| 28 মার্চ 2024
Categories
গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য

চোরাকাঁটা (পর্ব-১৯)

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

পাঁচ বছর পরের কথা।

দু’বছরের ছোট্ট সুমনকে নিয়ে রিক্সায় উঠতে খুব ভয় পায় সুমনা। এত দুরন্ত হয়েছে ছেলেটা! এটা ধরতে চায়, সেটাকে হ্যাঁচকা টান মারতে চায়। মাঝে মাঝে উপুড় হয়ে নীচ থেকে কিছু একটা তুলতে চায়। ভয়ংকর অবস্থা! একেকসময় মনে হয়, রিক্সা থেকে বুঝি পড়েই যাবে ছেলেটা! ইদানিং ওর স্বামীর কাছে নতুন আবদার জুড়েছে সুমনা। সব খরচ সীমিত করে হলেও যেন একটা গাড়ি কেনে তার স্বামী। আজ রিক্সায় উঠে সুমনের ছটফটানি সামাল দিতে দিতে আবারও মনে করিয়ে দিলো কথাটা।

‘এবারে আর দেরি না করে প্লিজ একটা গাড়ি কিনে ফেলো। গাড়ি কিনলে কতদিকে সুবিধা। যাতায়াতের খরচটাও তো কমে যাবে। আমরা সবাই মিলে একসাথে বেড়াতে যেতে পারবো। কত মজা হবে! দেখো, আজ গাড়ি থাকলে রুমানা আর সুপ্তিকে বাসায় রেখে আসতে হতো না।’

‘তুমি কি মনে করছো ওরা আমাদের সাথে আসতে না পারার দুঃখে মরে যাচ্ছে? রুমানা আছে নিজের মতো। আর সুপ্তি তো ফেসবুক নয়তো মোবাইল। এই দুইটার কোনো একটা নিয়ে মেতে আছে। এসব থাকলে দুনিয়াতে ওর আর কোনোকিছুরই দরকার পড়ে না।আমাদের সাথে বেড়াতে এলে ওরা দুজনেই বোর হতো, বুঝলে?’

সুমনা তবুও মুখটাকে গোমড়া বানিয়েই বসে থাকে। সুমনের দুই হাত নিজের মুঠিতে ধরে রেখে শক্ত গলায় বলে,

‘এইভাবে বসে থাকো। খবরদার নড়বে না। তোমার বাবা গাড়ি কিনবে না। রিক্সায় উঠলে এত ছটরফটর করা যায় না পাজি ছেলে।’

সুমনার শক্ত মুঠির নীচে সুমনের দু’হাত খলবলিয়ে ওঠে। মায়ের সাথে পেরে না উঠে এক পর্যায়ে ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলে সুমন। সেদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসি দিয়ে শান্ত বলে,

‘জমিদারের বংশধরের সাথে থাকলে আজ গাড়ি কেন, হেলিকপ্টারেও চড়তে পারতে অথচ কী পোড়া কপাল দেখ! তোমার এই বরের না আছে গাড়ি… না আছে জমিদারী!’

সুমনা ঝট করে শান্তর দিকে তাকিয়ে চাপা কঠিন গলায় বলে,

‘আবার ঐ কথা! কতদিন বলেছি, এই ফালতু বিষয় নিয়ে মজা নিবা না আমার সাথে।তোমার কাছে কি আর কোনো বিষয় নেই কথা বলার জন্য?’

শান্ত প্রমাদ গোনে। ইদানিং সুমনের সৃষ্টিছাড়া দুষ্টুমি সামাল দিতে গিয়ে সুমনা পেরেশান হয়ে থাকে বেশিরভাগ সময়। যখন তখন রেগে যায়। এর মধ্যে ঐ পুরনো ক্ষত নিয়ে মজা করলে সুমনার রাগ না করাটাই অস্বাভাবিক। মনে মনে দুঃখিত হয় শান্ত। কেন যে মাঝে মাঝেই ওরও এই বিষয়টা নিয়েই কথা বলতে ইচ্ছে করে! সুমনা যত এটাকে এড়িয়ে চলতে চায়, শান্ত ততই যেন সেই ক্ষতটাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে। নিজের আটপৌরে সাদাসিধে জীবনের সাথে অনিকের অভিজাত প্রাচুর্যভরা জীবনটাকে মনের অজান্তেই বার বার তুলনা করে ফেলে শান্ত। সুমনাকে বলার ছলে নিজেই বুঝি নিজের কাছে যাচাই করে নিতে চায়, ‘সুখ দিতে পেরেছি তো সুমনাকে? অনেকটা অপূর্ণতা তো রয়েই গেল এখনো।’

সুমনা শান্তর এই ব্যাপারটাতে ভীষণ রকম বিরক্ত। হয়ত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে সুমনাও এখন ক্লান্ত বোধ করে। কম ধকল তো গেল না বেচারীর ওপর দিয়ে। সেই কৈশোরবেলা থেকে অসুস্থ বোনের দেখাশোনার ভেতর দিয়ে জীবন যুদ্ধের পেরেশানী শুরু। তারপর একে একে নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রেমের সলিল সমাধি, বোনের সাথে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনার পেছনে জড়িত মানুষটার অনাকাঙ্ক্ষিত প্রকাশ, স্বামীর এক্সিডেন্টে মৃত্যু…তারপর আবার অপ্রত্যাশিতভাবে প্রথম প্রেমের পুরনো ঘাটেই তরী ভেড়ানো! কত প্রেক্ষাপট পরিবর্তন এই এক জীবনের চেনা মঞ্চেই।

সেজন্যই হয়ত আগের মতো আর ধৈর্যের মূর্তমান প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না সুমনা। অল্পতেই ধৈর্যচ্যুতি ঘটে যায়।

শান্তর প্রতি উষ্মা দেখিয়ে সুমনার মনটাও একটু খারাপ হলো।

কেন যেন এখন অল্পতেই মেজাজ চড়ে যায়। বেশিকিছু ভাবতে মন চায় না। মাথার ভেতরটা দপদপ করতে থাকে সারাক্ষণ। মনে হয় বুঝি শিরা ফেটে বেরিয়ে আসবে ভেতরের উষ্ণ রক্তের প্রস্রবন। আর ভালো লাগে না ওসব পুরনো কথা…পুরনো স্মৃতি…পুরনো যন্ত্রণা! কিছুই আর ফিরে পেতে চায় না সুমনা। কোনো অতীত ঘাটেই আর নোঙর ভিড়িয়ে দু’দণ্ড দাঁড়াতে মন চায় না। কল্পনাতেও না!

তবু পাঁচ বছর আগে যে জায়গাটিতে সবকিছু থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল, ঠিক সেখানেই আজ আবার ফিরে যেতে হচ্ছে ওকে। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার আনিসুল হক আংকেলের আমন্ত্রণে, তার বাসায় আজ যাচ্ছে সুমনারা। আংকেল রিটায়ার করেছেন দুই বছর হয়ে গেল। সুমনার বিয়ের বয়স সাড়ে তিন বছর। মাঝখানের ঝড়ঝাপ্টা, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা, ভীতি…সবকিছুকে মুছে ফেলতে আনিস আংকেলের অবদান অনেক। দূরে থেকেও তিনি পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন। নতুন করে সবকিছু শুরু করতে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। 

সেই দিনগুলোতে প্রায়ই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যেত সুমনার। মনে হতো, পাশ থেকে অনিক ওর গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে দিতে বলছে,

‘সুমনা…এ্যাই সুমনা…প্লিজ ওঠো। আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি পিপাসা পেয়েছে। একটু পানি দাও আমাকে। প্লিজ…একটু পানি দাও… তুমি দেখতে পাচ্ছো না আমি কেমন জংলা একটা জায়গায় পড়ে আছি।আমার সারা শরীরে কাদামাটি। জোঁক ছেয়ে ফেলেছে আমার পুরো শরীর। কেউ নিতে আসছে না আমাকে। কেউ দেখতে পাচ্ছে না। আর কতক্ষণ এভাবে পড়ে থাকবো আমি! প্লিজ একবার এসে আমাকে নিয়ে যাও। একটু পানি খেতে দাও আমাকে… ওঠো সুমনা! আর ঘুমিয়ে থেকো না…।’

অনিকের স্পর্শ অনুভব করতে পারতো সুমনা। অথচ তার আওয়াজটাকে ঠিকমত শুনতে পেত না। মনে হতো বুঝি কতদূর থেকে ভেসে আসছে অনিকের করুণ আকুতি। বাকি রাত চোখের পাতা এক করতে পারতো না সুমনা। 

রুমানাকে নিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল তার নানা বাড়িতে। 

গলার কাঁটাকে ফেলে দিতে না পারলে যেমন বহু কষ্টে তাকে গলায় নিয়েই বাস করতে হয়, নানাজান অনেকটা যেন সেভাবেই মেনে নিয়েছিলেন বিধবা সুমনাকে। কিন্তু অবোধ প্রতিবন্ধী রুমানাকে সহ্য করা তার জন্য রীতিমত অত্যাচার হয়ে উঠলো এক অবোধ বিকলাঙ্গ বংশধরকে চোখের সামনে দিনরাত দেখতে দেখতে লতিফুর রহমানের মানসিক স্থিতিই এখন অনেকটা প্রশ্নের সম্মুখীন। সেখানে বংশের ধ্বজাধারী আরেকজনকে সহ্য করার ভার বহন করতে তার মন সরাসরিই না করে দিলো। রুমানাকে দু’দন্ডও নিজের চোখের সামনে দেখতে চাইতেন না তিনি। দেখা মাত্রই বিরক্তি আর ঘৃণায় বিষিয়ে যেত ভেতরটা। 

সবসময় সামনাসামনি প্রকাশ না করলেও নিজের মনে বিড়বিড় করতেন বেশিরভাগ সময়। কখনোবা প্রকাশ্যে জোরে জোরে সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়েই বলতেন,

‘অভিশাপ…সব আমার পোড়া কপালের অভিশাপ! কুন বান্দির পুতের কুনজর পড়ছে আমার সংসারের ওপর! সোনার সংসার জ্বইলা পুইড়া ছাড়খাড় হইয়া গ্যালো রে আমার। সব শ্যাষ হইয়া গ্যালো। ওমুন সোনার চান্দের টুকরা জামাই আমার এমুন কইরা মইরা গ্যালো। সব আশাভরসা শ্যাষ হইয়া গ্যালো রে আমার।’

সেই আহাজারী সহ্য করা যায় না। সুমনা দরজা বন্ধ করে কান চাপা দিয়ে বসে থাকতো। ভাবগতিক দেখে রুমানা কেমন যেন আরো ভড়কে যেত। ভয়ে ভয়ে অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকতো বোনের দিকে। আবোল-তাবোল বকতে থাকতো নিজের মনে। বোনকে কাঁদতে দেখে অবোধ রুমানাও প্রাণপনে বোঝার চেষ্টা করতো, সবাই এমন অদ্ভুত আচরণ কেন করছে? সেই বুদ্ধিহীন মস্তিষ্কে ধুরন্ধর পৃথিবীর কোনো ছলচাতুরিই ধরা পড়তো না। ফ্যালফ্যালে অবুঝ দুটি চোখ শুধু ঘুরে ঘুরে সাক্ষী থেকে যেত প্রতিটি ঘটমান চলমান দৃশ্যকল্পের। অবলা বোনটিকে বুকের সাথে চেপে ধরে সুমনা কাতর গলায় বলতো,

‘সব ঠিক হয়ে যাবে। কিচ্ছু হবে না। তুই ভয় পাস না। সোনা বোন আমার। ভয় পাস না তুই।’

সেই দিনগুলোতে সুমনার সৎ নানীই আগলে রেখেছিল ওদের দু’বোনকে। সাপের মতো ফোঁসফোঁস করা স্বামীকে শক্ত ভাষায় ডলা দিতে দিতে শর্মিলাবানু বলতেন,

‘ক্যান, ওহন কার বদ নজরের দোহাই দিতাছেন? আপনার নজরই পড়ছে আর কারডা পড়বো? কইছিলাম আমি, অত বড় ঘরে সন্মন্ধ করবার যাইয়েন না। এহ্‌! বড় বংশ! ওহন বড় বংশ ধুইয়া পানি খান। বড় বংশের বড় কীর্তি ফাঁস হইয়া গ্যাছে, দ্যাইখাও দ্যাখেন না আপ্নে? সক্কলে কী কয় শুনবার পান না? নাকি বেবাক কিছু জাইনাই নিজের হাতে নিজের নাতনীটার সর্বনাশ করছেন? বড় বংশের লগে সন্মন্ধ কইরা নিজের মাথা উঁচু করবার গ্যাছিলেন! অহন আইসা আজাইরা মাইনষেরে দুষাইত্যাছেন!’

‘খবরদার কইলাম ছোটবউ! যা জানো না তা লইয়া বেশি কতা কইবার আইসো না। বোকা মাইয়া বইলাই কপাল পুড়ছে! পুরুষ মাইনষে এট্টু আধটু বাইরমুখী হইবোই। তারে আঁচলে বাইন্ধা থোওন লাগে। স্বামীর ইচ্ছা মাফিক দুই একটা কাম করোন লাগে। কথায় কথায় অত মুখ দ্যাখাইলে চলে না! মাইয়া আছিলো বোকা…নাতনিও হইছে দুইন্যার বোকা! ওমন সোনার টুকরা পুলারে…’

‘রাখেন আপনার সোনার টুকরা পুলা! আপনার ফাঁকা ঢোল ফাইটা ফক ফক করতাছে। ওহনও ঢোল পিটোনের খায়েশ হয় ক্যামনে?’

সুমনা বোবা দৃষ্টিতে শূন্যে তাকিয়ে থেকে ভাবতো, তার সাথেই কেন এসব হলো? ভাগ্যের দোষে? নাকি নানাজান যা বলে তাই সত্যি? সে, তার মা…দুজনেই বোকা। বোকা বলেই নাকি ভালোকিছু তাদের কপালে সয় না। আজেবাজে জিনিস নিয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিতে হয়। আসলেও কি তাই? তার হাতে কি সত্যিই এতটা ক্ষমতা ছিল? চেঁচেমুছে গড়ে নেওয়ার মতো আদৌ কি কোনো জীবনের ঢেলামাটি দেওয়া হয়েছিল তাকে? যার আশপাশ থেকে ধুল ঝুলো সরিয়ে, আঁকাবাঁকা অংশ চেঁছে নিয়ে মসৃণ কোনো জীবনের আদল তৈরি করতে পারতো সে? নাকি পুরোটাই ছলনা? মিথ্যে মায়াজালের পসরা?

হয়ত অপ্রাপ্ত একটা বয়সে শান্তকে ভালো লেগে গিয়েছিল। অল্প বয়সের আবেগে কিছু সময়ের গল্প তৈরি হয়েছিল দুজনের মধ্যে। কিন্তু নিজের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নিয়ে তো চুনকালি মাখায়নি কারো মুখে। নানাজানের পছন্দ করে দেওয়া পাত্রকেই তো বিয়ে করেছিল সুমনা। এখন সেই পাত্রের জীবনের গল্পটা যদি এমন এবড়ো থেবড়ো হয়, তাহলে সেটাও কি সুমনারই দোষ?

সেদিন উত্তরার উদ্দেশ্যে অনিক রওয়ানা দেওয়ার পরে আনিসুল হককে ফোন দিয়েছিল সুমনা। আনিসুল হক শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন। তারপর ধীরগলায় বলেছিলেন,

‘হুউম…মায়ের শরীর খারাপ করেছে। তাহলে তো কিছু বলার নেই। ফোন কে করেছিলে বললা? অনিকের বাবা? ফজলুল ভাই… আচ্ছা অনিক আগে ফিরে আসুক তাহলে। ফিরে এলেই ডাকবো তোমাদের। আশা করি, সব অপেক্ষার অবসান হবে এবার।’

সুমনা কিছু একটা বলতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়েছিল। আচ্ছা থাক, টেলিফোনে নয়…সামনা-সামনিই কথা হোক! তারও তো অনেক কথা বলার আছে। অনেক কথাই তো জমে গেল এই অল্প সময়ে।

আনিসুল হকের সাথে সুমনার যোগাযোগের এই বিষয়টা অনিকের অগোচরেই নিয়মিত চলছিল। অনিক দুজনের মধ্যেকার এই আলাপের বিষয়টা মোটেও জানতো না। তাকে না জানানোটাই আনিসুল হকের নির্দেশনা ছিল। তাদের মধ্যে কী কথাবার্তা হচ্ছে, তা অনিককে বুঝতে দেওয়া যাবে না। এমন প্রস্তাবে প্রথমে অবাক হয়েছিল সুমনা। কিন্তু আনিসুল হক তাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন,

‘যা বলছি সেভাবেই চলো সুমনা। আমি এখনই কিছু খোলাশা করে বলতে পারবো না তোমাকে। কিছু ব্যাপারে আমার নিজেরও নিশ্চিত হয়ে নিতে হচ্ছে। তবে নিশ্চিন্ত থাকো তুমি। সময় এলে সবার আগে তোমাকেই বলবো।’

‘কী বলবেন আংকেল? এখনো কেন সময় হয়নি?’

‘অধৈর্য হইও না সুমনা। তুমি বরং এই ফাঁকে কিছু কাজ এগিয়ে রাখতে পারো। উমম…বলতে খারাপ লাগছে যদিও, তবুও কাজটা করে রাখলে পরে হয়ত সুবিধা হবে। সময় বাঁচবে আর কী! অনিকের পারসোনাল ল্যাপটপের পাসওয়ার্ডটা কি জানা আছে তোমার? ল্যাপটপে রাখা ফাইলগুলো একটু চেক করো পারলে। না, অন্য কোনো কারণে নয়। জমিজমা নিয়ে অনিকের বাবার কিছু ঝুট ঝামেলা চলছে। সেসবের কোনো তথ্য পাও কী না…’

সুমনা বিস্মিত হয়েছিল। এই অযুহাতটা কেন যেন মনঃপুত হয়নি ওর কাছে। অনিকের বাবার জমিজমার খবরাখবর অনিকের ল্যাপটপে থাকাটা কি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার? মনে তো হয় না! হয়ত অন্য কোনো কারণেই তিনি ল্যাপটপের ফাইলগুলো চেক করাতে চাইছেন। কিন্তু সেই কারণটা সুমনাকে বলতে চাইছেন না। আনিসুল হকের কথাগুলো কেমন যেন সম্মোহিত করে ফেলেছিল সুমনাকে। “যা বলছি সেভাবেই করো সুমনা…সময় এলে সব বলবো।”

ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড জানা ছিল না সুমনার। মাথায় যতটুকু বুদ্ধি ছিল, সেটুকু খাটিয়ে পাসওয়ার্ড বের করতে সক্ষম হয়েছিল এক সময়। কিছুটা সময় লেগেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হতে হয়নি।

অনিক ওর মাকে খুব ভালোবাসতো। দু’বছরের দাম্পত্যজীবনে নিজের মাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে কখনো ভুল করতে দেখেনি সুমনা। সকাল বেলায় অফিস যাওয়ার আগেই মাকে উইশ করতো অনিক। মা’র কথা বলতে গিয়েও অনিককে আবেগী হতে দেখেছে অনেকবার। সেইসব ইন্ট্যুশন একত্র করেই পাসওয়ার্ডে অনিকের মায়ের নাম লিখে চেষ্টা করেছিল সুমনা। লাগেনি। পরেরবার জন্মদিনটা লিখে চেষ্টা করতেই ল্যাপটপ ফট করে সেটাকে নিয়ে নিলো!

ক্রমশ

 

 

আগের পর্ব ও লেখকের অন্যসব লেখা পড়তে ক্লিক করুন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত