি ঘুমাচ্ছি?

উঠে বাইরে গেলাম। নানি রান্নাঘরে কি যেন করছে। আমি হাত মুখ ধুয়ে এলাম। নানিকে জিজ্ঞেস করলাম, কি করছ নানি?

নানি আমার দিকে ঘুরে বলল, কিরে আজ আবার নানি কেন?

নানু একটু হাসলেন।

আমি বললাম ওহ্, আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমি তোমাকে নানু বলে ডাকি।

নানু আবার একটু হাসলেন। বললেন, আমি চা বানাচ্ছিলাম। তোর নানা ভাই চা খেতে চেয়েছে।

ও …….।

ঘরে গিয়ে টুয়া আর টিঙ্কুকে ডেকে তুললাম। ওরা গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এল। তারপরে এসে খাটের উপর উঠে বসল। আমি বলা শুরু করলাম। টুয়া, আমি তোকে কাল রাতে ডেকে ডেকে হাঁপিয়ে গেলাম। কিন্তু তুই উঠলিই না।

টুয়া বলল, ডেকেছিলে নাকি?

হ্যাঁ ডেকেছিলাম।

কেন? কি হয়েছিল?

আমাদের আম আর লিচু চুরি হয়ে গেছে।

আপু ………. তুমি এই ইয়ারকি মারার জন্য আমাকে ঘুম থেকে ডেকেছিলে?

তোর এটা ইয়ারিক মনে হচ্ছে! দেখ জানলা দিয়ে।  আমাদের গাছের আম, লিচু একটও নেই।

টুয়া আর টিঙ্কু জানালা দিয়ে বাইরে দেখল। আম লিচু সব উধাও। কিছুই নেই্ কয়েকটা ছোট ছোট লিচু আর কাঁচা আম ঝুলছে। পাকাও  আছে, তবে খুব কম। আমরা দৌড়ে বাইরে গেলাম। গাছগুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। তারপরে আমি বললাম, নিয়ে আসতে হবে। আম আর লিচু নিয়ে আসতে হবে। টুয়া বলল, কি, কি বললে তুমি? এগুলো তুমি কোথা থেকে নিয়ে আসবে। কে চুরি করে নিয়ে গেছে, কোথায় নিয়ে গেছে তুমি কিছু জান?

টিঙ্কু বলল, আরে আপু কি বলছে সেটা আগে শোননা!

আমি বললাম, আমরা না হয় জানিনা। এই পাড়ায় কে চুরি করে, কিন্তু পাড়ার ছেলেমেয়েরা তো জানে। ওদের কাছ থেকে শুনলেই  তো হয়।

টুয়া বলল, হ্যাঁ গুড আইডিয়া।

টিঙ্কু বলল, আমিও কিন্তু থাকব তোদের সাথে।

আমি বললাম, না, তোকে আসতে হবে না। তুই ভয় পাবি।

আপু, আমি ভয় কেন পাব? তুমি তো জানই আমি কত সাহসী। আমি মোটেই ভয় পাইনা।

টুয়া বলল, তুই যাই বলিস তোকে তো আমরা নেব না।

টিঙ্কু মন  খারাপ করে বাইরে ছুটে গেল। আমি আর টুয়াও ছুটে গেলাম টিঙ্কুর পেছনে। টঙ্কু বাড়ির সামনের সিড়িতে বসে আছে। ওর মন খারাপ। আমি আর টুয়া গিয়ে ওর পাশে বসলাম।

আমি বললাম, আচ্ছা দেখ, তুই কত সাহসী ছেলে। তোকে এরকম ছোটাখাট মিশনে নিলে তোর অপমান হয় না। তাই বলছি- আমার কথা শেষ হবার আগেই টিঙ্কু বলে উঠল, আমি আগে  কখনো এরকম মিশনে যাইনি। এই প্রথম। আমি যেতে চাই। কিন্তু তোরা, তোরা খুব দুষ্টু।

আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে আমরা তোকে নিব আমাদের সাথে। কিন্তু কোনো দুষ্টুমি করা যাবে না।

টিঙ্কু বলল, তাই! আমাকে নিয়ে যাবি তোরা!  ইয়াহু! টিঙ্কু যাবে মিশনে, টিঙ্কু যাবে মিশনে।

আমি আর টুয়া দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরে ফেললাম।

টুয়া বলল, এটা কাউকে বলবিনা। কেউ জানলে কিন্তু আর যাওয়া হবে না। টিঙ্কু বলল,আচ্ছা আচ্ছা, কাউকে বলব না।

 

চার

এখন খেলার সময়। আশেপাশে সবাই খেলছে। আর আমরা একজনকে খুঁজছি যে বলতে পারবে এই পাড়ায় চুরি কে করে। শেষে আমরা একজনকে পেয়েই গেলাম। একটা বাচ্চা মেয়ে। ওর কাছে জিজ্ঞেস করতেই ও বলে উঠল, আরে হেইডা তো বাবলু গাং।

টুয়া বলল, গাং! গাং আবার কি?

আমি বললাম, আরে ওটা গ্যাং।

টুয়া বলল, ও ……………।

আমি বললাম, তুমি কি জান ওরা কোথায় থাকে?

হ্ ………….! জানমুনা ক্যান?

আমাদের নিয়ে যেতে পারবে?

তোমরা যাইবা? চল্, নিয়া যাতি পারমু।

টুয়া বলল, ঠিক আছে চল।

মেয়েটা আমাদের নিয়ে যেতে লাগল। মেয়েটা সামনে সামনে যাচ্ছে আর আমরা পেছনে পেছনে। হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছে গেলাম। একটা টিনের ছোট ঘর তার পাশে একা বড় গাছ। আমরা মেয়েটাকে বললাম, তুমি এখন যাও। আমরা কাজ করে আসছি।

মেয়েটা বলল, তোমরা আইতে পারবা?

টিঙ্কু বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ। ওরা না পারলেও আমি ঠিক পথ দেখিয়ে নিয়ে আসব। আমি রাস্তা ভালো করে চিনে নিয়েছি।

মেয়েটি বলল, আইছছা। তাহলে যাই। বলে মেয়েটি চলে গেল। মেয়েটির গায়ে লাল ফ্রক। মাথার চুল ছেড়ে দেওয়া। চুলে জোট। খালি পা। এই মেয়েটর জন্যই তো এখানে আসতে পারলাম। দেখতে দেখতে মেয়েটি অনেক দূলে চলে গেল। আমি সবাইকে বললাম, চল চল। এখন আম আর লিচুর উদ্ধার মিশন শুরু করতে হবে। বলেই আমরা সবাই টিনের ঘরটার পাশে লুকিয়ে গেলাম। আমি টিনের দেওয়ালে কান লাগিয়ে দিলাম। আমার দেখে টুয়া আর টিঙ্কু কান লাগিয়ে দিল। ওপাশ থেকে শোনা যাচ্ছে আম আর লিচুগুলো তো নিয়া আইলাম। এগুলোর কি করবা?

অন্যজন বলছে, হাঁটে বিক্কিরি করা দিমু। বড় গাছের গোড়ায় কিছু পিঁপড়া ছিল। সেগুলো টুয়ার পায়ে কামড়ে দিল। ওমনি টুয়া আ …….  করে চিৎকার দিতেই আমি ওর মুখ চেপে ধরলাম। টিঙ্কুকে ফিসফিস করে বললাম, টিঙ্কু টুয়ার পায়ের ওপর থেকে পিঁপড়াগুলো সরা। টিঙ্কু ধরমরিয়ে উঠে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ সরাচ্ছি। বলে টিঙ্কু টুয়ার পা থেকে ঝেড়ে ঝেড়ে পিঁপড়াগুলো সরাতে লাগল। ঠিক সেই সময় ঘরটা থেকে একটা ছেলে বেরিয়ে এল। চিৎকার করতে লাগল, কে? কে? কে ওই জাগাত? আমি তখনই নিচ থেকে একটা পাথরের টুকরা নিয়ে ঐ পাশে ছুড়ে দিলাম। আর ঐ ছেলেটা চিৎকার করতে করতে করতে ঐ দিকে চলে গেল। আমরা সেই সুযোগে দৌড়। দৌড়, দৌড়, দৌড় দৌড়ে বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনে গিয়ে সবাই জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে থাকলাম। বাড়িতে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে তিনজন মিলে বিছানায় বসে মিটিং করতে শুরু করলাম। আমি বললাম, কালকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ওখানে যেতে হবে আর আমগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসতে হবে। টিঙ্কু বলল, শুধু আম? লিচুগুলো নয়?

আমি বললাম, ওই হলই!

আমি প্ল্যানটা বলা শুরু করলাম।

 

পাঁচ

আমি বাড়ি থেকে যা যা এনেছিলাম সব কাজে লাগিয়ে নিলাম। আমি একটা কালো রঙের জামা পরে নিলাম। কালো সঙ্গের রঙের ঘড়িটা হাতে পড়ে নিলাম। হ্যাটটা মাথায় পরে নিলাম। এটু ডিকেটটিভের মতো সেজে নিলাম। একটা ব্যাগে দড়ি, টর্চ, গামছা, দুটো কেক, খেলে পেট ব্যথা করার ওষুধ টা, এগুলো তুলে নিলাম। তারপরে বুট জুতাটা পরে টুয়া আর টিঙ্কুকে নিয়ে বের হয়ে গেলাম, সেই টিনের ঘরটাতে। এবারেও গিয়েছি বিকেলে খেলার সময়। এবারেও গিয়ে ওখানে লুকিয়ে পড়লাম। এবারে ওপাশ থেকে যা শুনতে পেলাম তা শুনে তো আমি অবাক। ওপাশ থেকে শোনা যাচ্ছে, দাদা, উনেক দিন হয়া গেল কুনো চুরি করা হয়নি। আরেকজন বলছে, হ্! ঠিকই কইছস, এনা বেশিই দিন হয়া গেল চুরি করা হয়নি। টিঙ্কু ফিসফিস করে বলল, আপু কি করবে তাড়াতাড়ি কর।

আমি বললাম, হ্যাঁ দেখছি।

টুয়া বলে উঠল, দেখছি নয় আপু তাড়াতাড়ি কর।

আমি ব্যাগ থেকে দুটো কেক আর খেলে পেট ব্যাথা হওয়ার ওষুধটা বের করলাম। টুয়া টর্চটা জালিয়ে ধরল। আমি একটা কেকে ইচ্ছে মতো ওষুধ ছড়িয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিলাম। আর তারপর টিঙ্কুকে ভালো কেকটা আর ওষুধ মেশনো কেকটা দিয়ে বললাম, এই দুটো কেক নিয়ে গিয়ে ওদের …….., এতটুকু বলতেই ভেতর থেকে একটা  ছেলে বের হয়ে এল। কে এসেছে দেখার জন্য। টুয়া যেই সামনে পা বাড়াল, সেই ওর পা পড়ল একটা ভাঙ্গা ডালের উপর। সঙ্গে সঙ্গে ডালটা মরমর করে ভেঙ্গে গেল।

আমি বললাম, টুয়া তুই এটা কি করলি? ছেলেটা আওয়াজ শুনে এদিকে এগিয়ে আসতে লাগল। হঠাৎ টুয়া টিঙ্কুকে বলল, গাছে ওঠ, টিঙ্কু গাছে ওঠ। টিঙ্কু বলল, কেন গাছে উঠব? টুয়া বলল, যেটা বলছি সেটা কর। টিঙ্কু গাছে উঠল। টুয়া বলল, গাছে পিঁপড়ে আছে। এগুলো ধর। টিঙ্কু পিঁপড়ে ধরল। টুয়া বলল, ছেলেটা যখনই গাছের নিচে আসবে তখনই ওর গায়ে পিঁপড়ে ছেড়ে দিবি। টিঙ্কু মাথা নাড়ল। আমি আর টুয়া পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়লাম। ছেলেটা যেই গাছের নিচে আসল, টিঙ্কু ওর গায়ে পিঁপড়ে ছেড়ে দিল। ছেলো ও বাবাগো বলে চিৎকার করতেই আমি এসে ব্যাগ থেকে গামছা বের কের ওর মুখটা বেধে ফেললাম। টুয়া দড়ি বের করে হাত বেঁধে ফেলল। ছেলেটা মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। আমি বলল, পিঁপড়ে থেকে বাঁচতে চাও? ছেলেটা মাথা নাড়ায়। আমি বললাম, তাহলে আমাদের হয়ে কাজ করতে হব, করবে? ছেলেটা মাথা নাড়ল। আমি টিঙ্কুকে বললাম, পিঁপড়ে ধর, টিঙ্কু পিঁপড়ে ধরল। আমি বললাম, ও যদি পালানোর চেষ্টা করে তাহলে পিঁপড়েগুলো ওর গায়ে ছেড়ে দিবি। টিঙ্কু বলল, আচ্ছা। আমি ওর মুখ আর হাত খুলে দিলাম। বললাম, পিঁপড়েগুলো গা থেকে ঝাড়। ও পিঁপড়েগুলো গা থেকে ঝাড়তে লাগল। আমি বললাম, টিঙ্কু গিয়ে তোমাদের জানালার সামনে কেক খাবে। তোমাকে যেটা দেখে তোমাদের লিডারকে বলতে হবে সবাই েিল কেক খাওয়ার কথা। তোমাকে সবাইকে রাজি করতে হবে। ওর হাত থেকে কেকটা কেড়ে নিয়ে খাওয়ার জন্য। তুমি কেকটা খাবে না কিন্তু সবাইকে খাওয়াবে। আর তারপরে যা হবার তাই হবে। ছেলেটা বলল, আচ্ছা। ছেলেটা চলে গেল। আমি টিঙ্কুকে বললাম। নে কেক দুটো, ভালো কেকটা, ভালো কেকটা কেনটা? এখন চিনব কিভাবে? টিঙ্কু বলল,  ভালো কেকটা এটা। আমি এটা আগে থেকেই একটু খেয়ে রেখেছিলাম।

আমি বললাম, যা টিঙ্কু। ওদের জানালার সামনে গিয়ে ভালো কেটা খা। টিঙ্কু ওদের জানালার সামনে গিয়ে কেকটা খেতে শুরু করল।

ছেলেটা টিঙ্কুকে দেখে বলল, দাদা দেখ।

সবাই জানালার দিকে তাকাল।

ছেলেটা বলল, দাদা চল। বাচ্চাটার হাত থাইক্যা কেকটা নিয়া সবাই- বলা শেষ না হতেই সবাই বাইরে বের হয়ে টিঙ্কুর হাত থেকে ওষুধ মেশানো কেকটা নিয়ে সবাই ভাগ কের খেয়ে নিল। ছেলেটাকে আর কিছু করতেই হলনা।

খেয়ে একজন বলল, দাদা …. !

ওদের লিডার বলল, কি?

ও বলল, আমার পেটটা কেমন যেন করছে।

ওদের লিডার বলল, আমার পেটাটাও।

বলতেই, ওদের মাঝখান থেকে একজন ঐদিকে বনবাদারে মতো জায়গায় দৌড় দিল। আর সবাইও দৌড়ে গিয়ে ওখানে ভিড় করল।

ওখানে আমরা সবাই হাসা শুরু করলাম।

টুয়া হাসা থামিয়ে বলল, চলো। আম আর লিচু গুলো নিয়ে যাই।

আমি বললাম, হ্যাঁ। চলো চলো।

আমরা ভেতরে গিয়ে আম আর লিচুর ডালাগুলো নিয়ে আসলাম। মাটিতে ডালাগুলো রেখে সেখান থেকে কয়েকটা আম আর কয়েকটা লিচু নিয়ে ছেলেটাকে দিলাম। বলল, এটা তুমি একা খাবে। ওদের দিবে না।

ও মাথা নাড়ল। ও খাবে। বলল, ঠাঙ্কু।

আমরা বললাম, ওয়েলকাম।

আমরা ডালাগুলো তুলে নিয়ে চলে গেলাম। ডালাগুলো খুব ভারী। আমাদের পক্ষে নিয়ে আসা কঠিন হচ্ছিল। তাও অনেক কষ্ট করে নিয়ে এসে  খাওয়ার ঘরে রাখলাম। ঘরে যেগুলো গামলা, বাটি ছিল সেগুলোতে আম লিচু তুলে রেখে ডালাগুলো নিয়ে গিয়ে টিনের ঘরটার সমানে আবার রেখে আসলাম। বাড়িতে বিকেল বেলা মা-বাবা, মামা- মামী সবাই ঘুমাচ্ছে। নানা ভাই গেছে মসজিদে নামাজ পড়তে। নানিমুনি পাশের ঘরে নামাজ পড়ছে।

সবাই মিলে আবার ঘরে গিয়ে দরাম করে খাটে শুয়ে পড়লাম। আমি মাথা থেকে হ্যাটটা খুলে ফেলে দিলাম। তারপরে বাথরুম গিয়ে সবাই হাতমুখ ধুয়ে এলাম। নিচে গিয়ে তিনজন তিনগ্লাস পানি খেয়ে ফেল্লাম ঢক ঢক করে। মা ঘুম থেকে উঠে এসে বলল, খুব খিদে পেয়েছে খাওয়ার কি আছে রে?

আমি বললাম, দেখ মা খাওয়ার ঘরে গিয়ে।

মা খাওয়ার ঘরে গিয়ে চোখ বড় বড় করে দেখে বলল, এগুলো কোথা থেকে এল?

সেই গল্প টিঙ্কু মাকে বলে দিল।

মা গুরুত্ব না দিয়ে বলর, গল্প বানাস না তো।

মা একটা বাটিতে পিঠা নিয়ে খেতে চলে গেল। ওই সময়ই বাড়ির টেলিফোনটা বেজে উঠল। আমি দৌড়ে গিয়ে ধরলাম ওপাশ থেকে একজন বলছে, চাচাজান-

আমি তার নাতনি।

ও ………..! চাচাজান আইলে কইয়া দিও এবারে আম, লিচু পঠাবার পারুম না।

আচ্ছা।

ফোন রেখে দিলাম।

মা বলল, তুয়া ………… এই তুয়া ফোনে কে?

আমি বললাম, নানা ভাই এর লোক। আমি চিনি না।

মা বলল, ও ………….।

টিঙ্কুর ঘরে সবাই বসতেই মামা-মামি, বাবা, নানি সবাই মিলে বলল, আম, লিচু এগুলো কিসের?

সেই সময় নানা পেছন থেকে এসে বলল, আরে হাবুরে কইছিলাম না, আম, লিচু দিয়া যাইতে। তাই সবাই বলল ও …………।

আমরা বেঁচে গেলাম।

 

শেষ কথা

কাল নানা বাড়ি থেকে চলে যাব সাই। এতদিন সবাই অনেক মজা করে আম আর লিচু খেলাম। আমরা অবশ্য ধরা পড়েই যেতাম। কিন্তু আমি সামলে নিয়েছি। নানা ভাই নানা ভাই বলেছিল, হারুকে ক্যান মোবাইল করা ঠাঙ্কু কওয়া লাগব।

আম খেতে খেতে টুয়া বলল, কেন?

আম, লিচু সব দিয়া গেল।

টিঙ্কু বলল, ডেকে কিছু খাওয়ালেই তো হয়।

দাদু বলল, এখন কিছু কওয়া তো লাগব।

আমি বললাম, তুমি উনার নাম্বার টা দাও। আমি থ্যাংক ইউ ম্যাসেজ লিখে পাঠাচ্ছি।

দাদু আমাকে ফোন নাম্বারটা দিল। আমি ম্যাসেজ পাঠালাম। নিচে লিখে দিলাম, ফ্রম- চাচাজান।

আজ সন্ধ্যায় সকলে মিলে বসে গল্প করলাম।

আজ রাতে বললাম, এবার কিন্তু খুব অ্যাডভেঞ্চার করা হলো।

টিঙ্কু বলল, হ্যাঁ, টুয়া বলল, কেমন নিজেদেরই জিনিস বুদ্ধি করে চুুরি করে নিয়ে আসলাম।

আমি বললাম, চোরের বাড়িতে চুরি করলাম আমরা।

 

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

You may use these HTML tags and attributes:

<a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>