| 29 মার্চ 2024
Categories
গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য

চোরাকাঁটা (পর্ব-১৭)

আনুমানিক পঠনকাল: 7 মিনিট

‘এই শোন, তুই আর তোর বাপের ঝামেলা তোরা নিজেরা মেটাগে যা! আমাকে পুলিশ ডেকে নিয়ে গিয়ে হেনস্থা করে কেন রে? খবরদার বলে দিলাম, আরেকবার যদি পুলিশ আমাকে ডেকেছে না, একেবারে স্ব-শব্দে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিব, বুঝেছিস? তুই কি ভেবেছিস, আমি কিছু বুঝি না? কচি খোকা? এসবের পেছনে সব তোর কারসাজি! নিশ্চয়ই পুলিশের কাছে আমার নামে নালিশ দিয়ে এসেছিস। কী বলেছিস বল! আমার নামে কিসের নালিশ দিয়েছিস? হারামজাদা, তোদের খানদানি বংশে কী কী নোংরামি হয় সেটা আমার জানতে বাকি আছে ভেবেছিস?’

‘রিয়াজ, তুই কী বলছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! আমি কেন তোর নামে নালিশ করতে যাব? আমি করেছি কখনো বল?’

‘চুপ বদমাশ! সাধু সাজা হচ্ছে তাই না? তুই না করলে আর কে করবে? পুলিশ কীভাবে তোর বাপের কথা জানলো? আমার আর তোর মধ্যে ট্রেনে কী হয়েছিল এসব কথা পুলিশ হাওয়া থেকে পেয়েছে তাই না? শোন অনিক, আমার কোনো কথা যদি পুলিশের কানে যায়, তাহলে সবার আগে আমি তোর টুঁটি চেপে ধরবো। বুঝেছিস?’

ফোনের এপাশে অনিক তখন চুপ। মনে পড়ে গেল বারো বছর আগের সেই রাতের কথা। রিয়াজ সেই বয়সেই জুয়া, ড্রাগস অনেক কিছুতেই হাত পাকিয়েছে। ট্রেনের বাথরুমে ড্রাগ নিতে গিয়ে ট্রেনের এক ক্রুর হাতে ধরা পড়ে গিয়েছিল রিয়াজ। অনিক তখন বাথরুমে যেতেই বের হয়েছিল। মাঝপথে ট্রেনের ক্রুর সাথে রিয়াজের উত্তপ্ত কথাবার্তা শুনে দাঁড়িয়ে যায়। অন্য কোনোভাবে ম্যানেজ করতে না পেরে এক পর্যায়ে সেই লোকের হাতে কিছু বখশিশ ধরায়ে দিয়ে সেই যাত্রায় রেহাই পায় রিয়াজ।

অনিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটিই দেখে। রিয়াজের সাহস আর দৌরাত্ম্য দেখে স্তম্ভিত না হয়ে পারা যায় না। কখন কাকে কীভাবে হাত করতে হয়, সবকিছুই যেন রিয়াজের নখদর্পণে। তারপর অনিকের সাথেও অনেক কথাবার্তা হয় রিয়াজের। বাকবিতণ্ডাও হয়। ওরা তখন ক্যাডেট কলেজের শেষ প্রান্তে। রিয়াজের এই ড্রাগ এডিকশন জানাজানি হয়ে গেলে কলেজ থেকে ওকে এক্সপেল করে দিবে। রিয়াজের বাবার প্রভাব প্রতিপত্তিও কোনো কাজে আসবে না। ক্যাডেট কলেজের রুলস রেগুলেশন্স অনেক কড়া। অনিক এসব কথাই ভালো মনে বলতে গিয়েছিল রিয়াজকে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! উল্টা অনিককে শাসিয়েছিল রিয়াজ। রিয়াজের এই কথা জানাজানি করে দিলে সে নাকি তাদের পরিবারের অজানা কলঙ্কের কথা সবার কাছে বলে দিবে।

অনিক আর কথা বাড়ায়নি। রিয়াজের পক্ষে সবই সম্ভব। সেই থেকে রিয়াজের সাথে এ্যাডজাস্টমেন্ট করেই চলতে হচ্ছে তাকে। কৈশোরের সেই হাল্কা নেশা আর শখ থেকে রিয়াজ এখন পাক্কা জুয়াড়ি। ড্রাগ ডিলার। পুলিশের হাত থেকে তার প্রভাবশালী বাপের প্রভাবেই এখনো বেঁচে আছে। পুলিশ তার টিকি স্পর্শ করার কথাও চিন্তা করেনি কখনো। আর স্পর্শ করবেই বা কী করে? রিয়াজের বুদ্ধি পাক্কা জুয়াড়িকেও যে হার মানায়। পুলিশবিভাগে এত জাঁদরেল অফিসার কোথায় যে রিয়াজের এই বুদ্ধির সাথে টেক্কা দেবে?

অনিকের অবশ্য এসবে আর বিশেষ লেনাদেনা নেই। তার নিজের জীবন নিয়েই সে এখন মহাব্যস্ত। তাদের পরিবারের ওপরে নেমে আসা ঝড়ে মানুষজন এমনকি বন্ধু-বান্ধবদেরও আগ্রহ আর কৌতুহলের শেষ ছিল না। সেসব কৌতুহল ঠেকাতে রিয়াজের সাহায্যই বরং বেশি প্রয়োজন ছিল অনিকেররিয়াজ তার ত্যাড়াব্যাকা কথাবার্তায় কাউকে আর বেশি আগে বাড়তে দেয়নি। রিয়াজ অনিককে কথা দিয়েছিল,

‘আমি যা জেনেছি তা আমার কাছেই থাকবে। তুই যা জানলি তা তোর মধ্যেই রাখবি। সাবধান, ভুলেও নিজের মুখ খুলবি না!’

‘তুই নিজের মধ্যে রাখতে পারবি তো রিয়াজ?’

‘দেখ, আমাকে চ্যালেঞ্জ করবি না। কখন কীভাবে ম্যানেজ করতে হয়, রিয়াজের সেটা ভালোই জানা আছে।

আজ পুলিশ স্টেশনে গিয়ে রিয়াজ কীভাবে ম্যানেজ করে এসেছে অনিক জানে না। রিয়াজের নামটা লেখার ইচ্ছে ছিল না তার। কিন্তু রিয়াজের উতপটাং কথাবার্তায় তার নাম না লিখেও উপায় ছিল না। শান্তর ঘাড়ে দোষ দিলে সুনিশ্চিতভাবেই সে রিয়াজের নাম নিবে। কাজেই রিয়াজকে সন্দেহের তালিকায় না রাখাটাও সন্দেহজনক।

সেদিন রিয়াজকে দেওয়া কথা অনিক রেখেছে। নিজের মুখ খোলেনি কখনোএতদিন পরে ভাবতে গিয়ে মনে পড়লো, সেদিন ট্রেনের লম্বা প্যাসেজের একপাশে শান্তও এসে দাঁড়িয়েছিল একসময়। নিজেদের মধ্যে তর্কাতর্কির উত্তেজনায় শান্তকে ওরা প্রথমে খেয়ালই করেনি। পরে খুব সম্ভবত আরেকজন যাত্রী এসে পড়াতে ওদের কথা থেমে গিয়েছিল। আর সেইসময়ই শান্তকে প্রথম লক্ষ করে অনিক আর রিয়াজ। শান্ত হয়ত ওদের কথাবার্তা শুনে ফেলেছে, দুজনেই এমনটা আশঙ্কা করেছিল। কিন্তু পরে শান্ত আর এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করেনি। তাই এই কথাটাও মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গেছে। সেকথা মনে হতেই অনিক সোৎসাহে বলে ওঠে,

‘আরে, বুঝলি না…পুলিশ এসব খবর কই থেকে পাইছে? শান্ত বলে দিছে সব।’

রিয়াজ কিন্তু বিশ্বাস করলো না এই কথা। অবিশ্বাসীর গলায় বললো,

‘আবারও আমাকে ভগি খাওয়াচ্ছিস? শান্তর কীসের ঠ্যাকা পড়ছে রে? শান্তরও কি তোর মতো ফ্যামিলি কেলেংকারী আছে নাকি?

‘আহা…তুই ভুলে গেলি? মনে নেই সেদিন আমাদেরকে ট্রেনের প্যাসেজে দেখে ফেলেছিল শান্ত? ঐ যে তুই আর আমি যখন কথা বলছিলাম… ইয়ে মানে ঝগড়া করছিলাম! সেইসময় শান্ত এসে দাঁড়িয়েছিল আরেক মাথায়, মনে নেই তোর?’

‘কিন্তু শান্ত এমনি এমনি গিয়ে পুলিশের কাছে এসব বলতে যাবে কোন দুঃখে? তোর বাপের কেচ্ছা কাহিনিতে শান্তর কীসের ইনভলভমেন্ট? আচ্ছা, ভালো কথা। আমার কীসের ইনভলভমেন্ট? পুলিশ আমাকে এসব কথা ক্যান জিগাইলো?’

অনিক কী বলবে বুঝতে পারে না। তার শ্যালিকার রেপকেস নিয়ে যে পুলিশ ইনভেস্টিগেশন করছে, এটা রিয়াজকে বলা যাবে না। পুলিশকেও সে একথা বলে এসেছিল। ডাকাবুকো রিয়াজ যদি বুঝতে পারে, তাকে রুমানার রেপকেসে জড়ানো হচ্ছে তাহলে সে কী ঘটিয়ে বসবে কেউ বলতে পারে না রিয়াজ আর তার বাপের হাত অনেকদূর পর্যন্ত লম্বা! কিন্তু এখন এই প্রশ্নের কী উত্তর দেবে অনিক?

অনেক ভাগ্যে একটা যুক্তি প্রায় সাথে সাথেই মাথা থেকে বেরিয়ে এলো অনিকেরবললো,

‘তোর বিজনেসের কোনো ঝামেলা হয়নি তো? পুলিশ হয়ত আগডুম বাগডুম কথা বলে আসল ঘটনা জানতে চাচ্ছে!’

‘সেজন্য তোর কথা, তোর বাপের কথা এসব আসবে কেন রে? বোকা পাইছিস আমারে?’

‘ইয়ে…আসতে পারে না? বন্ধু-বান্ধবদের কারো থ্রুতেও তো কিছু জেনে থাকতে পারে পুলিশ। মানে…এমন কেউ হয়ত আছে যে তোর আর আমার সেদিনের সেই কথাবার্তা শুনে ফেলেছিল। আর সেই এসব কথা বলে এখন কান ভারী করছে পুলিশের!’

অনিক এতক্ষণে একেবারে সঠিক রাস্তাটা পেয়ে গেছে। দোষ পুরোপুরিভাবে শান্তর ঘাড়ে চাপানো গেছে। এখন যা করার বাকীটুকু রিয়াজই করবে! ওর কাজ আপাতত শেষ। 

অনিকের আশা মিথ্যে হলো না। শান্তর ওপরে গজরাতে গজরাতে রিয়াজ ফোন ছেড়ে দিল। শান্তর চৌদ্দ গুষ্ঠির যদি খবর বের করতে না পারে, তাহলে নাকি সে বাপের পোলাই না। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো অনিক। নিজের ঘাড় থেকে ঝামেলা নামানো গেছে। এখন যা হওয়ার হোক। রুমানার কথাটা শান্ত যদি এখন রিয়াজকে বলেও দেয়, অনিক স্রেফ সেটাকে অস্বীকার করবে। বলবে, এসব কিছুই শান্তর চাল। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে বইয়ে দেওয়ার জন্য সে এসব আগডুম বাগডুম বকছে। রিয়াজের পেটে যতই শয়তানী বুদ্ধি থাকুক না কেন, যুক্তি তর্কের মারপ্যাঁচ তেমন ভালো বোঝে না রিয়াজ। তাকে টেনিস বল বানিয়ে খেলাটা তেমন কঠিন কিছু হবে না বলে আশা করা যাচ্ছে।

এতসব কিছু করার পেছনের ইতিহাসটা আর কেউ না জানলেও অনিক নিজে তো জানে! যেভাবেই হোক শান্তকে জিততে দেওয়া যাবে না। শান্ত নিজেকে খুব চালাক মনে করে তো! অনিক ওর সব চালাকি চিরদিনের মতো ঘুঁচিয়ে দিবে। 

সুমনার সাথে শান্তর অতীত সম্পর্কের কথাটা এভাবে তার কাছ থেকে গোপন করার কী দরকার ছিল? জানালে কি অনিক ভুল বুঝতো ওদের? নাকি এখনো ওদের প্রেম মরেনি পুরোপুরি? মাঝরাত্তিরে এসে হানা দেয়!

ওরা দুজন মহাচালাকি করে তাকে যতই ঘোল খাওয়াতে চাক না কেন, অনিক সবকিছুই জেনে গিয়েছিল। এরা তাকে কী মনে করে? এতই বোকা অনিক?

দুজনের ঘটনা অনিক প্রথম জানতে পেরেছিল সুমনার একটা ছোট ডায়েরি থেকে। স্ত্রীর ব্যক্তিগত জিনিস দেখার ব্যাপারে এমনিতে তেমন একটা আগ্রহ নেই অনিকের। সুমনা ক’টা শাড়ী জামা কিনলো, মাসে ক’টা ব্যাগ পাল্টালো…এসব লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার অভ্যাস নেই তার। প্রতিমাসের হাত খরচের টাকাটা সুমনাকে দিয়ে দেয় অনিক। সুমনা কীভাবে সেটা থেকে সবকিছু ম্যানেজ করে চলে, তা নিয়ে অনিক মাথা ঘামায় না। কিন্তু ডায়েরির ব্যপারটা আলাদা। সব পুরুষেরই সম্ভবত জানতে ইচ্ছে করে, স্ত্রীর মনের গোপন অলিন্দে কিছু লুকোনো আছে কী না! আর সেটা জানতে গিয়েই তো পেয়ে গেল একেবারে গুপ্ত সুড়ঙ্গের সন্ধান। সেই সুড়ঙ্গ দিয়ে চলতে চলতে আবিষ্কৃত হয়ে গেল একেবারে চমক লাগানো অবিশ্বাস্য তথ্য।

সুমনার স্কুলজীবন থেকে শুরু হয়েছে সেই ডায়েরি লেখা। মাঝে মাঝে কিছু পাতা ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। যেন ডায়েরি লেখক নিজের কাছেও সেই কথাগুলো আর প্রকাশিত হতে দিতে চায় না। অথবা অন্য কেউ যদি দেখে ফেলে সেই ভয়ে লুকিয়ে ফেলতে চায়। কিন্তু ডায়েরিটা প্রাণে ধরে ফেলেও দিতে পারছে না। পুরনো স্মৃতির মতো আঁকড়ে রেখেছে এত গুলো দিন!। অল্প বয়সের ছেলেমানুষী ভরা এটা সেটা আবেগঘন সব কথাবার্তা। কিছু কাঁচা হাতের কবিতাও আছে। সেই ডায়েরিরই একটা পাতায় খুব পরিচিত অন্য একটা হাতের লেখা দেখে চমকে উঠেছিল অনিক। হাতের লেখাটা চিনতে একটুও দেরি হয়নি তার। তার সব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর লেখা সে খুব ভালোভাবে চেনে। এই লেখাটাও তাই অনেক পরিচিত। লেখাটা শান্তর। আর যে কবিতাটা সেখানে লেখা ছিল, সেই কবিতাটাও শান্তর অতি প্রিয় একটা কবিতা। প্রায়ই বন্ধুমহলে কবিতাটা আবৃত্তি করে শোনাতো শান্ত। 

সুমনার ডায়েরিতে শান্তর লেখা দেখে একেবারে ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে অনিক। প্রথম কিছুক্ষণ বিস্ময়ের ধাক্কাটা যেন কাটতেই চায় না। এই লেখা এখানে এলো কী করে? শান্তর সাথে কি সুমনার কিছু চলছে নাকি? কিন্তু এখন কিছু চললে পুরনো ডায়েরিতে লেখা এলো কীভাবে? এই লেখা তো কিছুতেই এই সময়ের নয়! সময়ের ভারে হলদেটে দাগ পড়ে গেছে ডায়েরির পাতায়। ভেতরে ভেতরে অনুসন্ধুৎসু হয়ে পড়ে অনিক। খুব বেশি খোঁজ করার অবশ্য দরকার পড়ে না। শান্তর দেশের বাড়ি আর সুমনার নানাবাড়ি যে একই জায়গায়, এটা বের করে ফেলতেই বাকি কাজটা সহজ হয়ে যায়। 

অথচ সুমনা আর শান্ত দুজনেই এমন ভাব দেখায় যেন কেউ কাউকে চেনে না। সবেমাত্র নতুন আলাপ হলো। শান্তর ব্যাপারে সেদিনের পর থেকেই আলাদা নজরদারী চালিয়ে যাচ্ছে অনিকওর ভালো মানুষী দেখানো সরলতাকে এখন পুরোটাই ভান বলে মনে হয়। আর নিজের স্ত্রীকেও একেবারে ধোয়া তুলসি পাতা বলা যাচ্ছে না। অতীত প্রেমকে যে কী না এত কৌশলে আড়াল করতে জানে, সে হয়ত আরো অনেক কিছুই জানে।

নিজেদের আদি বাড়িতে ঘটে যাওয়া সেইসব ঘটনাগুলো আড়ালেই চাপা থাকুক। ওগুলো আর কেউ খুঁড়ে বের না করলেই তো হলো। তাছাড়া নিজের বাবার সাথে ওর সম্পর্কটাও তো এখন একরকম নির্জীব। বাবা ছেলে কেউ আর কাউকে পুছতে যাচ্ছে না। যার যার জীবনে সে সে খুশি আছে। অতীতে ওদের বাড়িতে কী হয়েছে না হয়েছে, তা নিয়ে ভাবাভাবিরও দরকার নেই। এখন জীবনের ছোটখাট উটকো ঝামেলাগুলোকে আস্তে আস্তে উপড়াতে পারলেই হয়ে গেল। 

হঠাৎ খুট করে একটা শব্দ আর তার পরপরই কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনতে পেল অনিক। শব্দটা আসছে ওদের শোওয়ার ঘরের দিক থেকে। সেদিকে পা বাড়ালো অনিক। মিসক্যারেজের পর থেকে রুমানা কেমন যেন বেশি মাত্রায় শান্ত আর চুপচাপ হয়ে গেছে। আগে ওর ঘর থেকে প্রায়ই নানারকম শব্দ শোনা যেত। কিছু ঠিকমত করতে পারতো না বলে ঘরের এটা সেটা জিনিসপত্র প্রায়ই ওর হাত থেকে পড়ে ভেঙে যেত। সুমনার পাশাপাশি অনিকও অসীম ধৈর্য দেখিয়ে এসেছে প্রথম থেকেই। একটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়ের জীবনের স্থবিরতা বুঝি ওদের জীবনটাকেও কোনো না কোনোভাবে প্রভাবিত করেছে। অনিক আর সুমনার দাম্পত্যেও খুব ধীরে ধীরে মন্থরতা এসে বাসা বাঁধছে। হয়তোবা ওদের দুজনের অনেকটা অজান্তেই! নিঃশব্দ ঘুনপোকার মতো খেয়ে ফেলছে দাম্পত্যের সবটুকু নির্যাস।

শোওয়ার ঘরের কাছাকাছি এসে অনিক দেখতে পেল, সুমনা একটু যেন বিধ্বস্ত হয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখেমুখে কেমন একটু সচকিত চাঞ্চল্যঅনিককে আসতে দেখেই সুমনা আরো যেন ভড়কে গেল। নিজেকে লুকাতে পারলেই যেন বাঁচে। অনিকের বিস্ময়ের সীমা রইলো না। বললো,

‘কী হয়েছে তোমার? ভূত দেখেছো নাকি? কিছু কি পড়ে গিয়েছে? শব্দ শুনলাম মনে হলো!’

‘না…না কিছু না! টেবিল ল্যাম্পটা একটু ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছিল। উঠিয়েছি। আর আমার এমনি একটু খারাপ লাগছে। ভাবছি ছাদে যাব। ভালো লাগছে না। কেমন যেন দমবন্ধ লাগছে!’

‘ছাদে যাবে? এই বেলা এগারোটার সময়ে তুমি ছাদে গিয়ে কী করবে? মাথাটাথা খারাপ হলো নাকি?

সুমনা উত্তর দেয় না। কেমন একটা বিভ্রান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে অনিকের দিকে। পাশের ঘর থেকে রুমানার একঘেয়ে গুন গুন আওয়াজটা আবার শুরু হয়েছেসুমনার হঠাৎ মতিভ্রম হলো যেন। সবকিছু ভুলে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে দিলো। অনিক পুরাই হকচকিয়ে গেল এই আচরণে। সে এসবের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না। সুমনার কি সত্যি সত্যি মাথাটা খারাপ হয়ে গেল? 

ক্রমশ

 

 

আগের পর্ব ও লেখকের অন্যসব লেখা পড়তে ক্লিক করুন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত