| 29 মার্চ 2024
Categories
গল্প ধারাবাহিক সাহিত্য

চোরাকাঁটা (পর্ব-৪)

আনুমানিক পঠনকাল: 6 মিনিট

খুব বেশি ভাবতে হলো না লতিফুর রহমানকে। ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তিনি। মেয়ে সুফিয়ার বেলাতে যে ভুল করেছিলেন, নাতনীর বেলায় আর সেই একই ভুল আর করলেন না। নাতনীর স্কুল, পড়াশুনা… এমনকি বাইরে বেরুনো সবকিছু একদম বন্ধ করে বসে থাকলেন লতিফুর রহমান। কিশোর বয়সের কাঁচা মনে ঝড় লাগাতে সুমনা অনেক অবাধ্যতা করলো। ভাত না খেয়ে, জিনিসপত্র ভেঙ্গেচুরে নানাভাবে নিজের বিদ্রোহ ঘোষণা করলো। পানি এতটাই গড়িয়েছিল যে, ফরিদুর রেজা নামের অতি সুদর্শন সেই হাভাতের ছেলে লতিফুর রহমানের বাড়ির দুয়ারে এসে হাজিরা দিল। ছেলের দুঃসাহস আছে স্বীকার করতেই হয়। লতিফুর রহমান ভালো করে ছেলেটাকে দেখে নেওয়ার আগেই তার পায়ের ধুলো নেওয়া সারা। কাঁচুমাচু মুখে ইনিয়ে বিনিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে বললো,

‘নানা… সুমনাকে অনেকদিন দেখি না। ও কি আর স্কুলে যায় না এখন?’

ছেলেটার এই অসম্ভব সাহস দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন লতিফুর রহমান। এখনো দশ গাঁয়ের লোক তার প্রভাব প্রতিপত্তি আর সম্পদের জন্য তাকে সম্মান করতে বাধ্য হয়। সেখানে এই দু’দিনের ছোকরা কী এমন জাদুর কাঠি হাতে পেয়ে গেছে যে, বাড়ি বয়ে এসে তার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে?

সাধারণ ঘরের ছেলের সাথে নাতনীকে কিছুতেই বিয়ে দিতে রাজি নন লতিফুর রহমান। আর তাছাড়া নাতনীর বিয়ে নিয়ে তিনি এখন মোটেও ভাবছেন না। সবে স্কুলে পড়ছে তার নাতনী। ছাত্রী ভালো। মনে মনে কত স্বপ্ন বুনেছেন তিনি! বিয়ের কথা কোথা থেকে আসছে? কিন্তু এই মরিয়া বেপরোয়া ছেলের হাত থেকেও তো নাতনীকে বাঁচাতে হবে! এরকম একটা বয়সেই তো তার মেয়ে সুফিয়া পা দিয়েছিল প্রেমের ফাঁদে। এমনই কপাল তার! নাতনীও সেই একই ফাঁদে গিয়ে ঢুকলো!

আগন্তুকের আপদমস্তক চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নিয়ে লতিফুর রহমান কাঠ কাঠ গলায় বললেন,

‘তুমি রেজা মাস্টারের পোলা না?’

‘জ্বি, নানা। আমার বাবা শরাফত রেজা। নানা, আমার বাবার সাথে তো আপনার ভালো পরিচয় আছে।’ ছেলেটার গলায় প্রগলভতা ঝরে ঝরে পড়ে। লতিফুর রহমানের মুখচোখ গম্ভীর হয়ে ওঠে। ছেলে ম্যালাদূর স্বপ্ন দেখে ফেলেছে! এই ছুটকো প্রগলভতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না!

‘হুউম…তা তোমার বাপের মাস্টারি তো ওহন বন্ধ। কী করতাছে তোমার বাপে ওহন? হালচাষ করে নাকি? এইডা ছাড়া আর করনেরই বা কী আছে? তা হালচাষ কেমন চলত্যাছে?’

ছেলেটা একটু ইতঃস্তত করে যেন। মুখে হাল্কা বিষাদের ছায়া ফুটে উঠতে উঠতে মিলিয়ে যায়। মৃদুস্বরে বলে,

‘বাবা তো চাষাবাদ করে না! বর্গাচাষীরা আছে…তারাই…’

‘ঐ হইলো! বর্গাচাষীই করুক আর নিজেই করুক, হালচাষের কামই তো… তাই না? তা বাবা…তুমিও কি বাপের মতো একই লাইনে আছো নাকি?’

ছেলেটার মুখ লাল হয়ে উঠছে একটু একটু করে। অপমানের ঝাঁঝটা এখন পুরোপুরি অনুভব করা যাচ্ছে। লতিফুর রহমানের ভারী মজা লাগে। এই ছেলে এখনো শিশু তার কাছে! বুদ্ধিবৃত্তির পাল্লায় তার ধারেকাছেও দাঁড়াতে পারবে না। আর এ এসেছে বাড়ি বয়ে খবর নিতে, তার নাতনী স্কুলে যাচ্ছে না কেন? এহ্‌! সাহস দেখলে উল্টানি খেতে হয়!

ছেলেটা কিন্তু তবুও হাল ছাড়ে না। শক্ত হাতে ব্যাট ধরে ক্রিজে দাঁড়িয়ে থাকে। লতিফুর রহমানের ভালোই লাগে। জোর আছে ব্যাটার! এমন ছেলেকে পল্টানি খাওয়ানোর মজাই আলাদা। মুখটা বেশ কিছুক্ষণ নীচে নামিয়ে রাখে ছেলেটা। তারপর একসময় ধীরে ধীরে মুখ তুলে বলে,

‘নাহ্‌ নানা…আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে সোশিওলোজিতে পড়ছি। সেকেণ্ড ইয়ারে এখন।’

‘ওহ…কী বললা সোশিওলোজি! আচ্ছা…ঐ সমাজ কাকে বলে, কয় প্রকার…এইসব পড় তো? ভালো ভালো। খারাপ না। এগুলানেরও দরকার আছে। ছোটখাট কাজ করতে এইসব বিদ্যা কাজে লাগে। তা বাবা, আমার বাড়িতে আসছো খুব ভালা লাগলো আমার। আমার নাতিনের খোঁজ নিতাছো, এইটা তো আরো ভালা খবর। গ্রামের পোলাপান তোমরা। ভাইবোনের মতো মিলমিশ কইরা থাকবা। এইটাই তো হওনের কথা, তাই না?’

একটানে কথাগুলো বলে কিছুটা দম নিলেন লতিফুর রহমান। তারপর হঠাৎ যেন সম্বিত ফিরে পেয়েছেন এমন ভঙ্গিতে সোজা ছেলেটার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন,

‘সুমনা আপাতত কিছুদিন ইস্কুলে যাইব না। ওর শরীরটা মনে হয় তেমন একটা ভালা না। তুমি কি আরো কিছুক্ষণ বসবা? আমি আবার এই সময়ে একটু বিশ্রাম করি। আবার না হয় আইসো। গল্প করবো তোমার সোশাল…কী যেন বললা…আচ্ছা যাক…আসো বাবা। পরে সময় নিয়ে আবার আইসো!’

ফরিদুর রেজাকে আর একটাও কথা বলার সুযোগ না দিয়ে এক ঝটকায় সেই জায়গা থেকে উঠে ঘরে ঢুকে পড়লেন লতিফুর রহমান। ছেলেটাকে আর বাড়তে দেওয়া যায় না। সুযোগ পেলে এ অনেকদূর যেতে পারবে।

সুমনাকে নিয়ে কী করা যায়, সেটা গভীরভাবে আরেকবার ভাবতে বসলেন তিনি। এই ছেলের হাত থেকে সুমনাকে বাঁচাতে হলে কিছুটা অন্য চাল চালারও দরকার আছে বলে মনে হচ্ছে। শুধু সুমনাকে ঘরে আটকে রেখে বেশিদিন পার পাওয়া যাবে না। যুগ এখন অন্যরকম। এটা সুমনার মায়ের যুগ হলে এই বুদ্ধিতে কাজ হতো। কিন্তু এখন হবে না। হাতে হাতে মোবাইল ফোন ঘুরছে সবার। কিভাবে কিভাবে লাইনঘাট করে ফেলবে, সেটা টেরও পাওয়া যাবে না। এমন কোনো প্যাঁচে ফেলতে হবে যাতে ছেলে নিজে থেকেই সুমনার পিছ ছাড়তে বাধ্য হয়।

সেদিনের পর থেকে লতিফুর রহমান রাতের ঘুম হারাম করে দিয়ে বুদ্ধি আঁটতে শুরু করলেন। কী করলে নাতনীকে ফরিদুর রেজার সঙ্গ থেকে বাঁচানো যায়, দিনরাত তার হিসাব কষে চলেন। তবে খুব বেশিদিন ভাবতে হয় না তাকে। প্রকৃতিই এমন ছক কষে দেয় যে, সুমনাকে গ্রামের পাততাড়ি গুটিয়ে নিজের বাবা-মা’র কাছেই ফিরে যেতে হয়।

সুমনার ছোটবোন রুমানা জন্মায় সেই বছরেই। জন্মের কয়েকমাস সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও ধীরে ধীরে নানারকম অস্বাভাবিকতা টের পেতে শুরু করে সবাই। বাচ্চা একবার কাঁদতে আরম্ভ করলে কিছুতেই থামতে চাইতো না। কোনোভাবেই সেই কান্না থামতো না। আশেপাশের বাসার লোকজন এসে কমপ্লেইন করে যেতে শুরু করে। রাতের নিঃশ্ছিদ্র নীরবতা ভেদ করে বাচ্চার চিৎকারে পাড়া পড়শির ঘুম ভেঙ্গে যেত। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের কলোনী। সবাই খেটে খাওয়া পরিশ্রমী মানুষ। রাতের ঘুম ভালো না হলে পরেরদিন কাজে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের তো আর চাইলেই ছুটিছাটা মেলে না!

এই নতুন উৎপাত সবার জীবনে এসেই দোলা লাগালো। প্রথমদিকে সহানুভূতির সুরে কথা বললেও ধীরে ধীরে গলার উষ্ণতা বাড়তে শুরু করলো। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যেতে লাগলো। সুমনার সাধাসিধে বাবা-মা আর সামাল দিতে পারে না পরিস্থিতি। সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়েও তারা ঘোর বিপদে পড়ে। ডাক পড়ে সুমনার। তাছাড়া সুমনার মা’র শরীরটাও আর ভালো থাকতো না বেশিরভাগ সময়। অসুস্থ মেয়ে আর সংসার সামলে নিজের দিকে ফিরে তাকানোর সময় হাতে থাকে না। শরীরটা দ্রুত ভেঙ্গে পড়তে থাকে।

লতিফুর রহমানের আশার চারাগাছের গোড়ায় কুড়ালের আঘাত আসে। তিনি জানতেন, বাবা-মার কাছে ফিরে গেলে সুমনার ভবিষ্যত নিয়ে আর আশা করে লাভ নেই। অথচ কত স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি! নাতনীকে ডাক্তার বানাবেন। দশ গাঁয়ে নামডাক ছড়িয়ে পড়বে। নাতনীর গর্বে তার বুকটাও দশহাত ফুলে উঠবে। এখন সেই নাতনীকে ছুটতে হচ্ছে আয়ার কাজ করতে? এমনই অথর্ব জামাই! যে কাজ করানোর জন্য আয়া রাখার কথা, সেই কাজ করাবে এই কচি বাচ্চা মেয়েটাকে দিয়ে!

একবার খুব ইচ্ছে হয়েছিল, না করে দিবেন। পরে ভেবে দেখলেন, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। সুমনার বিয়ে নিয়ে মনের মধ্যে কিছু ভাবনাচিন্তা উঁকিঝুকি মারছে তার।এখন বেশি বাড়াবাড়ি করতে গেলে সেই ভাবনাও হয়ত আলোর মুখ দেখবে না। তাছাড়া যাদের মেয়ে তারা নিয়ে যাবে। তিনি বেশি অধিকার দেখাতে গেলে হয়ত জোর করেই নিয়ে যাবে। আর ফরিদুর রেজার ঘটনার পর থেকে নাতনীও তার প্রতি অখুশি।

নাতনীকে পাঠানোর সময় লতিফুর রহমান পই পই করে জামাইকে বলে দিলেন,

‘সুমনার লেখাপড়ায় মাথা ভালো। তারে কিন্তু লেখাপড়া করাইবা। বাসার ঝি চাকর বানাইয়া রাখবা না। আর আরেকটা কথা, বিয়েশাদি নিয়া ওখনই চিন্তা করার দরকার নাই। আমি কিছু ভাবনাচিন্তা কইরা রাখছি। ভালো পোলা আছে আমার সন্ধানে। উঁচু বংশ, চেহারা ছবি মাশাল্লাহ। তয় ওখনই না। সময় আইলে আমি আওয়াজ দিমু।’

লতিফুর রহমান ফাঁকা বুলি আওড়াননি। ভাবনাচিন্তা ঠিকমতই করে রেখেছিলেন তিনি। অনিকের বাবা ফজলুল আহমেদ তার পূর্বপরিচিত। জমাজমি কেনাবেচার সূত্রে একবার আলাপ হয়েছিল। ফজলুল আহমেদের বাবার বাবা অর্থাৎ অনিকের দাদার বাবা ছিলেন তাদের তল্লাটের জমিদার। প্রবল প্রতাপ ছিল একসময়। সেই তল্লাটের জমিদারবাড়ী মানুষ এখন টিকেট কেটে এসে দেখে যায়। তবে ফজলুল আহমেদরা প্রায় বছর পাঁচেক আগেই ঐ অঞ্চল ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছেন। একেবারে পাকাপোক্তভাবে। জমাজমির বেশিরভাগই বেচে দিয়ে গেছেন। জমিদারবাড়িটাও নাকি এখন আর তাদের দখলে নেই। লোকমুখে শুনেছেন, হঠাৎই ফজলুল আহমেদের একটু টাকা পয়সার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। হয়ত কোনো বেচাকেনাতে ধারদেনা হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া ঢাকায় জমি কিনে বাড়ি বানিয়েছেন। সেটাও তো অনেক টাকার ধাক্কা। অর্থাৎ জমিদারীর সেই পুরনো আভিজাত্য আর টিকিয়ে রাখেননি তারা। কিন্তু তাতে কী, জমিদারী ছেড়ে গেলেও কি জমিদারের রক্ত শরীর থেকে মুছে যায়? সেটা কখনোই মোছে না।

লতিফুর রহমান যোগাযোগ রাখতেন। নাতনীর কথাটা চিন্তা করে এই যোগাযোগ রাখাটা আরো বেশি জরুরি মনে হয়েছিল তার কাছে। ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন যে আর কোনোদিন সত্যি হবে না, এটা তার জানা হয়ে গিয়েছিল। এখন জমিদারের বংশধরের সাথে নাতনীর বিয়ে দিতে পারলেও কিছুটা মানরক্ষা হয়। সুফিয়া মানে তার মেয়ে, নিজে পছন্দ করে এক কেরানীকে বিয়ে করেছিল। এখন তিনি জমিদারের বংশধরের সাথে নাতনীর বিয়ে দিয়ে জামাইকে দেখিয়ে দিবেন, দিন শেষে কার চালে কত দম! তার বয়স হতে পারে, কিন্তু চাল চালতে তিনি আজো ভুল করেন না! আর তাছাড়া, ফরিদুর রেজার মতো ছোটলোকের সঙ্গ ছুটাতেও এই সন্মন্ধটা হওয়া খুব প্রয়োজন।

নিজের পরিকল্পনায় শেষমেষ ব্যর্থ হননি লতিফুর রহমান। জমিদারের বংশধরকে কব্জা করতে যা যা করা প্রয়োজন ছিল, সবকিছুই সময়মত করেছেন। ফরিদুর রেজার খবর রাখতেও ভোলেননি তিনি। সে যাতে কিছুতেই তার নাতনীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করে, সেজন্য তার বাবাকে অল্প একটুখানি কড়কে দিয়েছেন। লেঠেলের দল তিনি পোষেন না, কিন্তু লেঠেল দলের সর্দার মাঝে মাঝে এসে তাকে সেলাম ঠুকে যায়। এই খবরটুকু শুধু পৌঁছে দিয়েছেন ফরিদুর রেজার বাবার কাছে। ব্যস, তাতেই যা হওয়ার হয়ে গেছে। বাপ বাপ করে প্রেমের নেশা ছুটে গেছে। বাপের চেয়ে তো আর দুদিনের প্রেমিকা বড় হতে পারে না!

নাতনী ডাক্তার হতে পারেনি। ঢাকার এক কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেছে কোনরকমে। নিজের মা বেঁচে থাকলে হয়ত আরেকটু ভালো কিছু হতে পারতো। কিন্তু সুফিয়া তো বিশাল এক বোঝা বড়মেয়ের কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে অকালেই দুনিয়ার মায়া ছেড়ে দিল। প্রতিবন্ধী বোনের পেছনেই সুমনার দিনরাত কেটে যেতে লাগলো। এমনকি বিয়ের পরেও বেচারীর নিস্তার মিললো না এই দায় থেকে। তার নতুন সংসারেও ঐ তালগোল পাকানো জড়বস্তুটাকে নিয়ে যেতে হয়েছে। এসবকিছু ভাবলে লতিফুর রহমানের ভেতরটা তেতো হয়ে যায়। অনিক বাধ্য ছেলের মতো সব দায় মেনে নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু যদি কখনো বেঁকে বসে? তাহলে কি সেটা এখানে বসে ঠেকাতে পারবেন তিনি?

বয়স হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো বুদ্ধিও খেলাতে পারেন না।

প্রথমে অথর্ব পুত্র তারপর এই অথর্ব নাতনী।এরা বেঁচে থেকেই বা কী কাজে আসবে তার? উলটো তার শক্তিকে বুড়ো আঙুল দেখাবে এই দুজন মিলে! লোকজন আঙুল তুলে বলবে,

‘ঐ যে লতিফুর রহমানের নাতনী, বোবা…কালা। পাগলী একটা। পোলাটাও হইছে তাই। রক্তের দোষ! আর কিছু না! ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। পয়সার দেমাগে মাটিত পা পড়তো না। ওহন বোবা কালা লইয়া বংশ উদ্ধার করুক!’

ভাবতে ভাবতে শরীরে আগুন ধরে যায় লতিফুর রহমানের। কিছু একটা করা দরকার। এমনকিছু যাতে পথের কাঁটা আপনাআপনি মাটিতে মিশে যায়। তার নামের অস্তিত্বকে শান শওকতের সাথে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এদের বেঁচে থাকাটা কি একটু বেশিই অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছে না? শুধু শুধু খাইয়ে পরিয়ে জড়বস্তুর মতো সাজিয়ে রাখা। এসবের মানে হয় কোনো?

এমন কিছু কি করা যায় না যাতে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙ্গে!

(ক্রমশ)

 

 

 

 

আগের পর্ব ও লেখকের অন্যসব লেখা পড়তে ক্লিক করুন।

 

 

 

 

 

 

 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: সর্বসত্ব সংরক্ষিত